নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার আত্মকথা

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৭

ছবিঃ আমার তোলা।

লেখাটি আমার নয়। আমার শ্বশুর মশাইয়ের লেখা। তিনি কয়েক বছর ধরে লেখালেখি শুরু করেছেন। তার অনুমতি নিয়ে লেখাটি আমি ব্লগে দিলাম।)


আমি একজন সাধারণ কৃষক পরিবারে প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মানুষ। তখনকার সময়ে সন্নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে ফ্রী প্রাইমারি স্কুল ছাড়া আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। আমাদের বাড়ির মেয়েরা প্রাইমারী পাশই ছিল শেষ শিক্ষা। অবশ্য বাড়িতে কারি সাহেবের কাছে সুরা কোরান পাঠের ব্যবস্হা আদিকাল থেকেই প্রচলিত ছিল।

কিন্তু আমরা দূর দূরান্তে বিশেষ করে আশু বাবুর স্কুলসহ দূরে কোথাও ছেলেরা পায়ে হেটে (খালি পায়ে) স্কুলে যেতাম। তখন এসএসসি পরীক্ষা হতো যশোহর বোর্ডের অধীন। আমার পূর্বে আমাদের বাড়ির রশিদ ভাই ও আনোয়ার ভাই (প্রায়ত) এসএসসি পাশ করেছিল। তৃতীয় ব্যক্তি আমি। অতঃপর গিয়াসউদ্দিন, মজিবরসহ অনেকে পাশ করেছে। আমাদের ফকির বাড়ির অনেকে এখন আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। বলা বাহুল্য এ বাড়িতে এখন চল্লিশ জনের মত গ্রাজুয়েট আছে। অথচ পাকিস্তান আমলে বাড়ির নিকটে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের বাড়ির মেয়েরা অকালে ঝড়ে যেত এবং বাল্য বিবাহের শিকার হতো। এই চিত্র শুধু ফকির বাড়ির নয়, সমগ্র গ্রাম বাংলার ছবি আঁকলাম। বাড়ির ছেলেরা শিক্ষা গ্রহন করায় বোন জামাই অশিক্ষিত হওয়ায় যে দূর্দশা পোহাতে হতো কেউ মুখে না বললেও আমার বুঝতে অসুবিধা হতো না। যেহেতু মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা না পাওয়ায় স্বাভাবত অশিক্ষিত জামাই পাওয়াই স্বাভাবিক ব্যাপার। আজ আমাদের বাড়ির মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভাল বর ও ঘর পেয়েছে। যা আমাদের সময়ে অকল্পনীয় বিষয় ছিল।

আমি প্রথমে শিকারপুর এ,কে, স্কুলে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদ স্পীকার জনাব জাস্টিস আব্দুল জব্বার খাঁন (রাশেদ খাঁন মেনন এর পিতা) কর্তৃক তাঁর বাবা কাজল খানের নামে প্রতিষ্ঠিত বাহের চর ক্ষুদ্রকাঠী কে,কে, স্কুলে আমার মত এলাকার অনেক ছাত্রকে ভর্তি হতে হয়েছিল। পুনরায় শুরু হয় আমার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন। এ সময়ে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় জনাব আবদুল জব্বার স্যার। এই ভদ্রলোক সাধারণ শিক্ষা গ্রহন করলেও ধর্মের প্রতি অসম্ভব অনুরাগী ছিলেন। আমাদের স্কুলে সকল ছাত্র ছাত্রীর নামাজ পড়ার বাধ্যবাদকতা ছিল। প্রধান শিক্ষক স্যারের অফিসিয়াল আদেশ ছিল যারা জোহরের নামাজ স্কুলে জামাতে আদায় করবে না তাদের চারি আনা জরিমানা বেতনের সাথে গুনতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, তৎকালিন সময়ে আমাদের স্কুলে মাসিক বেতন ছিল সর্বসাকুল্যে ৪ টাকা। তারমধ্যে আমরা অনেকে হাফ ফ্রি ছিলাম। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করার কারন হচ্ছে, প্রত্যহ চার আনা জরিমানা দেওয়ার সমর্থ কোন ছাত্রের না থাকায় বাধ্য হয়ে জোহরের নামাজ স্কুলের মসজিদে মুসলিম ছাত্রদের আদায় করতে হত।

যাহোক, আমি এসএসসি'তে মানবিক বিভাগে অংকে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে পাশ করার পর আমার জীবনে নতুন জীবন যুদ্ধের আর এক অধ্যায় শুরু করি। আমি অনেক প্রতিকূলতার মাঝে আমার সেজো ভাইয়ের উপর ভরসা করে ঢাকায় মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গভঃ কমার্শিয়াল কলেজে ডিপ্লোমা ইন কমার্স এ ভর্তি হই। আমার এসএসসি ও এই বিদ্যালয়ের সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট বিবেচনায় আমি মাসে ৪০ টাকা বৃত্তি পেতাম। আমি মোহাম্মদপুর থানার মুন্সি আবদুর রহমান সাহেবের বাসায় লজিং থেকে তার কন্যা সেফালীকে পড়ানোর বিনিময়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্হা হলেও আমি দ্বিতীয় বর্ষে উঠার পর প্রথমে হোষ্টেলে তারপর আমার সেজ ভাই আবদুল হাইয়ের শ্রমিক মেছে আমার ঠাই হয়। সেখানে পড়াশোনার কোন পরিবেশ না থাকা সত্বেও অদম্য ইচ্ছে শক্তির কাছে পরিবেশ হার মানতে বাধ্য হয়। আমি ডিপ্লোমা ইন কমার্স (এইচএসসি সমমান) ২য় বিভাগে পাশ করি (১৪ নম্বরের জন্য প্রথম বিভাগ পাইনি যা আজও আমাকে পোড়ায়)। এর'ই মাঝে আমার প্রশাসনের কেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে ১৯৭৪ সালে ১লা এপ্রিল ৭ম গ্রেডের একটি ভালো চাকরি হয়। আমার কর্মস্থল বিদ্যুৎ, পানি উন্নয়ন ও বন্যানিয়ন্ত্রন মন্ত্রণালয়ে। শুরু হলো আর এক সংগ্রামী জীবন।

