নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা ভালোবেসেছিলাম (রিপোষ্ট)

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৮



আমি লেখাপড়া করতে মালোশিয়া যাই।
আমার ভার্সিটি রাজধানী কুয়ালালামপুরে। ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি অফ মালোশিয়া। খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং অনেক সুন্দর। আসলে সারা মালোশিয়া'ই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। মালোশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত এবং উচ্চ শিক্ষার হাড় ৭৫%। মালোশিয়াতে চীনের লোক দিয়ে ভরা। আমি থাকি ১২ তলাতে। অন্যান্য বাঙ্গালী ছাত্রদের তুলনায় আমার ঘরখানা অনেক বড়। মালিন্ডা নামের এক বুড়ি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে আমার ঘর। বিনিময়ে সে কোনো রিংগিত (টাকা) নেয় না। কারণ তার নাতীর সাথে আমার চেহারার খুব মিল। আমার ঘরের জানালা থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাত্রে ঘুম না এলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজে রান্না করতে পারি না বলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি। সকালে কিছু খাই না। দুপুরে বার্গার আর কোক খেতাম এবং রাতে অল্প টাকায় খেতাম সিংগাপুর রাইস নূডুলস। দিনের পর দিন একই খাবার খেতাম হাসি মুখে।

এক বছর খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করলাম।
ভালো রেজাল্ট করলাম। প্রতিদিন ক্লাশ করি এবং ক্লাশ থেকে ফিরে কিছু খেয়ে নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত পড়তাম। আব্বা প্রতিমাসে নিয়মিত টাকা পাঠাতো। আমি কখনই অপ্রয়োনে টাকা খরচ কতাম না। প্রতিমাসে আব্বার পাঠানো টাকা থেকে অনেক টাকা বেঁচে যেত। আমি কখনও অন্য বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের সাথে আড্ডা দিতে যেতাম না। তাছাড়া কাউকে খুব ভালো বন্ধুও বানাতে পারিনি। বেশী মানূষ এবং হৈচৈ আমি কখনওই পছন্দ করতাম না। হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো- আমি আর লেখাপড়া করবো না। যেই ভাবা সেই কাজ। সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকি। রবীন্দ্র সংগীত শুনি। সন্ধ্যার পর একা একা হাঁটতে বের হই। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা হাঁটতে ভালোই লাগে। আমি হাঁটার সময় সব সময় সাথে ছাতা রাখতাম। কখন বৃষ্টি এসে পড়ে! তিন মাস এভাবে এলোমেলো ভাবে পার করে দিলাম। বাবা-মা কেউই কিছু জানলো না। তারা জানতো, তাদের আদরের ছেলে খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করছে ।

মাঝে মাঝে আমার কি যে হয়!
হটাৎ করে মালোশিয়া দেশটা খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল আমার। খুব ঝামেলা করে আমি মালোশিয়া থেকে চলে যাই ফিজি'তে (Fiji)। রাজধানী সুভা। দেশটি স্বাধীনতা পায় ১৯৭০ ইং। এটি অষ্ট্রেলিয়া-মহাদেশে পূর্বে দক্ষিণ প্রসান্ত মহাসাগরের ছোটবড় ৮৪৪টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। আব্বা আমার ফিজি যাওয়ার কথা শুনে- আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। আমি পড়লাম- সমুদ্রে। হাতে টাকা নেই। পনের দিন অনেক কষ্ট করলাম। তারপর একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ নিলাম। প্রতিদিন ছয় ঘন্টা করে কাজ করি। আমি আবার আমার আনন্দময় দিন ফিরে পেলাম। দেশে বাবা-মা'র সাথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ। এমন সময় আমার পরিচয় হয় হাইফি নামের একটা মেয়ের সাথে। এই হাইফিকে নিয়েই আমার কাহিনী। মেয়েটা আফ্রিকান। একদম কুচকুচে কালো কিন্তু চোখে মুখে এক আকাশ মায়া। হাইফি একজন ফটো জার্নালিস্ট কি একটা কাজ নিয়ে ফিজিতে এসেছে তিন মাসের জন্য।

হাইফি আমার পাশের ফ্লাটে থাকত।
লিফটের বারো তলাতে। আমার রুম নম্বর 'এ' আর হাইফি'র 'বি'। প্রায়ই হাইফি'র সাথে আমার চোখাচোখি হতো! একদিন মধ্য রাত্রে আমার ঘুম আসছিল না। আমি অনেকক্ষন রাস্তায় হাটাহাটি করে আমার রুমে ফেরার সময় লিফটে হাইফির সাথে আমার দেখা। হাইফি ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে না। যে কোনো সময় পড়ে যাবে- এমন সময় হাইফিকে আমি ধরে ফেললাম। মেয়েটার গায়ে অনেক জ্বর। মেয়েটা ছোট করে বলল- তুমি কি আমাকে আমার ঘর পযন্ত পৌছে দেবে প্লীজ? বলেই মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেল। আমি কোলে তুলে হাইফিকে তার বিছানায় নিয়ে যাই। মাথায় পানি দিয়ে দেই। হাত পা ভালো করে ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে দেই। জ্বরের ঘোরে হাইফি অনেক কথা বলল- যা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। হাইফিকে জোর করে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়াই। জ্বরের ওষুধ পানির সাথে গুলিয়ে খাইয়ে দেই। ভোরের দিয়ে হাইফি'র জ্বর একটু কমে। তারপর সে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে ঘুমায়। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার অনেক মায়া লাগল।

