নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদা গাড়ি

১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৫৯



বহু বছর আগের কথা।
সন তারিখ আমি বলতে পারবো না। তবে তখন আমার জন্ম হয়নি। আমার বাবারও জন্ম হয়নি। তবে আমার দাদার জন্ম হয়েছে। সে তখন বয়সে তরুন। কলকাতায় লেখাপড়া করেন। দাদা খুব সুন্দর ছিলেন। উদাহুরন স্বরুপ বলতে পারি- নায়ক উত্তম কুমারের চেয়ে বেশী সুন্দর ছিলেন। দেখতে উঁচা লম্বা। স্বাস্থ্য ছিলো চমৎকার। দাদা বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করেই ব্যবসা শুরু করলেন। কলকাতার বৈঠকখানা রোডে তার ব্যবসা। নিউজ প্রিন্ট কাগজের ব্যবসা। দাদার বাবা মোহর খা খুব রাগ করলেন। তিনি বললেন, লেখাপড়া শেষ, এখন তুমি বিক্রমপুর চলে আসো। আমার তো টাকা-পয়সা, ধনসম্পদ কম নেই। তোমার কেন ব্যবসা করতে হবে? এটা দুঃখজনক। আমি মর্মাহত।

দাদা তার ব্যবসা অব্যহত রাখলেন।
খুব অল্প সময়েই ব্যবসায় সাফল্য পেতে শুরু করলেন। তিনি বৈঠকখানা রোডে একটা তিন তলা বাড়ি কিনে ফেললেন। নীচ তলা কারখানা, দোতলায় অফিস আর তিন তলায় দাদা থাকেন। মোহর খা কলকাতায় গিয়ে ছেলেকে ধরে বিক্রমপুর নিয়ে এলেন। কারন দাদার জন্য মেয়ে দেখা হয়েছে। দাদার বিয়ে। একদিন দাদা দাদীকে দেখতে গেলেন। তাদের দেখা হলো পুকুর ঘাটে। দাদীকে দেখে দাদা মুগ্ধ। দাদাকে দেখে দাদীও মুগ্ধ। দাদা মেয়ে দেখে খুব খুশি হলেন। দারুন সুন্দরী। সুন্দর গান গায়। ভালো রান্না জানেন। লেখাপড়া জানেন। তাছাড়া অতি উচ্চ বংশ। মেয়ের বাপও অনেক ধনী। একসময় তাদেরও বিশাল জমিদারি ছিলো। দাদী পালকিতে চড়ে দাদা বাড়ি এলেন। দাদার বাবা মোহর খা পাল্লায় দাদীর ওজন মেপে সেই পরিমান স্বর্ন দাদীকে উপহার দিলেন।

ব্যস বিয়ে হয়ে গেলো খুব ধূমধাম করে।
দাদা দাদীকে কলকাতা নিয়ে গেলেন। সারা কলকাতা ঘুরে দেখালেন। সিনেমা দেখলেন। অনেক শপিং করলেন। দাদী কলকাতায় দাদার বাড়ি দেখে বললেন, বাড়িটা খুব ছোট। বেলকনি গুলোও খুব ছোট। পুকুর নাই। ঘাট নাই। আমি এত ছোট বাড়িতে থাকতে পারবো না। আমার হাসফাঁস লাগে। দাদা বললেন, সমস্যা নাই বড় দেখে একটা বাড়ি কিনে ফেলব। দাদী বললেন, বড় বাড়ি কেনার দরকার নাই। বিক্রমপুরে আমাদের বড় বাড়ি তো আছে। এত বাড়ি দিয়ে কি হবে? যদি পারো একটা গাড়ি কিনো। দাদা বললেন, পনের দিনের মধ্যে গাড়ি কিনব। কি রঙ তোমার পছন্দ? দাদী বললেন, সাদা গাড়ি।

