নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মায়ের গল্প

০৭ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩২



আজ বলব আমার মায়ের গল্প।
আমার মা একসময় অতি সহজ সরল ছিলো। একদম বোকা বোকা। এখন মা শেষ বয়সে এসে অনেক চালাক চতুর হয়েছে। এখন সে দুনিয়ার সব খবর জানে। তাঁর সাথে তর্ক করে পারা যায় না। তাঁর লজিকের কাছে বারবার হার মানতে হয়। আমার নানা নানী ছিলেন ব্যবসায়ী মানুষ। তাদের অনেক টাকা ও সম্পদ ছিলো। নানা নানীর একমাত্র কন্যা আমার মা। মা বড় হয়েছে বিলাসিতার মধ্যে। অভাব কি জিনিস মা জানে না। নানা নানী সারাদিন ব্যবসার কাজে বাইরে থাকতেন, এদিকে মা আব্বার সাথে সিনেমা দেখতে যেতো। মা ছিলো বাংলা সিনেমা পাগল মানুষ। এক সিনেমা চার পাঁচ করে দেখতো। সাদা কালো সিনেমা গুলো মার সব দেখা হয়ে গেছে।

ইদানিং মা নানান রকম অদ্ভুত কর্মকান্ড করছে।
সে এখন মাটির থালাতে ভাত খায়। অথচ সারা জীবন কাঁচের প্লেটে ভাত খেয়েছে। মা এখন জগের পানি খায় না। সে বিরাট এক মাটির হাড়ি কিনেছে। সেই হাড়িতে খাওয়ার পানি রাখে। সেই পানি পান করে। এই হাড়ি মা তাঁর বিছানার কাছে রেখেছে। যে'ই তাঁর কাছে যায় তাকে মা জোর করে মাটির হাড়িতে রাখা পানি খেতে দেয়। আমাকেও এক গ্লাস পানি খেতে হয়েছে। মাকে গত ত্রিশ বছর ধরে তিনবেলা নানান রকম ওষুধ খেতে দেখছি। মা এত ডাক্তার দেখায় যে- তাঁর শখ যেন ডাক্তার দেখানো। মা ঘন ঘন ডাক্তার বদলায়। সব হাসপাতাল ও সব রোগ সম্পর্কে তাঁর ধারনা রয়েছে। কোন হাসপাতালের ডাক্তাত কেমন মা'র চেয়ে ভালো কেউ জানে না। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, মা কলেজ থেকে পিকনিকে গিয়েছিলো গুলসান এলাকায়।

আমার মা অনার্স শেষ করতে পারেনি।
তাঁর আগেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। নানা নানী আব্বাকে বলেছিলো- আমার মেয়ে তোমার কাছে বিয়ে দিতে পারি। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বিয়ের পর আমার মেয়ে এখানেই থাকবে। আমার কাছে। সে তাঁর শ্বশুর বাড়ি যাবে না। এটা আমাদের একমাত্র মেয়ে। তাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না। আব্বা নানা নানীর শর্ত মেনে নিলো। নানা নানী মারা গেছেন অনেক বছর হলো। নানা নানীর চেহারা আমার পুরোপুরি মনে নেই। তাদের কথা হালকা কিছু মনে করতে পারি। আমার বাবা মা দুজনেই দারুন স্মার্ট। বাবা মা দুজনই দেখতে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মতো ছিলেন। সবাই বলতো- একদম রাজ্জাজ কবরী। মা এবং আব্বা দুজনেই খুব ঝগড়া করতো। ঝগড়া করে দুইজন দুইদিকে। কিন্তু খাওয়ার সময় কেউ কাউকে ছাড়া খেতে বসতো না।

