নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবসান

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫


ছবিঃ গুগল।

কেউ একজন বললেন, সময়টা লিখে রাখো।
বিকেল চারটা পাঁচ মিনিট। সবাই কাঁদছে। বাড়ির যে দীর্ঘদিনের কাজের মেয়ে রহিমা সেও কাঁদছে। ছেলে মেয়ে সবাই কাঁদছে। শোকের কান্না। বুকের গভীর থেকে উঠে আসা কান্না। এই কান্নার ধরন সম্পূর্ন আলাদা। জামিল উদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। তার ভাগ্য ভালো তিনি লম্বা হায়াত পেয়েছেন। ৭৫ বছর অবশ্যই লম্বা সময়। আজকাল তো ৩৫/৪০ বছরের মানুষও স্ট্রোক করে মরে যাচ্ছে। মৃত্যু বড় অদ্ভুত ও রহস্যময়। অবশ্য সবাই জানে- যে জন্ম নিয়েছে সে একদিন না একদিন মারা যাবেই। কিন্তু আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে যাই। আজ যে শিশু জন্ম নিয়েছে সেও একদিন মারা যাবে। এটাই বিধির বিধান। ওলি আলিয়া, মসিহ, দরবেশ, নবী, পীর ফকির, ম্যাজিশিয়ান, বিজ্ঞানী কেউ মৃত্যুকে এড়াতে পারেনি, পারবেও না কোনোদিন।

জামিল উদ্দিন আহমেদ ভাগ্যবান।
তিনি তার পাঁচ ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এবং তাদের বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছেন। এমন কি তিনি নাতী নাতনীদের দেখে যেতে পেরেছেন। এরকম ভাগ্য সবার হয় না। অনেকে ছেলে মেয়ে জন্ম দেয়- কিন্তু তাদের মানুষ করতে পারে না। বিয়ে দিয়ে যেতে পারে না। তার আগেই মরে যায়। যাই হোক, বয়স হলে যা হয়- জামিল সাহবেরও তা হয়েছে প্রেসার হাই, ডায়বেটিক, কিডনী সমস্যা। আরো কি কি যেন সমস্যা ছিলো। জামিল সাহেব যেমন তার পরিবারের জন্য অনেক করেছেন। তিনি কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর তার ছেলে মেয়েরাও তার জন্য অনেক করেছেন। আরো এক বছর আগে ডাক্তার বলে দিয়েছেন, যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতালে ভরতি করিয়ে কোনো লাভ নেই। উনি যেক'টা দিন বাঁচবেন পরিবারের সাথে বেঁচে থাকুক।

একদিন মধ্য রাতে জামিল সাহেবের বুকে ব্যথা উঠেছে।
ছেলে মেয়েরা সবাই এসে হাজির। মৃত্যুর সময় সবাই কাছে থাকতে চায়। ছেলেমেয়েরা সমানে কান্না কাটি করছে। শেষে দেখা গেল- জামিল সাহেবের বুকে ব্যথা কমে গেল। তিনি আরাম করে ঘুমালেন। আবার কিছু দিন পর দেখা গেল জামিল সাহেব নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। জীবন যায় যায় অবস্থা। দৌড়ে তার সব ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজন এলো। কিন্তু তিনি সেবারও মরলেন না। এরকম কমপক্ষে বিশ বার হয়েছে। একসময় কেউ কেউ মনে মনে কিছুটা বিরক্ত'ই হলো। আজ জামিল সাহেব সত্যি সত্যি মারা গেলেন। বাড়ি ভরতি হয়ে গেল আত্মীয়স্বজন দিয়ে। সবাই জামিল সাহেব সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলছেন। কেউ মরে গেলে ভালো ভালো কথাই বলা অলিখিত নিয়ম। বড় ভালো দিনে মারা গেছেন। শুক্রবার। কবরের আযাব হবে না। মাদ্রাসার দশ জন ছেলেরা এসে কুরআন পড়তে শুরু করেছে। এজন্য তাঁরা তিন হাজার টাকা পাবে।

জামিল সাহেবকে কবর দেওয়া হলো।
জানাজায় অনেক লোক হয়েছিলো। জামিলের সাহেবের ছেলে মেয়েরা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারদিন পার হলো। মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হলো। পাঁচ শ' বক্স করা হয়েছে। প্রতি বাক্সে একশ' টাকা খরচ করা হয়েছে। দু'টা মিষ্টি, একটা ছানা, একটা সিংগারা, একটা আমিত্তি, একটা সন্দেশ এবং একটা লাড্ডু। ধীরে ধীরে জামিল সাহেবের ছেলে মেয়ে শোক কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলো। চল্লিশ দিন পার হয়ে গেল। এখন চল্লিশা অনুষ্ঠান হবে। বিশাল অনুষ্ঠান করা হবে। যেন সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। কম পক্ষে দুই হাজার লোক খাওয়ানো হবে। চল্লিশার অনুষ্ঠানটি কিভাবে সুন্দরভাবে করা যায় সেটা জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েরা দুইবার মিটিং করলো। পুরান ঢাকা থেকে হারুন বাবুর্চি কে আনা হলো। তার হাতের রান্না অসাধারণ। ঘি ও মিষ্টি আনা হলো ফরিদপুর থেকে। ফরিদপুরের বাগাটের মিষ্টি খেতে দারুন।

তেহারী করা হয়েছে।
চল্লিশসা'তে সাধারনত তেহারী'ই করা হয়। অনেকে গরুর মাংস খেতে পারে না তাদের জন্য খাসির তেহারী করা হয়েছে। কিছু ভিআইপি আসবেন তাদের জন্য দেশী মূরগীর রোষ্ট, খাসির রেজালা, রুই ও চিংড়ি মাছের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বোরহানী, পায়েস এবং কোল ড্রিংস এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পান সুপারি তো রাখতেই হয়। জুম্মার নামাজের শেষে পাগলের মত লোকজন আসতে শুরু করলো। সবাই খুব চেটেপুটে খাচ্ছে। বলছে, রান্না ভালো হয়েছে। খুব ভালো হয়েছে। প্রশংসা শুনে জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েরা ভীষন খুশি। মানুষের খাওয়া দেখার মত এক জিনিস। অনুষ্ঠানে কোনো ফকির মিসকিনদের দেখা গেল না। জামিল সাহেবের ছেলে মেয়েরা হয়তো নানান টেনশনে এতিম ও ফকির মিসকিনদের বলতে ভুলে গেছেন। এখন, কথা হলো- চার দিনের দিন মিলাদ এবং চল্লিশার খাবারে মৃত ব্যাক্তির কি লাভ হলো? উনি কি জান্নাত পাবেন?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.