নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন ভাই

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৬




বাবা
ভদ্রলোকের বয়স ৬৮।
স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগেই। সারাদিন বাসায় তিনি একাই থাকেন। তার তিন ছেলে। তিন ভাই খুব মিলেমিশে থাকে। সারাদিন তারা কোথায় থাকে কে জানে! কি কাজ করে কে জানে! তবে তিনি বুঝতে পারেন, ছেলেরা কেউ খুব একটা ভালো কাজ করে না। সারাদিন তিনি বাসায় খবরের কাগজ পড়েন। মাঝে মাঝে টিভি দেখেন। ইদানিং তিনি নিজে একটা খেলা বের করেছেন। খেলাটা খেলে তিনি আনন্দ পাচ্ছেন। অদৃশ্য একটা কাপ এবং একটা বিস্কুট তিনি হাতে ধরে থাকেন। মাজে মাঝে বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে মুখে দেন। অথচ তার হাতে কোনো চায়ের কাপ নেই, বিস্কুটও নেই। তারপরও তিনি খাটে শুয়ে শুয়ে অদৃশ্য চা বিস্কুট খান। কখনও টিভি দেখতে দেখতে চা বিস্কুট খান। তিন ছেলে বাবার এই খেলা দেখে কিছু বলে না। ছোট ছেলে একদিন বলল, বাবা চা বিস্কুট কি তোমার খুব প্রিয় খাবার? বাবা বললেন, যখন আমি চাকরি করতাম তখন দুপুরবেলা টাকা বাচানোর জন্য ভাত খেতাম না। চা বিস্কুট খেতাম। ভাত খেতে লাগতো ষাট টাকা। আর চা বিস্কুটে খরচ দশ টাকা।

বড় ভাই
তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই বিয়ে করেছেন।
একটা মেয়ে আছে। তবে বড় ভাইয়ের স্ত্রী আলাদা বাসায় থাকেন। স্ত্রী চলে গেছেন। কারন বড় ভাই ভালো কোনো কাজ করে না। আগামীকাল বড় ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে আনিকার জন্মদিন। তাই সে তার স্ত্রীকে ফোন করে বলেছে- আগামীকাল আনিকাকে নিয়ে বাসায় আসো। আমি কেক আনবো। আমরা সবাই মিলে ভালো মন্দ খাবো। স্ত্রী বলল, আমি তোমাদের ই নোংরা বাসায় আর যাবো না। মাত্র দুইটা রুম। একগাদা মানুষ। প্রাইভেসি বলে কিচ্ছু নেই। এই কথা তোমাকে আগেও একশ'বার বলেছি। একটা চিপা টয়লেট। চিপা রান্না ঘর। সব মিলিয়ে জঘন্য পরিবেশ। এই পরিবেশে সুন্দর করে থাকা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা আনিকাকে মানুষ করা যাবে না। আমি তোমাকে তালাক দিবো। খুব শ্রীঘ্রই তালাকের কাগজ পেয়ে যাবে। এবং কাবিনের পাঁচ লাখ টাকা ভদ্র মানুষের মতো দিয়ে দিও। অন্যথায় তোমাকে জেলে যেতে হবে। এবং পুলিশকে আমি এটাও বলে দিবো- তুমি হাতুড়ি দিয়ে মানুষ মারো।

