নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৪২

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৯



কামাল ভাইকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি।
কামাল ভাই আমাকে দেখেই চিৎকার করে বললেন, রাজীব...ব্বব্বব্ব আমি তো শেষ। আমি বললাম, কি হয়েছে ভাই? কামাল ভাই বললেন, তার অসুস্থ হওয়ার ঘটনা। একেবারে প্রথম থেকে পুরোটা বললেন। এমন কি কিভাবে বাসা থেকে হাসপাতাল এলেন তাও বিস্তারিত সব বর্ণনা করলেন। আসার সময় সিএনজি চালকের সাথে তার কি কি কথা হয়েছে তাও বললেন। কামাল ভাই আস্তে কথা বলতে পারেন না। ওয়ার্ডে আরো অনেক রোগী আছেন। তারা সবাই হা করে কামাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কথা শুনছেন। আর কামাল ভাইয়ের বেডের পাশে বসে তার বাপ মা চা খাচ্ছেন। তারাও তার ছেলের ঘটনা শুনছেন মুগ্ধ হয়ে। কামাল ভাইয়ের কিডনীতে পাথর ধরা পড়েছে। তাই তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা।

কামাল ভাই আমাদের বড় ভাই।
এলাকার বড় ভাই। এখন অবশ্য তিনি অন্য এলাকায় থাকেন। তিনি একটা এনজিওতে চাকরী করেন। তার অফিস মিরপুর। কামাল ভাইরা বাসাবো ভাড়া থাকেন। কামাল ভাই বিয়ে করেছেন একটা ছোট মেয়ে আছে তিন বছরের। কামাল ভাই বড় মজার মানুষ। দারুন গল্প করেন। মুহুর্তের মধ্যে আড্ডা জমিয়ে ফেলেন। এমনভাবে যে কোনো ঘটনার বর্ণনা করেন- যেন তা চোখের সামনে আমরা দেখতে পাচ্ছি। যদিও কামাল ভাই আমাদের বড় ভাই কিন্তু আমরা একসাথে চা সিগারেট খাই। সব রকম বিষয় নিয়েই গল্প করি। এবং উনি কখনও আমাদের চা সিগারেটের বিল দিতে দেন না। উনি বলেন তোমরা আমার ছোট ভাই। তোমরা কেন বিল দিবে? আমরা চায়ের দোকানে বসলেই কমপক্ষে দুই তিন শ' টাকা হয়ে যায়। কামাল ভাই হাসি মুখে বিল দিয়ে দেন।

কামাল ভাইয়ের তিন বোন।
তিন বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সবাই স্বামীর সাথে প্রবাসী। পনের বছর ধরে তারা চার ভাইবোন একসাথে হতে পারেন না। একজন ছুটি নিয়ে দেশে আসেন তো, তখন অন্য বোনের ছুটি হয় না। তবে সবার সাথে সবার যোগাযোগ, কথাবার্তা আছে। গতমাসে তারা তিনবোন একসাথে প্লান প্রোগ্রাম করে দেশে আসেন। তিন বোনের দেখা হবে নরসিংদীতে নানা বাড়িতে। আর কামাল ভাই ঢাকা থেকে তার বাবা মাকে নিয়ে নরসংদী যাবেন। এই হলো প্লান। কামাল ভাই হঠাত করে অসুস্থতার জন্য তিনি নরসিংদী যেতে পারলেন না। আমি তার পাশে হাসপাতালে বসে আছি। তিনি তার তিন বোনকে অনেক ভালোবাসেন। তার অসুস্থার কথা বোনদের জানান নি। বলছেন, অফিসের ব্যস্ততার কারনে আমার আসতে দু'দিন দেরী হবে।

আমি হাসপাতালে থাকতেই নরসিংদী থেকে ফোন এলো।
গ্যাসের সিলিন্ডারে গ্যাস লিক করেছে। সেই লিক থেকে গ্যাস বেড়িয়ে পুরো রান্না ঘর ছড়িয়ে গেছে। হঠাত আগুন লেগে যায়। তার বোন আগুনে দ্বগ্ধ। নরসিংদীর ডাক্তাররা কিছুই করতে পারবে না তাই একটা সিনএনজিতে তার তিন বোনকে নারায়নগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সিএনজি চালক খুব দ্রুত সিএনজি চালাচ্ছেন। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যাওয়া যায়। সিএনজি চলছে খুব দ্রুত। এমন সময় একটা বাইক সিএনজি'র সামনে এসে পড়ে হঠাত। সিএনজি ড্রাইভার হঠাত ব্রেক করতে গেলে সিএনজি কয়েকটা ডিজবাজি খেয়ে রাস্তায় উলটো হয়ে ছিটকে পড়ে। সিএনজির ভেতরে থাকা অগ্নিদ্বগ্ধ কামাল ভাইয়ের তিনবোন ব্যাপক আহত হোন। এক বোনের হাত ভেঙ্গে যায়, এক বোনের পা। আরেক বোন কোমরে প্রচন্ড ব্যথা পান। তিন বোনের সাথে থাকা ছোট মারার মাথা ফেটে যায় চৌচির। ভয়াবহ অবস্থা। কামাল ভাই হাসপাতালের মধ্যেই চিৎকার করে কাঁদছেন।

