নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পীড়া

১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:০৩



আমাদের গ্রামের বাড়িতে কাজ করতো পীড়া।
পীড়া একদম অলস কামলা। কোনো কাজ সঠিক ভাবে করতে পারতো না। তবে পীড়া মানুষ হিসেবে ছিলো ভালো। একদম সহজ সরল আর হাসি খুশী। পীড়ার ভালো নাম ছিলো আজিজুল। কিন্তু গ্রামের সবাই তাকে পীড়া বলেই ডাকতো। আমার দাদা পীড়া কে খুব পছন্দ করতেন। কলকাতা থেকে আসার সময় দাদা পীড়ার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন। একবার পীড়ার জন্য একটা কোট নিয়ে এলেন। সেই কোট পীড়া সারা বছর পরে থাকতো। তীব্র গরমের মধ্যেও পীড়া সেই কোট গা থেকে খুলতো না। কোট পড়েই নারকেল গাছে উঠত। উঠান ঝাড়ু দিতো। বাজারে যেত। অন্য বাড়ির কামলা থেকে সে সম্পূর্ন আলাদা।

পীড়াকে গ্রামের মানুষ ভয় করতো।
গ্রামের মানুষ বলতো পীড়ার কালমুখ। যা বলতো হয়ে যেত। যেমন আম গাছে খুব ভালো আম হয়েছে। পীড়া যদি একবার বলতো- এ বছর আম তো ভালৈ হইছে। দেখেন আবার ঝড়ে সব পড়ে যায় নাকি। তখন দেখা যেত ঝড়ে পুরো গাছটাই ভেঙ্গে যেত। কারো জমিতে ভালো ফসল হয়েছে, পীড়া যদি একবার বলতো- ফসল তো ভালোই হইছে। দেখেন আবার বন্যা হয় নাকি। বন্যা হলে ফসল সব ভেসে যাবে। সত্যি সত্যি বন্যা হতো, সমস্ত ফসল ভেসে যেত। একলোকের খুব কাশি হয়েছে। তখন পীড়া বলল, কাশি খুব খারাপ জিনিস। অনেকে খাশতে কাশতে মরে যায়। পরের দিন দেখা গেলো- সেই লোক সত্যি সত্যি কাশতে কাশতে মরে গেছে।

পীড়াকে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করতো আমার দাদা দাদী।
দাদা দাদীর কাছে পীড়ার আবদারের শেষ ছিলো না। দাদীকে বলতো- মা'জি গাছে তো এবার ভালো বেল হইছে। পাটায়পুতায় একটু বেশী করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ভর্তা করেন। খাই। পীড়া খেতে খুব পছন্দ করতো। দাদীকে প্রতি বছর একবার করে বলতো- খেজুরের গুঁড় দিয়ে একটু পায়েস করেন। পীড়া পুকুর থেকে কই মাছ ধরে এনে বলতো- কই মাছের সালুন করেন। কত মাছ খাইতে আউস হইছে। পীড়া একদিন দাদার কাছে আবদার করলো, আমি প্রতিদিন এক গ্লাস করে খাটি দুধ খেতে চাই। তবে কেনা দুধ না। গরু কিনেন, আমি নিজে দুধ ধোয়াবো। সেই দুধ খাবো। কেনা দুধে বিশ্বাস নাই। গরু কেনা হলো। গরু নিয়ে পীড়া সারাদিন মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ির কোনো কাজই করে না। দাদা কলকাতা যাওয়ার সময় পীড়া একবার বলল, একটা রঙ্গিন চশমা আনবেন। চশমা পড়তে মন চাইছে গো।

পীড়াকে আমি কোনোদিন দেখি নাই।
আমার জন্মের আগেই সে মারা গেছে। ডাকাতের দায়ের কোপ খেয়ে পীড়ার মৃত্যু হয়েছে। দাদা তখন ছিলেন কোলকাতায়। সেবার দাদীকেও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। খালি বাসায় ডাকাত আক্রমন করলো। পীড়া নিজের জীবন দিয়ে দাদার ঘরবাড়ি ডাকাতি থেকে রক্ষা করলো। ডাকাত কিছুই নিতে পারে নি। দাদা ফিরে এসে সব ঘটনা জানলো। পীড়ার জন্য তিনি অনেক মন খারাপ করলেন। দাদার ইচ্ছা ছিলো এবার কলকাতা থেকে এসে পীড়ার বিয়ে দিবে। পীড়াকে কিছু জমি দিবে। একটা ঘর তুলে দিবে। কিছুই হলো না। পীড়ার মৃত্যুতে দাদা একটা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করলেন। সমস্ত গ্রামের মানুষকে খাওয়ালেন।

পীড়ার কোনো ছবি নাই।
আছে শুধু অনেক অনেক গল্প। একসময় গ্রামের ধনী বাড়ি গুলোতে এক-দুইজন করে পীড়ার মতো লোক থাকতো। তারা সারাদিন অনেক কাজ করতো। তাদের কোনো চাহিদা ছিলো না। পেট ভরে খেতে পারলেই তারা খুশি। পীড়ার মতো লোকেরা বিশস্ত হতো। চুরী করা, টাকা সরানো তারা জানতো না। সহজ সরল ছিলো তাদের জীবনযাপন। দাদা দাদীর মুখে পীড়ার গল্প অনেক শুনেছি। দাদা পীড়াকে একবার কলকাতা নিয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতা দেখে পীড়া বলেছিলো- তার জীবন সার্থক। এবার সে মরে গেলেও তার কোনো কষ্ট নাই। পীড়ার বাবা মার কোনো খোজ ছিলো না। একদম ছোট বয়স থেকেই দাদার সাথে ছিলো। দশ বছর বয়সে শ্রীনগর বাজারে এসেছিলো। সেখান থেকে আমাদের বাড়িতে। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে পীড়া ডাকাতের ছুরির আঘাতে মারা যায়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



মানুষটা পুরো জীবনটাকে অনুভব করার সয় পেলো না।

১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: লোকটা আরও কিছু দিন বেঁচে থাকলে আমি তাকে দেখতে পেতাম।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৩৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এখনো বাপ মা ছাড়া ছেলেমেয়ে পাওয়া যায়।কেউ তাদের খবর রাখে না।রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নেয় না।
হায় রে সৃষ্টির সেরা মানুষ!।আল্লাহ পরম দয়ালু নামের কলঙ্ক।সে পারে সুধু পোড়াতে আর ভয় দেখাতে।

১৪ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করেছেন।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

এই ছেলে পড়াশোনার সুযোগ পেলে খুবই ভালো করতে পারতো।

১৪ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা তা পারতো।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৪৯

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: এই ধরণের দাসত্বের শৃঙ্খল এখনো অনেকের গলায় আছে। সারাটা জীবন অন্যের জন্য খেটে যায়, নিজের জীবনটা মোটেই অনুভব করতে পারে না।

১৪ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৪২

জুল ভার্ন বলেছেন: এমন অসখ্য মেধাবীরা হারিয়ে শুধু সুযোগের অভাবে।

১৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: যেমন আমি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.