নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ৩৪

১২ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৩৮



কিছুক্ষন পর একটা একশানে যাব।
আজ সারাদিন'ই বাসায় শুয়ে বসে কাটিয়েছি। পত্রিকা পড়েছি। পত্রিকাতে চুরি-ছিনতাইয়ের নিউজ গুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। দুপুরবেলা কিছুক্ষনের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম ভাত খেতে। আমার একশান শুরু হবে রাত ১১ টার পর। সাথে থাকবে একটা খুর। একটা চায়নিজ কুড়াল আর একটা পিস্তল। পিস্তলটার নাম 'বেরেটা এম নাইন'। এই জিনিস ঢাকা শহরে আছে মাত্র নয়টা। আমি কারওয়ান বাজারের মুসা ভাইয়ের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি এক হাজার টাকা দিয়ে। কাজ শেষে যথা সময়ে 'জিনিস' ফেরত না দিলে খবর আছে। মুসা ভাই কঠিন জিনিস।

মাত্র ৯ টা বাজে। এখনও দুই ঘন্টা হাতে সময় আছে। সময় যেন যাচ্ছেই না। সারাদিন ঘরে থাকার কারনে হাসফাস লাগছে। আমার কাজে সহযোগিতা করে শামসু। খুবই সাহসী ছেলে। তার পারফরমেন্স সত্যিই আমি মুগ্ধ। একজন শিকার পেলেই- খুরটা হাতে নিয়ে বলে ওস্তাদ শালায় তো এখনও পকেট থেকে মোবাইলটা বের করছে না। দেন তো পিস্তলটা আমার হাতে শালার কপালটা ফুটা কইরা দেই। কপাল ফুটা করতে হয় না- তার আগেই মোবাইল, ম্যানিব্যাগ আরও যা যা আছে সব বের করে শামসুর হাতে দিয়ে দেয়।

আজ অবশ্য আমাকে একাই একশানে যেতে হবে। শামসুকে পাঠিয়েছি- কুমিল্লা। নীলা'কে আনার জন্য। নীলা আমার বউ। বেচারি ঢাকা আসার জন্য অস্থির হয়ে আছে। এদিকে আমি কামরাঙ্গীচরের বস্তিতে যে ঘরে থাকি- সে ঘরে কিছুই নেই। খাট নেই। একটা ছেঁড়া তোষকের উপর ঘুমিয়ে থাকি। মুখ দেখার জন্য একটা আয়না নেই। কাপড় রাখার জন্য একটা আলনা নেই। এখানে-সেখানে জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নীলা আসার আগেই এই সব কিনে ফেলা খুব দরকার ছিল। কিন্তু হাত একেবারে খালি। গত সাত দিনে একটা কাজও করতে পারি নাই। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। আজিব!

আপনারা হয়তো ভাবছেন- চুরি ছিনতাই করা খারাপ কাজ। অবশ্যই খারাপ কাজ। কিন্তু বাধ্য হয়ে করছি। কেউ তো আমাকে একটা চাকরি দিল না। চাকরির জন্য কম চেষ্টা তো করি নাই। কত লোকের হাতে-পায়ে ধরেছি। একবার এক অফিসে গিয়ে বললাম- স্যার পিয়নের কাজ হলে আমাকে দেন। না খেয়ে আছি। ভদ্রলোক আমাকে চাকরি দিলেন না। একটা ছবি দেখিয়ে বললেন- মানুষ খুন করতে পারবে? তাহলে তোমাকে এক লক্ষ টাকা দিব। বিশ হাজার এডভান্স পাবে বাকিটা কাজ শেষ করার পর। আমি বুঝলাম- কিছু লোক খারাপ কাজ করে তাদের টাকা নেই বলে আর কিছু লোক খারাপ কাজ করায় তাদের প্রচুর টাকা আছে বলে।

নীলা'র সাথে আমার বিয়ের গল্পটা আপনাদের বলি। শুনুন।
একদিন ধানমন্ডি সাত নম্বরের ব্রিজের কাছে একটা বড় ধরনের কাজ করলাম। রাত তখন সাড়ে নয়টা। রাস্তাটা বেশ নিরিবিলি। যদিও খুব বেশি রাত নয়। কিন্তু শামসু অস্থির হয়ে পড়লো। গত দুইদিন সে নেশা করতে পারেনি। যাই হোক, টাই পরা একলোক সিগারেট টানছিল ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে। তার হাতে আবার একটা ডি এসএলআর ক্যামেরা। শামসু টাইপরা লোকটার কাছে গিয়ে বলল- ব্রাদার একটা সিগারেট দেন। সন্ধ্যা থেকে কোনো সিগারেট খাই নাই। টাইপরা লোকটা বলল- যা ভাগ হারামজাদা। তখন আমি চায়নিজ কুড়ালটা উঁচু করে বললাম- আজ তোকে শিক্ষা দিয়ে দিব। মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস? ঠিক তখন টাইপরা বদ লোকটা আমাকে ধাক্কা দিল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। এই রকম কাজ করতে গেলে এই রকম ঘটনা অনেক ঘটে। তখন আমি আমার শেষ অস্ত্রটা বের করি। পিস্তল। তাতে কাজ হয়। টাইপরা লোকটা ভয় পেয়ে ম্যানিব্যাগ, মোবাইল, রিস্ট ওয়াচ এবং গলার চেইন সব দিয়ে দিল।

সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ টাকা হবে। কিন্তু আমরা কখনই এক লাখ টাকা হাতে পাব না। বড় জোর ত্রিশ হাজার টাকা পাবো। চুরি ছিনতাই এর জিনিস তো আর ঢাকঢোল পিটিয়ে বিক্রি করা যায় না। তাছাড়া চুরি ছিনতাই করা টাকা পয়সা থানাতেও কিছু দিতে হয়, অন ডিউটি পুলিশকে কিছু দিতে হয়। যাই হোক, পরের দিন সকালে জানতে পারি- ওই টাইপরা বদটা নাকি এক সচিবের ভাতিজা। পুলিশ আমাকে খুঁজছে। অলরেডি আমার নামে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটা থানায় মামলা আছে। পালিয়ে গেলাম কুমিল্লায় শামসু'র গ্রামের বাড়িতে।

সচিবের ভাতিজার সব জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছি। ছিনতাই এর জিনিসপত্র সাথে সাথে বিক্রি করে দিতে হয়। কিন্তু ক্যামেরাটা বিক্রি করি নাই। একটা ভালো ক্যামেরার শখ আমার অনেক দিনের। ডি এসএলআর হাতে নিয়ে কাঁকড়ী নদীর পাড়ে বসে আছি। নদীর পাশেই বিশাল ধানক্ষেত। ইতোমধ্যে অনেক গুলো ছবি তুলে ফেলেছি। এর মধ্যে একটা ছবি তো অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। ধানক্ষেতের উপর দিয়ে একসাথে অনেক গুলো পাখি নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। ঠিক তখন সূর্য ডুবে যাচ্ছে। চারপাশ কেমন মায়াবি রঙ্গে ছেয়ে আছে।
শামসু গিয়েছে- আমার জন্য সিগারেট আনতে রাজগঞ্জ বাজারে। ভালো সিগারেট ছাড়া আবার আমি খেতে পারি না। গরীবের ঘোড়া রোগ। হঠাত দেখি ডুরে শাড়ি পরা একটা মেয়ে আমার কাছে এসে বলল- আপনার হাতে কি ক্যামেরা? আপনি কি সাংবাদিক? আমার একটা ছবি তুলে দেন। আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম। চোখ ভরা মায়া। সাথে সাথে প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি বললাম এখন তো ছবি তুলতে পারব না। সূর্য ডুবে গেছে। আগামীকাল অবশ্যই তোমার অনেক গুলো ছবি তুলে দিব। পরের দিন আসলেই মেয়েটার অনেক গুলো ছবি তুলে দেই। ক্যামেরায় মেয়েটার চেহারা খুব ভালো আসে। সে তার ছবি দেখে মুগ্ধ। আর আমি মেয়েটার প্রতি মুগ্ধ। এতই মুগ্ধ হলাম যে বিয়েই করে ফেললাম।

যাই, বের হই। এগারোটা বেজে গেছে। ঘরে নতুন বউ আসছে। অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হবে। সবার আগে একটা দামী আয়না কিনতে হবে। নীলা আবার একটু পর-পর আয়নায় নিজের মুখ দেখে। আমি ঘর থেকে বের হলাম। আজ যাবো ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায়। অনেকদিন সেখানে কোনো কাজ করি নাই। আকাশের অবস্থা ভালো না। মনে মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম- হে আল্লাহপাক আজ বৃষ্টি দিও না। নীলা আসবে আগামীকাল। ঘরে বাজার সদাই কিছুই নাই। অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হবে। একজন মালদার আদমি যেন আজ পেয়ে যাই। রাস্তার পাশে একটা দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে আর একটা বেনসন সিগারেট ধরিয়ে আমি একটা অশ্বথ গাছের নীচে দাঁড়ালাম। ওই তো কে যেন আসছে। লম্বা একটা ছায়া পড়েছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ শ্রম দিবে, কাজ করবে, সেটাও সম্ভব না; এইভাবে কেহ দেশ চালায়? যারা কিছুই পারে না, তারা দেশ দখল করে, উহাকে চালাতে চায়!

কারো ভিশন আছে, কারো মিশন আছে; শুধু মগজটা নেই

১১ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

২| ১৩ ই মে, ২০১৭ ভোর ৪:৩৭

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: বেকারত্ব আর অভাব মানুষকে অপরাধ-প্রবণ করে তুলে। খাদ্যের সাথে কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করা দরকার। তাতে অপরাধ অনেকটা কমে যেতে পারে।

গল্প ভালো লাগলো।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

৩| ১৩ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:২১

বর্ষন হোমস বলেছেন: ধরে নিন সেই লম্বা মানুষ টা আপনার স্ত্রী।বাড়ি থেকে একদিন আগে চলে আসছে।তারপর মিশন সাকসেস করে নিন।

৪| ১৪ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

অনুকথা বলেছেন: পাঠে ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.