নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ঘটনা শুরু এইভাবে-
আব্বা বললেন, গাড়ি যাচ্ছে ঢাকার বাইরে। তুমি সাথে যাও। কোথায় যাচ্ছি সেটা আপনাদের বললাম না। বললে সমস্যা আছে। তবে আমি কিছুটা হিন্টস দিচ্ছি। খুলনা-রায়েন্দা-টেকের হাঁট এলাকার মধ্যে কোনো এক জায়গা। ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় রওনা দিলাম। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছি। ড্রাইভার মগবুল বয়স্ক। তবে স্বাস্থ্য ভালো। তবে কথা একেবারেই বলেন না। মগবুল ঢাকা থেকে বের হবার পর তুফানের মতো গাড়ি চালাচ্ছে। যেন তার খুব তাড়া। আমি বেশ কয়েকবার বললাম, আপনার এত তাড়া কিসের? আস্তে চালান। মগবুল আমার কথার পাত্তা দিলো না। অথবা সে আমার কথা শুনেই নাই। বুঝে গেলাম ড্রাইভার ব্যাটা বদ।
রাত তখন দুইটা।
আমাদের গাড়ি শা শা করে যাচ্ছে। আমি বললাম, আমার ক্ষুধা পেয়েছে। গাড়ি কোথাও থামাও। খেয়ে নিই। তোমারও নিশ্চই ক্ষুধা পেয়েছে? মগবুল কোনো কথা বলল না। সে সমানে গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছে। শীতের রাত। চারপাশ গাঢ অন্ধকার। জানালা দিয়ে তাকালেও ডানে-বামে কিছু দেখা যায় না। আমি ড্রাইভারকে কঠিন গলায় বললাম, গাড়ি থামায়। আমি পিসাব করবো। ড্রাইভার কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে গাড়ি থামানো যাবে না। জায়গাটা খারাপ। বিরাট বিপদ হবে। আমি বললাম, পিসাবে আমার পেট ফেটে যাচ্ছে। প্লীজ তুমি গাড়ি থামায়। ড্রাইভার মগবুল খুব তেজ দেখিয়ে হঠাত গাড়ি ব্রেক করলো। আমি হুমড়ি খেয়ে বললাম। প্রচন্ড রাগ হলো আমার। মনে মনে বললাম, ঢাকা ফিরলে তোমার খবর আছে।
গাড়ী থেকে নামলাম।
অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে। স্পষ্ট শিয়ালের ডাক শুনলাম। রাস্তার পাশে দাড়ালাম। পিসাব ঠিকভাবে হচ্ছে না। থেমে থেমে যাচ্ছে। অনেকক্ষন পিসাব আটকে রাখলে এরকমটা হয়। যাই হোক, হঠাত দেখলাম ঝোপের আড়ালে কেউ একজন বসে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি। একটা মেয়ে। বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ হবে। হাতে একটা লম্বা লাঠি। মাথার চুল এলোমেলো। পাগল পাগল চেহারা। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বিকট হাসি। এমন ভয়ানক হাসি আমি জীবনে দেখি নাই। মেয়েটা আমার দিকে তার হাতের লাঠিটা উঁচু করে ধরলো। আমার পুরো শরীর শক্ত হয়ে গেলো। পা নাড়াতে পারছি না। গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছিলো না।
সব মিলিয়ে দুই মিনিট সময়।
অথচ আমার কাছে মনে হচ্ছে অনন্ত সময় ধরে আমি দাঁড়িয়ে আছি। মেয়েটা এখনও লাঠি উঁচু করে রেখেছে আমার দিকে। এমন সময় ড্রাইভার মকবুল এসে আমার হাত ধরে। আমি সাহস ফিরে পেলাম। মকবুল মেয়েটাকে দেখলো। সে-ও মারাত্মক ভয় পেয়েছে। মেয়েটা মকবুলকে দেখে আবার সেই বিকট হাসি দিলো। মকবুল টেনে আমাকে গাড়িতে নিয়ে গেলো। বলল, আমি বলেছিলাম জায়গাটা ভালো না। নামার দরকার নাই। মকবুল গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি আবার তুফানের মতো চলছে। রাত তখন তিনটা। আচমকা ভয়ে আমি ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। তবে ভয় অনেকটা কেটে গেছে। ভয় কেটে গেলে সাহস বাড়তে থাকে। মকবুল বলল, আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকেন। আল্লাহ ছাড়া বাচাবার কেউ নেই। আমি বললাম, হুম।
