নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিঙ্গি

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০



এক সপ্তাহ ধরে একটা নৌকা নদীতে ভাসছে।
দিনরাত ধরে ভাসছে। নৌকায় কেউ নেই। মাঝিহীন নৌকা। পানির স্রোতে ভেসে চলেছে অবিরাম, অজানায়। কোথায় গিয়ে থামবে সে, জানে না! কার নৌকা তা এখনও জানা যায় নি। নৌকাটা বেশ বড়। অবশ্যই মাছ ধরার নৌকা। তবে এ নৌকায় অনায়াসে পনের জন মানুষ বহন করতে পারবে। নৌকা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে সে তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে পারতো। ভাসতে ভাসতে এখন সে কার কাছে গিয়ে পড়বে সে জানে না। যে তাকে পাবে, সে কি তাকে নিয়ে মাছ ধরতে যাবে, না মানুষ পারাপার করবে? যত্ন নিবে তো তার? নদীর সবচেয়ে আপন হলো নৌকা। নদী আর নৌকা মিলেমিশে একাকার! মানুষের কাছে আপন হলো তার সন্তান। কবুতর কখনও হারায় না। সে তার মালিককে ঠিকই খুঁজে বের করে নেয়। নৌকার সেই ক্ষমতা নেই।

শফিক বাড়ির উঠানে বসে আছে।
তার মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। তার ডিঙ্গি নৌকাটা হারিয়ে গেছে। অথচ এই নৌকাই তার আয় ইনকামের একমাত্র ভরসা। শফিকের ঘর সংসার আছে। পরিবারে চারজন মানুষ খাওয়ার। মা, স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে ফাতেমা। ফাতেমার বয়স চার বছর। শফিক ডিঙ্গিতে করে মাছ ধরে। কখনও সে ডিঙ্গিতে করে পাট, ধান বা মাটির হাড়ি পাতিল পৌঁছে দেয় দামুদার বাজারে। বিনিময়ে সে কিছু টাকা পায়। সেই টাকা দিয়ে কোনো রকমে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে খেয়েপড়ে বেঁচে আছে। আজ সাত দিন হলো তার ডিঙ্গি হারিয়ে গেছে। শফিকের স্পষ্ট মনে আছে সে তার ডিঙ্গি ঘাটে বেঁধে রেখেছিলো। নিশ্চয়ই কেউ তার ডিঙ্গির দড়ি খুলে দিয়েছিলো। এই কাজ কে করতে পারে তা শফিক অনুমান করতে পারে কিন্তু তার বলার সাহস নাই। ডিঙ্গি হারিয়ে শফিক চোখে অন্ধকার দেখছে। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এখন নদীতে ডুবে মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

রমিজ উদ্দিন আজ বড় খুশি।
অবশ্য একটু আগেও সে খুশি ছিলো না। তার স্ত্রী তার সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করেছে। স্ত্রী জাতি আজিব চিজ। দিতে পারলেই খুশি। না দিলেই গালমন্দ করে। বিয়ে করাই তার ভুল হয়েছে। রাত হয়েছে, স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে যা আছে খেয়ে ঘুমাবে। তা না রমিলা শুরু করলো ঝগড়া। ঝগড়ার কারন রমিলা একটা চুন্ডি শাড়ির কথা বলেছিলো। রমিজের কাছে টাকা নাই সে শাড়ি আনতে পারে নি। এখন আনতে পারেনি পরে আনবে। সামান্য শাড়ির জন্য ঝগড়া করতে হবে! এ কেমন মেয়েছেলে! খুব ক্ষুধা লেগেছে রমিজের। সরিষার তেল, আর কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে রমিলা আলু ভর্তা করেছিলো। খাওয়া হলো না আরাম করে। রাগ করে রমিজ নদীর পাড়ে এসে বসেছে। নদীর পাড়েই তার বাসা। আজ রাত মনে হয় নদীর পাড়েই কাটাতে হবে। রমিলা কি তাকে ডেকে নিতে আসবে? হঠাত রমিজ একটা ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পায়। ডিঙ্গি দেখে রমিজ খুশি। সে দৌড়ে রমিলার কাছে যায়। গিয়ে বলে, শাড়ি কিনি নি কিন্তু একটা ডিঙ্গি খরিদ করেছি। এখন তোমাকে প্রতিমাসে একটা করে চুন্ডি শাড়ি দিতে পারবো।

শফিকের ঘরে খাবার নেই।
বৃদ্ধা মা খুব অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। অথচ হাতে কোনো টাকা নেই। ঘরে এমন কোনো মূল্যবান জিনিস নেই যা বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। গ্রামে সাহায্য করার মতোন কেউ নেই। যদিও ইচ্ছা করলেই অনেকেই সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এই ইচ্ছাটাই কেউ করে না। শফিক বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলো। চেয়ারম্যান বলেছেন, কিছু টাকা তোমাকে দিতেই পারি, কিন্তু সাদা কাগজে সাইন করে টাকা নিতে হবে। সফিক জানে সাদা কাগজে একবার সাইন করে টাকা নিলে, তাকে বসতভিটা হারাতে হবে। বহু লোক সাদা কাগজে সাইন করে টাকা নিয়ে বসতভিটা হারিয়েছে। এই ভুল শফিক করতে পারে না। তবে পরিবার নিয়ে তো আর না খেয়ে থাকতে পারে না। তার কন্যা ফাতেমার দিকে তাকালে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। অসুস্থ মা! কই যাবে সে? কার কাছে যাবে? কে তার মাথায় এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে হাত রাখবে!