এই ঘটনার পর হাইফি আমার বন্ধু হয়ে যায়।
প্রতিদিন সে তার কাজ শেষ করে আমার সাথে আড্ডা দিতে আসত। প্রতিদিন আমি আর হাইফি ফিজির পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম। রাস্তার পাশের কফি হাউস থেকে কফি খেতাম। হাঁটতে হাঁটতে নানান গল্প করতাম। রাতে দু'জন একসাথে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার শেষ করে যে যার রুমে ফিরে যাই। একদিন মধ্য রাত্রে হাইফি আমার ঘরে আসে। হাইফি বলল, ঘুম আসছিল না- তাই তোমার সাথে গল্প করতে এলাম। আমরা গল্প করতে করতে কখন দু'জন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানি না। ভোরে দু'জনের একসাথে ঘুম ভাঙ্গে। হাইফি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল- আমাকে ভালোবাসবে? আমি হাইফি'র বুকে হাত রেখে বললাম- হুম, অনেক ভালোবাসবো। হাইফি আমার কানে ফিস ফিস করে বলল- আমাকে অনেক আদর করবে? আমি হাইফি'র গলাম একটা চুমু দিয়ে বললাম- হুম, এক আকাশ আদর করবো। তারপর আমরা দুইজন দুইজনকে এক আকাশ আদর করলাম।

এরপর থেকে হাইফি রাত ১২ টা বাজলেই আমার ঘরে চলে আসত।
আমাকে জোর করে ফোটোগ্রাফী শিখাতো। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানত এবং প্রচন্ড অবাক হতো। আমাকে আফ্রিকান (অখাদ্য) খাবার রান্না করে খাওয়াতো। আমার মাথায় শ্যাম্পু করে দিত। নখ কেটে দিত। প্রতিদিন সে আমার অনেকগুলো করে ছবি তুলতো। একদিন আমরা ঠিক করে ফেললাম বিয়ে করবো। এবং বিয়ে হবে বাংলাদেশে গিয়ে। আমরা দুইজন মিলে বিয়ের কেনাকাটা করলাম। এর মধ্যে একদিন আমি ফোন করে বাবা মাকে সব বুঝিয়ে বললাম। তারা আমার সব কথা মেনে নিলেন। হাইফি আফ্রিকাতে থাকা তার দাদীকে আমার কথা সব বলল এবং দাদীকে জানায় সে বাংলাদেশী এক ছেলেকে বিয়ে করছে। কোথাও থেকে কোনো বাধা এলো না। আমরা দেশে ফেরার জন্য টিকিট পর্যন্ত কেটে ফেললাম। কিন্তু দেশে ফিরে আসতে হলো একা আমার। দেশে ফেরার তিন দিন আগে হাইফি গাড়ি একসিডেন্টে মারা যায়। হাসপাতালে মৃত্যুর আগে হাইফি আমার হাত ধরে বলেছিল- 'আমি খুব ভাগ্যবান যে তোমার কোলে মাথা রেখে মারা যাচ্ছি'। শেষে আমার চোখ থেকে দু'ফোটা পানি হাইফি'র গালে গড়িয়ে পড়ে।


মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কত সময় ছিলেন মালয়েশিয়াতে?

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: তিন মাস।

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৬

আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ কষ্টের। কতোবছর আগের ঘটনা এটা?

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ১৯ বছর।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি( IIUM) .
এটা কুয়ালালামপুর শহরে অবস্থিত নয় ।
আপনি ভুল তথ্য দিয়েছেন।

আফসোস!

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: তথ্যটা ভুল না।

৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১১

কলাবাগান১ বলেছেন: এক বছর মন দিয়ে পড়ালিখা করলাম (লাগল মাত্র তিনমাস???).।মিথ্যার ও একটা লেভেল থাকে..।

বিদেশী সব মেয়ে উনার .....। আপনার হোরোইন পাচারকারীনির গল্প আবার লিখুন

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: লেখার খাতিরে অনেক কথা এসে যায়।
তাছাড়া আমি হিসাবে বড্ড কাঁচা।

৫| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: মালিন্ডার বাসা ক্যান্ডিতে না? গল্পটা আগেও পড়েছি ভালো লেগেছে।'এক আকাশ' কথাটা হুমায়ুন আহমেদের লেখাতে পাই। যাইহোক গল্প ভালো লাগলো।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: দাদা একজন ব্লগার অসুস্থ। পুরান ঢাকায় তার বাসা। একদিন তার সম্পর্কে বলেছিলেন। এখন তার বর্তমান অবস্থা কি?

৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এখন অনেকটাই সুস্থ হয়েছে। মাঝে জীবনের উপর ঝড় বয়ে গেছে।একি সঙ্গে আরবিতে আগে থেকে ভর্তি হওয়া কোর্সের জন্য চূড়ান্ত বিষন্নতার মধ্যেও পড়াশোনায় মধ্যে আছে। সমস্যা মিটলে ব্লগে ফিরবে বলে জানিয়েছে।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
তাকে আমার সালাম জানিয়ে দিবেন।

৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



ফিজিতে ভালো পেঁপে পাওয়া যায়।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: পেঁপে আমি খাই না। কেন জানি ভালো লাগে না।

৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গল্পে যা খুশি লেখেন,লেখার স্বাধীনতা আপনার আছে;

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: না লেখার স্বাধীনতা পুরোপুরি নাই।

৯| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

লেখক বলেছেন: তথ্যটা ভুল না।


What do you mean by this?
Please..

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.