নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেবতি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৬



সকাল সাড়ে এগারোটা।
আগে আমার অবস্থানটা বর্ণনা করে নিই। ঝকঝকে সুন্দর-পরিচ্ছন্ন একটি দিন। আমি দাঁড়িয়ে আছি- বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে। আমার ডান হাতের একটা আঙ্গুল শক্ত করে ধরে আছে সাত আট বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটি দেখতে একেবারে বারবি পুতুলের মতন সুন্দর। এই মেয়েটিকে আমি চিনি না। আজই প্রথম দেখলাম। হঠাত করে মেয়েটি কোথা থেকে এসে আমার হাত ধরে রেখেছে! কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না, কিন্তু হাসে। হাসলে মেয়েটিকে অনেক সুন্দর দেখায়। মায়াময় একটি মুখ। তাকিয়ে থাকলেও আনন্দ হয়। মেয়েটিকে আমি জিজ্ঞেস করলাম- তোমার বাসা কই? তোমার বাবা-মা কোথায়? তোমার নাম কি? তুমি এখানে কেমন করে এলো? মেয়েটি কোনো প্রশ্নের জবাব দিলো না তবে মিষ্টি করে হাসলো। মেয়েটির হাসি আজকের দিনটা যেন আরও বেশী সুন্দর করে দিল!

বুঝতে পারছি- আমি এক ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু যুক্তি দিয়ে ভাবলে এটা কোনো সমস্যা'ই নয়। লজিক বলে, মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছে। হয়তো বাবা-মা'র সাথে বের হয়েছিল। এতক্ষণে বাবা-মা নিশ্চয়ই পাগল পাগল হয়ে গিয়েছে। কোনো কারনে মেয়েটি আমাকে পছন্দ করেছে। হয়তো আমি দেখতে মেয়েটির চাচা অথবা মামা'র মতন। এই যে জন্য সে আমার হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটি'র হাত ধরার ভঙ্গি'ই বলে দিচ্ছে- সে আমার হাত ধরে এক আকাশ ভরসা পেয়েছে। যেন তার আর কোনো চিন্তা নেই। মেয়েটি যথেষ্ট বড়- সে ইচ্ছা করলেই তার বাসার ঠিকানা বা বাবা-মা'র নাম অথবা টেলিফোন নাম্বারও বলতে পারে। কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলছে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই মিষ্টি করে একটু হেসে দেয়। মিসির আলি হলে এতক্ষনে- মেয়েটির বাবা-মা'র নাম, বাসা সব কিছু বের করে ফেলতেন। আমি কি পারব মেয়েটিকে তার বাবা-মা'র কাছে ফিরিয়ে দিতে?

অনেকদিন আগে একবার আমি মিসির আলির মতন করে একটা সমস্যার সমাধান করেছিলাম। সমস্যাটা ছিল এই রকম- একটা মাদ্রাসায় অনেক গুলো ছেলে-মেয়ে থাকত (ইংলীশ মিডিয়াম মাদ্রাসা)। প্রতিটা ছেলে-মেয়েই ধনী পরিবার থেকে এসেছে। মাদ্রাসা মানেই কিন্তু এতিম ছেলে- মেয়ে- এই ধারনা ঠিক নয়। সেই মাদ্রসায় আমার পরিচিত মিশু নামে একটা ছেলে থাকত। একদিন মিশু বলল- তাদের মাদ্রসায় অদ্ভুত একটা ব্যাপার এক মাস ধরে ঘটছে। অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো- মাদ্রসার প্রতিটা ছেলে-মেয়ের দাঁত ব্রাশ করার পেষ্ট টিউব থেকে নাই হয়ে যায়। দিনের পর দিন একই ব্যাপার টিউব থেকে পেষ্ট উধাও হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান আমি তিন মিনিটে করে ছিলাম। মাদ্রাসার এক হুজুর প্রতিদিন রাতে বেসিনে গিয়ে টিউব থেকে সব পেষ্ট বের করে ফেল দিত। আমি মাদ্রাসার হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম-আপনি এই কাজ কেন করেন? হুজুর লজ্জায় মাথা নত করে বললেন- পেষ্ট টিপ দিয়ে বের করতে অনেক ভালো লাগে। অনেক আনন্দ পাই।

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বাচ্চা মেয়েটি আমার সাথে আছে। মেয়েটিকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে গিয়ে পিজা আর কোক কিনে দিলাম এবং আমার জন্য নিলাম কফি। কফি'তে চুমুক দেওয়ার আগে, আমি বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলাম এবং আবিস্কার করলা- মেয়েটি অন্ধ এবং বোবা। ইচ্ছা করলো মেয়েটিকে কিছুক্ষন বুকে জড়িয়ে ধরি। আমার চোখ ভিজে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, যেভাবেই হোক মেয়েটির বাবা-মাকে খুঁজে বের করব'ই। আমি ইচ্ছা করলে মেয়েটিকে থানায় দিয়ে আসতে পারি- পুলিশ যা করার করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়- আমার মন বলছে- মেয়েটির বাবা-মাকে আমি অবশ্যই খুঁজে বের করতে পারব। বুদ্ধিমান একটা ছেলের জন্য এটা খুব কঠিন কিছু না। আরও সহজ হতো যদি মেয়েটা কথা বলতে পারত। ভাবতে কষ্ট লাগছে- বাচ্চা একটা মেয়ে চোখে দেখতে পায় না- কথা বলতে পারে না।