রমিজের ভাগ্য ফিরে গেছে।
সে এখন চুরী চামারি এবং কুলিগিরি ছেড়ে দিয়েছে। তার স্ত্রী রমিলা খুব খুশি। রমিজ ভালো নৌকা বাইতে পারে। সে সারাদিন নৌকা বায়। পাট, ধান, মাটির হাড়ি পাতিল এবং লোক নিয়ে নদীর এপার ওপার যায়। প্রতিদিন তার অনেক টাকা আয় হচ্ছে। আবার জেলেরা তার কাছ থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে মাঝ নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে। জেলেরা তাকে ফ্রি মাছও দিচ্ছে। একটা নৌকা রমিজের জীবন বদলে দিলো। রমিলা পোয়াতি হয়েছে। এই খুশিতে রমিজ তিনটা চুন্ডি শাড়ি কিনে ফেলেছে। শাড়ি দেখে খুশিতে রমিলা কেঁদে ফেলেছে। শাড়ি গুলো এত সুন্দর। এর মধ্যে একটা শাড়ি রমিলার এতই সুন্দর লেগেছে যে শাড়িটা সে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। রমিজ বলল, বউ শাড়িটা পরো। দেখি তোমাকে কেমন লাগে! রমিলা যেন এই কথাটার অপেক্ষায়ই ছিলো মনে মনে। রমিজা শাড়ি পরলো, ঠোটে গাঢ করে লিপস্টিক দিলো, চোখে মোটা করে কাজল দিলো, কপালে টিপ আকলো। দুই গোছা কাঁচের চুড়ি পড়লো। রমিজ তার স্ত্রীকে দেখে মুগ্ধ! মাশাল্লাহ তার বউটা সুন্দর আছে।

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ডিংগী নৌকাই সোনার বাংলা?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: বুঝিনি।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: মানুষের নিয়তি বড়োই বিচিত্র! রমিজ ও শফিক এবং চেয়ারম্যানের চরিত্র কথার তুলিতে সুন্দর করে এঁকেছেন। ভালো লাগলো। শুভ কামনা প্রিয় রাজীব নুর।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আসসালামু আকাইকুম।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।
ভালো থাকুন।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: শফিক ও রমিজের গল্প পড়লাম।আপনার পর্যবেক্ষন ক্ষমতা ভাল।কীভাবে মহিলারা সাজগোজ করে তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।তাদের মান অভিমানের প্রকাশ খুবই ভাল হয়েছে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্য আমার জন্য গুরুত্বপূর্ন।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

আমি খুব ভালো নৌকা বাইতে পারি।

জয় বাংলা!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি গ্রামের ছেলে?

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: প্লটটা সুন্দর। মাটির কাছাকাছি মানুষের জীবন সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।
গতকাল রাতে প্লট টা মাথায় আসে। রাতেই লিখে ফেলেছি। এবং লেখা শেষ করে কিছুক্ষন কেদেছি।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: প্লটটা সুন্দর। মাটির কাছাকাছি মানুষের জীবন সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শৈশবকালে মুহুরী নদীতে কতশত বার ডিঙিনৌকো চড়েছি হিসাব নেই। গান গাইতাম আমার .... নৌকার ঢেউ লাগিয়া

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!

৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৮

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: একই সমান্তরালে জীবনের উত্থান ও পতন বর্ণনা করেছেন।খুবই ভালো লেগেছে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম বহু গল্প আমি লিখতে চাই।

৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




সম্পত্তি হাত বদল হয়। নানান ভাবেই হয়। বলা বাহুল্য আপনার বয়সে আপনি বেশ ভালো বুঝতে পেরেছেন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বয়স কিন্তু কম না।
মাথায় কমপক্ষে সাত টা সাদা চুল আছে।

১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪২

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: সুন্দর গল্প রাজীবভাই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।

১১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৭

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: "এরকম বহু গল্প আমি লিখতে চাই।"
আপনি আরো লিখুন।আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। অবশ্যই লিখব।

১২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

লেখক বলেছেন: আপনি কি গ্রামের ছেলে?


আমি আমার গ্রামের যেই অংশে বসবাস করি সেই অংশে এই একুশশতকেও রিক্সা নিয়ে যাওয়া যায় না। আধুনিক যান বলতে গেলে হেলিকপ্টার। তাও আবার ল্যান্ড করতে পারবেন না। দড়ি বেয়ে বাড়িতে নামতে হবে।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: হায় হায়---
এখনও এরকম আছে!!! মনে হয় আপনি বাড়িয়ে বলছেন!!

১৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৯

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়।

১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.