নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারা তিন জন

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১০:৩৫



রাত ৩ টা ৪৫ মিনিট।
তারেক ব্যালকনি থেকে রাতের শেষ সিগারেট শেষ করে এসে দেখে তার ঘরে একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চা মেয়ে বসে আছে। ছোট একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই- কিন্তু তারেক অনেক ভয় পেলো। প্রচন্ড ভয় পেল। সে চিৎকার করে উঠল কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। তারেক অনেক সাহস সঞ্চয় করে ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল এবং ভাবল চোখের ভুল ছাড়া আর কিছুই না। তার কপালে বিন্দু বিন্ধু ঘাম। তীব্র ভয়ের কারণে কিনা তারেক গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের ঘটনা একেবারে ভুলে গেলো।

তারেক একটা বড় কোম্পানী চাকরী করে। ধানমন্ডি ১১ নম্বরে তার অফিস। ঢাকা শহরে দুই রুমের একটা ফ্ল্যাটে একা ভাড়া থাকে। এখনও সে বিয়ে করেনি তাই খাওয়া-দাওয়া হোটেলে করতে হয়। তার বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন। ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন কেউ'ই নেই। এমনকি তার কোনো বন্ধুও নেই। সে একা থাকতে বেশী পছন্দ করে। আড্ডা তার একেবারেই অপছন্দ। তার শখ একটাই বই পড়া। তার ঘর ভরতি বই আর বই। ছুটির দিন গুলোতে সে একা-একা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খায়। মানব জীবনটা তার কাছে খুব আনন্দময় মনে হয়।

প্রতিদিন সে রাত ১০ টায় লিখতে বসে। তার খুব ইচ্ছা লিখে লিখে পৃথিবীটা বদলে দিবে। সে একটা বিশাল উপন্যাসের কাজে হাত দিয়েছে। উপন্যাসটা হবে ১০০ পর্বের। দৈনিক নতুন সূর্য পত্রিকাটি তার লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করছে। লেখাটা চারপাশে ভালো'ই সারা ফেলেছে। উপন্যাসের শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে। দেশ ভাগ, ভাষ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নারী-পুরুষের প্রেম ভালোবাসা, রাজনীতি, ধর্ম সব বিষয় আছে তার উপন্যাসে। উপন্যাসটিতে অনেক গুলো চরিত্র। প্রতিটি চরিত্র'ই সতন্ত্র।
আজ সে লিখছে ৫০ তম পর্বটি। সে এক মনে পাতার পর পাতা লিখে যাচ্ছে। যেন চোখের সামনে সে দেখতে পাচ্ছে- তার চরিত্র গুলোকে। লিখছে- কাটছে- আবার লিখছে। লেখা শেষ হলো- রাত তিনটায়। একটা পর্ব লেখা শেষ হলে তার বিপুল আনন্দ হয়। পাঠক কি বুঝে লেখালেখি কি পরিশ্রমের কাজ! রাতের শেষ সিগারেট খাওয়ার জন্য তারেক ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। এটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস।

সিগারেট শেষ করে তারেক ঘরে ঢুকে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে তার বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। গত রাতের মতো আজ তারেক ভয় পেলো না। কারন সে জানে আসলে তার ঘরে কোনো বাচ্চা মেয়ে নেই- সে যা দেখছে তা তার চোখের ভুল। সে বাচ্চা মেয়েটির পাশে গিয়ে বসতেই মেয়েটি তারেকের হাত ধরে বলল-বাবা আমি আইসক্রীম খাবো।
তারেক মেয়েটির মাথায় হাত রেখে নরম গলায় বলল- রাতের বেলা আইসক্রীম খেতে হয় না।
মেয়েটি বলল আচ্ছা।
তারেক মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- তোমার নাম কি?
মেয়েটি বলল- আমার নাম টাপুর, আমার আর একটা বোন আছে তার নাম- টুপুর। আমরা যমজ।
তারেক এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে টাপুরের মাথায় হাত রেখে বলল- সকালে অফিস আছে- আমি ঘুমাই।
বাচ্চা মেয়েটি মাথা নাড়ল।

পরের দিন অফিস শেষ করে সন্ধ্যায় তারেক যায় একজন নামকরা সাইক্রিয়াটিস্ট ও নিউরোলজির স্পেশালিস্ট এর কাছে। ডাক্তারকে সব ঘটনা বলল। নিউরোলজির স্পেশালিস্ট হাসতে হাসতে বললেন- আপনার এই রোগের ওষুধ হচ্ছে- বিয়ে। বিয়ে করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ঘুমের ওষুধ লিখে দিচ্ছি, প্রতিদিন বিছানায় যাওয়ার আগে একটা করে খাবেন। খুব শ্রীঘই বিয়েটা সেরে ফেলুন। তাহলে আর ভূত বাচ্চা-কাচ্চা মধ্য রাত্রে জ্বালাতন করবে না। ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে তারেক মনে মনে ভাবল- বিয়ে মানেই তো গা ঘিন-ঘিন করা একটা ব্যাপার। সে একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে- এই ব্যাপারটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তার ধারনা, পৃথিবীতে শারীরিক ব্যাপারটা না থাকলে পৃথিবীটা আরও বেশি মায়াময় হতো।

