নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সময় সন্ধ্যা সাতটা।
সারাদিন বড্ড কড়া রোদ ছিল। এখন চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। আমি বিখ্যাত মিসির আলি সাহেবের ঘরে বসে আছি। তিনি আমার জন্য চা বানাতে গিয়েছেন। তার কাজের ছেলেটি নাম জিতু মিয়া। সে গিয়েছে গ্রামের বাড়িতে। তাই মিসির আলিকেই চা বানাতে হচ্ছে। মিসির আলি সাহেব গতকালই দশ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরেছেন। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। একটু পর-পর রান্না ঘর থেকে তার কাশির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বেচারার জন্য আমার খুব মায়া লাগে। তার সারা ঘরময় নানান রকম বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভদ্রলোক যে বেশ অগোছালো তা বেশ বুঝা যাচ্ছে। তবে তিনি যে প্রচুর বই পড়ে-পড়ে পন্ডিত হয়েছেন তা পরিস্কার বুঝা যায়।
আমি এক সমস্যা নিয়ে মিসির আলি সাহেবের কাছে এসেছি। আমি জানি, তার ধৈর্য অসাধারন এবং তিনি প্রচন্ড পরিশ্রমী একজন মানুষ। তিনি আমার কথা খুব মন দিয়ে শুনবেন। আমার সমস্যা সমাধানের জন্য যা যা করতে হয় করবেন। মিসির আলীর জন্য এক কার্টুন বেনসন সিগারেট এনেছি। এক কার্টুন মানে বিশ প্যাকেট। আমার খুব শখ একদিন দাওয়াত দিয়ে মিসির আলিকে আমার বাসায় ভালো মন্দ খাওয়াই। সুরভির রান্না খেলে মিসির আলি মুগ্ধ হয়ে যাবেন এব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আজ আমি ঘরে ঢুকেই মিসির আলিকে দেখে একটা বড় ধরনের ধাক্কা খাই। তিনি একটি সস্তা প্রেমের বই পড়ছিলেন। বইটির নাম 'সুইট সানডে'। লেখক জন স্টেইনবেক। তার মতো লোক এমন সস্তা প্রেম ভালোবাসার বই কেন পড়বেন? ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। তিনি পড়বেন, 'দ্য আর্ট অব ওয়ার' অথবা হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই।
মিসির আলি আমাকে হাসি মুখে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন। তিনি চা বানাতে অনেক সময় নিয়েছেন। চা বানাতে এত সময় লাগার কথা না। চায়ে চুমুক দিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। চা ভালো হয়নি। আশা করেছিলাম তার বানানো চা অসাধারন হবে। চায়ের স্বাদ মুখে অনেকদিন লেগে থাকবে। তিনি চা শেষ করে সিগারেট ধরালেন। আমি মুগ্ধ হয়ে তার সিগারেট খাওয়া দেখছি। একটা মানুষ এত সুন্দর করে সিগারেট খেতে পারে! আমার বলতে ইচ্ছা করলো স্যার আপনি আরও সিগারেট খান। আমি আমার সমগ্র জীবনে এত সুন্দর করে সিগারেট খেতে কাউকে দেখিনি। মিসির আলির সিগারেট খাওয়া দেখলে মনে হয়- সিগারেট খাওয়া ও যেন একটা শিল্প। রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও এত সুন্দর করে সিগারেট খাওয়া সম্ভব নয়।
মিসির আলি খুব নরম সুরে বললেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। এই কথা বলার সাথে সাথে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল এবং বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। মিসির আলি অন্ধকারের মধ্যেই মোমবাতি খুঁজে বের করলেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার কাছে কেন এসেছো রাজীব নূর?
