নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ওমর খৈয়াম

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৯



মরুভূমির মধ্যে গিয়ে, একটি যদি শহর গড়ো;
একটি হৃদয় সুখী করা, তার চাইতেও অনেক বড়।
যদি একটি ব্যর্থ জীবন, তোমার প্রেমে ভেজে-
শত বন্দি মুক্ত করার, চেয়েও সেটা মহত্ত্বর।


অধিকাংশ পারস্য মনীষীদের জীবনবৃত্তান্ত অত্যন্ত রহস্যাবৃত।
জীবন-স্মৃতিমূলক কোনো রচনা তাঁরা লিখে যান নি। প্রচার ও প্রতিপত্তি তাঁদের কাম্য ছিল না কখনোই। পরবর্তীতে যারা এই সমস্ত মহান ব্যাক্তিদের জীবনী লিখেছেন, তারা তাদের লেখায় তাদের অমর বানিয়ে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন। ওমর খৈয়াম তাঁর কবিতা সমগ্রের নাম দিয়েছেন, রূবাইয়াত। এটার জন্য তিনি জগতব্যাপী বিখ্যাত হয়েছেন। ওমর একজন কবি ও দার্শনিক ছিলেন এবং কবি ওমর এবং দার্শনিক ওমর মিলিতভাবে রচনা করেছেন রুবাইসমূহ। তাঁর কাব্যপাঠান্তে এটাও স্পষ্ট যে, ওমর খৈয়াম এ মধুময় পৃথিবীকে ভালবেসেছেন। ভালবেসেছেন ভাগ্যের হাতের ক্রীড়ানক পৃথিবীর সকল প্রাণী জগৎকে। জয়ধ্বনি করেছেন, যৌবনের প্রশান্তি গেয়েছেন, স্রষ্টার নিষ্ঠুর নিয়তিকে মেনে নিয়েছেন, অবধারিত মৃত্যুকে করেছেন স্বীকার। ধরার ধূলোয় বসে ধরনীর জয়গান গেছেন। ওমরের একটি বড় অবদান হলো ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনা, যা পরবর্তী সময়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করে। ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুস্তক 'মাকালাত ফি আল জার্ব আল মুকাবিলা' প্রকাশিত হয়। ওমর তার সময়ের চেয়ে আধুনিক ছিলেন। তিনি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও জরাজীর্ণ ইতিহাস বদলে দিয়ে নিজেই রচনা করে গেছেন নতুন ইতিহাস।

যদিও মদ নিষিদ্ধ ভাই, যত পার মদ চালাও
তিনটি কথা স্মরণ রেখে- কাহার সাথে মদ্য খাও?
মদ পানের কি যোগ্য তুমি? কি মদই বা করছ পান?
জ্ঞান পেকে না ঝুনো হলে মদ খেয়ো না এক ফোঁটাও।


ওমর খৈয়াম মূলত একজন গণিতবিদ ছিলেন।
গনিত ছাড়াও তিনি ইরানের জনপ্রিয় কবি, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। তাঁর পুরো নাম 'গিয়াসউদিন আবুল‌ ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম নিশাপুরি'। ওমর ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর যুবা বয়সে তিনি সমর খন্দে চলে যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ওমর খৈয়ম ছিলেন তদীয় সুলতানের দরবারের রাজ-জ্যোতির্বিদ। তিনি যদি কবিতা নাও লিখতেন তবু গণিতে ও জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর কাজের জন্যে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতেন। 'খাইয়ামি’ বা 'খৈয়াম' শব্দের অর্থ তাঁবু নির্মাতা। তাঁর সময়ে তিনি মূলত গণিতবিদ এবং দার্শনিক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। কবি হিসেবে তাঁর কোনো স্বীকৃতিই ছিল না তখন। গণিতের এবং দর্শনের উপর তিনি অনেক বই রচনা করেছেন। দর্শন এবং বিজ্ঞানের উপর তাঁর প্রায় সমস্ত গ্রন্থই আরবীতে রচিত। সামান্য কিছু ছোট রচনা এবং ইবনে সিনার অনুবাদ কেবল ফারসীতে লেখা। ওমারের কবিতা রচনার মূল প্রেরণা এসেছে সম্ভবত অন্ধকবি 'আবুল আলা' থেকে।

