নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা এবং একজন জব্বার

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৪



ভাষার জন্য কোনো আন্দোলন না করেও আবদুল জব্বার ভাষা শহীদের মর্যাদা পান। তার গল্পটা এই রকম-
ময়মনসিংহের পাচুয়া গ্রামে দরিদ্র পরিবারে এক বালকের জন্ম হয়। বালকের নাম রাখা হয়- আবদুল জব্বার। সালটা ১৯১৯। জব্বার'রা মোট তিন ভাই। তাদের পিতার নাম হাসান আলীও মাতার নাম সাফাতুন নেছা। দরিদ্র পরিবারে তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে বড় হতে থাকে জব্বার। জব্বার প্রাইমারী স্কুলে ভরতি হয়। লেখাপড়া তার ভালো লাগে না। জব্বারের মনে হলো লেখাপড়া দরিদ্রদের জন্য না। যারা তিনবেলা পেট ভরে খেতে পায় লেখাপড়া তাদের জন্য। বাবা হাসান আলীকে জব্বার কৃষি কাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু তিনবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পায় না। এভাবে লক্ষ কোটি অভাবী বাঙ্গালী পরিবারের মতো জব্বারদের দিন গুলো কাটছিল অভাব অনটনে।

পনের বছর বয়সে নিজের খেয়াল খুশিতে এবং জীবন পরিবর্তনের আশায় এই সহজ সরল বালক আবদুল জব্বার গৃহ ত্যাগ করে। ট্রেনে করে নারায়নগঞ্জ চলে যায়। জীবনে প্রথম তার ট্রেনে চরা এবং নিজ গ্রামের বাইরে আসা। ভাগ্য ভালো জব্বার নারায়ণগঞ্জ এসে শ্রমিকের কাজ পেয়ে যায়। প্রায় এক বছর খুব মন দিয়ে জাহাজ ঘাটায় শ্রমিকের কাজ করে। খুব অল্প সময়ে ভালো কাজ করে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এক ইংরেজের নেক নজরে আসে জব্বার। সেখান থেকে ইংরেজ সাহেবের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইংরেজ সাহেব তাকে এক চাকরি দিয়ে বার্মা পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও জব্বার যথেষ্ঠ পরিশ্রম করে সবার মন জয় করে নেয়। কর্মের খাতিরে তাকে ইংরেজীতে কথা বলা শিখতে হয়। অনায়াসে সে ইংরেজীতে কথা বলে ব্যবসায়ীদের সাথে।

একরাতে জব্বার তার বাবা মাকে স্বপ্নে দেখে।
হঠাত সে বাবা মাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে সে সিদ্ধান্ত নেয় আর এক মুহূর্তও বার্মা থাকবে না। একটানা জব্বার দশ বছর চাকরি করে দেশে ফিরে আসে। তার বাবা মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। বহু বছর পর গ্রামে ফিরে এসে জব্বারের দিনকাল বেশ ভালো কাটছিল। কাজ পাগল মানুষ জব্বার। দেশে ফিরেও সে বসে থাকার লোক নয়। নিজের জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। মুদি দোকানের ব্যবসা। তার আয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ ভালোই চলছে তাদের জীবন।

জব্বার সিদ্দান্ত নিল- বিয়ে করবে।
সে তার বাবা মাকে জানালো। জব্বার তার বন্ধুর বোন আমেনা খাতুন নামে এক কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করেন। আমেনা খাতুনের বয়স তখন এগারো। তাদের পাশের গ্রামেই থাকে আমেনা। বিয়ের এক বছর পরেই তাদের ঘরে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুত্রের নাম রাখা হয়-নুরুল ইসলাম বাদল। সুন্দর হাসি খূশি পরিবার। প্রতিদিন রাতে জব্বার তার একমাত্র পুত্রকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ায়। এবং মনে মনে ভাবে জীবনটা মন্দ নয়।