আমি বললাম, স্যার আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারলাম আপনি অসুস্থ। তাই আপনাকে দেখতে এলাম।
মিসির আলি হেসে ফেললেন, সহজ সরল সুন্দর হাসি। তিনি মুখে হাসি রেখেই বললেন, তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। এসেছো একটা সমস্যার কথা বলতে। আমি কি ঠিক বলেছি? ইংরেজিতে একটা কথা আছে 'Listen to understand, not to reply'।
আমি লজ্জিত গলায় বললাম জ্বী স্যার, আপনি ঠিক বলেছেন।
মিসির আলি বললেন, অল্প কথায় তোমার সমস্যা বলো।
আমি বললাম, স্যার আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি তার পাশের ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে খুন হয়েছে। দরজা ভেতর থেকে আটকানো। এমনই দরজা ভেতর থেকে না খুললে খোলা যাবে না। মেয়েটি কিভাবে খুন হলো? ঘরে তো কোনো ছুরি পাওয়া যায় নি। কিন্তু মেয়েটিকে ছুরি দিয়েই খুন করা হয়েছে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় মেয়েটি ফ্লোরে পরে আছে। রক্তে ফ্লোর ভেসে গেছে। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। কিন্তু ঘরে কোনো ছুরি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মিসির আলি চোখে বন্ধ করে আমার কথা শুনলেন। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? অসুস্থ মানূষ ঘুমিয়েও পড়তে পারেন। আমি তাকে ডাক দিবো? না দরজা বন্ধ করে চলে যাবো? কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না, এমন সময় মিসির আলি চোখ মেলে চাইলেন এবং একটি সিগারেট ঠোটে নিলেন। সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন, ঘটনাটা আরেকবার প্রথম থেকে বলো। আমি জানতাম মিসির আলি ঘটনাটা আরেকবার শুনতে চাইবেন। এটা ওর স্বভাব। একই ঘটনা তিনি দুইবার তিনবার শুনে অনেক কিছু বুঝে ফেলেন। অনেক ক্লু পেয়ে যান।
আমি ঘটনাটা আরেকবার বলা শুরু করলাম, স্যার মেয়েটি বাসায় একা ছিল। তার বাবা মা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে। মেয়েটি বাবা মার একমাত্র সন্তান। ইডেন কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ছে। বাসায় কেউ ছিল না। মেয়েটি ঘরের মধ্যে একা ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে মেয়েটির বাবা মা একটু বেশি রাত করে বাসায় ফিরে দেখতে পান মেয়ের ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। অনেক ডাকাডাকি করার পর মেয়ের ঘর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না আসায় তারা পুলিশে ফোন করে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় মেয়েটি মরে পড়ে আছে। পেটের কাছে অনেকখানি ক্ষত। ক্ষতটি দেখলে মনে হয় কেউ তাকে ছুড়ি দিয়ে খুন করেছে। কিন্তু পুলিশ সারা ঘর তল্লাশি করে কোনো ছুড়ি বা এই রকম কিছু পায়নি। তাহলে মেয়েটি কিভাবে মরলো?
এবার মিসির আলি চোখ খোলা রেখেই আমার কথা শুনলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, আমি বলছি। তুমি নোট করো।
১। মেয়েটি তার ঘরে একা।
২। দরজা ভেতর থেকে লাগানো। আর দরজাটা এমন যে ভেতর থেকে না খুললে দরজা খোলা সম্ভব নয়।
৩। ঘরে কোনো ছুরি বা এই রকম কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু মেয়েটি ছুরির আঘাতেই মারা যায়।
মিসির আলি আরেকটি সিগারেট ধরালেন, আর ঠিক তখন ইলেকট্রিসিটি এলো। এবং মিসির আলি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, মেয়েটি কিভাবে খুন হলো- তা আমি বুঝতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমি তোমাকে বলল না, মেয়েটি কিভাবে খুন হলো। আমি চাই তুমিই এই রহস্য খুঁজে বের করো। আমি আকশ থেকে পড়লাম! আমি কিভাবে এই খুনের রহস্য বের করবো!(?) আমার মতো মানুষের পক্ষে ইহজীবনে সম্ভব নয়? আমি এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে মিসির আলি সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, তুমি পারবে। আমি তোমাকে একটা ক্লু দিয়ে দিচ্ছি। ক্লু টা হচ্ছে- 'বরফ'।
আমি বিড়বিড় করে 'বরফ' বলতে বলতে ঘর থেকে বের হচ্ছি, তখন মিসির আলি বললেন, সুরভি কি 'সুইট সানডে' বইটি পড়েছে? সুরভিকে বলো একদিন এসে তার রান্না খেয়ে যাবো। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি, ইলিশ মাছের ভর্তা এবং গরুর মাংস ভূনা। আর শোনো, একজন অসুস্থ মানুষের ঘর এলোমেলো থাকাটাই স্বাভাবিক। দশ দিন ঘরের বাইরে ছিলাম। কাজের ছেলেটি ছুটিতে। আর ঘরে চিনি নেই। তাই চা টা তোমার কাছে ভালো লাগেনি। আমি চায়ে চিনি খাই না। শুধু লিকার খাই। সাথে এক চিমটি লবন। আমি মিসির আলির দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। তিনিও হেসে দিলেন।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: আরে বাবা--- সে যোগ্যতা কি আমার আছে?