কাকতালীয় ব্যাপার, আমার জন্মতারিখ ১লা এপ্রিল আর চাকুরীতে যোগদানও ১লা এপ্রিল। আমি গাও গ্রামের একজন সাধারণ ঘর থেকে আসা মানুষটি দেশের প্রাণ কেন্দ্র বলে খ্যাত সচিবালয়ে চাকুরীতে প্রবেশ করি। এ সময়টা ছিলো আমার জীবনে স্বপ্নসম। ১৯৭৪ সালে চরম দুর্ভিক্ষে আমি আমার মা-বাবা পরিবার পরিজনের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি গ্রামের সেই বালক, যে বালক গ্রামের কাঁদা জ্বলে বেড়ে ওঠা এক কৃষক পরিবারের স্বল্পভাষী পল্লী গাঁয়ের আদরে অনাদরে বেড়ে ওঠা এক অদম্য দৃঢ়চেতা ভবিষ্যৎ কল্পবিলাসী বালক। চাকুরী আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তখনকার সময় কত কষ্টকর তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমি সিটি কলেজ থেকে কলা বিভাগে বিএ পাশ করে জগন্নাত কলেজে নাইটে দর্শন শাস্ত্রে মাস্টার্সে ভর্তি হই এবং একই সাথে বিজয় নগরে অবস্হিত সেন্ট্রাল 'ল' কলেজে এলএলবি'তে ভর্তি হই।

চাকরী করে ল' কলেজে নাইটে এবং মাষ্টার্সে নাইটে পড়ালেখা করি এবং মোহাম্মদপুর সাত মসজিদের নিকটে একটা মেছে থাকি। মেছে ঠিক নয় ছোট্ট একটা রুমে মাসে ২৫ টাকা ভাড়ায় থাকতাম। নিয়মিত কাজের বুয়ার হাতের রান্না খেয়ে জীবনের সোনালি সময় পার করেছি। জীবনে ভালোবাসার রজনীগন্ধা আসার সুযোগ হয়নি কখনও। একদিকে চাকরি, লেখাপড়া ও অন্যদিকে বাম ধারার রাজনীতি আমায় ঘিরে বসল। আমি সরকারি কর্মচারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তির আন্দোলনে নিজে অবগাহিত হলাম। নিজেকে সোপে দিলাম সরকারি কর্মচারীদের দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে সম্মুখ যোদ্ধার কাতারে।

(চলবে----)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনার শ্বশুর গুনীমানুষ
তার সহচার্যে আপনার বুদ্ধিবৃত্তির
উন্নতি হবার কথা ছিলো।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: গত এক বছরে শ্বশুরের সাথে দেখা হয়েছে একবার। চারিদিকে করোনা তাই কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সরল স্বীকারোক্তির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলে আপনি খুবই সরল মানুষ। অর্ধেক চালাক
আর অর্ধেক বোকা। দুরমা টাইপ, না ডাব ডা ঝুনা।
তবে এত সরল হওয়া ভালো নয়। কথায় আছে
যে বোকা সে আমার ভাই, যে বুদ্ধিমান সেও আমার ভাই।
আর যে অর্ধেক চালাক আর অর্ধেক বোকা সে হলো ইয়ের !! ভাই !!

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি অবশ্যই একটা বুদ্ধিমান ছেলে।

৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আপনার কমেন্ট কোথায়।
মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা কি ছিল।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা সেসব তিনি লিখবেন।

হ্যা আমার কমেন্ট দিবো।

৪| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



সেই যুগে, বামপন্হীরা খুবই মহাপ্রাণ মানপ্রাণ মানুষ ছিলেন; কিন্তু উনাদের সঠিক কোন প্রোগ্রাম ছিলো না।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: সঠিক প্রোগ্রাম না থাকার কারন হয়তো সরকার বদল। ৫ বছর পর পর সরকার বদল হয়। কিন্তু চাকরিজীবিরা বদল হয় না।

৫| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টা আমি দুবার পড়েছি। প্রথমবার পড়ি এডিট করার সময়। বেশ কিছু বানান ভুল ছিলো। আমি সেসব ঠিক করে দিয়েছি।
করোনার সময় বাইরে না গিয়ে লেখালেখি করা ভালো। অলরেডি একবার করোনা হয়েছে। প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন।

৬| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০০

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার শ্বশুরের লেখা বেশ সাবলীল। আপনার সকাল- বিকালের লেখাগুলি উনি কি পড়েন?

০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: না পড়েন না। পড়তে দেই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.