নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিসিপশনিস্ট

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১




একটি মেয়ের গল্প বলি- মেয়েটির বাবা নেই, মা নেই। এমনকি তার কোনো ভাই-বোনও নেই। আত্মীয় স্বজনও নেই। বাংলা সিনেমায় এরকম খুব দেখা যায়। মেয়েটি এখন কোথায় যাবে? মেট্রিক পাশ করার আগেই মেয়েটি তার বাবা মাকে হারায়। হোস্টেলে থেকে মেয়েটি ইডেন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছে। সাহায্য করার কেউ ছিল না মেয়েটির। টিউশনি করে নিজের লেখা পড়ার খরচ নিজে চালিয়েছে, খেয়ে পড়ে আজও বেঁচে আছে। মেয়েটির নাম নীলা। মেয়েটা খুব সুন্দরী। উগ্র সুন্দর নয়। সহজ সরল সুন্দর। অনাথ এই মেয়েটিকে ভোগ করার জন্য অনেকেই জাল বিছিয়ে ছিল। মেয়েটি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

নীলা আমাদের অফিসে চাকরী পায় রিসিপশনিস্টের। প্রতিদিন সকালে অফিসে ঢোকার সাথে সাথে মেয়েটিকে দেখে মনটা ভালো হয়ে যেত। এত সুন্দর মেয়ে! তার উপর খুব হাসি খুশি প্রানবন্ত। আমাদের অফিসের অনেকেই মেয়েটির সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। মেয়েটি কাজে দক্ষ। ভালো ইংরেজি জানে। কম্পিউটারের যে কোনো কাজ তার কাছে কোনো ব্যাপারই না। নীলার চেয়ে অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন লোক আমাদের অফিসে বড় বড় পদে চাকরি করছে। বেতনও নীলার চেয়ে তিন গুন বেশি। নীলা এত দুঃখী একটা মেয়ে কিন্তু তাকে দেখলে কিছুই বুঝা যায় না। খুব অল্প সময়ে নীলার সাথে আমার খুব ভাব হয়ে যায়। আমিও খুব বই পড়ি, নীলাও খুব বই পড়ে। অনেক বই আমরা আদান প্রদান করেছি।

মেয়েরা খুব দ্রুত বুঝতে পারে কে ভালো, কে লুচ্চা? নীলা নিজে থেকেই অফিসের কাছে আমাকে বেশ সাহায্য করে। একদিন সকালে আমি হেটে অফিস যাচ্ছি, হঠাত নীলা রিকশা থেকে আমাকে ডাকলো- উঠে আসুন। আমরা দু'জন নানান গল্প করতে করতে অফিসে এলাম। এত সময়ে নীলার সাথে আমার বেশ একটা সহজ সরল সুন্দর সম্পর্ক হয়ে যাবে, আমি চিন্তাই করিনি। অফিসে অনেকেই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে থাকলো। একদিন বিকেলে আমি নীলাকে বললাম, চলুন চা খেয়ে আসি। আমাদের অফিসের সামনে খুব সুন্দর একটা চায়ের দোকান আছে। প্রায়ই আমরা একাসাথে বসে চা খাই, নানান গল্প করি। দুজন দুজনকে নিজেদের অনেক কথা শেয়ার করি। নীলাকে যত জানছি, তত অবাক হচ্ছি। আর তার প্রতি আমার আন্তরিকতা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।