রাত তিনটা। আমি ভোরের অপেক্ষায় আছি।
মকবুল হঠাত গাড়ি থামালো। আমি বললাম কি হয়েছে? মকবুল বলল, সামনে দেখেন। সামনে তাকিয়ে দেখি- বড় বড় দুটা গাছ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। গাছ না সরালে গাড়ী সামনে যাবে না। এই গাছ সরাতে কমপক্ষে দশজন লোক লাগবে। আমাদের দুজনের পক্ষে সম্ভব না। মকবুল বলল, আজ বিরাট বিপদ। বাঁচবো কিনা সন্দেহ। এই কথা বলেই মকবুল গাড়ি থেকে নেমে কোথাও দৌড়ে চলে গেলো। চলে গেলো বলা ঠিক হয় নাই। সে পালিয়ে গেলো। আমি একা। তবে আমার ভয় লাগছে না। যা ভয় পাওয়ার পেয়ে গেছি। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। আশেপাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে না। একবার কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনলাম। শিয়ালের ডাক শুনলাম। কিন্তু তাদের দেখা পেলাম না। দেখলাম একটা গাছে দুটা প্যাঁচা বসে আছে।
আমি একাএকা হাঁটতে শুরু করলাম।
আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্থ ও ক্লান্ত। রাস্তার পাশে বড় আম গাছের নীচে বসে পড়লাম। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এমন সময় দেখি সেই পাগল মেয়েটা আমার সামনে। তার হাতে লাঠি। আমি ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকালাম। বললাম, ঘটনা কি? তুমি কি আমাকে ভয় দেখাতে চাও? মেয়েটা বলল, না তোমাকে ভয় দেখাতে চাই। তুমি ভয় পেও না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। তবে আমি মকবুলকে খুন করবো। আমি বললাম, কেন? সে তোমার কি ক্ষতি করেছে? মেয়েটা বলল, মকবুল আমার প্রেমিক ছিলো। আমাকে নদীতে ফেলে হত্যা করে। আমি সাঁতার জানি না। নদীতে ডুবে আমার মৃত্যু হয়। প্রেমিকার চেয়ে তার কাছে একশ' ভরি স্বর্নের মূল্য বেশি। আমি ভুল মানুষের প্রেমে পড়েছিলাম।
আমি মেয়েটাকে বললাম, ঘটনা কি খুলে বলো।
মেয়েটা বলল, আমার নাম শেফালী। আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগে মকবুলের সাথে আমার প্রেম হয়। কিন্তু আমাদের প্রেম মেনে নেয় না আমার পরিবার। তাই মকবুল আর আমি সিদ্ধান্ত নেই আমরা পালিয়ে যাবো। একদিন মকবুলের হাত ধরে আমি সত্যি সত্যি পালিয়ে গেলাম রাতের অন্ধকারে। আমার সাথে ছিলো আমার মায়ের দেওয়া একশ' ভরি স্বর্ন। আমরা নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলাম। তখন অনেক রাত। হঠাত মকবুল আমাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। আমি ডুবে মরে যাই। মকবুল একশ' ভরি স্বর্নের লোভে আমাকে মেরে ফেলে। যে মাঝি আমাদের নৌকা করে নিয়ে যাচ্ছিলো। তাকে মকবুল দশ ভরি স্বর্ন দিয়ে ম্যানেজ করেছিলো। শেফালী বলল, তুমি চলে যাও। তবে আমি মকবুলকে ছাড়বো না। এই বলে মেয়েটা ভেনিস হয়ে গেলো।
আমি শেফালীর ঘটনা শুনে প্রচন্ড অবাক!
