নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহেদ জামাল অসুস্থ

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২৩

ছবিঃ আমজাদ আকাশ ভাই।

শাহেদ জামাল অসুস্থ!
কবিরাজি, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি কোনও চিকিৎসাই বাকি রাখছে না নীলা। কিছুতেই শাহেদ জামালের জ্ঞান ফিরছে না। তার বুকের ভেতরে ক্ষতস্থানটি দুষিত হয়ে গেছে, আর সেই জন্যই তার শরীর সর্বক্ষন জ্বরতপ্ত। মাঝে মাঝে তো সে বিড় বিড় করে কিছু বলে, তা প্রলাপের মতো অসংলগ্ন, ভালো করে শোনাও যায় না। বুঝা যায় না। বিচিত্র এই মানুষের শরীর কোন ঔষুধে যে কার কী রকম প্রতিক্রিয়া হবে, আজও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এত ঔষুধেও কেন শাহেদের জ্বর প্রশমিত হচ্ছে না, তা বুঝতেই পারছেন না চিকিৎসকরা। এর চেয়েও গুরুতর রোগীরা এর একই ঔষুধে চাঙ্গা হয়েওঠে। ডাক্তার-কবিরাজ যখন আসে, তাদের সঙ্গে থাকে নীলা। কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড় থেকে আসা কবিরাজ একটি নতুন প্রস্তাব দিতে শুরু করেছেন। তিনি অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী। তার মতে, কোনও কোনও যোগী, ঋষি, মহাপুরুষদের এমন ক্ষমতা থাকে যে, তারা ইচ্ছা করলে কোনও মৃত ব্যক্তিরও প্রান ফিরিয়ে দিতে পারেন। এরকম একজন সাধু আছেন তেতুলিয়ায়, তার নাম-'দিল এ হরকসী'।

নীলা দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায়।
শাহেদ জামাল দিনদিন যে রকম শুকিয়ে যাচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় হঠাৎ প্রানবায়ু নিবে যেতে পারে। নিজে থেকে তো সে খেতেই পারে না, জোর করেও তাকে প্রায় কিছুই খাওয়ানো যায় না। সে অচেতনের মতন পড়ে থাকে, কোনও ক্রমে তার মুখ খুলে চিনির পানি ও অতি তরল ফলের রস খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, কিছুটা ভেতরে যায় কি যায় না, আবার বেরিয়ে আসে। এখন কোনও অলৌকিক সংঘটন ছাড়া তাকে বাঁচাবার বোধহয় আর কোনও উপায় নেই। এর মধ্যে একদিন নীলার মনে হলো- এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবেই। অনেক দুঃখ কষ্ট পার হয়ে, অনেক সাধনার পর আমি দেবতার মতন মানুষটিকে পেয়েছি। আমি অনেক ভালোবাসা দিব, খুব ভালোবাসা, আরও আরও অনেক অনেক ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টান এড়িয়ে ও যাবে কোথায়? আমার ভালোবাসার কাছে মৃত্যুও হার মানবে। নীলা, হু হু করে কাঁদতে লাগল।

রাতের বেলা নীলা শাহেদের পাশেই শুয়ে থাকে।
ঘুম তার প্রায় আসেই না। গভীর রাতে সব কিছু নিঝুম হয়ে আসে। নীলা কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে শাহেদ জামালের নিশ্বাসের শব্দ। নীলা খুব ভয় পায়। শাহেদের মুখের দিকে চেয়ে দেখে, বুকের ওপর হাত রেখে ওঠা-পড়া ঠিক আছে কিনা বুঝে নেয়। শাহেদ নীলার অস্তিত্ব টের পায় না, নীলা তাকে স্পর্শ করলেও সে টের পায় না। শাহেদ চেতনাহীন। নীলাকে সে ডেকে পাঠায়নি। যদি তার চেতনা ফিরে আসে, সেকি উন্মুক্ত মনে নীলাকে গ্রহন করতে পারবে? সজ্ঞানে আসার পরই যদি সে বলে, ফাযিল, তুই এখানে কেন এসেছিস? নীলাকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তো ওর আরও ক্ষতি হতে পারে। এক হিসেবে এই রাত্রি গুলিই নীলার সবচেয়ে সুখের সময়। নীলা তার কপালে জলপটি দেয়। কপালের উত্তাপে সেই জলপটি শুকিয়ে গেলে আবার কাপড়ের ফালিটা ভিজিয়ে নিতে হয়। সেই রকম জ্বরের সময় শাহেদ বিড় বিড় করে কিছু বলতে শুরু করে। নীলা ব্যাকুলভাবে সেই কথা গুলি শোনার চেষ্টা করে, শাহেদ মুখের কাছে কান নিয়ে যায়, তবুও বোঝা যায় না কিছুই। একটা নাম শুধু অস্পষ্ট শোনা যায়, নীলা! যেন ওই নামের মানুষটাকে সে কিছু জানাবার চেষ্টা করছে। নীলার সমস্ত অন্তরাত্মা তৃষিত হয়ে থাকে শাহেদ জামালের মুখে একবার তার নামটি শোনার জন্য। শাহেদ মনের গ্রহনে কি নীলা কোথাও নেই আর?