মেজো ভাই
মেজো ভাই তাদের পরিবারটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। সে চায় তার বাবার ভালো চিকিৎসা হোক। বড় ভাবী ফিরে আসুক। আনিকা ফিরে আসুক। ভাইয়ের মেয়ে আনিকাকে সে অনেক ভালোবাসে। তারা সবাই মিলে সুন্দর একটা বাসায় থাকবে। একসাথে থাকা অনেক আনন্দের ব্যাপার। অভাবের কারনে পরিবারটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। অথচ মা মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিলেন, তোরা সবাই মিলেমিশে থাকিস। তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো। মেঝভাই একটা মেয়েকে ভালোবাসতো খুব। মেয়েটার নাম রুপা। রুপাকে বিয়ে করার কথা ছিলো। অথচ রুপা একটা ধনী লোককে বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেছে। এখন সে নিশ্চই অনেক ভালো আছে! মাঝে মাঝে রুপাকে দেখতে ইচ্ছা করে। হাতে টাকা পয়সা এলে একবার সে আমেরিকা গিয়ে রুপাকে দেখে আসবে। মেজো ভাই ঠিক করেছেন বাকি জীবনে আর বিয়ে করবে না। দূর থেকেই রুপাকে ভালোবেসে যাবে। তারা তিন ভাই মিলে যে কাজ করে তাতে সংসার সুন্দর ভাবে চলছে না। অথচ কি ভয়ানক পরিশ্রম করতে হয়। একবার পুলিশের কাছে ধরা পড়লে- বাকি জীবন জেলে কাটাতে হবে। তাদের ভাগ্যটাই খারাপ- যাদেরকে ধরে দেখা যায় তাদের কাছে কিচ্ছু নেই।

সেজো ভাই
তিন ভাইয়ের মধ্যে সেই সবার ছোট। তার খুব লেখাপড়া করার শখ। অথচ তার দুই ভাই বলেছে, লেখাপড়ার দরকার নাই। তুই আমাদের সাথে কাজ করবি। সবার ছোট বলে সে ভাইদের সাথে তর্ক করে না। তর্ক করতে গেলে বড় ভাই রেগে যায়। তখন খুব মারে। অবশ্য খুব মারতে পারে না। তখন মেজো ভাই এসে বড় ভাইকে ধরে ফেলে। বিবিএ টা শেষ করলে একটা চাকরি পাওয়া যেত। অথচ বিবিএ তে ভরতি হওয়ার টাকা নাই। এখন সে ভাইদের ছিনতাই করতে সহযযোগিতা করে। এরকম জঘন্য কাজ করতে তার মোটেও ইচ্ছা হয় না। সেদিন ছিনতাই করার সময় একমেয়ে কিছুতেই তার কানর দুল দিতে চাচ্ছিলো না। তখন বড় ভাই- মেয়েটার কান থেকে এত জড়ে দুলটা টান দিয়েছে যে মেয়েটার কান থেকে টপ টপ করে রক্ত পড়ছিলো। শেষে দুল জোড়া বিক্রি করতে গিয়ে দেখা গেলো- স্বর্ন নয় এমিটেশন। আরেকবার এক ছেলে হাতের আংটি কিছুতেই দিচ্ছিলো না। তখন মেজো ভাই ছেলেটাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে ছিলো। বড় ভাই হাতুড়ি দিয়ে ছেলেটার আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছিলো। বিকট চিৎকার দিয়েছিলো ছেলেটা। সেই বিকট চিৎকার আজও ঘুমের মধ্যে শুনতে পায় সে।

রাতে তিনভাই আর বাবা মিলে খেতে বসেছে।
বাবা বললেন, সারাদিন চা বিস্কুট খেতে খেতে আর ভালো লাগে না। ইদানিং ভালো মন্দ খেতে মন চায়। বুড়ো বয়সে নানান কিসিমের খাবার খেতে ইচ্ছা করে। সকালে রুটি হালুয়া, দুপুরে রুটি ডাল, রাতেও রুটি ডাল। মাসের পর মাস একই খাবার আর ভালো লাগে না। তোরা তিন ভাই মিলে আমার শেষ জীবনটা আনন্দময় করে দিতে পারিস না? বড় ভাই তখন বলল, বাবা ইনকাম খুবই কম। দেখি, বড় একটা শিকার করতে পারি কিনা। যেদিন বড় শিকাড় করবো, সেদিন সবাই মিলে বড় রেস্টুরেন্টে খাবো। কথা দিলাম। মেজো ভাই বলল, বাবা তুমি এত খাম খাম করো কেন? আগে তো তুমি এরকম ছিলে না। বাবা বললেন, এটা বয়সের দোষ রে ব্যাটা। আমার মতো বুড়ো হলে বুঝবি। তোদের মা বেঁচে থাকলে আমাদের পরিবারটা এরকম হতো না। মরে গিয়ে সব অটোল পালোট করে দিলো। তোদের জীবন বদলে গেলো। তোরা মন্দ কাজ করিস। অবশ্য মন্দ কাজটাও সঠিকভাবে করতে পারিস না। আমি একজন ব্যর্থ বাপ। ছোট ছেলে তখন বলল, বাবা আমি বিবিএ পাশ করলে ভালো একটা চাকরি পাবো। তখন আমাদের জীবন বদলে যাবে।

