নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাতিরপুল

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫১




হাতিরপুলের নীচে ছিলো একটি রেললাইন।
তৎকালীন বৃটিশ সরকারের সময়ে ঐ স্থানে রেললাইন তৈরি করা হয়। এই পুল দিয়ে একসময় হাতি পারাপার হতো। হাতি গুলো রেললাইনের উপরের পুল দিয়ে পিলখানা থেকে হাতিরঝিলে যেতো গোসল করাতে। নুড়ি পাথর আর স্লিপারের কারণে রেললাইনের উপর দিয়ে হাতিরা হাঁটতে পারতো না। তাই তারা যেতো রেল লাইনের উপরের পুল দিয়ে। আর সেই থেকেই এটির নাম হলো হাতিরপুল।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মোঘল ও ইংরেজ আমলে ঢাকায় সরকারের মালিকানাধীন অনেক হাতি ছিল। পরিবহন আর যাতায়াত করা ছাড়াও এই হাতি গুলো নানা ধরণের কাজে ব্যবহৃত হতো। এই হাতি গুলো থাকতো পিলখানায়। বর্তমানে এই এলাকাটি বিজিবি হেডকোয়ার্টার আর 'সীমান্ত স্কয়ার মার্কেট' নামেই অধিক পরিচিত।

পিলখানা থেকে বর্তমান হাতিরপুল এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য ইস্টার্ন প্লাজা ও পরিবাগ বরাবর যে সেতু বা পাকা পুল নির্মাণ করা হয়েছিল হাতি পারাপারের জন্য, সেটিই হাতিরপুল। পিলখানা থেকে রমনা পার্কে হাতি চারণের জন্য নেয়া হতো। যে রাস্তা দিয়ে নেয়া হতো সেটাই এখন এলিফ্যান্ট রোড। গাউছিয়া মার্কেটের পাশ দিয়ে বাটা সিগনাল ক্রস করে হাতিরপুল দিয়ে পরিবাগ হয়ে রমনা থানার পাশ দিয়ে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড় পেরিয়ে মধুবাগের দিকে যে রাস্তাটি গেছে- এই পুরো রাস্তাটির নাম ছিল এলিফ্যান্ট রোড, এটিই আদি ইতিহাস। ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় আজকের জনবহুল এলিফ্যান্ট রোড এলাকাটি ১৮০০ সালে ছিলো বিশাল আকৃতির গাছ-গাছালিতে ঘেরা ছোটখাট জঙ্গল। পরবর্তীতে গাছপালা কেটে হাতি চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়। এই এলিফ্যান্ট রোড দিয়েই শত শত হাতির পাল চড়িয়ে বেড়াতেন মাহুতরা। পরবর্তীতে সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত 'নিউ এলিফেন্ট রোড' নামের আড়ালে আদি এলিফেন্ট রোডের পরিচয়টি হারিয়ে গেছে।

বর্তমানে এলাকাটি হাতিরপুল নামেই পরিচিতি।
তখন মানুষেরা এই পুল, হাতি আর ট্রেন দেখতে এখানে আসতো। পুলের নিচে এর নীচে কাছাকাছি অবস্থানে ছোট ছোট কয়েকটি খাবারের হোটেল ছিল। আর ছিলো ছোট্ট একটি বাজার। বাজার বলতে তখন রেল লাইনের উপর কয়েকটা অস্থায়ী দোকান। ছাপরা দোকান। পঞ্চাশ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হাতিরপুলে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। অবশ্য হাতিরপুল বাজার তখনও হয়নি। নতুন বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনে পুঁজি বিনিয়োগ করে কিছু লোককে এখানে বেচাকেনা করতে বলেন, সেখান থেকেই এ বাজারের গোড়া পত্তন।
১৯৬৯ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত পুলে ওঠার জন্য টাকা দিয়ে রিকশা ঠেলে দেয়ার জন্য লোক পাওয়া যেতো। এই পুল পারাপারের জন্য যে সব ছোট ছোট ছেলেরা ছিলো, তাদেরকে প্রতিবার পারাপারের জন্য দিতে হতো ২ থেকে ৩ আনা। এরা ৪/৫ জনে দলবেঁধে রিকশা ঠেলতো। এভাবে রিকশায় চেপে পুল পার হওয়া যেতো। এই পথেই ছিলো শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীদের পৈতৃক বাড়িটা। হালকা হলুদ রঙের বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটির নাম ছিল 'দারুল আফিয়া'। হাতিরপুল পার হয়ে যাতায়াত করতে হতো দারুল আফিয়ায়, শহীদ মুনীর চৌধুরীর বাড়িতে। ১৯৭১ সালে সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাজাকাররা।

