নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষ্ণচূড়া

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১১



কিছুক্ষন আগে নিশ্চিত হলাম আজ আমার ফাঁসি।
এক সময় ফযরের নামাজের আগে ফাঁসি দিত। এখন দেয় রাত বারোটার আগে। আমাকে ফাঁসি দেয়ার পর হয়তো জল্লাদ ওযু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিবে। একটু আগে জেলার সাহেব নিজে এসে আমার কাছে জানতে চাইলেন- কিছু খেতে ইচ্ছা করে কিনা? তার হাতে জলন্ত সিগারেট। তিনি হাসি মুখে সিগারেটের পেকেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। কি মনে করে পুরো পেকেটটাই দিয়ে দিলেন। আবারও জিজ্ঞেস করলেন- রাতে কি খেতে ইচ্ছা করছে। আমি বললাম, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি। আর ঘন ডাল। জেলার সাহেব বললেন আর কিছু না? জেলার সাহেব চলে যাবার আগে বললেন কাউকে কিছু বলতে হবে বা জানাতে? আমি ছোট করে বললাম- না। রাত আট টার মধ্যে খাবার চলে আসবে বলে, জেলার সাহেব চলে গেলেন। তাকে চিন্তিত মনে হলো। ফাঁসির আসামীকে কারাগারের প্রতিটা লোক খুব মমতা দেখায়। দিন যত ঘনিয়ে আসে, মমতার পরিমান তত বাড়তে থাকে।

ফালগুন মাস চলছে।
খবরের কাগজে পড়লাম শেষ রাতের দিকে নাকি শীত পড়ে। জেলখানাতে শীতের কোনো কারবার নেই। এখানে একটাই ঋতু, তা হলো গরম কাল। আমার সেল এর সামনে যে গার্ড এখন ডিউটি দিচ্ছে তার বাড়ি ময়মনসিংহ। নাম সোলায়মান। সে বেচারা একটু পরপর পান খায়। যতবার পান মুখে দেয় তত বার আমাকে পান খাওয়ার জন্য বলে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে লোকটার সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। বেচারা কে খুশি করার জন্য তার কাছ থেকে পান নিয়ে মুখে দিলাম। কাঁচা সুপারি আর জর্দা দেয়া পান। মাথা ঘুরাচ্ছে।

পান মুখে দিয়েই আমার নীলা'র কথা মনে পড়ল।
নীলা প্রায়'ই পান খেত। নীলার সাথে আমার বিয়ে হয় অগ্রহায়ণ মাসের সাত তারিখে। কিছুক্ষন পরেই আমার ফাঁসি হবে নীলাকে গলা কেটে হত্যার কারণে। অথচ খুনটা আমি করি নাই। সেদিন আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল। নীলা কপালে হাত রেখে বলল, তোমার তো অনেক জ্বর। আজ অফিসে যেও না। আমি বললাম, পাগল হয়েছো আজ জরুরী মিটিং আছে। আমাকে যেতেই হবে। দু'টা নাপা খেয়ে নিলেই জ্বর দৌড়ে পালাবে। আমি অফিসে গেলাম, দুপুরের পর নীলা ফোন দিয়ে কাঁপা এবং ভীত গলায় বলল, তুমি এখনই বাসায় চলে আসো। আমি বললাম কেন? কি হয়েছে? নীলা আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিল।

আমি অফিস থেকে শর্ট লিভ নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরলাম। আমার বাসা ঝিগাতলা। ছয় তলায় আমার ফ্ল্যাট। লিফট নেই। দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠলাম। অনেকক্ষন কলিংবেল টিপলাম কিন্তু নীলা দরজা খুলছে না। অজানা এক ভয়ে আমার সারা শরীর কাঁপছে। কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে। দরজা ধাক্কা দিতে গিয়ে দেখি- দরজা খোলা। আমি ঘরে ঢুকলাম। সারা ঘরময় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। বিছানার উপর নীলার মাথা বিহীন ডেড বডি পড়ে আছে। ফ্রীজের ঢাকনা খোলা সেখানে নীলার গলা কাটা মাথাটা রাখা। আমি হতভম্বের মতো নীলার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম। দাড়োয়ান দরজা খুলে দিল- আমি রাস্তায় নেমে পড়লাম।