শাহেদ জামালের একটাও মুখের রেখা কুঞ্চিত নয়, যেন তার ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, ব্যথা নেই, মানুষের সংসারে কোনো কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না। আর কতখানি ভালোবাসা দিলে শাহেদ মৃত্যুঞ্জয় হতে পারবে, কী করে দিতে হয় সেই ভালোবাসা? নীলা রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়েছে, সারারাত ঘরের কোনে একটি মোমবাতি জ্বলে, সেই ক্ষীন আলোতে সে বই পড়ার চেষ্টা করে, কিছুক্ষন অন্তর অন্তর সে উঠে এসে শাহেদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফিস ফিস করে বলে চলে যেও না! চলে যেও না!

পাঁচদিন পর, রাতে শাহেদ একবার পাশ ফিরে বলল, উফ্! ঈশ্বর! তারপর দু'বার বলল,পানি পানি!
নীলা সারা শরীর কেঁপে উঠল। এ যে পরিস্কার কন্ঠস্বর! এ পর্যন্ত সে একবারও পানি চায়নি। তবে কি জ্ঞান ফিরে এসেছে?
প্রচন্ড আনন্দ হলে বটে। তবু নীলা ভাবল, সে কি নিজে পানি দিবে, না অন্য কাউকে ডাকবে?

ভোরের দিকে আর একটু বেশি জ্ঞান ফিরল শাহেদের। সে আবার পানি চাইলো। এবার পানি পান করতে করতে চোখ মেলে বলল, তুমি কে?
নীলা, শাহেদের একটা হাত তুলে নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরল। সে ঘরের কোনে জ্বেলে রাখা মোমবাতিটা নিভতে দেবে না। কিছুতেই না। ঈশ্বর জানেন, নীলা নিজের সবটুকু আয়ু দিয়েও এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে তুলতে চায়।
শাহেদের শয্যার পাশে পাষানমূর্তির মতন স্থির হয়ে বসে আছে নীলা, সাদা নীল পাড়, নীল শাড়ি পরা। মাথার চুল খোলা, পরপর রাত্রি জাগরনে চোখ দু'টি মলিন। মনে হয় যেন অনন্তকাল সে সেখানেই বসে থাকবে।
শাহেদ নীলাকে আঁকড়ে ধরে, সজ্ঞানে প্রথম কথাটি বলল- নীলা, আমাকে বাঁচাও। নীলা মলিন চোখ জলে ভরে গেল। এই প্রথম খুব দুর্বল বোধ করল সে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: শাহেদ জামাল নামটা দেখে গোলগাল মুখের একজন বোকা সোকা মানুষের চেহারা মনে পড়ে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১১

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা শাহেদ জামাল এই রকমই।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:



সম্ভবত এটাই শাহেদ জামাল ।
গোবেচারা টাইপ। ভাজা মাছটিও
উল্টে খেতে জানেনা !! তাইনা

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: এটা শাহেদ জামালের ছোটবেলার ছবি। আপনি কোথায় পেলেন?

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:২০

সুখী এলিয়েন বলেছেন: অনেক কষ্ট লাগলো ভাই। আল্লাহ জামাল ভাইকে সুস্থতা দান করুন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমীন।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

মৃত শাহেদ জামাল পুনরায় বেঁচে উঠে আজ আবার অসুস্থ্য।

বড়ই আচানক ঘটনা বাহে!

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: উফ আল্লাহ!!!!
আপনি কিছু ভুলেন না??

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১

ইসিয়াক বলেছেন: অসুস্থ শাহেদ জামালের জন্য এক বাটি গরম স্যুপের ব্যবস্থা করেন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: ইদানিং সে স্যুপ খেতে চায় না।
নানান রকম আলতু ফালতু খাবার খেতে চায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.