নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
পুরানো পেঁচারা সব কোটরের থেকে
এসেছে বাহির হ'য়ে অন্ধকার দেখে
মাঠের মুখের’পরে,
সবুজ ধানের নিচে–মাটির ভিতরে
ইঁদুরেরা চ'লে গেছে–আঁটির ভিতর থেকে চ'লে গেছে চাষা,
শস্যের ক্ষেতের পাশে আজ রাতে আমাদের জেগেছে পিপাসা!
------- জীবনানন্দ দাশ।
শাহেদ মনে মনে তিনবার বলল, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি গুলোকে আমি ঘৃণা করি।
রুপা স্পিনিং মিলের চেয়ারম্যানের স্ত্রী আজ ফ্যাক্টরীতে এসেছেন। খুবই উগ্র সাঁজ তার। মাসে তিন লাখ টাকার বেশি পার্লারে ব্যয় করেন। তবু তাকে সুন্দর লাগে না। তার নিজের ব্যাক্তিগত বিউটিশিয়ান আছে তিনজন। নব্বই লক্ষ টাকা দামের গাড়িতে চলাচল করেন। যদিও একসময় তিনি ভয়াবহ অভাবের মধ্যে দিন যাপন করেছেন। সেসব অতীত। মানুষের বর্তমানটাই আসল। শাহেদ যতবার চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে দেখে ততবার মনে মনে বলে, ম্যাডাম আপনার চেহারার মধ্যে একটুও সৌন্দর্য নেই। চোখে মুখে কোনো মায়া নেই। আপনি যখন কড়া মেকাপ করেন তখন আপনার মনের কলুষতা গুলো আরও বেশি ফুটে উঠে। কুৎসিত লাগে আপনাকে। আপনার চেয়ে হাজার গুন বেশি সুন্দর লাগে আপনার বাসার কাজের মেয়ে গুল নাহারকে। শাহেদ প্রতিদিন তার ডায়েরীতে ফ্যাক্টরীর ঘটনা গুলো লিখে রাখে। আবার ভাবে লিখেই বা কী হবে? তবু কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। যাদের কথা শোনার কেউ নেই, তাদেরও তো অনেক কিছু বলার থাকে! আজ সে অফিসে সবচেয়ে বেশি টাকা বেতন পায়। বেতনের ডবল সে অন্যভাবে ইনকাম করে।
চেয়ারম্যান সাহেবের মায়ের নাম ছিল সুফিয়া। তিনি মায়ের নামেই কোম্পানীর নাম রেখেছিলেন- 'সুফিয়া স্পিনিং মিল।' মা মারা যাবার পর কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্ত্রীর নামে, রুপা স্পিনিং মিল। এই স্পিনিং মিলে শাহেদ চাকরি করে পাঁচ বছর ধরে। শাহেদ যখন এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে তখন তার চেহারা বেশ সুন্দর ছিল। সুঠাম স্বাস্থ্য। আজ তার চেহারা হয়েছে লিকলিকে। গালের হনু বের হয়ে গেছে। তাকে দেখলে মনে হয় জন্ডিসের রোগী। অফিস ছুটির পরও তার অনেক কাজ করে দিতে হয় চেয়ারম্যানের। যেদিন চেয়ারম্যানের কাজ থাকে সেদিন থাকে তার স্ত্রীর কাজ। তাতে বাড়তি কিছু পয়সা পাওয়া যায়। অনেক সময় তাকে ছুটির দিনেও ডিউটি করতে হয়। সে তার স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না। মা-বাবা অথবা ভাই বোনকে সময় দিতে পারে না। তবে তার পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে সে সুখী করতে পেরেছে। আজ তাদের কোনো অভাব নেই। বেশ স্বচ্ছল। পরিবারকে খুশি রাখতে গিয়ে তার প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। শাহেদ মনে মনে ভাবে কাজ করার এখনই সময়। যে কাজই হোক। টাকা হাতে আসলেই হলো। আর যে কাজে টাকা আসার সুযোগ একেবারেই নেই, সে কাজে শাহেদ অফিসের অন্য লোকজনদের পাঠায়।
চেয়ারম্যানের স্ত্রী রুপা বিবেক ছাড়া মানুষ। এটা ফ্যাক্টরীর সবাই জানে। শাহেদ এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বুঝতে শিখেছে- সমাজের বেশিরভাগ মানুষ আইন নয়, বিবেক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আইন অমান্য করেন কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী মানুষ। তার প্রভাব পড়ে অন্যদের ওপর। এতে তারা ন্যায় আর অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে ভুলে যায়। গালগল্প ও অন্যের সমালোচনা করা প্রায় প্রতিটি মানুষের এক সহজাত কুপ্রবৃত্তি। রুপা স্পিনিং মিলে সব কিছু মিলিয়ে শাহেদ খুশি। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তার সংসার ভালোই চলছে। বেশ কিছু টাকাও জমাতে সক্ষম হয়েছে সে।