তারেক রাত ১০টা পর্যন্ত পুরো ধানমন্ডি এলাকা হেঁটে বেড়াল। শেষে ক্লান্ত হয়ে একটা হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় ফিরল এক বাটি আইসক্রীম নিয়ে। গোসল শেষ করে, লেখার টেবিলে বসল। এক টানা অনেকক্ষন লিখে- সব লেখা ছিড়ে ফেলল। আর তখন টাপুর নামের বাচ্চা মেয়েটি এসে বলল- বাবা এত সময় নিয়ে লিখে- সব লেখা ছিড়ে ফেললে কেন?
তারেক মেয়েটিকে বলল- আইসক্রীম খাবে?
মেয়েটি হাসি মুখে বলল-হুম, খাবো।
টাপুর অনেক আনন্দ নিয়ে আইসক্রীম খাচ্ছে, তারেক এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে টাপুরের আইসক্রীম খাওয়া দেখছে।

তারেক টাপুরকে খুব সাহস করে বলল- তোমার মা কই?
টাপুর আইসক্রীম খেতে খেতে বলল- বাবা, মা তো তোমাকে অনেক ভয় পায়, তাই তোমার সামনে আসে না।
তারেক অবাক হয়ে বলল- ভয় পাবে কেন, ভয় পাওয়ার কি আছে? ডাকো তোমার মাকে।
টাপুর বলল- বাবা তুমিই ডাকো। ডাকলেই চলে আসবে। আর তখন তারেক দেখয়ে পায়- দরজার কাছে একটা রুপবতী মেয়ে তার বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারেক রুপবতী মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল- তুমি কে? তোমার নাম কি?
রুপবতী মেয়েটি বলল- টাপুর-টপুরের ঘুম পেয়েছে, ওদের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসি। তারপর সব বলছি।

রাত ১২ টা। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। একটু পর বিজলি চমকাচ্ছে। টাপুর- টপুর ঘুমিয়ে পড়েছে। তারা দুইজন'ই তারেকের মতো গালের উপর বাম হাত রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।
তারেক ব্যালকনিতে বসে আছে। তাকে মোটেও অস্থির দেখাচ্ছে না। বরং তার চোখে মুখে এক আকাশ আনন্দ ঝকমক করছে। তারেকের পাশে টাপুর-টুপুরের মা বসে আছে। এই তিনজনকে সে চেনে না। তারপরও তারেক যতবার যতবার তাদের দিকে তাকায় ততবার তার বুকের মধ্যে যেন কেমন করে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ''মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে, বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা।'' মনে হয় তারা তিনজন যেন অনেক জন্মের চেনা। ঠিক এই সময় কোথাও খুব শব্দ করে জোরে বাজ পড়ল। তারেক বলল- তোমার নাম কি? মেয়েটি বলল- আগে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, তারপর নাম বলব। তারেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বুকের মধ্যে। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল- এখন বলো, আমার নাম কি? তারেক বলল- তোমার নাম হিমি!

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১০:৪৬

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: /:) ইহা কি ছিলো?মাথার উপর দিয়া গেলো। :((
লেখার ধরন ভাল্লাগছে। :)

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: দ্যা ফয়েজ ভাই, ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৭

রানার ব্লগ বলেছেন: নুর ভাই হুমায়ুন আহমেদ থেকে বেরিয়ে আসুন।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: না, সম্ভব না। বস তো আমার রক্তের সাথে মিশে আছেন।

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১১:২০

গ্যাব্রিয়ল বলেছেন: অসম্ভব ভালো লাগা.... লেখাটার প্রতি।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: শতাব্দীর সেরা মন্তব্য করেছেন।

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫৫

জীবন সাগর বলেছেন: অনেক ভালো গল্প
ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।

৫| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৪০

কানিজ রিনা বলেছেন: আইন স্টাইন গবেষনার কাজে এতই মনযোগী
ছিলেন তার প্রেমিকার উপস্থীতি টের পেতেননা
একবার তার প্রেমিকা অনেকক্ষন তার টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আছে আইনস্টাইন
সিগারেটের আগুন হাতে চেপে ধরে হাত পুড়িয়ে দিলেন। বেশ কিছুদিন প্রেমিকা না
আসায় মনে পড়ল সিগারেট দিয়ে পুড়ানোর
কথা।
তয় আপনার গল্পের নায়ক ঘরে কাজের বেটির মেয়ে দুইটার উপস্থিতি লেখার মন
নিবেশে টেরই পায় নাই। হা হা হা
বেশ সুন্দর গল্প ধন্যবাদ।

৬| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৪৬

কল্লোল পথিক বলেছেন:


পড়লাম।

৭| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩৯

সত্যের ছায়া বলেছেন: ভাল লিখছেন দাদা।

৮| ০৫ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৭:৫২

অবিসংবাদিত নেতা নেহরু বলেছেন: গল্প ভাল ছিল
কিন্ত তারেক ভাই কে প্রথম দিকে এতো সাহসী করে তুলাটা আমার কাছে ভাললাগেনি কারণ
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.