নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখী মানুষ

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৫৫



সকাল ছয়টা। ঘড়িতে এলার্ম বাজছে।
এলার্মের শব্দে আবদুল জলিলের ঘুম ভাঙ্গল। জলিল এলার্ম অফ করলো। বিছানা থেকে নামলো। ঘরের একমাত্র জানালাটা খুলে দিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে তিনবার নিঃশ্বাস নিলো। জানালার কাছে একটা ছোট্র গোলাপ ফুলের গাছ। নিজে এক গ্লাস পানি খেলো। আর এক গ্লাস পানি গোলাপ গাছে ঢেলে দিলো। চুলায় চায়ের পানি বসালো। চায়ের পানি ফুটতে সময় লাগবে। ততক্ষনে সে দাড়ি কামাতে বসলো। সে প্রতিদিন দাড়ি কামায়। গালে ফোম মাখলো। গাল ভরে ফোম লাগাতে জলিলের খুব ভালো লাগে। ফোন লাগিয়ে সে দশ মিনিট অপেক্ষা করে। তাতে দাড়ি নরম হয়। নরম দাড়ি কাটতে কষ্ট কম। বয়স হলে দাড়ি শক্ত হয়ে যায় আর খুব দ্রুত দাড়ি গজিয়ে যায়। পানি ফুটে গেছে। জলিল এক চামচ চাপাতি গরম পানিতে দিয়ে দিলো।

আবদুল জলিলের বয়স পঞ্চাশ।
সে একা মানুষ। বিয়ে করেন নি। একটা খুপরি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। এ বাড়িতে এরকম খুপরি ঘর আছে মোট সাতত্রিশটা। সব দরিদ্র মানুষেরা এখানে ভাড়া থাকে। অল্প টাকা ভাড়া তাও কেউ সময় মত দিতে পারে না। প্রতিমাসে বাড়িওয়ালা এসে চেচামেচি করেন। আবদুল জলিলের ভাড়া তিন হাজার টাকা। এই টাকা দিতে তার বেশ বেগ পেতে হয়। মাঝে মাঝে সে নিজের ঘরে বড় ট্রাংকে লুকিয়ে থাকে। বাড়িওয়ালা এসে চলে গেলে, সে ট্রাংক থেকে বের হয়। আবদুল জলিল একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। কাজ বলতে রেস্টুরেন্টের খেতে আসা লোকজনদের গান গেয়ে শোনায়। কৌতুক শোনায়। তার গান কেউ মন দিয়ে শুনে না। তার কৌতুকে কেউ হাসে না। কিন্তু আবদুল জলিল নিজের কৌতুকে নিজে হেসেই কাত হয়ে পড়ে যায়। সে এই রেস্টুরেন্টে গত ত্রিশ বছর ধরে গান গায়, কৌতুক শোনায়। তার বাবা তাকে এখানে এই চাকরিটা পাইয়ে দিয়েছিলেন।

রেস্টুরেন্টে জলিলের ডিউটি হলো বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত।
সে ত্রিশ বছরে কখনও রেস্টুরেন্টে আসতে দেরী করে নি। সে একের পর এক গান গায়। নিজেই হাত পা ছড়িয়ে অদ্ভুর ভাবে গানের তালে নাচে। তারপর শুরু করে কৌতুক। কৌতুক শুনে কেউ হাসে না, তাই নিজের কৌতুকে সে খিল খিল করে হাসে। হাসতেই থাকে। রেস্টুরেন্টের মালিক তাকে বলেছে- তোমার গান কেউ শুনে না। তোমার কৌতুক শুনেও কেউ হাসে না। কাজেই তোমাকে আর রাখা যাবে না। তাছাড়া আমার ছেলে বিদেশ থেকে চলে এসেছে। এখন থেকে সেই রেস্টুরেন্টের দায়িত্ব নেবে। তবে তুমি মানুষ হিসেবে ভালো। খুব ভালো। একদিন সত্যি সত্যি রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে এসে হাজির। সে বলল, এখন থেকে আমি এই রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করবো। এবং আমি আমার রেস্টুরেন্টে কোনো বুড়ো লোক রাখবো না। আবদুল জলিলের খুব মন খারাপ হলো। এদিকে মালিকের ছেলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্ট নতুন করে ডেকোরেশন করলো। আবদুল জলিল রেস্টুরেন্টের সামনে একটা চায়ের দোকানে সারাদিন বসে থাকে।

জলিল মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে উকি দেয়।
দেখে, একটা মেয়ে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে খুব গান গায়। নাচে। রেস্টুরেন্তের লোকেরা হাঁ করে তাকিয়ে দেখে। তবে মেয়েটা নাচে ভালো। গানও গায় ভালো। আবদুল জলিল এখন বেকার। তার জমানো কোনো টাকা নেই। কারন রেস্টুরেটে তার কোনো সেলারি ছিলো না। তবে কখনও কখনও কেউ কেউ তার গান বা কৌতুক শুনে বিশ, পঞ্চাশ টাকা বখশিস দিতো। জলিল এখন সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধা পেলে রেস্টুরেন্তে যায়। সেখানকার বাবুর্চি তার বন্ধু মানুষ। তারা দুইজন এই রেস্টুরেন্টে একই সাথে জয়েন করেছিলো। একদিন রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বাসায় ফেরার পথে আবদুল জলিল একটা ছোট কুকুছানা পায় রাস্তায়। খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। বৃষ্টিতে কুকুরছানা ভিজে একাকার। আবদুল জলিল কুকুরছানাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসে। জলিল কুকুরটার নাম দেয়- ছটু। ছটু বলে ডাকলেই ছটু দৌড়ে চলে আসে।

জলিল বেকার। তারপরও সে সুখী ভাবে নিজেকে।
সে আগের মতোই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘড়িয়ে এলার্ম দিয়ে রাখে। জানালা খুলে জোরে জোরে তিনবার নিঃশ্বাস নেয়। গোলাপ গাছে পানি দেয়। নিজে চা বানিয়ে খায়। গালে ফোম মাখে। আর সারাদিন ছটুকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি তার জন্য খাবার পেকেট করে রেখে দেয়। বাড়িওয়ালা এলে জলিল তার বিশাল ট্রাংকে লুকিয়ে থাকে। রাতে ছটু জলিলের পায়ের কাছে ঘুমিয়ে থাকে। একদিন জলিল খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছটু পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে লাগলো। সে বুঝতে পারছে তার মালিক ভীষন অসুস্থ।
ছটু ঘেউ ঘেউ করে। তখন বাইরে বেশ ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো। এদিকে জলিলের অবস্থা খুব খারাপ হতে শুরু করে। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো না। বুকে প্রচন্ড ব্যথা হতে শুরু করে। আবদুল জলিল বুকে হাত রেখে ধাম করে মটিতে পড়ে যায়। ছটু আবদুল জলিলের অবস্থা থেকে দিশেহারা হয়ে যায়। বাইরে ঝড় বৃষ্টি আরো বাড়তে থাকে। জানালের কপাট আছড়ে পড়ছে। যেন আজ সব কিছু তছনছ হয়ে যাবে। বিপদ আসে, বিপদ কেটেও যায়।

(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল।)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:৩৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আগে দ্বিতীয় পর্ব পড়ি তার পর মন্তব্য।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৬:২৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

সবার জন্য কা্জ চাই।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী।

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

জাহিদ হাসান বলেছেন: আপনার এই পোস্টের শিরোনামের মত করে আমিও একটা পোস্ট দিয়েছি।

আমি সুখী মানুষ B-) B-)

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভাল।
লেখাটা আমি অবশ্যই পড়বো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.