নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সবাই জানে টারজান খুব দুষ্ট ছেলে। তবে এ এলাকায় টারজানের কোনো বদনাম নেই। গত বছর বর্ষার সময় এক মস্ত সাপ স্বপ্নাদের রান্না ঘরের পেছন থেকে বের হয়ে এসেছিল। অনেক চিৎকার আর দৌড় ঝাঁপ শুনে টারজান ছুটে গিয়েছিল স্বপ্নাদের বাড়িতে। সবাই উঠোনে দাঁড়িয়ে সাপটিকে দেখছিল। আর ভয়ে কাঁপছিল। সাপটা বিশাল ফণা তুলে দুলছিল উঠোনের মধ্যিখানে। এসব টারজানের কাছে দুধভাত। কত সাপ মেরেছে সে। যদি বুদ্ধি থাকতো তাহলে সাপেরা টারজানের বিরুদ্ধে মামলা করতো। মুহূর্তের মধ্যে সে একটা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল কেউটে সাপটাকে। একটাও লাঠির বাড়ি মাটিতে পড়েনি। সাপের সারা শরীর থেতলে দিল সে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার এই বাহাদুরি দেখার জন্য স্বপ্না বাসায় ছিলনা তখন।
স্বপ্নাকে সে পুকুরে গোছল করতে দেখছিল। স্বপ্না দেখতে ভারী সুন্দর। দু'টা চোখ ভরতি ভীষন মায়া। এসব আগে সে কখনও দেখেনি। দুপুরবেলা সে উঠেছিল আমগাছে কাকের বাসা খুঁজতে। অনেকদিন ধরে তার কাক পোষার শখ। টারজান গাছে চড়তে খুব পারে। এই জন্যই কি তার নাম টারজান? অসংখ্যবার সে বোলতা, মৌমাছি আর ভীমরুলের হুল খেয়েছে। একবার তো একটা একফুট লম্বা বিছা কামড়ে ছিল। বিছার ব্যথায় মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্য এই সাংঘাতিক ব্যথা সে নিরবে সহ্য করেছিল। পাড়ার রফিক মাস্টার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তার পর্যন্ত তাকে অবশ করার ইনজেকশন দেওয়ার সময় বলেছিলেন, এ ছেলেটির ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা সাংঘাতিক। এসব কেসে ব্যথায় অনেকে মারা পর্যন্ত যায়। টারজান মরেনি। বরং তার মনে হয়েছে, সে এর চেয়ে আরও বেশি ব্যথা অনায়াসে সহ্য করতে পারে। মানুষ ব্যথাকে খুব ভয় পায়। টারজান পায় না। বরং ব্যথাকে তার কখনও কখনও বন্ধুর মতো মনে হয়।
আম গাছটা বড্ড পুরানো। তাছাড়া গতকাল বৃষ্টি হওয়াতে বেশ পিচ্ছল। টারজান এই গাছে কয়েকদিন আগে একটা সাপও দেখেছিল মগডাল থেকে নিচে নেমে যেতে। কে জানে হয়তো সাপটা এখনও হয়তো শীতের এই দুপুরে মগডালে বসে ঘুমাচ্ছে। টারজান কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। সে সাপের মতো বেয়ে গাছটাতে উঠে গেল। এবং একটা কাকের বাসা পেয়ে গেল। বাসায় কেউ নেই তবে তিনিটি ডিম পড়ে আছে। ডিম ফুটে কবে বাচ্চা বের হবে কে জানে! অনেকেই বলে কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। কিন্তু এগুলো কিছুতেই কোকিলের ডিম নয়। ডিম গুলো দেখে তার ভীষন আনন্দ হলো আর ঠিক তখনই নীচের পুকুরে সে স্বপ্নাকে দেখতে পেলো। পুকুরে ডুব দিচ্ছে। মাথা ভরতি চুল লেপটে আছে চোখে-মুখে আর পিঠে। সারা ভেজা শরীরে লেপটে আছে ভেজা জামা। জামা ভেদ করে ফুটে উঠেছে দু'টি স্তন। দেখতে নেই। এসব দেখতে নেই। বড় লজ্জার কথা। তবু যে বারবার চোখ সেদিকেই চলে যাচ্ছে! পাপ হচ্ছে। সে মনে মনে দুইবার প্রভুর উদ্যেশে বলল- ক্ষমা করো, ক্ষমা করো। দুইবার ক্ষমা চাওয়ার পরও তার চোখে যেন বারবার স্বপ্নার দিকে চলে যাচ্ছে।
