নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বিষন্ন কবি

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:২৭



জীবনান্দ দাশদের আদি বাড়ি বিক্রমপুরের গাউপাড়া গ্রামে।
পদ্মা নদীর তীরের গ্রাম গাউপাড়া। জীবনান্দের বাবা (সত্যানন্দ, আগে নাম ছিল দুর্গামোহন) ছিলেন বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার ছিল লেখালেখির হাত। ভালো প্রবন্ধ লিখতেন তিনি। জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারীর লেখা 'আদর্শ ছেলে' কবিতাটি বিখ্যাত। কবিতাটি ছিল এই রকম- 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।/ মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন,/ 'মানুষ' হইতে হবে, এই তার পণ।' রবীন্দ্রনাথের বাড়ির মতন জীবনান্দের বাড়িতে সাহিত্যের আসর বসত নিয়মিত। পার্থক্য ছিল রবীন্দ্রনাথের ছিল রাজবাড়ি আর জীবনান্দের সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ি।

১৯০১ সালে জীবনান্দের খুব কঠিন অসুখ হয়েছিল।
একেবারে মরে মরে অবস্থা। কুসুমকুমারী জীবনান্দকে নিয়ে ছুটলেন লখনো, আগ্রা, গিরিডি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হলো বাচ্চা জীবনানন্দ। ১৯০৮ সালে জীবনানন্দ ৯ বছর বয়সে বরিশালের বি এম স্কুলে ভর্তি হন। জীবনানন্দের শৈশব নিয়ে তার ছোট ভাই অশোকানন্দ লিখেছেন এবং একমাত্র ছোটবোন সুচরিতা দাশও লিখেছেন। (সুচরিতা দাশ ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহন করেন, এ বছরই জীবনানন্দ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন।) জীবনানন্দের বড় মামা প্রিয়নাথ দাশ ছিলেন সাব ডেপুটি কালেক্টর। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই মায়ের প্রশ্রয়ে জীবনানন্দ দাশ বাড়িতে কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে সাহিত্যে সভা করতেন। এই আড্ডা মা কুসুমকুমারীও মাঝে মাঝে যোগ দিতেন। কুসুমকুমারী বঙ্কিমের উপন্যাস ও রামায়নের নানা চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতেন।

১৯১৯ সালে জীবনানন্দ ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজের চাকরির মাধ্যমে তার কর্মজীবনের শুরু। ১৯২৮ সালে জীবনানন্দ চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। কেউ কেউ বলেন কবিতায় অশ্লীলতা ছিল তার জন্য। ১৯৩০ সালের ৯ মে তিনি খুলনার রোহিনী কুমার গুপ্তের দ্বিতীয়া কন্যা লাবন্যকে বিয়ে করেন। লাবন্য ৭ বছর বয়সে তার বাবা-মাকে হারান। বিবাহের সময় লাবণ্য ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৩২ সালে দিকে জীবনানন্দ কবিতা লেখা ছাড়া লুকিয়ে লুকিতে সবার অজা্ন্তে গল্প লেখায় মন দেন। যেমন- 'প্রেতিনীর রুপকথা', 'নিরুপম যাত্রা' ইত্যাদি। শুধু লিখতেন। কোথাও ছাপাতে দিতেন না।

১৯৪৬ সালের একটি ঘটনা বলি-
এক দিন দুপুরের দিকে কবি বাসায় ফিরছেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন রাস্তার লোকেরা দৌড়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে এবং প্রতিটি বাড়ির জানালা দুমদুম শব্দে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন- একটা মিলিটারি ট্রাক ছুটে আসছে। ট্রাকটা এসে তার সামনে থামল। একজন অফিসার নিচে নেমে বন্দুকের নলটা কবির বুকের সামনে ধরেই জিজ্ঞাসা করলেন- আর য়্যু এ হিন্দু? কবি উত্তর দিলেন 'ইয়েস'। অফিসারটি বন্ধুক ধরে থাকা অবস্থায় বলল, 'আই থিংক য়্যু আর দা রিং লিডার অফ দিস এরিয়া। কবি চিরদিন ধীর স্থির প্রকৃতির সুতরাং তিনি আর একটি কথাও না বলে ট্রাকে উঠে দেখলেন তার মতো আরও কয়েকজন হিন্দু ভদ্রলোককে আগেই ধরে আনা হয়েছে। তারা সবাই চুপচাপ বসে আছে। কবিকে উঠিয়ে ট্রাকটি বহু জায়গা ঘুরে একটি থানায় এসে থামল। সেখানে পৌছে একখানি বেঞ্চে সকলকে বসিয়ে রাখা হলো।

