নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আবু সালামের বয়স সাত বছর।
প্রায় রাতেই তার ঘুম আসে না। সে বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। স্কুলে ভরতি হয়েছে। লেখাপড়ায় আবু সালাম খুব ভালো। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসেন। অনেক রাত পর্যন্ত সে দুই হাত মাথায় পেছনে রেখে, পায়ের উপর পা দিয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। নানান জটিল সব বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। পাশের রুমে বাবা মা গভীর ঘুমে। কিন্তু তার ঘুম আসে না। এখন রাত দুইটা অথচ চোখে একফোটা ঘুম নেই। তার মোবাইল থাকলে ভালো হতে। ফেসবুকিং করতে পারতো। টিকটক করতো। অথবা গেমস খেলতো। তাহলে রাতে ঘুম না এলে সমস্যা হতো না। বাবা মা মোবাইল দেন না। মোবাইল হাতে পেলে বাচ্চারা নাকি খারাপ হয়ে যায়। আবু সালামের ধারনা, আসলে বাপ মা পোলাপানের সমস্যা গুলো সঠিক বুঝে না। নিজেদের পন্ডিত মনে করেন। সে তার বাচ্চাদের মোবাইল কিনে দেবে।
আবু সালামের মনে হলো-
কেউ একজন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে কে জানালার পাশে? চোর নাতো? আবু সালাম সাহসী। সে জানালার কাছে গেলো। সেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবু সালাম বলল, এই মেয়ে তুমি কে? মেয়েটা বলল, আমি আকাশের পরী। এই দেখো আমার ডানা, আমি উড়তে পারি। আবু সালাম বলল, তুমি আমার জানালার কাছে কি করছো? আসো ঘরে আসো। পরী ঘরে এলো। আবু সালাম বলল, কি খাবে? পরী বলল, তুমি বুঝলে কি করে আমার ক্ষিধে পেয়েছে? আবু সালাম বলল, আমি বুঝি। এসব বুঝা যায়। আবু সালাম চুপি চুপি রান্না ঘরে গেলো। ভাগ্যিস মা রাতে তেহারি রান্না করেছিলেন। কিছু বেঁচে গিয়েছিলো। আবু সালাম ওভেনে তেহারি গরম করে নিয়ে এলো। পরী বলল, আমরা তো মানুষ না। পরী। এসব খাবার আমরা খাই না। আবু সালাম বলল, ফল খাবে? পরী বলল, হ্যা ফল খাওয়া যেতে পারে। ফ্রিজে আপেল ছিলো। একটা আপেল ধুয়ে পরীর হাতে দিলো। পরী বলল, এই আয়নাটা তোমার কাছে রাখো। তুমি চাইলেই এই আয়নাতে আমাকে দেখতে পাবে। রাতে তোমার ঘুম না এলে- আমি এই আয়নায় আসবো। অনেক গল্প করা যাবে।
রাত তখন সোয়া তিনটা।
পরী বলল, এবার আমি যাই। তুমি ঘুমাও। সকালে তোমার স্কুল আছে। আবু সালাম বলল, আর কিছু সময় থাকো। ভালো লাগছে তোমার সাথে গল্প করতে। পরী বলল, না অনেক দেরী হয়ে এগছে। মা রাগ করবে। আমি যাই। আবু সালাম বলল, তুমি কোথায় থাকো? তোমার বাসা কই? পরী বলল, আমার বাসা আকাশে। মেঘের উপরে আমাদের বাড়ি। আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তুমি যাবে আমাদের বাড়িতে। আবু সালাম বলল, হ্যা আমি যাব। কিন্তু কিভাবে যাবো- আমার তো তোমার মতো ডানা নেই। পরী বলল, কোনো অসুবিধা নেই। তুমি আমার হাত ধরো। আবু সালাম পরীর হাত ধরলো। তারা আকাশে মেঘের মতো ভাসতে লাগলো। দেখতে দেখতে অনেক উপরে উঠে গেলো। বিশাল বিশাল মেঘের খন্ড গুলো চাঁদের আলোয় ঝকমক করছে! এক রকম শীতল বাতাস বইছে চারিদিকে। বেশ ভালো লাগছে আবু সালামের। পরী বলল, ভয় লাগছে। আবু সালাম বলল, একটুও ভয় লাগছে না। কারন তুমি যে আমার হাত ধরে রেখেছো।
মেঘের উপর বিশাল এক রাজপ্রাসাদ।
এত সুন্দর বাড়ি দেখে আবু সালাম মুগ্ধ! বলল, পরী তোমাদের বাড়ি তো অনেক সুন্দর। বাড়ির ফেতর পা রাখতেই পরীর বাপ মা দৌড়ে এলো। তারা পরীকে প্রচন্ড ধমক দিলেন। আবু সালামকে দেখে- বাবা মা দুইজনই প্রচন্ড রেগে গেলেন। পরীর বাবা বললেন, এই মনুষ্যকে কোথায় পেলে? তুমি পৃথিবীতে গিয়েছিলে? ছিঃ পরী। তুমি পরী হয়ে একজন মানুষ ধরে নিয়ে এলে আমাদের ভুবনে। ছিঃ। খুব খারাপ কাজ করেছো। তুমি আমার একমাত্র আদরের কন্যা। এই কাজ তুমি কি করে করলে! লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। আবু সালাম বলল, স্যার আমি দুঃখিত। দোষ আমার। পরীর কোনো দোষ নাই। আমিই পরীকে অনুরোধ করেছিলাম। আমার খুব দেখার শখ ছিলো- মেঘের উপর বাড়ি গুলো কেমন দেখতে হয়। পরীর মা রেগে গিয়ে বললেন, হয়েছে- আর ঢং দেখাতে হবে। মনুষ্যজাতি কেমন তা আমাদের জানা আছে। এরা প্রচন্ড লোভী হয়। এরা ভালো নয়। এরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করে। এরা তিলে তিলে নিজেদের পৃথিবীটা নষ্ট করে দিচ্ছে।
