নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝড়

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৫



ঝড় দেখেছেন? কালবৈশাখী।
নিজের চোখে এই ঝড় না দেখলে আমি কোনো দিনও বিশ্বাস করতাম না যে ঝড় এত সুন্দর এবং এত ভয়ঙ্কর হতে পারে! বিশাল এক ধানক্ষেতের পাশে বসে 'থ্রি কমরেডস' বইটি পড়ছিলাম। দূরে পদ্মা নদী কিছুটা দেখা যায়। ধানক্ষেতের পাশ দিয়েই একটা খাল গেছে। সময় তখন মধ্য দুপুর। চারপাশ কেমন থমকে আছে। খুব গরম, একটূও বাতাস নেই। ঠিক এই রকম সময়ে আচমকা বাতাস বইতে শুরু করলো। গরম বাতাস। থ্রি কমরেডস হাত থেকে পড়ে গেল। চারপাশের গাছপালা গুলো হাহাকার করে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে আকাশ ভরা কালো মেঘ জমতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে মধ্যদুপুর, রুপ নিলো সন্ধ্যার। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ব্রজপাতও কি হলো বেশ কয়েকবার?

আকাশে ঘুড়ির মতো কি কি যেন উড়ছে।
ঠিক এই সময়ে দেখি বিশাল এক মেঘের খন্ড আমার মাথার উপরে। সব কিছুই বড্ড আবছা লাগছে। চারপাশে গুমগুম আর শো শোঁ শব্দ। মনে হলো যেন কোনো অশরীরী কাঁদছে। অনেকক্ষন পর আমি বুঝতে পারলাম- বাতাস আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। কিছুতেই আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, চোখ মেলে তাকাতেও পারছি না। নদী থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা দু'টো নৌকা চোখের সামনেই উলটে গেল। বিশাল বিশাল গাছ, ঝরে পড়া পাতার মতো পড়ে যাচ্ছে। কলা গাছ গুলো রসির মতো দুলছিল। উন্মাদ বাতাস যেন সব কিছু কেড়ে নিতে চাইছিল। কার বাড়ির ঘরের চালা, ঘুড়ির মতো আকাশে উড়ছে?

আমার মাথা কাজ করছিল না।
চিন্তাশক্তি সব যেন হারিয়ে গেছে। আমি চোখ দিয়ে মন ভরে এই ঝড় দেখতে পারলাম না। ধুলোবালি উড়ে এসে তীরের মতো চোখে আর শরীরে বিঁধছে। একটা বিশাল তেতুল গাছ উপড়ে ফেললো এই ঝড়, আমার পায়ের কাছে। গমগম আর শোঁ শোঁ শব্দে কান স্তব্দ হয়ে পড়েছে। বোধ শক্তিহীন অসাড় হয়ে পড়লাম আমি। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে একটা চালতা গাছ ধরে আঁকড়ে রইলাম। থ্রি কমরেডস কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে! তবু কিভাবে কিভাবে যেন এই মহান ঝড়কে অনুভব করলাম আমার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে। এইভাবে প্রায় দশ মিনিট খেলা করে ঝড়টা থেমে গেল। তারপর শুরু হলো বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি। হায়রে বৃষ্টি! ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরলাম। মা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।

ঝড়ের মধ্যে পড়েছি জীবনে অনেকবার।
জীবনে প্রথম ঝড়ের মধ্যে পড়ি একদম ছোটবেলায়। তখন আমার বয়স এক বছর। মা আমাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। সেই বর্ননা মায়ের মুখে শুনেছি অনেকবার। এরপর ঝড়ে পড়ি ছোটবেলায়। তখন আমার বয়স এগারো বছর। মাঠে ফুটবল খেলছিলাম। হঠাত শুরু হলো। কি প্রচন্ড ঝড়। বাতাস কুন্ডলী পাকিয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকলো। একটা গাছ ভেঙ্গে পড়লো। গাছে ছিলো কাকের বাসা। দুইটা বাচ্চা কাক ঝড় বৃষ্টিতে মারা পড়লো। আগেরবার ঝড়ে পড়লাম, মগবাজার মোড়ে। মুহুর্তের মধ্যে আকাশ কালো হয়ে গেল! এমন বাতাস শুরু হলো যেন পুরো শহর ভেঙ্গে তছনস করে ফেলবে। দুইটা রিকশা উলটে গেলো। আমি একটা বিল্ডিং এর নিচে আস্রয় নিলাম। নিজের চোখে ঝড়ের তান্ডব দেখলাম। মানুষ যতই শক্তিশালী হোক, ঝড়ের সাথে কোনোদিন পারবে না। প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়।