মা এখনও প্রচুর মুভি দেখে। এটা তাঁর শখ বলা যায়।
মা ইংরেজিতে খুব ভালো। সে হলিউড, বলিউড, কোরিয়ান সিনেমার খুব ভক্ত। ইদানিং সে ওয়েব সিরিজ গুলো দেখায় মন দিয়েছে। কোরিয়ান ভাষা না বুঝলেও সাবটাইটেল দিয়ে মুভির কথা বুঝে নেয়। মা খাওয়া, ঘুম এবং ডাক্তার ও ওষুধ এর ব্যাপারে খুব সচেতন। একদিন মা রেগে গিয়ে আমাকে বললো, এই বাড়িটা না থাকলে তোমার জায়গা হতো কমলাপুর রেলস্টেশনে। এই বাড়ি আমি কাউকে দিবো না। বাড়ি বিক্রি করে টাকা ট্রাকে করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিবো। আমার মার অনেক রাগ। একবার রেগে গেলে কেউ তাকে ঠান্ডা করতে পারে না। মার সাথে রাগারাগি আমারই সবচেয়ে বেশী হয়। আমি অনুভব করে, মা আমাকেই সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে।

সেদিন আমি মার ঘরে টিভি দেখছি।
ইউটিউবে পাকিস্তানে নেহারি কিভাবে বানায়। মা বলল, তোমার যদি ইচ্ছা হয় পাকিস্তান যাও। নেহারি খেয়ে আসো। আমি টাকা দিচ্ছি। মা প্রচুর টাকা খরচ করে। ইদানিং সে প্রায়ই বাইরে যাচ্চে। নানান রকম জিনিসপত্র কিনছে। বাসায় এসে বলে, সবই ফালতু জিনিসপত্র কিনেছি। এগুলো কোনো কাজে লাগবে না। টাকার অপচয় করলাম। ইদ উপলক্ষ্যে মার কাছে নানান রকম মানুষ আসছে সাহায্যের জন্য। মা কাউকে ফেরাচ্ছে না। সবাইকে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। কাউকে ভালো লাগলে, মা তাঁর গলার চেন, বা কানের দুল খুলে দিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকে এই দৃশটা দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৭

কেমিক্যাল বাবু বলেছেন: মায়ের প্রতি অনেক ভালোবাসা।
আপনার মার গল্প পরছি আর আমার মায়ের গল্প গুলো চোখে ভাসছে!

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মায়ের হাজার হাজার গল্প আছে। এগুলো লিখলে লেখা শেষ হবে না।

২| ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: মায়ের সাথে লেগে থাকবেন। কখনো রাগারাগি করবেন না, উচ্চঃস্বরেও কথা বলবেন না। ।

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের বংশে কেউ আস্তে কথা বলতে পারে না। অতি সামান্য কথাও চিৎকার করে বলে সবাই।

৩| ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৪

জটিল ভাই বলেছেন: বাবা না দুজনই দেখতে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মতো ছিলেন।
আমি ভুল না করলে "না" এর স্থলে "মা" হবে মনে করি।

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এডিট করে ঠিক করে দিয়েছি।

৪| ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:




আপনার মায়ের অনেক অভিজ্ঞতা আছে, উনি জীবিত থাকতেই আপনি একটি এগ্রিকালচার কিংবা খাদ্য দ্রব্যের ব্যবসা গড়ে তুলুন।

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমাকে আমাকে এক পয়সা দেবে না।

৫| ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনারা যে বাড়িতে থাকেন
সেটাকি আপনার নানার করা
নাকি আপনারা করে নিয়েছেন?
আপনার ভাগ্য ভালো আপনার
বাবা আপনার নানার একমাত্র
কন্যাকে বিয়ে করে রাজ্য ও রাজ
কন্য দখল করে নিয়েছিলেন, তা না
হলে আজ রাজ্য হাত ছাড়া হবার খুবই
সম্ভবনা ছিলো।

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: একদিন সময় করে আমার বাসায় আসেন।

৬| ০৭ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

উনি এতো টাকা পান কোথায়?
উনার কি প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স আছে?

আপনাদের তো একটাই দালান। ভাড়াটিয়া তো নেই। তাহলে টাকা আসে কোথা থেকে?
মানুষের আয়ের দরকার আছে।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: সব কথা কি বলা যায়?

৭| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১১:০৮

কামাল১৮ বলেছেন: অভিজ্ঞতা তাকে চালাক বানিয়েছে।আপনি আপনার মায়ের মতো সিনেমা দেখেন,পার্থক্য সাদা কালো আর রঙিন।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: মা প্রায় সারাদিনই টিভি দেখে। তাঁর কাছ থেকে রিমোট নেওয়া যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.