ছোট ভাই খাওয়া শেষ না করে উঠে পরলো।
বলল, আমি আর তোমাদের সাথে নাই। মন্দ কাজ আমি করতে পারবো না। আমি লেখাপড়া করতে চাই। বড় ভাই বলল, হারামজাদা তোর লেখাপড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে। খাওয়ার টাকাই তো নাই। মেজো ভাই বলল, ছোট চুপ কর। খাওয়ার সময় ফালতু কথা বলবি না। তখন বড় ভাই বলল, ছোট শোন, আমি ঠিক করেছি- তোকে বিয়ে দেবো। কারন আমরা যে কাজ করি তাতে একটা মেয়ে থাকলে অনেক সুবিধা। তাতে আমাদের ধান্দা বাড়বে। আর তিনবেলা রুটি ডাল খেতে হবে না। ছোট বলল, এসব কি বলছো। আমি তোমাদের সাথে থাকবো না। আমি পালাবো। দূরে কোথাও চলে যাবো। তখন বড় ভাই প্রচন্ড রেগে ডালের বাড়িটা ছোট ভাইয়ের মুখে উপর উড়িয়ে মারলো। বলল, আমৃত্যু আমরা একসাথে থাকবো। মাকে আমি কথা দিয়েছি। এমন সময় বাসায় অনেক পুলিশ এলো। খাওয়া শেষ হবার আগেই বাপসহ তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশ চারজনকেই মারতে মারতে গাড়িতে তুললো। তিন ছেলে চিৎকার করে বলল, বাবা অসুস্থ। বাবাকে ছেড়ে দিন। প্লীজ। আমাদের কাজের সাথে বাবার কোনো সম্পর্ক নাই। পুলিশ কারো কথা শুনে না।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৭

শাহ আজিজ বলেছেন: হাতুড়ি ফ্যামিলি

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:০৪

ইসিয়াক বলেছেন: পড়লাম

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:



খুবই কষ্টকর প্লট নিয়ে লিখলেন।

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: এটা কিন্তু বাস্তব গল্প।

৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:১৮

শায়মা বলেছেন: এই ছবিও কি তুমি আঁকলে ভাইয়া?

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: না এটা আমি আঁকি নি।
তবে আজ একটা ছবি আঁকব। কোনো ছবি না দেখে। সম্পূর্ন নিজের মন থেকে।

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৫

রামিসা রোজা বলেছেন:

এই পেশা বাদ দিয়ে এরা ভালো হওয়ার চেষ্টা করতে
পারতো । এখন কি করে ?

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই পেশায় কেউ শখ করে আসে না। ভালো পেশায় খুব চেষ্টা করেছে। আসলে ক্ষমতাবান মামা চাচা যাদের নেই তাদের অনেক কষ্ট।

ছোট ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। অন্য শহরে থাকে বৌ নিয়ে।
বাবা মারা গেছেন। দুইভাই এখন কি করছে জানি না। তবে বড় ভাই খুব অসুস্থ।

৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৫৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মানুষ কত ঘটনার সাক্ষী।

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: কিছু মানুষ শুধু দেখে যায়।

৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৬:১৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
কঠিন জীবন।

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার জীবন কি কঠিন?

৮| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:৫৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: চমৎকার

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: মোটেও চমৎকার।

৯| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ছোটকালে আর্ট ক্লাসে অনেকটা আপনার ছবির মত জিনিস সামনে রেখে দিত শিক্ষক। আর আমাদেরকে ওগুলি দেখে আঁকতে বলতো।

২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি ইদানিং আকাআকি শুরু করেছি। দোয়া প্রার্থী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.