নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শাহেদ জামাল- (দুই)

১৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪



যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে।
শাহেদ পাড়ার চায়ের দোকানে আটকা পড়েছে। ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সে তার গাড়ি রাস্তার বাম পাশে খালি জায়গায় রেখে চা খেতে এসেছিলো। বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষন নেই। বরং বৃষ্টি বেড়েই চলেছে। চায়ের দোকান একেবারেই খালি। সে ছাড়া আর কেউ নেই। চায়ের দোকানদার চুন্নু চুপ করে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। শাহেদ প্রথমে এক কাপ চা খাবে। তারপর সিগারেট। অবশ্য চা সিগারেট একসাথে খেতে বেশি মজা। এক চুমুক চা, তারপর একটান সিগারেট। অথচ তার দাতের ডাক্তার বলেছেন। দাত ভালো রাখতে চাইলে চা সিগারেট দু'টাই বাদ দিতে হবে। ডাক্তারদের কথা শুনলে জীবন চলে না। আবার না শুনেও উপায় নেই। তাই শাহেদ আগে সিগারেট খায়। তারপর চা। চা সিগারেট একসাথে খেলে দাতে কালো দাগ বসে যায়। কিন্তু চা সিগারেট ছাড়া ঠিক জমে না। এটা ডাক্তারেরা বুঝেন না।

বিজলি চমকাচ্ছে বারবার।
শাহেদ চুপ করে চায়ের দোকানে বসে আছে। তার এখনও চা সিগারেট খাওয়া হয়নি। চুন্নু মিয়া দোকানে নেই। দোকানের পেছনের ঘরটা চুন্নুর থাকার ঘর। চুন্নু ঘরে গিয়েছে স্ত্রী সাথে দেখা করতে। নতুন বিয়ে করেছে তাই ক্ষনে ক্ষনে স্ত্রীকে দেখতে যায়। শাহেদও কি বিয়ে করলে ক্ষনেক্ষনে তার স্ত্রীকে দেখতে ইচ্ছা করবে? ঠিক এমন সময় চুন্নুর দোকানের সামনে একটা মেয়ে রিকশা থেকে নামলো। মেয়েটা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে চায়ের দোকানে এসে দাড়ালো। মেয়েটা প্রায় ভিজে গেছে। শাহেদ মুগ্ধ চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে এত সুন্দর লাগছে কেন? কিছু কিছু মেয়ে আসলেই অনেক বেশি সুন্দর! মেয়েটা শাহেদকে একটা কাগজ দেখিয়ে বলল, এই ঠিকানা কোথায় বলতে পারেন? শাহেদ ঠিকানা ভালো করে দেখে বলল, ঠিকানা ভুল। ৬/বি দিয়ে এই এলাকায় কোনো নম্বর হয় নাই। মেয়েটার চোখে মুখে বিরাট হতাশার ছায়া পড়লো।

মেয়েটা কাঁদছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।
বৃষ্টির পানিও হতে পারে। শাহেদ বলল, আপনি এখানে বসুন। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন তো! বৃষ্টির তোড়জোর আরো বেড়েছে। মনে হচ্ছে আজ চুন্নুর দোকান উড়িয়ে নিয়ে যাবে। চুন্নু তার স্ত্রীর সাথে দেখা করে ফিরে এসেছে। শাহদের দিকে তাকিয়ে চুন্নু হেসে বলল, সংসার করাটা বিরাট দিকদারি জামাল ভাই। বিরাট ভুল হয়ে গেছে বিয়ে করে। শাহেদ বলল, দুই কাপ চা দাও। মেয়েটা ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় বৃষ্টি দেখছে মুগ্ধ চোখে! মেয়েটা চোখ বন্ধ করলো এবং ক্ষনিকের জন্য তার মনে হলো। কে বা কারা একটা গাড়ির ভেতর থেকে অনবরত গুলি করে তা্কে আর এই ছেলেটাকে মেরে ফেলল। সাথে চাওয়ালাকেও। মেয়েটা চিৎকার করে বলল, আমাকে মারো। কিন্তু ওদের মেরো না। ওদের কি দোষ? শাহেদ দেখলো মেয়েটা বেশ ভয় পেয়েছে। শীতে অথবা অজানা এক ভয়ে মেয়েটা কাপছে। শাহেদ কিভাবে মেয়েটার ভয় দূর করবে?