যদি কোনো কারনে বাচ্চার বাবা-মাকে খুঁজে বা বের করতে না পারি- তাহলে বাচ্চাটিকে হিমির কাছে দিয়ে আসব। কি মনে করে হঠাত চলে এলাম ধানমন্ডি লেক। সময় তখন মধ্যদুপুর। আমি বাচ্চা মেয়েটিকে বললাম- তুমি ভেব না- সন্ধ্যার মধ্যে তোমার বাবা-মাকে পেয়ে যাবো। বাচ্চাটাকে খুশি করার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দিতে হলো। বাচ্চাটা এখন আমার কোলে মাথা রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। গল্প বলছি- একটা রাজকন্যা ছিল। রাজকন্যার নাম ছিল- সুকন্যা। সুকন্যার মাথায় ছিল এক আকাশ চুল। চোখ দু'টা বড় বড়। সব সময় সুকন্যা চোখে মোটা করে কাজল দিত। আর হাতে পড়তো- কাঁচের চুড়ি। সুকন্যার একদিন অনেক জ্বর হয়। জ্বরের ঘোরে সুকন্যা স্বপ্ন দেখল- একটা কালো রঙের হিংস্র পশু তার বাবাকে তারা করেছে। চিৎকার দিয়ে সুকন্যার ঘুম ভাঙ্গল। এদিকে সুকন্যার বাবা গেছে শিকার করতে। আর মা গিয়েছে শপিং এ । ...

সন্ধ্যা হবো হবো করছে। মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গল। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো- এখন আমাদের বসুন্ধরা মার্কেটে যাওয়া উচিত। কেন জানি মন বলছে- বসুন্ধরা মার্কেটে গেলেই মেয়েটির বাবা-মাকে পাওয়া যাবে। একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম বসুন্ধরা মার্কেটে। বাচ্চা মেয়েটি আমার কোলে। ঘুম থেকে উঠার পরই মেয়েটি মুখ মলিন করে রেখেছে। বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে একটা জটলা। রেবতি নামে একটি মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আমি মেয়েটিকে জটলার সামনে নিয়ে যেতেই শুনতে পাই- এক ভদ্রমহিলা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তার বাচ্চা মেয়েটি এই মার্কেটের সামনে থেকে সকালবেলা হারিয়ে গেছে। ভিড় সরিয়ে সামনে গিয়ে দেখি- একটা ভদ্রলোকের কোলের উপর মাথা রেখে এক ভদ্রমহিলা খুব কাঁদছে। আমি তাদের দেখেই বুঝতে পারলাম- তাদের মেয়েটি সকাল থেকে আমার সাথেই আছে। আমি ভদ্র মহিলার কাছে গিয়ে বললাম- এই নিন আপনার মেয়েকে। ভদ্রমহিলা এবং লোকটি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। তাদেরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চলে এলাম রাস্তার এপারে চায়ের দোকানে

সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে। আমি চা শেষ করে সিগারেট ধরানোর আগেই দেখি- মেয়েটির বাবা-মা আমার সামনে । মেয়েটির বাবা বলল- আমার নাম শামছুর রহমান। আমি বাংলাদেশ বিমানের পাইলট। আমার মেয়ের নাম রেবতি। একটা একসিডেন্টের পর রেবতি কথা বলতে পারে না এবং চোখেও দেখতে পায় না। আগামীকাল আমরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছি- রেবতির চিকিৎসার জন্য। সকালে কিভাবে যেন রেবতি হারিয়ে যায়। আপনি আমাদের ফেরেশতার মতন এসে আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিলেন। আমরা কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি? আমার অনুমতির অপেক্ষা না করে মেয়েটির বাবা মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। কেন জানি মানুষের স্বচ্ছ পবিত্র চোখের পানি দেখলে- আমার চোখ ভিজে উঠে। রেবতি আমাদের তিনজনের চোখের জল মুছে দিল। আমি রেবতির কপালে ছোট একটা চুমু দিলাম।

রাতে বাসায় ফিরে- গোছল শেষ করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ব্যলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই আমার মনে পড়ল- রেবতি হচ্ছে আকাশের একটা তারার নাম। যে তারাটা খুব বেশী জ্বল জ্বল করে জ্বলে। যখন খুব কষ্ট কষ্ট হয়- তখন হিমিকে ফোন দেই। কবিতা আবৃত্তি করে শুনাই, তাতে আমার কষ্ট কমতে থাকে। নাকি হিমি সব কষ্ট নিয়ে নেয় ?

"তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৫

HARUNUR RASHID HIMEL বলেছেন: touchy

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩০

বর্ষন হোমস বলেছেন:
পড়লাম পুরোটা।অসাধারণ কাহিনী এবং সুন্দর পরিসমাপ্তি।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

গল্প?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। গল্প।

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৭

uzraaa বলেছেন: গল্পটি পড়লাম!! সময়ও সাড়ে এগারোর দিকে এগুচ্ছে আমিও বসুন্ধরার আসে পাসেই,,,দেখি এমন ঘটনা ঘটে কিনা,,,,হাহা
ভালো লিখেছেন,,,

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: হা হা । হুমায়ূনের মিসির আলির প্রথম দিককার বই-এর ঘটনা টুকলিফাই এবং এমপ্লিফাই করে ভালোই গল্প লিখলেন । মিসির আলির ক্ষেত্রে মেয়েটির বাবা প্রথমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন নাই বিস্ময়ে অভিভূত থাকার কারণে । আপনি সেটা স্কিপ করে ডাইরেক্ট মেয়ের বাবা কর্তৃক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অংশে চলে গিয়েছেন।


৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: অবশ্য আপনি আগে বলেছিলেন আপ্নি হুমায়ূন দ্বারা অনেক প্রভাবিত । এই গল্পের ক্ষেত্রে নিশিথীনি'র ইমা মেয়েটাকে বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবার ঘটনা মনে পড়ছে ।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি যে খুব হুমায়ূন আহমেদ পড়েন এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.