শাহেদ গিয়েছে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। তার নানু অসুস্থ। এমন সময় রুপা ফ্যাক্টরী এসে উপস্থিত। শাহেদ গ্রামে যাওয়ার আগে রুমা ম্যাডামকে বলেই গেছেন। তবু রুপা এসেই সমনজারি করলো এক্ষন শাহেদকে আসতে বলো। অফিস থেকে শাহেদকে ফোন করা হলো। শাহেদ তার নানুকে হাসপাতালে রেখেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রুপা ম্যাডাম একটা পিতলের বড় পাতিল কিনতে বলেছিলেন। সেই পিতলের পাতিলে বনসাই লাগানো হবে। তিনি তার এক বান্ধবীর বাড়িতে এমনটা দেখেছিলেন। শাহেদ জানে পয়সাওয়ালা লোকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে নেই। ফ্রয়েড বলেছেন, মানুষ সভ্যতার মুখোশ পরে আছে। চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী খানদানী বড়লোক না। হুট করে ধনী হওয়া লোক বড় ভয়ঙ্কর। আচ্ছা, মানুষের মনের অজান্তে ঘটে যাওয়া কোন নির্দেশকে সহজাত প্রবৃত্তি বলে? প্রবৃত্তি নিজের চেষ্টায় অর্জিত হয়?
শাহেদ ঢাকা ফিরে পিতলের পাতিল আর বনসাই কিনে ম্যাডামের বাসায় যায়। ম্যাডাম বনসাই দেখে বাচ্চাদের মতো খুশি হয়। শাহেদ ম্যাডামকে পা ছুঁয়ে সালাম করে। এটা অলিখিত নিয়ম। যতবার দেখা হয় ততবার পা ছুঁয়ে সালাম করে। এই সমস্ত সস্তা কাজ করেই ধনীদের খুশি রাখতে হয়। দয়াদাক্ষিণ্য বেশ ভালোই পাওয়া যায়। শাহেদ গত বছর বুড়িগঙ্গা নদীর ওপাড়ে জায়গা কিনে ফেলেছে। আগামী বছর বাড়ির কাজ ধরবে। তার অনেক টাকার দরকার। এই ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে এসে যে শাহেদ কত কিছু শিখলো! একটি শিশু জন্মের পরপর কান্না করছে। সব ধরনের পশু-পাখি জন্মের পর এক ধরনের শব্দ করে। তাকে কিন্তু কেউ শিখিয়ে দেয়নি এই আওয়াজটা করতে, তাহলে সে কোথা থেকে নির্দেশ পেলো এই কান্না বা শব্দ করার? প্রয়োজন শাহেদকে সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছে। কিন্তু কোথাও চাকরি পায়নি। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সে। তাই সে রুপা স্পিনিং মিলের এই চাকরিটা খুব মন দিয়ে করে। প্রতিনিয়িত তাকে অনেক অপমানের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সে অপমান আজকাল আর গায়ে মাখে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।
া
শাহেদ চেয়ারম্যান আর চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে হাজারটা মিথ্যা বলে তাদেরকে খুশি করে। চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য মিথ্যা বলাটা দোষের না। শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলে। শাহেদ ভালো করেই জানে খারাপ প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত, ভাল গুণ মানুষের অর্জন। মূলত ফ্যাক্টরীতে শাহেদের পদ ম্যানেজার। আসলে সে চেয়ারম্যানের ডাম হাত এবং চেয়ারম্যানের স্ত্রীর পিএস। ফ্যাক্টরীর সবাই তাকে সমীহ করে। শাহেদ ইচ্ছা করলে অনেকের চাকরি খেয়ে দিতে পারে। যাকে শাহেদের ভালো লাগে না, গোপনে সে ব্যবস্থা নিয়ে নেয়। পরের দিন দেখা যায় তার চাকরি চলে গেছে। অনেক কষ্টে সব কিছু শাহেদ নিজের কন্টোলে এনেছে। এখন সে যা চায়, যেভাবে চায় তাই'ই হয় এই ফ্যাক্টরীতে। কোম্পানীর চেয়ারম্যান বা তার স্ত্রী বুঝতেই পারেন না আজকাল শাহেদের ইচ্ছা'ই তাদের চলতে হচ্ছে। অতি চালাক মানুষের এইভাবেই ধরা খায়।