ডুব দিয়ে আবার সাঁতার কেটে সামনের দিকে যাচ্ছে। টারজানও ভালো সাঁতার জানে। ছলাৎ ছালাৎ করে দুইহাত আর পা দিয়ে সাঁতার কেটে সামনে এগিয়ে যায়। আমগাছের মগডালে বসে সে স্বপ্নাকে চোরের মতো দেখছিল। স্বপ্না পুকুর ঘাটের সিড়িতে বসে গামছা দিয়ে মাথা মুছছে। এক আকাশ মুগ্ধ চোখে সে দেখে যাচ্ছে। স্বপ্নার বয়স ষোল। তার চেয়ে এক বছরের বড় হয়তো। ক্লাশ নাইনে পড়ে। কেউ তাকে এসব দেখতে বলেনি, তবু সে জানে এসব দেখা ঠিক নয়। দোষ হয়, পাপ হয়। টারজান অনেকবার দেখেছে স্বপ্না তার বন্ধুদের সাথে দড়ি লাফায়, এক্কা দোক্কা খেলে, দুই বেনী দুলাতে দুলাতে স্কুলে যায়। কতবার তাদের বাড়ি এসে পুষ্প'র সাথে কেরাম খেলেছে। তখনও সে এত মন দিয়ে স্বপ্নাকে দেখেনি। সেই শুকনো মেয়েটিকে আজ কেমন রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে। অবশ্য রাজকন্যা বললে একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। রাজকন্যাদের তো দুধে আলতায় গায়ের রঙ হয় বলে সে শুনেছে। দুধে আলতায় রঙটা যে কেমন তা অবশ্য টারজানের জানা নেই। তবে স্বপ্নার চুল অবশ্যই রাজকন্যাদের মতোন। রাজকন্যাদের আরও অনেক কিছু কি কি যেন থাকে। না, স্বপ্না মোটেই রাজকন্যাদের মতোন নয়। তবে সে আজ পাপ করেছে লুকিয়ে লুকিয়ে স্বপ্নাকে দেখে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন তো? সে প্রায়ই আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর সাথে অনেক কথা বলে। টারজান বুঝতে পারে আল্লাহ তার কথা শুনছে। সে যখনই আল্লাহর সাথে কথা বলে তখনই চারপাশে কেমন একটা বেলী ফুলের সৌরব ছড়িয়ে পরে। আল্লার কাছে সে যা চায় আল্লাহ তাকে তাই'ই দেন। না, সব দেন না। মনে হয় ভুলে যান। অর্ধেক দেন। বাকি অর্ধেক দিতে ভুলে যান বোধহয়। টারজান জানে না তার বাবা কে, মা কে। মনে মনে সে আল্লাহর কাছে একজন বাবা মা চেয়েছিল- আল্লাহ তাকে ওমর আলী আর সরলা বিবিকে দিয়েছেন। সাথে ছোট বোন পুষ্পকেও দিয়েছেন। এক মুহূর্তের জন্যও তার কখনও মনে হয় না- ওমর আলী, সরলা বিবি তার বাবা মা নন। এবং পুষ্প তার বোন নয়। তাদের সাথে যদি টারজানের দেখা না হতো তাহলে আজ সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো ফকিরের মতো। সে ঠিক করেছে তাদের ছেড়ে সে কোনোদিন যাবে না। নো নেভার।
টারজান আজকাল অনেক কিছু বুঝে। ওমর আলী তাকে সব সহজ করে পানির মতো বুঝিয়ে দেন। দেশভাগ কেন হলো তা আগে টারজান বুঝতো না, এখন বুঝে। বাংলা ভাষা নিয়েও কি যেন একটা সমস্যা হয়েছে। অনেকেই বলাবলি করছিল। সে তার স্কুলের নারায়ন স্যারের কাছ থেকে শুনেছে। যদি বাংলা ভাষায় কথা বলতে দেয়া না হয় তাহলে টারজান খুব বিপদে পরে যাবে। কারন সে বাংলা ভাষা ছাড়া আর অন্য কোনো ভাষা জানে না। নারায়ন স্যার বলেছেন- ''পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজে বাংলা ভাষার ওপর আক্রমন চালাচ্ছে। দেশভাগ নিয়ে কর দাঙ্গা হাঙ্গামা হলো এখন আবার ভাষা নিয়ে দাঙ্গাও শুরু হয়েছে। খাজা নাজিমুদ্দিন দাঙ্গা থামানোর জন্য বাংলা সমর্থকদের সব দাবী-দাওয়া মেনে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওমর আলীর কাছ থেকে টারজান জেনেছে, শেখ মুজিব নামে এক যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ভাষা আন্দোলনকে সার্থক করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কারাগার থেকে বের হোন এবং তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। টারজান বিশ্বাস করে আল্লাহ সব কিছু ঠিক করে দিবেন।