লিখতে চেয়েছি একটা, হয়ে গেছে আরেকটা। আজিব!!!
২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মিসির আলি, আমার পছন্দের চরিত্র। হিমু, রুপা, নীলা ওদের ভালোলাগে না।
আপনার লেখা পরে পড়বো।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: না না। পরে ক্যান?
পোষ্ট করার সাথে সাথে পড়বেন প্লীজ। আপনারা যদি না পড়েন, না মন্তব্য করেন তাহলে উৎসাহ পাই না।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: গোয়েন্দা কাহিনী মনে হল।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: ওই রকমই কিছু একটা লিখতে চেষ্টা করেছি।
৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫
বন্ধুমল্ল বলেছেন:
মিসির আলি খুব নরম সুরে বললেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। এই কথা বলার সাথে সাথে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল।
দারুন,,, কেন যেন হাসি পেলো খুব,,,
ভালো লিখেছেন ভাই,,,,
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: না লেখাটা ভালো হয়নি।
বড্ড তাড়াহুড়া করতে গিয়ে লেখাটা এলোমেলো হয়ে গেছে।
৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
মাআইপা বলেছেন: খুব ভাল হয়েছে। আরো লিখুন এভাবে।
শুভ কামনা রইল।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮
রোদ্দূর মিছিল বলেছেন: ভালো লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২
রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই কি ভালো লিখেছি?
না কথার কথা বললেন?
৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: বিশ্ব সুন্দরী সুস্মিতা সেন অভিনিত হিন্দি সিনেমা “সময়” এর খুনের কাহিনিতে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে বরফ !!! ছবিটি না দেখে থাকলে দেখতে পারেন ভালো লাগার কথা ।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: গত পাঁচ বছরে একটাও হিন্দি সিনেমা দেখা হয়নি।
তবে এই ছবিটা দেখার ইচ্ছা আছে।
৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমি রুটি বানায়ে খাচ্ছি, আর ব্লগের পোষ্টগুলো পড়ছি।
২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কেন রুটি বানাচ্ছেন? বাসায় কেউ নেই?
দোকান থেকে কিনে আনলেই তো ঝামেলা শেষ।
৯| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: সত্যি বলতে অবাক হইনি
খুনের এই অ্যালিবাই থিওরি,
রক্তে ফ্লোর ভাসা,
আর লকড রুম কেসে বরফের ব্যবহার বিরল নয়।
লেখা ভালো লেগেছে।
২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান।
ভালো থাকুন।
১০| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ১০ লাখ ভিউ !! অভিনন্দন
২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: সব আপনাদের ভালোবাসা।
১১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৯
বর্ষন হোমস বলেছেন:
উনি মার্ডার প্লেস এ না গিয়েই,পর্যবেক্ষণ না করেই,বিশ্লেষণ ইত্যাদি ইত্যাদি না করেই সমাধানে চলে গেলেন।একটু বেশি হয়ে গেল না!আপনার গল্পের প্রেক্ষাপটের জন্য উপযোগী হচ্ছে পরামর্শ।অর্থাৎ মিসির আলি কিন্তু পরামর্শও দিয়ে থাকেন।পরামর্শের সময় সাধারণত সময় নিয়ে চা বানানো,সিগারেট খাওয়া,চায়ের স্বাদ ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করা যায়।মার্ডার কেস এ খুবই তাড়া থাকে।সাধারণত মক্কেল এসেই ওনার ঘটনা বর্ণনায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।আপনি লেখার চেষ্টা করেছেন।অনেক অনেক শুভকামনা।
ধন্যবাদ।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে লেখা লেখি আমার কর্ম না।
তবু অবসর পেলে কিছু লিখতে চেষ্টা করি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১১
খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাই কি রহস্য উপন্যাস লেখা শুরু করলেন?