নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সময়টা ১৯৮০ সাল। জানুয়ারী মাস।
শীতকাল। রফিক আজ কাজে যায় নি। সে আজ বিনুকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। সিনেমার নাম 'অনন্ত প্রেম'। নায়ক রাজ্জাক। নায়িকা ববিতা। বিনুর মা বাবা এখনই তাদের কাজে বের হবে। তারপর রফিক বিনুকে সরাসরি বলবে, বিনু আজ আমার অফিস নেই। ছুটি নিয়েছি। তুমি কি আমার সাথে সিনেমা দেখতে যাবে? আমার একটা ভেসপা আছে। আরামে যেতে পারবে। যদি বিনু সিনেমা দেখতে যেতে রাজী হয়, তাহলে ফেরার পথে রফিক স্পষ্ট বলবে, আমি তোমাকে ভালোবাসি বিনু। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি এতটুকু তোমাকে বলতে পারি- আমি তোমাকে কখনও দুঃখ কষ্ট দিবো না।
রফিক ঘর থেকে উঠানে এলো।
উঠানে বিনু ভেজা কাপড় মেলে দিচ্ছে। সে মাত্র গোছল করেছে। চুল গড়িয়ে পানি পড়ছে। পিঠ ভিজে আছে তাঁর। কি সুন্দর না লাগছে বিনুকে। কি সুন্দর, শান্ত, স্নিগ্ধ । বিনু মুখটা বড় পবিত্র। সহজ সরল। মুখ দেখেই বুঝা যায়- পৃথিবীর কোনো পাপ আজ পর্যন্ত তাকে স্পর্শ করে নি। রফিক কোনো ভনিতা না করেই বলল, বিনু আজ আমার সাথে সিনেমা দেখতে যাবে? আমি জানি, তুমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করো। প্রচুর সিনেমা দেখো তুমি। চলো না যাই। প্লীজ।
বিনু সহজ সরল মেয়ে।
তাঁর বয়স আঠারো বছর। দুনিয়ার জটিলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারনা নেই। সে বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বড় আদরের মেয়ে। আর রফিক হচ্ছে তাদের ভাড়াটিয়া। অবশ্য বাবা মা দুজনই রফিককে খুব পছন্দ করে। প্রায়ই রফিককে ডেকে তাদের সাথে খেতে বলেন। রফিক ভদ্র ছেলে। শিক্ষিত। মোটামোটি ভদ্রগোছের চাকরি করছে। রফিক বলল, বিনু কিছু বলছো না যে? যাবে না? বিনু বলল, হ্যা যাবো। আপনি অপেক্ষা করুন আমি রেডি হয়ে আসছি। এত সহজেই বিনু রাজী হয়ে গেলো! খুশিতে রফিকের নাচতে ইচ্ছা করছে। সমস্যা হলো রফিক নাচতে জানে না।
বিনুর রেডি হতে অনেক সময় লাগলো।
কারন সে অনেক সুন্দর করে সেজেছে। অবশ্য সাজার কিছু নেই। বিনু এমনিতেই সুন্দর। নায়িকা ববিতার চেয়েও সুন্দর। বিনু একটা পাতলা গোলাপী রঙ্গের জর্জেটের শাড়ি পড়েছে। দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি। কপালে একটা টিপ। চোখে কাজল। অপূর্ব লাগছে বিনুকে। রফিকের ইচ্ছা করছে টানা এক ঘন্টা বিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। রফিক মনে মনে ভাবছে- একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে? সাক্ষাৎ একটা পরী। বেহেশতের হুর। এই মেয়েকে সারা জীবনের জন্য পেলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে তাঁর।
তারা বলাকা সিনেমা হলে গেলো।
রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। আজকের দিনটাই খুব সুন্দর। চারিদিকে স্বছ রোদ। অথচ রোদের কোনো তাপ নেই। বরং মিষ্টি বাতাস। ভেসপায় উঠে বিনু একটা হাত রফিকের কাঁধে রেখেছে খুবই সহজ ভাবে। কোনো জড়োতা নেই। যেন এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। নিউ মার্কেটের কাছে এই সিনেমা হলটাই ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুন্দর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রফিক কোক, চিপস কিনে নিয়েছে দুইজনের জন্য। সিনেমা শুরু হয়ে গেছে। তারা দুজনেই মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
সিনেমার কাহিনী এই রকম- রাজ্জাক, এটিএম শামসুজ্জামান, আনোয়ার, খলিল চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ববিতা। খলিল পছন্দ করে ববিতাকে কিন্তু সে প্রেমের প্রস্তাব সাড়া দেয় না। বন্ধুদের এ কথা জানালে তারা একটা উপায় খুঁজে বের করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ববিতাকে একটি নির্জন স্থানে আক্রমণ করে ও তাকে বাঁচাতে আসে খলিল। সাজানো মারপিটে বন্ধুদের হারিয়ে ববিতাকে উদ্ধার করে এবং বাড়ি পৌঁছে দেবার নাম করে নির্জন স্থানে তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে ববিতা চিৎকার করে। চিৎকার শুনে বন্ধুরা চলে আসে এবং সত্যিকারের মারপিটে রাজ্জাকের হাতে খলিল খুন হয়। খলিলের লাশ গাড়িতে করে নিয়ে ববিতাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় কিন্তু ফেরার পথে তারা তিনজন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যায় রাজ্জাক। অন্যদিকে ববিতাও সৎ মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। দুজনের ট্রেনে আবার দেখা হয় এবং পালিয়ে যান এক পাহাড়ি এলাকায়। সেখানে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। অপরদিকে জেল থেকে পালানোর পথে এটিএম শামসুজ্জামান ও ব্ল্যাক আনোয়ার পুলিশের গুলিতে মারা গেলে আসল ঘটনার কোন সাক্ষী থাকে না।
১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: দেখেছেন?
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:৪১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ভয়াবহ সিনেমা ।
হিস্টরি শুনেই মুগ্ধ।
১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:২৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ১৯৮০ সালে প্যাকেটের চিপস ছিল না। কোক খেতে হতো দোকানে বসে কাঁচের বোতলে, সাথে নিয়ে সিনেমা হলে ঢোকার সুযোগ ছিল না। খাওয়ার পর বোতল ফেরত দিতে হতো। সিনেমা হলও সম্ভবত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল না।
১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভাইজান। চিপস ছিলো। তখন আলুর চিপস বেশ জনপ্রিয় ছিলো।
আর কোক কাঁচের বোতন। তা ঠিক। সিনেমা হলেই ক্যান্টিন থেকে বোতল সহ সিনেমা হলের ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেত। বোতল ফেরত দিলে বাকি টাকা ফেরত দিতো দোকানদার।
তখন এলিট শ্রেনী বলাকায় সিনেমা দেখতো। এসি ছিলো।
৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:০৮
জুল ভার্ন বলেছেন: অনন্ত প্রেম ছবিটা দেখেছিলাম। ২য়বার দেখেছিলাম- এক বন্ধুর সাথে চ্যালেঞ্জ করে, রাজ্জাক ববিতাকে এই ছবিতে ২১ বার নাকি ২২ বার জড়িয়ে ধরেছে-সেটা গোনার জন্য।
১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: সব মিলিয়ে সিনেমা টা সুন্দর। আর ববিতা কি সুন্দর।
৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৩০
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: খুব চমৎকার লেখেছেন রাজীব দা
১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ কবি।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:২৭
রেজওয়ান ইসলাম বলেছেন: এক টিকেটে দুই কাহিনী।