নানান সাত পাঁচ কথা ভাবতে ভাবতে টারজান আম গাছের মগডাল থেকে ধুম করে পুকুরে পড়ে গেল। স্বপ্না প্রচন্ড ভয় পেয়ে টারজানের দিকে তাকালো। টারজান ভালো সাঁতার জানে বলে নিজেকে সামলে নিল। তবে তার নিজেকে সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হলো। সে মনে মনে ভাবছে ভালো বাহাদুরি দেখানো হলো স্বপ্নাকে। স্বপ্না বলল- এই ভূত, তুই কোথা থেকে ধুম করে পড়লি জলে? ভেজা গায়ে টারজান উঠে এলো। তার নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগছে। খুব অপমান বোধও হচ্ছে। মনে মনে বলল- স্বপ্না তোমার জন্যই লাফ দিলাম, আর তুমি'ই আমাকে ভূত বললে?
টারজান বলল- এ এলাকায় আমার মতো আর কেউ আছে- সাপ মারতে পারে, যে কোনো গাছে মুহূর্তের মধ্যে উঠে যেতে পারে? আমার মতো করে এত জোরে ছুটতে পারে? পারে কেউ আমার মতো করে বিছার কামড় সহ্য করতে?
টারজান বাসায় ফিরল চুপি চুপি। কেউ তাকে দেখতে পেলো না। ওমর আলী দুপুরে খেয়ে ঘুমাচ্ছেন আর সরলা বিবি গিয়েছেন বেপারিদের কাছে টাকা আনতে। আর পুষ্প এখনও স্কুল থেকে ফেরেনি। সে দুপুরে আরাম করে খেয়ে স্বপ্নার কথা ভাবতে বসলো। আজ থেকে স্বপ্না কি তাকে অবহেলা করবে? রোগা পটকা একটা মেয়ে। সামনের পাটির একটা দাঁত আবার উঁচু। টারজান খুব টের পায় লেখা পড়া ভালোভাবে করতে পারলে কেউ আর তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারবে না। কিন্তু তার যে মোটেও পড়তে বসতে ইচ্ছা করে না। সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রান ভরে আল্লাহকে ডাকলো। হে আল্লাহ আজ আম গাছে উঠে স্বপ্নাকে গোছল করতে দেখে কি খুব পাপ করে ফেললাম? ক্ষমা করে দিও আল্লাহ। তোমাকে বলছি- আমার কিন্তু আপন এই দুনিয়াতে কেউ নেই। আমি কি খুব খারাপ? আজ যদি পুকুরে ডুবে মরে যেতাম তাহলে কি ভালো হতো?
এই কিশোর আল্লাহর সাথে সাথে কথা বলতে বলতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এবং ঘুমের মধ্যে স্বপ্নাকে স্বপ্নে দেখল। এই কিশোর টারজান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। যথাসময়ে এই বীরযোদ্ধার আরও গল্প বলা হবে।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: সিলেট।
ছবিটা এক যুগ আগের।
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম ;
লেখায় ভালোলাগা ।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বোন।
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
প্রামানিক বলেছেন: চালিয়ে যান সাথে আছি।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: তিন বছর ধরে উপন্যাসটা শুরু করেছি। দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০৫
সোহানী বলেছেন: চলুক সাথে আছি..........
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: সাথে থাকলে ভরসা পাই।
৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
টারজানের গল্পে কি আছে দেখা যাক!
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: এটা টারজানের গল্প নয়।
এই পর্বটা টারজানকে নিয়ে।
৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৫
মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: বিশ্বাস করেন রাজীব ভাই, এক টানা পড়ে গেলাম।পড়ে মনে হল আর একটু যদি থাকত.................।
একরাশ.......................................মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: জায়গাটা কোথায়? দেখতে ভালো লাগছে।