শাহেদ আর মেয়েটি পরপর দুই কাপ করে চা নিলো।
নিরবে চা প্রান করলো তারা। কেউ কোনো কথা বলল না। প্রথম প্রথম এরকমই হয় মানুষের। জড়তা কেটে গেলে গলা টিপে ধরতেও দ্বিধা করে না। শাহেদ বলল, ঠিকানাটা কার ছিলো? কেন আপনাকে ভুল ঠিকানা দিলো? মেয়েটা কিছু বলল না। শুধু চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। শাহেদ মেয়েটার দিকে তাকাতে চাচ্ছে না। তাকালেই হয়তো তার মায়া পড়ে যাবে। শাহেদের খুব মায়া। শাহেদ বলল, আপনার বাসা কোথায়? মেয়েটা বলল, ঝিগাতলা। চলুন আপনাকে ঝিগাতলা দিয়ে আসি। আমার গাড়ি আছে। মেয়েটা অবাক হয়ে শাহেদের দিকে চাইলো। শাহেদ বলল, ভয় নেই, আমি দুষ্ট লোক নই। সেই কখন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। থামার কোনো লক্ষন নেই। রাস্তায় এখন বাস, ট্র্যাক্সি কিছুই পাবেন না। মেয়েটা ছোট করে বলল, ঠিক আছে। চলুন। যদি চান তো আমার বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। বাসায় আজ খিচুড়ি রান্না হবে। সাথে ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর মাংস।

শাহেদের ছোট টোয়োটা গাড়ি।
মেয়েটা সামনে বসেছে। শাহেদ ভালো গাড়ি চালায়। খুব সাবধানে সে গাড়ি চালাচ্ছে। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সামনে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। রাস্তায় পানি জমে গেছে। শাহেদ বলল, জানেন এই শহর আমার ভালো লাগে না। মেয়েটা বলল, আমার ভালো লাগে। শাহেদ বলল, এই বৃষ্টিতে দেখুন রাস্তায় কি পরিমান পানি জমে গেছে। বৃষ্টির কারনে এখন ভয়াবহ জ্যাম লেগে যাবে। ইলেকট্রিসিটি চলে যাবে। রাস্তার গর্তে পড়ে যাবে গাড়ির চাকা। বৃষ্টি মানেই দুর্যোগ আর ভোগান্তি। মেয়েটা বলল, আমার কিন্তু বৃষ্টি খুব ভালো লাগে। মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে যায়। বুকের মধ্যে যেন কেমন করে! শাহেদ বলল, এগুলো আপনাদের বিলাসিতা। তারপর তাদের আর কোনো কথা নেই। অনেকক্ষন পর মেয়েটা বলল, এত সময় লাগছে কেন? ঝিগাতলা তো খুব দূরের পথ নয়। শাহেদ বলল, আমরা ঘুরপথে যাচ্ছি। একটা গাড়ি রাস্তায় উলটে গেছে। তাই অন্য পথ দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া প্রতিটা রাস্তায় পানি জমে গেছে।

শাহেদের ঘুম ভাঙ্গলো।
বিকেল হয়ে গেছে। রমনা পার্কের বেঞ্চে শুয়ে এরকম স্বপ্ন দেখতে ভালোই লাগে। শাহেদ আজকাল অনেক ভুল করে। স্বপ্নেও ভুল করলো। মেয়েটাকে বাসায় পৌঁছে দিলো অথচ মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করা হয় নি। অবশ্য নাম জেনে শাহেদের কোনো দরকার নাই। নীলা বা শিলা হলেই কি! শাহেদের অনেক ক্ষুধা পেয়ছে। তার এখন খেতে ইচ্ছা করছে চিকেন পিজা আর কোক। পকেটে আছে মাত্র ত্রিশ টাকা। ত্রিশ টাকা দিয়ে পিজা কোক খাওয়া যাবে না। খেতে হবে রুটি কলা। অবশ্য একটু বুদ্ধি খাটালেই পিজা আর কোক ব্যবস্থা করা যায়। এখন বুদ্ধি খাটাতে ইচ্ছা করছে না তার। ঘুম থেকে উঠার পর কেমন আলসেমিতে লাগে। তবে এখন এক কাপ চা খেতেই হবে। চা না খেলে মাথা পরিস্কার হবে না। শাহেদ হাটতে হাটতে শাহবাগ মোড়ে চলে এলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: শাহেদ জামালের সংসার চলে কিভাবে ?
তার মানে আমি জানতে চাচ্ছি তার আয়ের উৎস কী? সে সংসার চালানোর টাকা উপার্জন করে কিভাবে?
মানুষের চলতে গেলে প্রচুর পরিমাণে না হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা লাগে । এই টাকা কোথা থেকে আসে?

২| ১৬ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


রমনা পার্কে পুলিশ নেই আজকে?

১ম বাক্যটা সম্পুর্ণ হয়নি।

১৬ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: রমনা পার্কে পুলিশ থাকবে কেন? আজ কি পহেলা ৈশাখ? রমনা পার্কে থাকে আনসার।

১ম বাক্য টা রবীন্দ্রনাথের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.