নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
৭ই মার্চ ১৯৭১।
আজ সকাল থেকেই রফিক অনেক অস্থির। আজ একটি বিশেষ দিন। শেখ মুজিবুর রহমান আজ ভাষণ দিবেন। এবং আজ বিকেলে নীলার সাথে গুল্লুর দেখা করার কথা শহীদ মিনারে। রফিক অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করেছে- নীলাকে নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে যাবে। শেখ মুজিবর কি বলেন-মন দিয়ে শুনবে। দেশের অবস্থা ভালো না। আজকে শেখ সাহেবের ভাষণের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ইয়াহিয়া কে বিশ্বাস নেই। ব্যাটা একটা হারামজাদা। সমস্যা হলো নীলা কি যাবে ভাষণ শুনতে? নীলা চেয়েছিল বলাকাতে সিনেমা দেখবে। নীলা সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করে।
নীলা হাসি মুখে রাজি হয়েছে-
সে অবশ্যই যাবে শেখ সাহেবের ভাষণ শুনতে। রফিক এবং নীলা রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে প্রচন্ড অবাক। তারা তাদের জীবনে এত মানুষ কোনো দিন দেখে নি। মনে হচ্ছে যেন সারা দেশের মানুষ এই ময়দানে এসে জড়ো হয়েছে। সব বয়সী মানুষ এখানে এসে জড়ো হয়েছে। অনেক ছোট ছোট বাচ্চা তাদের নানা দাদার কোলে পিঠে কাঁধে, বাচ্চারা অবাক হয়ে চেয়ে আছে এত মানুষ দেখে। রফিক নীলার হাত ধরে একেবারে মঞ্চের কাছে নিয়ে গেছে। রফিকের খুব শখ শেখ সাহেব কে কাছ থেকে দেখবে। নীলা বলল, আমি কখনও ভাবতে পারিনি এত কাছ থেকে শেখ সাহেব কে দেখব!
নীলা খুব সুন্দর করে সেজেছে।
সাদা কালো একটি শাড়ি পড়েছে। কিন্তু হাত ভরতি লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি। কপালে একটা বড় লাল টিপ। সিনেমা দেখতে পারেনি বলে নীলার একটুও মন খারাপ হয়নি। শেখ মুজিব মঞ্চে উঠলেন। নীলা শক্ত করে রফিকের হাত ধরে রাখলো। ব্রজ কন্ঠে মুজিব ভাষণ শুরু করলেন। ময়দানের সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে উঠলো- জয় বাংলা। শেখ মুজিব বললেন- 'আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। ...১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ এর আন্দোলনে আয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গনতন্ত্র দেবেন - আমরা মেনে নিলাম। ... তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা'।
এটাই ছিল রফিকের সাথে নীলার শেষ দেখা।
রফিক দেখেছে শেখ মুজিবরের ভাষণ শুনে সেদিন নীলার চোখ ভিজে উঠেছে। একটু পরপর নীলা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছেছে।ভাষন শেষে রফিক নীলাকে বাসায় পৌছে দেয়। রফিকের সাথে নীলার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের ঐতিহাসিক গণরায়কে নস্যাৎ করার জন্য একাত্তর সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেতার ঘোষণার মাধ্যমে ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে।
২৫শে মার্চের পর নীলা এবং রফিকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।
নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় রক্তপিপাসু হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষদের ওপর চালায় গণহত্যা ও পৈশাচিকতা। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি ছাত্র, শিক্ষক, নারী, শিশু এমনকি রিকশাচালকও। ২৫ শে মার্চ রাতে রফিক নীলার বাসার উদ্দেশে বের হয়- তারপর রফিকের খোঁজ পাওয়া যায় নি। ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর অগ্নিসংযোগে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। চতুর্দিকে বিরামহীন গুলির শব্দে বিনিদ্র রাত কাটায় নগরবাসী। হঠাৎ করে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ ও রাস্তায় রাস্তায় তাদের সশস্ত্র টহলে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
২৬শে মার্চ আসে স্বাধীনতার ঘোষণা।
এরপর নয় মাস বাঙালির মরণপণ যুদ্ধে অর্জিত হয় রক্তের পতাকা।
২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: সেই সব পরিবারের আমৃত্যু প্রিয়জন হারানোর কষ্ট বয়ে যেতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: লক্ষ লক্ষ মানুষের খোঁজ পাওয়া যায় নি।