একদিন সকালে অফিসে আমাকে সিইও তার রুমে ডেকে পাঠালেন। সিইও বললেন, শাহেদ সাহেব আপনি কি শুরু করেছেন? রিসিপশনিস্ট মেয়েটাকে নিয়ে হাত ধরে রিকশা করে ঘুরে বেড়ান, দুইজন হাত ধরে চায়ের দোকানে বসে চা খান। এটা অফিস আর যেন এরকম না দেখি বা শুনি। তখনও আমি এক মুহূর্তের জন্য নীলার হাত ধরিনি। দুরত্ব আর ভদ্রতা বজায় রেখেই নীলার সাথে মিশেছি। পরের দিন দেখি ফ্রন্ট ডেস্কে নীলা নেই। অন্য একটি মেয়ে বসা। অতি কুৎসিত চেহারা। গলার স্বর হিজড়াদের মতোন। কোনো ব্যাক্তিত্ব নেই। বয়স কম করে হলেও আটত্রিশ। আর সারাক্ষন কিছু না কিছু খাচ্ছেই। এই চানাচূর খাচ্ছে। এই রোস্ট খাচ্ছে, বিস্কুট, কলা, ড্রয়ারে ডিব্বা ভর্তি নানান রকম খাবার। সারাক্ষন হাতে কিছু না কিছু আছেই। সুযোগ পেলেই সবার সাথেই ঢলাঢলি করে। বিশাল বক্ষ। ওড়না ব্যবহার করে না। নীলার চাকুরি চলে যাওয়াতে আমি মনে খুব কষ্ট পেলাম।

এ সমাজে একটি মেয়ে একা একা ব্ড় হওয়া চারট্টিখানি কথা নয়। তার উপর মেয়েটি আবার সুন্দরী। নীলার জন্য আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি অফিসে জানিয়ে দিলাম চাকরিটি আমি ছেড়ে দিব। তাতে অফিসের অনেকেই অখুশি। কারন আমি পাঁচ জনের কাজ একা করি। যখন কাজ করি তুফানের মতো কাজ। কাজে ফাঁকি দেই না। আমি খুব ভালো করেই জানি, তারা শিপিং মিলস একজন ভালো কর্মচারী হারালো। এজন্য তাদের বেশ বেগ পেতে হবে। এদিকে আমি নীলার জন্য এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ারে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে ফেলি। এই কোম্পানী বড় বড় ইভেন্টের কাজ করে। নীলা অবশ্য এখানে কাজ করেনি। সে সাউথইষ্ট ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারারের চাকরি পেয়ে যায়। ট্রেজারারের চাকরিতে সে বেশ ভালো আছে। সম্মান আছে। চাকরির খাতিরে তাকে আগের হোস্টেল টি ছাড়তে হয়েছে। সে নতুন হোসেটে উঠেছে। আমার খুব ইচ্ছা হয়- নীলাকে বুঝিয়ে আমার বাসায় এনে রাখি। আমাদের একটা রুম তো খালি'ই পরে থাকে।

আমার একটা প্রেমিকা আছে। নাম নিশি। তার সাথেই আমার বিয়ে হবে। সে বরিশালের উজির পুর আছে গেছে তাদের গ্রামের বাড়ি। দুই সপ্তাহ পর ফিরবে। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম- নীলাকেই আমার বেশি ভালো লাগছে। মেয়েটার হাসি সুন্দর। চোখ সুন্দর। গলার ভয়েস সুন্দর। আর মনটা কি স্বচ্ছ! অনেকদিন হয়ে গেল নীলার সাথে দেখা হয় না, তবে মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা হয়। একদিন আমি বনানীর সাউথইষ্ট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গেলাম। নীলাকে দেখে মনটা খুশিতে ভরে গেল। চুন্ডি নামের একটা শাড়ি পড়েছে। সারা পিঠময় ছড়ানো চুল। কি যে সুন্দর লাগছে! কিন্তু তারা শিপিং মিলস এ চাকরি করার সময় নীলা সব সময় সেলোয়ার কামিজ পড়তো। নীলাকে বললাম, চলো। তোমার সাথে অনেক কথা আছে। নীলা বলল- তোমাকে দেখে অনেক খুশি লাগছে। আমারও অনেক কথা জমা হয়ে আছে। নীলা ভিসিকে বলে ছুটি নিয়ে নিল।