দাদা সত্যি সত্যি গাড়ি কিনে ফেললেন।
তার আগে নিজে গাড়ি চালানো শিখলেন। সাদা গাড়ি। কলকাতা থেকে সেই গাড়ি জাহাজে করে বিক্রমপুর আনা হলো। সম্ভবত এটাই বিক্রমপুরের প্রথম গাড়ি। গাড়ি দেখে দাদী মুগ্ধ! সারা গ্রামের মানুষ সেই গাড়ি দেখতে ভিড় করলো। কৃষক, মজুর, ব্যবসায়ী, ঝি থেকে শুরু করে পাড়াপ্রতিবেশী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই গাড়ি দেখতে আসে। চারিদিকে একটা উৎসব ভাব। দাদার বাবা ঘোষনা করলেন, যারাই গাড়ি দেখতে আসবে তাদের সবাইকে পেট ভরে খাওয়ানো হোক। টানা একমাস উঠানে রান্না চললো। মানুষ গাড়ি দেখলো আর খেলো। তারা খুশি। কারো কারো শখ বেশী। তারা গাড়িতে চড়তে চায়। তাদের গাড়িতে বসিয়ে দাদা শ্রী নগরের বিভিন্ন মাটির রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেন। আমাদের গ্রামের এমন কেউ বাদ নাই যে দাদার গাড়িতে উঠেনি।

দাদা জোর করে তার বাবাকে গাড়িতে উঠালেন।
সাথে দাদী ছিলেন। দাদা পদ্মার পাড় দিয়ে গাড়ি দুই চক্কর দিলেন। দাদার বাবা সেদিন বলেছিলেন, মোয়াজ্জেম আমি তোমার উপর খুশি। আমার দাদার ভালো নাম মোয়াজ্জেম হোসেন। যদিও সবাই 'নওসা মিয়াঁ' বলে ডাকতেন। যাই হোক, গ্রামের এক গর্ভবতী মহিলা ইচ্ছাপোষন করলেন, তার বাচ্চা হবে গাড়িতে। সত্যিই সেই মহিলার গাড়িতে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। গ্রামের সমস্ত বাচ্চাদের গাড়িতে বসিয়ে দাদা তাদের মাওয়া পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। বলেছেন, যারা ভালো ভাবে লেখাপড়া করবে তারা এরকম গাড়ি কিনতে পারবে। এরপর সত্যি সত্যি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় খুব মন দিয়েছিলো। উল্লেখ্য, আমার দাদা একদিন হঠাত অন্ধ হয়ে যান। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু তিনি বাকি জীবন আর কিছু দেখতে পান নি।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

এই নামে লেখক হুমায়ূন আহমেদের একটা গল্প পড়েছিলাম ।
গল্পটি পরে নাটকে রূপান্তরিত হয়েছিল।

১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা আমি গল্পটি পড়েছি।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


আপনার দাদাজান এক জন মহামানব ছিলেন।

১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো মানুষ ছিলেন। গ্রামের সবাইকে ভালোবাসতেন। দুই হাতে টাকা খরচ করতেন।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



কলকাতার বাড়ীর কি হলো?

১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: সেই বাড়ি উদ্ধার করার জন্য আমার চাচা অনেক দৌড়ঝাঁপ করলেন। অনেক টাকা খরচ করলেন। মামলা করলেন। মামলা চলতে থাকলো। টাকা খরচ হতে লাগলো পানির মতোন।
আমরা কলকাতা গেলে বইঠকখানা রোডে যাই। দাদার বাড়িটি দেখে আসি।

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:১১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বাড়ীর পজিশন ছেড়ে দেয়াটাই ছিল ভুল।কলকাতায় বিক্রমপুরের কয়েক জনের বাড়িতে আমি গেছি তারা বাড়ি ছেড়ে চলে আসে নাই,তাই তাদের বাড়ী আজো আছে।আপনার দাদা মনে হয় বাড়ী ছেড়ে চলে এসেছিলেন তাই বেহাত হয়ে গেছে।ইতি মধ্যে তারা কাগজ পত্র বানিয়ে ফেলেছে।

১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: দাদা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন।
দাদা বাড়িটা ভাড়া দিয়ে এসেছিলেন। এরপর শুরু হলো যুদ্ধ।

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:৩১

অনল চৌধুরী বলেছেন: কলকাতার বাড়িটা দখল করেছে কারা?

১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক হাত বদল হয়ে এখন ক্ষমতাবান এক নেতার হাতে।

৬| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:৫৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কোন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো।৬৬ এর যুদ্ধ

১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি সঠিক মনে করতে পারছি না। ৬৬ অথবা ৭১ হবে।

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:০৫

জুল ভার্ন বলেছেন: রোমান্থন লেখা ভালো হয়েছে এবং পড়েও মুগ্ধ হয়েছি।
শুভ কামনা।

১৮ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাবেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.