নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাবের দেশে চলো রে মানুষ, ধ্যানের দেশে চলো

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩



আমাদের বাসায় ঘরের কাজের জন্য একজন মহিলা আছেন- তার নাম শাহানা। তাকে দেখলে ঠিক কাজের বুয়া মনে হয় না। বরং কথায় এবং কাজে বেশ এক্সপার্ট। চলা-ফেরায় একটা উচ্চ বংশীয় ব্যাপার আছে। প্রায় চার বছর ধরে আমাদের বাসায় কাজ করছে। শাহানা'র হাতের রান্না অতি চমৎকার। তার ব্যাক্তিত্বের কারনে মহিলাটাকে আমি মায়ের মতোই সম্মান করি। আমাকেও সে খুব ভালো পায়।

শাহনা'র দু'টো ছেলে-মেয়ে আছে। দেখতে ভারি মিষ্টি। আমাদের বাসায় কোনো অনুষ্ঠান হলে- ছেলে মেয়ে দুটো প্রায়'ই আসে। বড় মেয়ে এবার ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলো। ছোট ছেলে আগামী বছর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে। দুজনেই লেখা পড়ায় খুব ভালো। শাহনা আমাদের বাসায় কাজ করে ৫ হাজার টাকা বেতন পায়। তার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সিগঞ্জ। আমাদের গ্রামের বাড়িও মুন্সিগঞ্জ।

শাহনা'র স্বামী আজ চার বছর ধরে নিখোঁজ। কথা নেই, বার্তা নেই- হুট করে লোকটা নিখোঁজ হয়ে গেল। যে লোক সংসার ছাড়া কিছু বুঝতো না। ছেলে-মেয়েদের একবেলা না দেখলে অস্থির হয়ে যেত, সেই লোক আজ চার বছর ধরে কোনো খোজ খবর নেই। তাকে খোজার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। নানান মানুষ নানা কথা বলে। কেউ বলে বিয়ে করে অন্য কোথাও ঘর সংসার পেতেছে। কেউ বলে ইন্ডিয়া চলে গেছে। আবার কেউ বলে হয়তো মরে গেছে।

দু'টো ছেলে মেয়ে নিয়ে টিকে থাকার জন্য শাহানা অন্যের বাসায় কাজ করতে বাধ্য হয়। খুব কষ্টে ছেলে মেয়েদের তিনবেলা খাইয়ে লেখা পড়া শিখাচ্ছে। আমার মা শাহানা'র ঘটনা জানার পর তার বেতন ডবল করে দিল। এবং ছেলে মেয়েদের জন্য প্রতিদিন ভাত তরকারি দিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে শাহানা আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠলো। আমরাও তাকে পেয়ে অনেক খুশি।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীর্ঘ চার বছর পর শাহানা'র স্বামী ফিরে এসেছে। এসেই ছেলে মেয়ে দুটোকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না। শাহানা'র হাত ধরে খুব কান্না। ছেলে মেয়ে দু'টাও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না। শাহানা'র স্বামী কথা দিয়েছে আর কোথাও যাবে না। শাহানা'র পরিবারের আনন্দ দেখে- আমরাও সবাই খুশি। এই চার বছরে শাহানা'র স্বামী দাড়ি কামায়নি, মাথার চুল কাটেনি। গায়ের রঙ হয়ে গেছে কুচকুচে কালো।

শাহানা'র স্বামী বাউল হতে চেয়েছিল, দরবেশ হতে চেয়েছিল, সন্মাসী হতে চেয়েছিল। কে বা কার বুদ্ধিতে এই লোক এই পথ বেছে নিয়েছিল আমি জানি না। চারটা বছর শাহানা'র কি সীমা কষ্ট করতে হয়েছে স্বামীকে ছাড়া। আর এই লোক বউ বাচ্চার কথা ভুলে গিয়ে মাজাতে-মাজারে ঘুরে বেড়িয়েছে। শাহানা'র স্বামীর সাথে আমার নানির মিল আছে। আমার নানি শেষ বয়সে মাজারে মাজারে ঘুরতো। বড় ডেকে খিচুরি রান্না করে- মাজারে নিয়ে গিয়ে সবাইকে নিজের হাতে বেড়ে খাওয়াতো। চুল আচড়াতো না। চুলে ঝট ধরে গিয়েছিল।
একসময় মাসের পর মাস গিয়ে আজমী শরীফে পড়ে থাকতো। আমার নানী বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। ইন্ডিয়াতে তার একটা অফিস ছিল। মাজারে মাজারে ঘুরার ফলে তার ব্যবসা ধস নামে।