মসজিদের ঐ পথে ছুটি প্রায়ই আমি ব্যাকুল প্রাণ
নামাজ পড়তে নয় তা বলে, খোদার কসম! সত্যি মান।
নামাজ পড়ার ভান করে যাই করতে চুরি জায়নামাজ
যেই ছিঁড়ে যায় সেখানা, যাই করতে চুরি আরেকখান।


ওমার খাইয়ামের দার্শনিক মতবাদ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
তিনি সুফীদের মরমীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। সরাই খানা, মদ, সাকী এসবই আসলে রূপক মাত্র। ওমারের অন্যতম গদ্য অনুবাদক 'জন পেইনের' মতে, ওমার আসলে সুফীবাদ এবং উপনিষদের মতাদর্শের একটি সমন্বয়। দর্শনে তিনি ছিলেন ইবনে সিনার সমকক্ষ। ইবনে সিনা তাঁকে প্রভাবিত করেছেন- চিন্তায়, মননে, দর্শনে এবং বিজ্ঞানে। সিনার বেশ কয়েকটি রুবাইও ওমরের নামে প্রচলিত আছে। খাইয়াম তাঁর সময়ে প্রচলিত মরমীবাদকে (mysticism) কটাক্ষ করেছেন। ১০৭০ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সেই ওমর সমাধান করে ফেলেন ত্রিঘাত সমীকরণের। ১০৬৬ সালে, অর্থাৎ যে বছর ওমর আঠারো বছরের কিশোরে পরিণত হন, সে বছরই তার পিতা এবং শিক্ষক উভয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য সে বছর একটি ভালো ঘটনাও ঘটে। সে বছরের শেষ দিকে আকাশে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হ্যালির ধূমকেতু। আর তা দেখে ওমরের মনে ডালপালা ছড়িয়েছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের কৌতূহল।

আমার নামে বদনাম যত, সব বিধির বিধান অনুযায়ী;
জন্ম থেকেই তা নির্ধারিত, তার জন্যে কী আমি দায়ী?
হয় না যখন কোন কিছুই, আল্লাহ-পাকের হুকুম ছাড়া,
তখন আমার দোজখ-বাস, হবে কেনো বলো চিরস্থায়ী?


ওমর খৈয়াম জন্মগ্রহণ করেন ১৮ মে, ১০৪৮।
‘রুবাইয়াত’ শব্দটি ‘রুবাই’ শব্দের বহুবচন। ‘রুবাই’ শব্দের অর্থ হলো চতুষ্পদী বা চারলাইনের কবিতা-ছত্র। রুবাইতে সাধারণত প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থপদে অন্ত্যমিল থাকে, তুতীয় পদটি ভিন্ন সুর বা বিষম হয়। যে কাব্যগ্রন্থ তাঁকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে সে হচ্ছে তাঁর বিভিন্ন সময়ে রচিত ‘রুবাইয়াত’। এর সর্বাধিক জনপ্রিয় ও সার্থক অনুবাদক হলেন 'এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড'। এই অনুবাদ ইউরোপে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও ফিটজেরাল্ড, কান্তি ঘোষ, সৈয়দ মুজতবা আলী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সিকান্দার আবু জাফর, নরেন দেবসহ আরো অনেকে রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম অনুবাদ করেছেন। তবে আওলাদ হোসেন তাঁর 'ওমর খৈয়ামঃ মর্মবাণী ও জীবন রহস্য' গ্রন্থে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেছেন, 'কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী'। ওমর খৈয়াম ছিলেন স্বাধীনচেতা, বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন, কুসংস্কার, ভন্ডামী গোড়ামি ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম ও ছিলেন বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, ভন্ডামী-গোড়ামী কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সদা তীব্র প্রতিবাদী

খৈয়াম বলে,
জটিল যতো, তত্ত্ব কথার শাস্ত্র ভুলে; বেরিয়ে এসো আমার সাথে
সত্যি তোমায় বলছি খুলে। অমর কেউ নয় এ দুনিয়ায়
এই কথাটায় সব’চে দামি, ফোটার পরেই ফুল যে ক্রমে
ঝরার দিকে পড়ে ঢলে।