পরীর বাবা বলল, এই ছেলেকে বন্ধী করে রাখ হোক।
আমার সহজ সরল মেয়েকে এই ছেলে পটিয়েছে। এর শাস্তি হওয়া উচিত। আবু সালাম বলল, অনেক বলেছেন, স্যার। এবার চুপ করুন। যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন। মানুষের মধ্যে ভালো লোকও আছে, মন্দ লোকও আছে। সবাইকে এক কাতারে মাপবেন না। আপনাদের মধ্যেও নিশ্চয়ই ভালো জাত, মন্দ জাত আছে। শুনুন আমি লোভী নই। মিথ্যা আমি বলতে পারবো না। কোনো ভনিতা আমি করতে পারবো না। আপনার মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে। ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি পরীকে বিয়ে করতে চাই। পরীর বাবা প্রচন্ড রেগে গেলেন। এক চড় বসালেন আবু সালামের গালে। বলল, হারামজাদা ফকিন্নির বাচ্চা। কত বড় সাহস আমার মেয়েকে বিয়ে করবি। এত বড় সাহস তোর হলো কি করে রে! আবু সালাম বলল, দেখুন পরী আমার কাছে ভালো থাকবে। সুখে থাকবে। আনন্দে থাকবে। এর নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি। পরীর বাপ বললেন, আর একটা কথা বললে গুলি করে মেরে ফেলব। পরী বলল, বাবা প্লীজ থামো। আমি অন্যায় করেছি। ভুল করেছি। তুমি ওকে মেরো না। ওকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দাও।
আবু সালামের ঘুম ভাঙ্গল।
সে চারপাশ দেখছে। পরীকে খুজছে। পরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। বিছানার কাছে পরীর দেওয়া একটা আয়না পড়ে আছে। পরী বলেছিলো। আবু সালাম এই আয়নায় চাইলেই পরীকে দেখতে পাবে। অন্য কেউ আয়নায় তাকালে কিছু দেখতে পাবে না। অবশ্য নিয়ম হলো- রাত দুটোয় ঘর অন্ধকার করে আয়নায় দিকে তাকাতে হবে। তখন আয়নায় পরী এসে দেখা দিবে। আবু সালামের ধারনা, তার স্বপ্ন একদিন সত্য হয়ে দেখা দিবে। আপাতত সে তার কাজ, মানে লেখাপড়া ভালো করে করতে হবে। পরীর সাথে তো প্রতিদিন রাতে দেখা হবেই, কথা হবেই। নিজেকে সে যোগ্য করে তুলবে। তখন পরীর বাপ মা আর তাকে অবহেলা করবেন না। আবু সালামের বাপ মা বলল, কি করে আবু তোর মধ্যে কেমন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আবু সালাম বলল, পরিবর্তনটা কি পজেটিভ? হ্যা পজেটিভ। তাহলে চুপ করে থাকো। জীবনে আমি অনেক বড় হবো। নিজেকে যোগ্য করে তুলবো। তখন আর কেউ আমাকে অবহেলা করবে না। মানুষের স্বচ্ছ পবিত্র ভালোবাসা পেতে হলে- সবার আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: বিয়ে করবে বড় হয়ে।
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব
এটাও একটা আষাঢ়ে গল্প !!
আষাঢ়ে গল্প যুক্তি দিয়ে নয়
আবেগ দিয়ে বুঝতে হয়!
১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী এই তো আপনি বুঝতে পারছেন।
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:০৮
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: বেশ ভাল লেগেছে গল্প। এটা যদি আপনার প্রথম গল্প তো বলব সুপার হয়েছে।
আপনি আরো ভাল করতে পারবেন সন্দেহ নেই।
শিশুদের গল্প লিখার সময় শিশুমনস্তাত্বিক বিষয়-আষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হয়।
আশা করি আপনি সেবিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন।
শিশুসাহিত্যের জগতে আপনাকে স্বাগত।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী এটাই আমার শিশুদের জন্য প্রথম লেখা।
উৎসাহ পেলে প্রতিদিন ৩/৪ টা করে লিখতে চাই।
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: গল্প খুব ভালো হয়েছে। তবে ছোটদের গল্পে হারামজাদা, ফকিন্নির বাচ্চা এই জাতীয় শব্দ পরিহার করা উচিত।
২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
৭ বছরের বাচ্চা, বিয়ে করতে চাচ্ছিলো; শিশুদের জন্য একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না?