একদিন শাহানা তার স্বামীকে আমার কাছে নিয়ে আসলো। আমি যেন তাকে বুঝিয়ে দেই- সে যেন আর কোথাও না যায়। আমি আমার সমস্ত ভালোত্ব দিয়ে, সমস্ত মেধা দিয়ে শাহানা'র স্বামীকে বুঝালাম। সে আমার সব কথা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনলো। সবচেয়ে বড় কথা আমার সমস্ত কথা, সমস্ত যুক্তি হাসি মুখে মেনে নিল। এবং আমাকে কথা দিল, সে আর কোথাও যাবে না স্ত্রী আর ছেলে মেয়েকে ফেলে। শাহানা'র স্বামী আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। শাহানাও কাঁদলো। শাহানা আমার দিকে তাকালো। তার চোখে মুখে এক আকাশ মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতা দেখলাম।

কিছুক্ষন আগে বাসা থেকে মা ফোন করে জানালো শাহানা'র স্বামী আবার নিরুদ্দেশ হয়েছে। শাহানা'র ছেলে মেয়ে দুটো খুব কাঁদছে। শাহানাও কাঁদছে। আমার খুব খারাপ লাগছে। কষ্টও হচ্ছে। আসলে, কিছু কিছু মানূষকে এক আকাশ ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখা যায় না। এটাই বোধ হয় প্রকৃতি চায়।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০৫

কানিজ রিনা বলেছেন: বেশ ভাল লাগল পুরুষ ইচ্ছা করলে স্ত্রী
সন্তান ফেলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
কিন্তু যত দায় নারীর সন্তানদের মুখের
দিকে চেয়ে সব সুখ সাচ্ছন্দ বিশর্জন দেয়।
এইসব বাউলের দলে মেয়েরাও থাকে
এগুল ভন্ড বাউল ঘুড়ে বেড়ায় সাথে নারী
সঙ্গী থাকে। এই লোভ মানুষ কি ছাড়ে?
ধন্যবাদ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: কেন যে মানুষ অন্য পথে পা বাড়ায়!!!

আমি তো বাসা থেকে বের হলে, মাথায় একটা চিন্তাই থাকে- কখন বাসায় ফিরবো।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এক আকাশ ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখা যায় না।


জীবন বড় বৈচিত্র্যময়।
ভাল লাগল।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪

স্বতু সাঁই বলেছেন: কোথায় রবে এ ভাই বন্ধু, পড়বি যখন কালের হাতে। #লালন

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার বর্ণনার যে অংশে বললেন, শাহানার স্বামী ফিরে এসেছে; তখনি আমি মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম যে, সে আবার চলে যাবে। সেই সময়, চুলায় দুধের চা প্রায় পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আমি কিচেনে গিয়ে চা নিয়ে আসি, চা নিয়ে এসে, মন্তব্য না করে লেখার শেষ অবধি পড়ি; এবং দেখলাম, লোকটা চলে গেছে!

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি অভিজ্ঞ লোক। কাজেই অর্ধেক পড়েই বাকিটা বুঝতে পারেন।

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


এটা ঠিক যে, ভাবের দেশ, ধ্যনের দেশ বলতে কিছু নেই!

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভাবের দেশ, ধ্যনের দে.।.।.। অবশ্যই কিছু আছে।
দেখেন না কত লোক ঘরের বাহির হয়ে গেলে আর ফিরে আশে না।

৬| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ধুতরার ফুল বলেছেন: যার যেদিকে মন টানে।।।

৭| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: শাহানার স্বামী ভুল পথে হাটছে। তবে এরকম লোকের সাথে আমার মিশতে খুব ইচ্ছে করে। আবার ফিরে আসলে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে জানাবেন।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই।

৮| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:

"লেখক বলেছেন: ভাবের দেশ, ধ্যনের দে.।.।.। অবশ্যই কিছু আছে।
দেখেন না কত লোক ঘরের বাহির হয়ে গেলে আর ফিরে আশে না। "

-এগুলো মানসিক সমস্যা ও দারিদ্রতার ফল মাত্র।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মন্তব্য মেনে নিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.