আপনি কি জানেন প্রতিটা অফিসে এই রকম একটা করে শাহেদ আছে।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: প্রশ্নই আসে না।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৪
রসায়ন বলেছেন: লিংক সেইভ করে রাখলাম। পরে পড়বো
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: ভুলে যাবেন না তো?
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৩
প্রামানিক বলেছেন: এরকম শাহেদদের কারণে যোগ্য লোকগুলো অযোগ্য হয়।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: একদম সঠিক বলেছেন।
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৪
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: প্রবৃত্তিরও বুঝি বংশধর আছে,,পরিস্থিতি মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে,মানবিকতা যদিও থাকে সেটা ততটা কাজ করেনা যতটা ব্যক্তি করতে চায়,,কারন তার পিছুটান তাকে মন্দ কাজ করাতে বাধ্য করে।।লেখা বরাবরের মতই ভাল লাগে,,এটাও মন্দ না
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন।
৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৫
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: রাজীব ভাই চশমাটার দাম কত ???
চশমাটা খুব মনে ধরেছে !!
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: হি হি হি ---
৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৬
Taufik Alahi বলেছেন: ব্যাস্ততার মধ্যে ও সম্পর্ন্ন পড়লাম
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাংলাদেশে প্রাইভেটে চাকুরী করা বেশ কঠিন কাজ।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী ঠিক বলেছেন।
চাকরী পাওয়ার চেয়ে চাকরি টিকিয়ে রাখা কঠিন কাজ।
৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৯
কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: আপনার লেখাটা অনেকের বলা চাকরির অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায়। ++ ভালো ছিলো
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
৯| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৪৮
দিবা রুমি বলেছেন: কবিতার সাথে উপরের ছবিটা কেমন যেন মিলে যায়
সার্থক কবি না ছবিওয়ালা?
লেখেছেন ভাল।
শুভকামনা থাকল।
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছুর সাথে সব কিছুর একটা সামঞ্জস্য আছে রে ভাই।
১০| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০০
খায়রুল আহসান বলেছেন: হুট করে ধনী হওয়া লোক বড় ভয়ঙ্কর - ঠিক!
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: এদের বউ রা তিন ধাপ এগিয়ে।
১১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৮
ধ্রুবক আলো বলেছেন: মনের কথাই বলেছেন, হুট করে ধনী হওয়া লোক বড় ভয়ঙ্কর।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
১২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০৪
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: + আমার নানু বাড়ি নরসিংদী। আমি এখন সেখানেই আছি
+আপনার ডাকনাম কি শাহেদ?
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: না আমার ডাক নাম রাজীব। খান বংশ।
গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর। ঢাকায় থাকি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৪
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: আপনি তো আর শাহেদের মত না। নাকি?