রবীন্দ্রনাথ এক দীর্ঘ চিঠিতে বুদ্ধদেব বসুকে লেখেন-
জীবনানন্দ দাশের চিত্র রুপময় কবিতাটি আ্মাকে আনন্দ দিয়েছে। ১৯৩৭ সালের ৫ মার্চ জীবনানন্দ দাশ 'ধূসর পান্ডুলিপি'র (এ বইখানা রবীন্দ্রনাথকেই উৎসর্গ করা হয়) একটা কপি রবীন্দ্রনাথকে ডাকে পাঠান। আর সে সঙ্গে একটা চিঠি। চিঠিতে লিখেন-' আমি একজন বাঙ্গালী যুবক, মাঝে মাঝে কবিতা লিখি। অনেকবার দেখেছি আপনাকে, তারপর ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গেছি। আমার নিজের জীবনের তুচ্ছতা ও আপনার বিরাট প্রদীপ্তির সব সময়ই মাঝখানে কেমন একটা ব্যব্ধান রেখে গেছে। আমি তা লংঘন করতে পারিনি। আজ যদি St Paul, কিংবা খৃষ্ট, অথবা গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে ফিরে আসেন আবার, তাহলে ভীড়ে চাপা পড়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে আসবো হয়তো, কিন্তু তারপর তারা আমাকে ভিড়ের মানুষ বলে বুঝে নেবেন। প্রায় ন' বছর আগে আমি আমার প্রথম কবিতার বই একখানা আপনাকে পাঠিয়ে ছিলুম। সেই বই পেয়ে আপনি আমাকে চিঠি লিখেছিলেন, চিঠিখানা আমার মূল্যবান সম্পদের ভিতর একটি।

জীবনানন্দের কবিতাকে অনেক সমালোচক, কবিতাই মনে করতেন না।
অনেকে কবিতা মনে করলেও নানা রকম দুর্নাম দিতেন জীবনানন্দের কবিতার উপর। জীবনানন্দ আধুনিক কবি। তার কবিতা বোঝার মতো আধুনিক মন মানসিকতা হয়ত সমালোচকদের মধ্যে ছিল না। জীবনানন্দ দাশের মেয়ে মঞ্জুশ্রী লিখেছেন- 'বাবা খুব সাদাসিদে ছিলেন। অত্যন্ত সাধারণ ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। ঘরে শুধু বই আর বই আর লেখার সরঞ্জাম। বাবা অনেক রাত পর্যন্ত লিখতেন, পড়তেন। মাঝে মাঝে পেন্সিল দিয়ে লিখতেন। গরমের দুপুরে বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে লিখতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন- দেখছিস না, কী রকম ইস্পাতের মতো নীলাকাশ।' বাবাকে কখনও পান সিগারেট খেতে দেখিনি।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ১৯১৯ সালে জীবনানন্দ ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজের চাকরির মাধ্যমে তার কর্মজীবনের শুরু।

..........................................................................................................
তখন কি এত অল্প সময়ে পাঠ চুকায়ে চাকুরী পাওয়া যেত ???

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়েন। অনার্স তো আগেই করেছেন।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জীবনান্দের পারিবারিক জীবন এবং আর্থিক জীবন খুব একটা শুখের হয়নি।চাকরি জীবন ছিল আরো খারাপ ।মৃত্যুও হলো বেঘোরে।একজন মহান লোকের এমন জীবন হওয়া কাম্য ছিল না।
নতুন কিছু তথ্য জানতে পারলাম।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: জীবন বাবু একজন গ্রেট কবি।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:


কবি নিজেই শিক্ষিত ছিলেন, চাকুরী করেছেন; তারপরও জীবনে সুখের মুখ দেখেননি, বাকীদের অবস্হা কি ছিলো? বৃটিশ সাধারণ মানুষ নিয়ে মাথা ঘামাতো না

আজকেও সাধারণ মানুষের কোন শান্তি নেই; শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: শেখ হাসিনা হয়তো মনে মনে ভাবছেন, বাকি জীবনটা প্রধানমন্ত্রী হয়ে কাটিয়ে দিতে পারলেই তিনি খুশী।

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৭:০৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



এটা আপনার একটি অন্যতম সেরা পোষ্ট ।
জীবনানন্দকে নিয়ে কিছু কিছু অজানা তথ্য জানা হলো ।
জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন।
তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন
যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন।
লাবণ্য দাশের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যজীবনটাও আদৌ সুখকর হয়নি ।
তাঁর কাব্য নিয়ে সমালোচনাও কম কিন্তু হয়নি , অনেক সময় তাঁর কবিতার বিরুদ্ধে
দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে । তার পরেও তিনি বাংলা কাব্যের ভুবনে একজন
সেরা কবি । কবির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ।

পোষ্টটি প্রিয়তে তুলে রাখলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধ্যেয় আমার ইচ্ছা আছে জীবন বাবুকে নিয়ে ১০০ পর্বের ধারাবাহিক পোস্ট দিব।

৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৫৯

জুন বলেছেন: আমার মনে হয় গ্রামের নাম হবে গাউদিয়া যা বর্তমানে পদ্মায় বিলীন হয়েছে।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি রাইট। অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪১

এম ডি মুসা বলেছেন: জীবনানন্দ আমাদের, বিভাগের একজন কবি, তিনি ইংরেজি অনার্স মাস্টার্স পাশ করে বাংলাদেশ বাংলা সাহিত্য বিকাশ ঘটে তার হাতে

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: বড় নিরীহ কবি ছিলেন।

৭| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৩

এম ডি মুসা বলেছেন: বরখাস্ত কেন‌হয়েছেন

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পোড়া কপাল হলে যা হয় আর কি।

৮| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫০

অক্পটে বলেছেন: পোস্টটি পড়ে ভাল লাগল। আপনার লেখা সেরা পোস্টগুলো মধ্যে এটি একটি।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: দামী মন্তব্য করেছেন।
অনেক শুকরিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.