আমি হাঁটা শুরু করলাম। এখানে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। হাঁটতে হাঁটতে একটা ভাঙ্গা মন্দিরের সামনে চলে এলাম। এখানে এসে মকবুলের দেখা পেলাম। সে লুকিয়ে আছে। আমি বললাম, মকবুল তুমি লুকিয়ে বাঁচতে পারবে না। ঘটনা কি আমাকে খুলে বলো। মকবুল কাঁদতে কাঁদতে বলল- মেয়েটাকে আমি চিনি। ওর নাম শেফালী। ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমি লোভী। আমি পাপী। একশ' ভরি স্বর্নের লোভে আমি শেফালীকে নদীতে ফেলে দেই। অথচ সেই একশ' ভরি স্বর্ন আমি পাই নি। মাঝি ব্যাটা আমাকে লাথথি দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তারপর স্বর্ন নিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ আমি তাকে দশ ভরি দিতে চেয়েছিলাম। আমি সাঁতার জানি। পাড়ে চলে আসি। কিন্তু মাঝি ব্যাটাকে অনেক খুজেও আর পাইনি।
ভাঙ্গা মন্দের দেয়ালে হেলান দিয়ে মকবুল কাঁদছে।
আমি তার পাশে বসে আছি। কিছুক্ষন পর আকাশ ফর্সা হবে। এমন সময় আমাদের সামনে শেফালী এসে হাজির হয়। শেফালীকে দেখে মকবুল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মন্দিরের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর চিৎকার করতে থাকে আমাকে বাঁচাও বাঁচাও। আমি তাকিয়ে দেখি আমার পাশে শেফালী নেই। কোনো একফাকে শেফালী মন্দিরের ভিরত ঢুকে গেছে। মকবুল এঁর বিকট চিৎকার শোনা যাচ্ছে। মেরে ফেলল, আমাকে বাঁচাও। বাঁচাও। আমি মন্দিরের দরজা ভাঙতে চেস্টা করে ব্যর্থ হলাম। একটু পর শেফালী মন্দিরের দরজা খুলে বের হলো। তাকিয়ে দেখি মকবুলের শরীর ক্ষতবিক্ষত। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মকবুল মারা গেছে।
আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে।
শেফালী চলে যাচ্ছে। আমি বললাম, ভালো থেকো শেফালী। শেফালী বলল, আজ আমি মুক্ত। এখন আমার আর কোনো কষ্ট নেই। শেফালীকে স্পষ্ট দেখতে পারছি এখন। বেশ মিষ্টি চেহারা। মাথা ভর্তি চুল। রাতের অন্ধকারে শুধু শুধু ভয় পেয়েছি। শেফালী বলল, তুমি ভালো ছেলে। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তোমার যদি কখনও বিপদ আসে। তখন আমি আসবো। যে কোনো বিপদ থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করবো। তোমার কোনো ভয় নেই। আমি অদৃশ্য ভাবে তোমার সাথে আছি। এই বলে শেফালী চলে গেলো। আকাশ পুরোপুরি ফর্সা হলো। কি সুন্দর সকাল! চারিদিকে সুন্দর একটা গন্ধ! তাকিয়ে দেখলাম আমি একটা শেফালী গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছি। অসংখ্য শেফালী ফুল নীচে পড়ে আছে।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: শেফালীর (ভৌতিক গল্পের ) সাথে রাজীব ভাই , ভালই লাগল।
পিসাব অনেকক্ষণ আটকে থাকার পর যেমন থেমে থেমে আসে তেমনি ভৌতিক আবহ ও তেমন আটকে আটকে এসেছে।
তবে ভৌতিক গল্প ভয়াবহ ভৌতিক নাহলেও ভাল হয়েছে ।
পরিশেষে শেফালীর আত্মা মুক্তি পেয়েছে আর মগবুল তার লোভের শাস্তি পেয়েছে এটাই বড় কথা ।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: গল্প পুরোটা খুব মন দিয়ে পড়েছেন।
গ্রেট।
৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৫
বিটপি বলেছেন: আপনি সেইসময় পেশাব করতে না নামলে মগবুলের এই পরিণতি হত না।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: তুচ্ছ বিষয়ের জন্যই সমাজে নানান ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে।
৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০২
রানার ব্লগ বলেছেন: ভুতের গল্প থেমে থেমে গেছে !!! ভুতের গল্প একটু ফাস্ট হওয়া ভালো !
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।
আসলে আমি আগে থেকে জানতাম না লেখা কোন দিকে গিয়ে শেষ হবে।
৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি চা'এর পরিমাণ কমিয়ে দেন।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: চা তো কম খাই এখন।
সকালে। বিকেলে আর সন্ধ্যায়। সব মিয়ে ৫/৬ কাপ।
৬| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৭
মোগল সম্রাট বলেছেন: ভালো হইছে।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪
শোভন শামস বলেছেন: ভৌতিক গল্প ভাল হয়েছে ।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বেশ অনুপ্রেরণা পেলাম রাজীব দা ভাল থাকবেন-----