এক বন্ধু গাজীপুরে মূরগীর ফার্ম দিয়েছে।
বন্ধুর সাথে সেখানে গিয়েছি। সারাদিন, সারারাত থাকবো। পিকনিক হবে। সেখানে হঠাত শুরু হলো ঝড়। বন্ধুর মূরগীর ফার্ম উড়ে গেলো। মূরগী গুলো বিকট শব্দে চেচামেচি শুরু করলো। তারা নানান দিকে ছুটে গেলো। আমরা মাটির চুলায় রান্না বসিয়েছিলাম। সেই রান্না ধুলো বালি মিশিয়ে একাকার। ঝড় দেখে মনে মনে ভাবলাম, আজ বুঝি নিশ্চিত মৃত্যু হবে গাছে চাপা পড়ে। বাতাসে বড় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ছে। শুরু হলো বৃষ্টি। প্রচন্ড বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বাজ পড়ছে। ভয়ে কলিজা গেলো শুকিয়ে। কিন্তু কিভাবে যেন বেঁচে গেলাম। যতবার ঝড়ে পড়েছি, বেঁচে গেছি। আল্লাহ মনে হয় আমাকে ঝড়ে মারবেন না। যদি ঝড়ে মরে যেতাম, আজ ব্লগিং করতে পারতাম না। আপনারা একজন ব্লগার হারাতেন।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: কালবৈশাখী ঝড় দেখেছি।
(প্রথম লাইন পড়েই মন্তব্য করলাম, পুরা পোষ্ট পরে পড়বো)

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: ছোটবেলা থেকেই আমি অল্পতেই খুশি হই।
প্রথম লাইন পড়েছেন এটাই আমার কপালের ভাগ্য।

ভালো থাকুন। করোনা ভাইরাস থেকে সাবধান থাকুন। বাইরে গেলে মাস্ক মাস্ট। এবং ঘরে বাইরে সব সময় সাবান দিতে হাত ধুয়ে নেবেন।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৫

ফয়সাল রকি বলেছেন: ভাই, করোনা সচেতনতা নিয়ে বিপদে আছি। আমার অফিসের লোকজন মাস্ক পড়ে না। বলতে গেলে উল্টা কথা শোনায়! এমনো বলে, যারা বেশি মাস্ক মাস্ক করে- করোনা তাদেরই ধরে! কীয়েক্টা অবস্থা!!!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু আপনার অফিস না, পুরো দেশের একই অবস্থা।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩১

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আমি একবারই পড়েছি ঝড়ের মধ্যে।বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম লঞ্চে। লঞ্চের ছাদে শুয়ে ছিলাম।চাঁদপুরের কাছাকাছি আসতেই প্রবল ঝড়, সাথে বজ্রপাত। নেমে গিয়ে ডেকে বসলাম।লঞ্চ ছিলো মেঘনায়।বাতাসের তোড়ে লঞ্চ কাঁত হয়ে যাচ্ছিলো।সাথে ছিলো মেঘনার প্রবল ঢেউ। লোকজনের সে কী কান্নাকাটি!! লঞ্চের লোকেরা এসে লঞ্চের পাশের ত্রিপলগুলো উঠিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো।এজন্য লঞ্চের কাঁত হয়ে যাওয়াটা কমেছে।কিন্তু দুলুনি কমে নি।ঝড়ের প্রকোপ এত বেশি ছিলো যে লঞ্চ মাঝ নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছিলো প্রায় ১৫ মিনিট।প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম সেদিন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: বাহ ছোট ছোট প‌্যারার ভেতরে কত সুন্দর কথা আর অভিজ্ঞতা!
সাধুবাদ ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১২

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




ঝড়ের কবলে পরে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে এই অভিজ্ঞতার অনেক মূল্য। সবার এমন ঝড় দেখার ভাগ্য নেই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: অভিজ্ঞতার মূল্য শূণ্য।
অভিজ্ঞতা দিয়ে আসলে কিছুই হয় না।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ছোট বেলায় পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে "ঝড়ের পরে" নামে একটি গল্প পড়েছিলাম ।
ছন্দে ছন্দে লেখা ছিল।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটার কিছু কি মনে আছে?

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঢাকার লোকজন কাল বোশেখী দেখেন, ঝড় হয়তো দেখেননি; ঝড় দেখেন দক্ষিণ অন্চলের লোকজন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: যতটুকু দেখেছি, তাতেই কলিজা উড়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.