তৎকালীন রমনা এলাকার চারপাশে বেশ কিছু খাল ছিল।
যেগুলো এখন মানচিত্র আর কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে নেই। হাতি গুলোকে নেওয়ার জন্য খালের উপর নির্মিত হয়েছিলো সেতু। এগুলোকে উদ্ধার করে খাল গুলোকে মুক্ত করে নগর পরিকল্পনা করলে শহরটি অনেক সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। যেমনটা হয়েছে হাতিরঝিলের ক্ষেত্রে। সীমান্ত স্কয়ার থেকে হাতিরঝিল হয়ে একদিকে গুলশান পর্যন্ত অন্যদিকে ডেমরা পর্যন্ত নৌ চলাচল পথ তৈরি করা এখনো সম্ভব। হাতিরপুল ভেঙ্গে নীচের লাইন বরাবর যে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয় সেই রাস্তার নাম রাখা হয়েছিলো পেনিট্রেটর রোড। কেন এমন একটা অদ্ভুত নাম রাখা হয়েছিল, আর কীভাবেই বা এলাকাটা হাতিরপুল বাজার হয়ে গেল জানা যায়নি।

এখন যেখানে মোতালেব প্লাজা টাওয়ার গড়ে উঠেছে, সেখানে ছিল একটি সুইপার কলোনি। নাম ছিল 'মোতালেব কলোনি'। মোতালেব কলোনির মধ্যে পাঁচটি দোতলা বাড়ি ছিল। কাঁঠাল বাগানের ঢালে পরিত্যক্ত রেললাইন ছিল। ঢাকার নবাবরাও হাতি পার করার জন্য খাল ভরাট না করে বানিয়েছিলো হাতির পুল, আমরা তো আরো বড় নবাব, তাই খালটাই ভরাট করে দখল করে ফেললাম।ওপাশে ছিল পরীবাগ মসজিদ, ছিল পাওয়ার হাউসটাও। সেসময় হাতিরপুল সংলগ্ন পরিবাগ এলাকায় অনেক গাছগাছালি ও খাল ছিলো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা না-কি এই পুলের উপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে গুলিবর্ষণ করেছিল। হাতিরপুলটি ছিল খাড়া এবং উঁচু যার ফলে দুর্ঘটনা লেগেই থাকতো।

৭০ এর দশকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল এই হাতিরপুল ভাঙা নিয়ে। রিপোর্টে উল্লেখ করা আছে, ৫০ বছরের পুরোনো এই পুলটি ভাঙা হবে নগরে নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্য। পৌরসভা এই পুল ভাঙ্গার কাজটি করছে। নতুন রাস্তা তৈরির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। ফুলবাড়িয়া-তেজগাঁও রেললাইনের উপর দিয়ে পরিবাগ ও ধানমন্ডি এলাকার মধ্যে যান চলাচলের সহজ উপায় ছিলো এই হাতিরপুল বা রেলওয়ে ওভার ব্রিজটি। নগর সংস্কারের জোয়ারে ও আকাশচুম্বি অট্টালিকা তৈরির জন্য এই পুলটি ভাঙ্গা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিলো, 'যদিও এই পুলটি ঐতিহাসিক এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিলো, কিন্তু সে সময়ের নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেছিলেন রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুরে সরিয়ে নেয়ার পর এই পুলের আর দরকার নাই।'

তথ্যসূত্রঃ শাহানা হুদা রঞ্জনা। সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
ছবিঃ দৈনিক ইত্তেফাক

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


হাতি
আমার
সাথী!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: একটা মুভির নাম। হিন্দি মুভি।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১

স্থিতধী বলেছেন: হাতিরঝিল থেকে হাতিকে গোসল করিয়ে পিলখানায় নেবার মাঝে কলাবাগান থেকে কলা এনে হাতির খাবার ব্যাবস্থা করা হতো।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা এরকমই হয়তো হতো।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০২

ফেনা বলেছেন: অজানা কিছু তথ্য জানলাম। ভাল লাগল।
কেমন আছেন আপনি।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
আমি ভালো আছি।
অনেকদিন আপনাকে ব্লগে দেখি নাই।

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঢাকার এক টুকরো ইতিহাস, ভালোই।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ভুলে যাওয়া ইতিহাস।

৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গোসল করানোর পর হাতির শরীর মোছার জন্য গামছা আনতো কোথা থেকে? :P

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: গামছা সাপলাই দিতেন আমার নানী।

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পুরানো ইতিহাস জানলাম। এইসব ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী জানতে চাইবে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: কেউ কেউ জানতে চাইবে।

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ৬৪আমি নিজে দেখেছি।দেখেছি বললে ভুল হবে রাতের ট্রেনে নারায়নগঞ্জ থেকে বগুড়া যেতে ফুলবাড়িয়া হয়েই গেছি।তখন রেললাইন ওখান দিয়েই ছেল।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: কত কি দেখেছেন আপনি!!
সেসব লিখেন না কেন?
লেখা দরকার। লিখুন। দয়া করে লিখুন।

৮| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০১

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আপনি সব অসাধারন পোস্ট দেন রাজীব ভাই।
ধন্যবাদ।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি উৎসাহ পাই আপনার কাছ থেকে।

৯| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৬

রানার ব্লগ বলেছেন: হাতির ঝিলে যদি হাতি কে গোসল করানোর জন্য নাম দেয়া হয় তবে কি মতিঝিলে কি মতি বিবি গোসল করতেন!!

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: হায় আল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.