আমরা স্টার কাবাবে দুইজন মিলে লাঞ্চ করলাম। নীলা বলল, এবার অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা। আজ আমরা রাত আটটা পর্যন্ত একসাথে থাকবো। আমার এই নতুন হোস্টেলে রাত আটটার মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। নীলা আমার পাশে! নিজেকে সম্রাট অশোক মনে হচ্ছে। চারদিকটা অন্যদিনের তুলনায় বেশি সুন্দর লাগছে। হঠাত রোদের তেজ কমে এসেছে। আকাশ ভর্তি মেঘ জমতে শুরু করেছে। আমরা বনানী থেকে গুলশান এক হয়ে হাতিরঝিল চলে এলাম। ঠিক এই সময় ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। নীলা আর আমি বাচ্চা ছেলেমেয়ের মতো ভিজতে থাকলাম। নীলার শাড়ি শরীরের সাথে লেপটে আছে। স্তন আর কোমরের দিকে তাকালে কেমন যেন শিহরন জাগে। হঠাত আমার নিশি কথা মনে পড়লো। নিশি আজ বরিশাল থেকে এমভি মাছ রাঙ্গা লঞ্চে করে ঢাকা আসবে। আমার নিশিকেও ভালো লাগে আবার নীলাকেও ভালো লাগে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমার দুইজনকেই লাগবে।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভাল গল্প লিখেছেন ভাই, এমন গল্প আমার মাথার মধ্যেও কিলবিল করে লেখার সাহস হয়না বউয়ের ভয়ে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: সাহস করে লিখে ফেলবেন।
শেষে দেখবেন বউ বলবে, হুম বেশ ভালৈ লিখেছো।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬

নাহিদ০৯ বলেছেন: মেয়েরা খুব দ্রুত বুঝতে পারে কে ভালো, কে লুচ্চা?

আপনার এই কথা মতে তাহলে ছেলেরা ছেলেদের সাথে লুচ্চামি করে?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার যা বুদ্ধি তাই তো বুঝেবেন।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


একাধিক জনকে ভালোবাসাও সম্ভব

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: সম্ভব। কিন্তু সেটা গোপন রাখতে হবে।

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: বড়দের বিষয়ে আলোচনা হইতে বিরত রহিলাম।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লে সমস্যা নাই। সাহস করে পড়েই ফেলুন।

শুধু সব সময় মনে রাখবেন, ভালোটা গ্রহন করবেন। খারাপটা বর্জন করবেন।

৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প পাঠে ভালো লাগলো জনাব।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ সুজন ভাই।

৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Nice, excellent

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ক্যারেক্টার ঢিলা...

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:১০

রাজীব নুর বলেছেন: না, তা ঠিক বলা যাবে না।

৮| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাই, অবস্থা সুবিধার না। এক সাথে দুইজন সামলাতে পারবেন তো?
মাছরাঙা লঞ্চ সম্ভব্ত বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
আপনি আবার আবেগে ফালাইয়া দিলেন। ছোট বেলায় আমরা মাছরাঙা লঞ্চে ঢাকা আসতাম।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: সামলানো সম্ভব।

৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাই, অবস্থা সুবিধার না। এক সাথে দুইজন সামলাতে পারবেন তো?
মাছরাঙা লঞ্চ সম্ভব্ত বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
আপনি আবার আবেগে ফালাইয়া দিলেন। ছোট বেলায় আমরা মাছরাঙা লঞ্চে ঢাকা আসতাম।

১০| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০৭

নিশি মানব বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে গল্পটা।
প্রথমে দুঃখ জাগাইলেন, এরপরে সহানুভুতি আদায় করলেন।
তারপর, জিদ উঠাইলেন, এরপরে মনটাকে দৃঢ করলেন।
সবশেষে ভালবাসা সৃষ্টি করলেন। পরে আমার গার্লফ্রেন্ডকে ভাগায়া নিয়া গেলেন।

০১ লা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: এছাড়া আর অন্য উপায় নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.