ভাগ্যে কি লেখা থাকে তা মানুষ জানে না।
কপালের লেখন তো খন্ডানো যায় না। যাই হোক, এখন তিনবোন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। কামাল ভাই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। ডাক্তার বলেছেন তার কিডনীর পাথর প্রথম স্টেজে আছে। সম্ভবত ওষুধেই পাথর পড়ে যাবে। আর না পড়লে অপারেশন করতে হবে। আমি আর কামাল ভাই প্রতিদিন তিন বোনকে দেখতে হাসপাতালে যাই। তাদের পুরোপুরি সুস্থ হতে এক মাসের বেশি সময় লাগবে। কামাল ভাই বোনদের পাশে বোনের হাত ধরে বসে থাকেন। তখ তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ডাক্তারকে বারবার অনুরোধ করে তাড়াতাড়ি বোনদের যেন সারিয়ে তুলেন।

কামাল ভাই লকডাউন এর সময় ফোন দিয়ে আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন নিয়মিত। আমার মনে আছে, একবার কামাল ভাই অফিসের কাজে একমাসের জন্য সিলেটের বিশ্বনাথ গিয়েছিলেন। রোজ আমাদের ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিতেন। হঠাত একদিন ফোন দিয়ে বললেন, তোমরা সবাই বিশ্বনাথ চলে আসো। কাজ করতে করতে আমার আর ভালো লাগছে না। আমি হাপিয়ে উঠিছি। তাছাড়া তোমাদের অনেক দিন দেখি না। আমরা দল বেঁধে চলে গেলাম বিশ্বনাথ। দুই দিন কামাল ভাইয়ের কাছে থেকে এলাম। এবং আমাদের যাওয়া আসার সমস্ত খরচ কামাল ভাই জোর করে দিয়ে দিলেন।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৪

আমি সাজিদ বলেছেন: কতো পার্সেন্ট পুড়েছে ওই তিনজনের শরীর? এখন কেমন আছে?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: শরীরের বিভিন্ন জায়গা পুড়েছে। কত পার্সেন্ট সঠিক জানি না।
তবে এখন ভালো আছেন। কথা বলতে পারছেন। স্যুপ খেতে পারছেন।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার মানুষ কামাল ভাই।

উনার তিন বোনের সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫২

আল ইফরান বলেছেন: কামাল ভাইকে নিউমার্কেটের নিউ মডার্ন হোমিওর কথা জানাইয়েন। তাদের ঔষধে পাথর গলে যায়। আমার শ্বাশুড়ি ভালো এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট দেখানোর পাশাপাশি সেখান থেকে ঔষধ নিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে খুব ভালো কাজ হয়েছিল। আশা করি কামাল ভাইয়ের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না, ইনশাআল্লাহ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: দড়ি লাফ খেললেও নাকি পাথর অনেক সময় পড়ে যায়।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



৩টা বোন একই সাথে এত কষ্ট পেলেন; কষ্টের কথা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: কপালে লেখা ছিলো। কিছু করার নাই।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: মর্মান্তিক ঘটনা।আশা করি তারা জলদি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ইনশাল্লাহ।

৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পরিকল্পনা করে বিপদকে ডেকে আনা।একে বলে বিপদের উপর বিপদ।সুন্দর লিখেছেন

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: বিপদ মানুষ চায় না। কিন্তু বিপদ ঠিকই এসে হাজির হয়।

৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: এটা কি সত্যি ঘটনা?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী সত্যি।

৮| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫০

কল্পদ্রুম বলেছেন: একেই বলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
গ্যাসের সিলিন্ডারগুলো বাসায় প্রায়ই চেক করার কথা মনে করায় দেই।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে মানুষের জীবন সহজ নয়। খুব সাবধান থাকতে হয়। প্রতিটা মুহুর্ত।

৯| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৩

কামরুননাহার কলি বলেছেন: সিলিন্ডার গ্যাসগুলোই হলো মানুষের জন্য কাল। কারণ মানুষ অর্থের লোভীতো তাই ঠিক ভাবে কর্তপক্ষরা চেক করেনা। শুধু তাদের অর্থ পেলেই হয়। সাধারণ মানুষ যা তা হয়ে যাক তাতে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।

১০| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ছবিটা চমৎকার, টসটসে

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২১

রাজীব নুর বলেছেন: দেশী ফল। কামরাঙ্গা।

১১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: যে কোন মুহূর্তে বিপদ হতে পারে তাই সাবধানে থাকাই বাঞ্ছনীয় । দুঃখজনক ঘটনা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২১

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।

১২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এখন কি আপনার বিশ্বাস হ'য় যে
সব কিছু নিয়ন্ত্রণের মালিক এক মাত্র
আল্লাহ ! তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও
নড়েনা! আল্লাহকে ভয় করুন!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: না বিশ্বাস করি না।
তাছাড়া আমার এরকম ঈশ্বর দরকার নাই- যে ঈশ্বর তিন বোনকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আবার হাত পা ভেঙ্গে দেয়।

১৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৯

তারেক ফাহিম বলেছেন: প্ল্যান-পোগ্রাম কত কি, এদিকে বিপদ আসলো!

সুস্থ্যতা কামনা করি।

কামাল ভাইরা কি তিন বোনের এক ভাই?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী তিন বোন। এক ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.