নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আমার বন্ধু শফিক।
খুবই ভালো একটা ছেলে। হাসি খুশি প্রানবন্ত মানুষ। প্রচুর বই পড়ে সে। শফিক একটা পত্রিকা অফিসে চাকরি করে। তার পদবী ফটোগ্রাফার। কিন্তু তাকে অফিসে অনেক কাজই করতে হয়। এমন কি সম্পাদকের বাসায় গিয়ে এটা-সেটা পৌঁছে দিয়ে আসতে হয়। একদিন শফিক তার সম্পাদকের বাসায় গিয়েছে, সম্পাদকের স্ত্রী বললেন, আমাকে মাথা ব্যাথার ওষুধ এনে দাও। আমার কাজের মেয়েটা রাস্তা চিনে না। আরেকদিন সম্পাদকের স্ত্রী বললেন, দুই কেজি আলু এনে দাও।
শফিক নিরবে কাজ করে যায়।
প্রতিবাদ করে না। অফিসের সিনিয়র ভাইরা- এটা সেটা অফিসে নানান কাজ দেয়, অফিসের বাইরের অনেক কাজ দেয়। শফিকের তাও করে দিতে হয়। না করলে উপায় নাই। হয়তো অফিস থেকে মানা করে দিবে। বড় ভাইদের হাতে অনেক ক্ষমতা। অফিস ছুটি ছয়টায়। কিন্তু কখনও কখনও শফিক বাসায় ফিরেছে রাত ১১ টায়। দিনের পর দিন এই এরকম হয়েছে। শফিক নিরবে সব সহ্য করে গেছে। কারন চাকরি চলে গেলে, চাকরি পাওয়া ভীষন মুশকিল। তাছাড়া শফিকের ধারনা ছিলো- কাজ করলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যাবে।
শফিক বিয়ে করেছে।
তাদের প্রেমের বিয়ে। তার স্ত্রী নীলা চমৎকার মেয়ে। মাস্টার্স পাশ। বাড়ি পিরোজপুর। নীলার হাতের রান্না খুব ভালো। নীলার আচার-ব্যাবহারও খুব ভালো। নীলা হলো হাস্যমূখী এবং সাংসারিক মেয়ে। তাদের একটা কন্যা আছে নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনার বয়স তিন বছর। নীলাঞ্জনা এখন হাঁটতে পারে এবং কথা বলতে পারে। সপ্তাহে একদিন শফিকের অফিস ছুটি। সেদিন শফিক সারা সপ্তাহের বাজার করে। ঘরের কাজে নীলাকে সাহায্য করে। এবং পকেটে টাকা থাকলে বিকেলে বউ বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে বের হয়। তখন তার মনে হয় জীবনটা আনন্দময়। এবং স্ত্রী, কন্যার জন্য দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা খুব দরকার। যেদিন শফিক অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে সেদিন সে তার কন্যাকে পড়াতে বসায়। কন্যাকে পড়াতে শফিকের অনেক ভালো লাগে। নীলাঞ্জনা লেখাপড়ার পাশাপাশি বেশ ভালো ছবি আঁকতে পারে। শফিকও ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ করে।
শফিক 'আলোর বাংলাদেশ' পত্রিকায় ৫/৬ বছর ধরে কাজ করছে।
তার চাকরি জীবনে সে কখনও অফিসে দেরী করে যায় নি। এবং অফিস ছুটির আগে বাসায় চলে আসে নি। সবচেয়ে বড় কথা সে বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে অথচ একদিনও ছুটি কাটায় নি। তবে বিয়ের পর তিন দিন ছুটি নিয়েছিলো। এবং তার কন্যা হওয়ার সময় তিন দিন ছুটি নিয়েছিলো। অর্থ্যাত ছয় বছরে সে মোট ছয় দিন ছুটি নিয়েছিলো। এটা তার রেকর্ড। অবশ্য অফিস তার রেকর্ড এর দিকে ফিরেও তাকায় নি।
শফিক তার কাজকে অনেক ভালোবাসতো।
কারন চাকরি করেই তার সংসার চলে। চাকরি চলে গেলে সে বিরাট বিপদে পড়বে। তার জমানো টাকা নেই। তাই অফিস যা-ই বলে সে চুপ করে মেনে নেয়। যে কাজ দেয় সে হাসি মুখে করে দেয়। কখনও প্রতিবাদ করে নি। এমনকি সম্পাদক তার ব্যাক্তিগত কাজে শফিককে নানান জায়গায় পাঠাতো। মাঝে মাঝে নিজের গ্রামের বাড়িতেও নিয়ে যেত। একবার সম্পাদকের গ্রামের বাড়ি গিয়ে সাত দিন থাকতে হয়েছিলো। শফিক জানে চাকরি করলে অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়। মাস শেষে কিছু টাকা তো অন্তত পাওয়া যায়। শফিকের তার অফিসের একটা বিষয় খুব ভালো লাগতো, তা হলো- প্রতিমাসের চার তারিখে সেলারি পাওয়া যেত। চার তারিখ হলেই একাউন্টে টাকা চলে আসতো। সময় মতো পত্রিকা অফিসে বেতন পাওয়া বিশাল ব্যাপার।
হঠাত দেশে শুরু হলো করোনা।