ওমর পঞ্চম শতকের শেষের দিকে ইরানের নিশাপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী। (অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, তার পিতা মস্ত বড় চিকিৎসক ছিলেন। এটা ভুল কথা) ছোটবেলায় ওমর বালি শহরে সে সময়কার বিখ্যাত পণ্ডিত শেখ মুহাম্মদ মানসুরীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছুটা সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী মোহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফ্ফেক নিশাপুরির শিক্ষা গ্রহণ করেন। ওমর হাতের কাছে যে বই পেতেন, নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেটাই তোলে নিয়ে পড়া শুরু করতেন। কখনো কখনো গাছে নিচে বসে বই পড়তে পড়তে সেখানেই ঘুমিয়ে যেতেন। এমনকি নীরবে নিভৃতে বই পড়তে পাহাড়ে বা জঙ্গলে চলে যেতেন। খোলা আকাশের নিচে বসে বই পড়তে ভীষন পছন্দ করতেন। দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের মতে, ওমর খৈয়ামই বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি একইসাথে গণিতবিদ ও কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এইখানে এই তরুর তলে
তোমার আমার কৌতুহলে
যে কটি দিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে,
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিয়ে।

(অনুবাদ: সৈয়দ মুজতবা আলী)

একদিন ওমর পুকুর পাড়ে বসে বই পড়ছিলেন।
সেই পুকুরে এক বালিকা স্নান করছিলো। অবশ্য ওমর বই পড়ায় এতই মগ্ন ছিলেন যে বালিকাকে দেখার সময় হয়ে উঠেনি। কিন্তু বালিকা ওমরের কাছে এসে বলল, আমি পুকুরে গোছল করছি, আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখছেন কেন? ওমর মেয়েটির কথা শুনে প্রচন্ড অবাক হলো। বলল, বোকা মেয়ে বলে কি! আমি মন দিয়ে বই পড়ছিলাম। আমি জানিই না কেউ একজন পুকুরে গোছল করছিলো কিনা। মেয়ে বলে না না, আপনি আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছেন, বলেই মেয়েটা কান্না শুরু করলো। তখন ওমর সাথে সাথে একটা কবিতা লিখলেন,
এইখানে এই তরুর তলে তোমার আমার কৌতুহলে,
যে ক'টি দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে-
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে!

কবিতা শুনে মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে গেলো। এবং এক সপ্তাহ পর তারা বিয়ে করে ফেললেন। একটা বছর তারা দারুন আনন্দময় জীবন পার করলো। সেই মেয়েটার নাম ছিলো জান্নাত ই নূর। জান্নাত ই নূর একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেন। ছেলের নাম রাখা হয়, আল নূর ওমর। সন্তান জন্মের এক মাসের মধ্যে 'জান্নার ই নূর' এবং 'আল নূর ওমর' মারা যান। স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে ওমর প্রচন্ড কষ্ট পান। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোজ ছিলেন। ১১৩১ সালে ৪ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ওমর খৈয়াম।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই লেখা পর্ব করে কেন দিচ্ছেন না। চলুক জানার ইচ্ছা রইলো

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পরামর্শ। ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩১

এম ডি মুসা বলেছেন: অনেক ভালো লাগছে

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া ভাই সাহেব।

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বাহ সুন্দর রাজীব দা

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:




তিনি ফিলোসফি, অংক, এষ্ট্রোনোমি ও ফিজিওলোজীতে (চিকিৎসা বিজ্ঞান) গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন; রুবাইগুলোতে তিনি মানবজীবনের অনুধাবনগুলোকে লিখে গেছেন।

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: সজ্জন পণ্ডিত ব্যাক্তি তিনি।

৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৮

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২২

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবি।

৬| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এক হাজার বছর আগে লেখা কিন্তু মনে হয় সমসাময়িক।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম মনে হচ্ছে আমার গুনে। হে হে---

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.