কোর্টে উকিল সাহেব আমাকে নোংরা নোংরা প্রশ্ন করে-করে আমাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিল। আমার সাথে অন্য মেয়ের শারীরিক সম্পর্ক আছে। বাসায় আমার জন্য নীলা কাজের লোক রাখতে পারে না। অনেক মেয়ের সাথে আমার যৌন সম্পর্ক আছে। এবং নীলা তা জানতে পারে। প্রতিদিন রাতে আমি মদ খেয়ে বাসায় ফিরি, নীলাকে শারীরিক অত্যাচার করি। ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব নোংরা প্রশ্নের জবাব আমি ইচ্ছে করেই দেইনি। আমার রুচি'তে বাঁধছিল। সবচেয়ে বড় কথা উকিল সাহেব চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, যদি আপনি খুন না করতেন তাহলে আপনি পালিয়ে না গিয়ে প্রতিবেশিকে ঘটনা জানাতে পারতেন, পুলিশে খবর দিতে পারতেন। তা না করে আপনি সদরঘাট গিয়ে টিকেট কেটে এমভি মাছরাঙ্গা লঞ্চে উঠে পড়লেন। পুলিশ যখন আপনাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করলো- তখনও আপনার হাতে রক্তের দাগ লেগেছিল।

রাত ন'টা। জেলার সাহেব কথা রেখেছেন। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি আর ঘন ডাল পাঠিয়েছেন। আমি খুব আরাম করে খেলাম। নীলা'র প্রিয় খাবার ছিল ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি। আর ঘন ডাল। বাজারে যাওয়ার সময় আমি যখন নীলাকে জিজ্ঞেস করতাম কি আনব? নীলা বলত- ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ। আর করলা। মৃত্যুর পর কি আমি এই খাবার পাবো? ছুটির দিন গুলোতে আমি নীলাকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করতাম। বিকেলে হাঁটতে বের হতাম। সিনেমা দেখতে যেতাম। নীলাকে এক আকাশ অবাক করে দিয়ে নিউমার্কেট থেকে শাড়ি কিনে দিতাম। নীলা খুব সহজ সরল মেয়ে। রাতে ঘুমানোর সময় সে একটা হাত আমার গায়ে দিয়ে রাখত।

রাত নয়টা মনে হয় বেজে গেছে। একজন এসে আমাকে আমাকে গোছল করিয়ে দিল। পরিস্কার জামা পড়িয়ে দিল। কারাগারের ইমাম সাহেব এসে আমাকে তওবা পড়িয়ে দিলেন। গার্ড সোলায়মান এসে বলল, মনে সাহস রাখেন। আল্লাহর নাম স্মরণ করেন, ভয় কম লাগবে। আমি গার্ডকে বললাম, মৃত্যুর আগে আপনাকে একটা সত্য কথা বলে যাই- আমি আমার স্ত্রীকে খুন করিনি। আমি নির্দোষ। সোলায়মান বলল, ফাঁসির সব আসামী'ই এই কথা বলে।

আমার দুই হাত বাঁধা। আমি দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারব না, তারপরও আমাকে দুইজন টেনে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার চেচামেচি কিছুই করছি না। যা ফাঁসির অনেক আসামী'ই করে। হঠাত আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। চোখে মেলে তাকাতে পারছি না। আমাকে ধরে মঞ্চে তোলা হলো। জল্লাদ আমাকে জম টুপি পরিয়ে দিল। আর কি আশ্চর্য ঠিক তখন আমি নীলা'র হত্যাকারীকে চিনতে পারলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.