শুরু হলো লকডাউন। লকডাউন এর মধ্যে একদিন অফিস থেকে শফিককে ফোন করে বলল, আপনার চাকরি নাই। আপনি বিদায়। অফিসে এসে আইডি কার্ড জমা দিয়ে যান। শফিক অফিসে গেলো। এইচআর কামাল সাহেবকে বলল, ঘটনা কি ভাই? আমার চাকরি নাই কেন? আমি কি অপরাধ করেছি? আমার দোষ কি? নাকি আপনি মজা করছেন ভাইসাহেব? কামাল বলল, এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না। বিদায় হোন। শফিক আইডি কার্ড জমা দিয়ে মন খারাপ করে বাসায় ফিরলো। তার মন ভয়াবহ খারাপ। এটা কিভাবে সম্ভব? নাকি সে স্বপ্ন দেখছে? শফিক সম্পাদককে ফোন দিলো। সম্পাদক ফোন ধরলেন না। হোয়াটসঅ্যাপ এ ম্যাসেজ দিলো, সম্পাদক ম্যাসেজ এর উত্তর দিলেন না। অথচ আগে কখনও এমন হয় নাই। শফিক সিনিয়র ভাইদের ফোন দিলো- তারাও কেউ ফোন ধরলো না। শফিকের মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
এই করোনার মধ্যে কোথাও চাকরি পাওয়া যাবে না। বরং অন্যান্য অফিস লোক ছাটাই করছে। সমস্যা হলো- শফিকের ক্ষমতাবান মামা চাচা নেই। যতবার শফিকের মনে হয়- তার চাকরি ততবার তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সে তার ঘুমন্ত স্ত্রী কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের কপালে চুমু দেয়। মনে মনে বলে, কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো। তোমরা চিন্তা করো না। আমি আছি।
দেখতে দেখতে বছর পেরিয়ে গেলো।
শফিকের আর চাকরি হয় নি। অবশ্য সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পত্রিকা অফিসে সে আর চাকরি করবে না। জান-জীবন দিয়ে সে খেটেছে। কোনোদিন অফিস ফাঁকি দেয়নি। যে যা বলেছে সব মেনেছে। একবার অফিসের কাজে বাগেরহাট গিয়ে সে মাইর পর্যন্ত খেয়েছে। সেদিন শফিক মরেই যেত। ভাগ্যক্রমে পুলিশ এসে তাকে বাচিয়েছ। কত সৃতি তার অফিসে। সবাই তাকে ভালোবাসতো। না সবাই না। কয়েকজন ছাড়া। এই কয়েকজন বসদের কান ভারি করতো। কিন্তু শফিকের বিশ্বাস ছিলো- সে যখন সৎ এবং ফাঁকিবাজ না কাজেই তার কোনো সমস্যা হবে না। এই আত্মবিশ্বাস তার ছিলো। কিন্তু কোনো কারন না দেখিয়ে অফিস তাকে মানা করে দিলো। অফিস যে তাকে মানা করবে এটা শফিক কখনও ভাবে নি। কারন শফিক প্রচন্ড পরিশ্রমী কর্মী ছিলো। শফিক ঠিক করে রেখেছে, যদিও কখনও তার সম্পাদকের সাথে দেখা হয়- তাহলে সে জিজ্ঞেস করবে তার অপরাধ কি? তার চাকরি কেন চলে গেলো? তাকে বাদ দিয়ে অফিসের কি লাভ হলো?
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: না আমার কাহিনী না।
আমার বন্ধু শফিকের কাহিনী।
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:১৯
কলাবাগান১ বলেছেন: আগের লিখাতে বলেছিলেন যে 'শফিক' অফিস আওয়ারে সামুতে সবসময় ব্লগিং করাতেই চাকরী চলে যায়
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা বলেছিলাম। সেটা সঠিক।
তবে সেটা আমার অন্য বন্ধু। বন্ধুর নাম ছিলো রফিক।
৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৩৩
ইসিয়াক বলেছেন: আপনি বললেন নীলাঞ্জনার বয়স তিন বছর। তিন বছরের শিশুকে বন্ধের দিন পড়তে বসান।
এতটুকু বাচ্চাকে কি পড়ান? অদ্ভুত!
#আমার মনে হয় বসের বউকে একটু ম্যানেজ করতে পারলে আপনার চাকরিটা যেত না।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: তিন বছরের শিশু বাপের সাথে পড়তে বসবে তাতে সমস্যা কি?
আমার চাকরি না। আমার বন্ধু শফিকের চাকরি। তবে ও চাকরি নট হয়ে ভালো হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:৪৭
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: চাকুরি হারানোর ব্যাথা হয়তো উপলব্ধি করতে পারবোনা,কিন্তু রুটি রুজির পথটাই যদি বন্ধ হয়ে যায়, সেটা যে কত দুঃখের সেটা বুজতে পারি।প্রাইভেট চাকুরি গুলিই বুঝি এই রকম।আমার স্ত্রী বলতো, সরকার কেন যে আমাকে টাকা দেয় আমি নিজেই বুঝতে পারি না।সেই সাথে ডি টাইপের একটা বাসা।।
গল্পচ্ছলে নিজের কাহিনীই বললেন।