জব্বারের পুত্র বাদল এর বয়স যখন পাঁচ বা ছয় মাস তখন জব্বার তার ক্যান্সার আক্রান্ত শ্বাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে আসেন। সময়টা ১৯৫২ সাল, একুশে ফেব্রুয়ারী। ঢাকা মেডিকেল এলাকায় সব দোকান পাট বন্ধ। চারদিকে থমথমে অবস্থা। জব্বার জানতো না ঢাকার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। সকাল থেকেই ছাত্ররা খুব আন্দোলন করছে। পুলিশ তাদের লাঠি হাতে ধাওয়া দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে ছাত্র জনতা সোচ্চার এবং শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার রাজপথ। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি দেখে জব্বার ঘাবড়ে গেল। সে গ্রামে থাকে তাই কি নিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছিল সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। আন্দোলনের দিকে জব্বার মন না দিয়ে সে খুব দৌড়ঝাঁপ করে তার শ্বাশুড়িকে হাসপাতালে ভরতি করতে সক্ষম হয়। তার চিন্তা একটাই যতদ্রুত সমম্ভব শ্বাশুড়িত চিকিৎসা শেষে করে গ্রামে ফিরে যেতে হবে।

এই আন্দোলনরত ঢাকা শহর তার মোটেও ভালো লাগছে না।
আন্দোলন নিজ চোখে দেখার জন্য আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। তখন দুপুর তিনটা। সকাল থেকে পুলিশের সাথে ছাত্রদের ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলছিল। অবাক হলেও সত্য পুলিশ ছাত্রদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারছিল না। একসময় পুলিশ এলোমেলো গুলি শুরু করে। একটা গুলি এসে লাগে জব্বারের বুকে। জব্বারকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আরও দুইজন মারা যায়। তাদের নাম আবুল বরকত ও রফিকউদ্দিন আহমদ। হাসপাতালে নেওয়ার বেশ কিছুক্ষন পর জব্বার মারা যায়।

ছাত্ররা আবদুল জব্বার, আবুল বরকত এবং রফিকউদ্দিন আহমদের লাশ দেখে ক্ষেপে উঠে। শেষে আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ এর সাথে গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষ আবদুল জব্বারকেও ভাষা শহীদ এর মর্যাদা দেওয়া হয়। এই ঘটনার দুই বছর পর আবদুল জব্বারের স্ত্রী আমেনাকে বিয়ে করে জব্বারের আপন ছোট ভাই। তারপর আমেনা আরও দুইজন সন্তান জন্ম দেয়।


(আমার অসমাপ্ত এবং অপ্রকাশিত উপন্যাস ''ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে'' এর অংশ বিশেষ।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩০

কালো যাদুকর বলেছেন: কবে বের হবে বইটি?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা এখনও শেষ হয়নি। তাছাড়া টাকা দিয়ে বই বের করা সম্ভব না।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:০০

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: লেখা খুব ভালো লাগলো...
আবদুল জব্বারের পুরো ঘটনাটা জানতাম না, যা একটু জানতাম তাও ভিন্নভাবে....
ধন্যবাদ আপনাকে...

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: আব্দুল জব্বারকে নিয়ে বিভিন্ন জনের লেখাতে পড়েছি। আমার মনে হয় এই নামগুলো এখন আর ব্যক্তিবিশেষকে উপস্থাপন করে না। এগুলো সামগ্রিকভাবে ভাষা আন্দোলনকারীদের প্রতীকী নাম হয়ে ওঠেছে। তবে স্কুল পাঠ্যে আরো ভাষা আন্দোলনকারীদের নাম যুক্ত করা উচিত।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
ভালো থাকুন।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আব্দুল জাব্বার এখন অমর একুশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । তাকে লাল ছালাম। তার ভাগ্য ছিল শহীদী তকমা। তিনি তা পেয়েছেন। সুন্দর তথ্যবহুল পোষ্ট ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ কবি সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

ভালো থাকুন।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: অনুসন্ধান করে নতুন কিছু তথ্য বের করুন।বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারবে।

একজন বের করেছেন গফুর সাহেব ভাষা সৈনিক ছিলেন। গোলাম আজম ভাষা সৈনিক ছিলেন পুরনো তথ্য।আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন মাওলানা মওদুদী ভাষা সৈনিক ছিলেন।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে। দেখি কি করা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.