নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আজিজুল একটা পত্রিকা অফিসে চাকরী করেন।
চাকরী বলতে সে সারারাত গাড়ি চালায়। ভোর হওয়ার আগেই সে সারা ঢাকা শহরে পত্রিকা দিয়ে আসে এজেন্টদের কাছে। রাত ১১ টা থেকে তার কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ভোর ছয় টায়। দিনের পর দিন একই কাজ। টানা ২৬ বছর আজিজুল এই চাকরী করে। এই ২৬ টা বছর আজিজুল রাতে ঘুমায় নি। ভোরবেলা বাসায় ফিরে সকালের নাস্তা খেয়ে ঘুম দিতো। সারাদিন ঘুমাতো। আজিজুল বিয়ে করেছে। তার একটা ছেলে আছে। ছেলের নাম রাজন। আজিজুলের ইচ্ছা নিজের একটা গাড়ি থাকবে। সে গাড়ি সে নিজে চালাবে। প্রতিমাসে ইনকাম ভালোই হবে। ২৬ বছর পর আজিজুল নিজে একটা গাড়ি কিনতে সক্ষম হয়। গাড়ি কিনে আজিজুল চাকরী ছেড়ে দেয়। তার স্বপ্ন পূরন হয়েছে। নিজের একটা গাড়ি।
নিজের গাড়ি নিজে চালিয়ে আয়-ইনকাম বেশ ভালোই হচ্ছে।
পানির মতো টাকা আসছে। আজিজুলকে পেয়ে গেলো টাকার নেশায়। সে দিনরাত গাড়ি চালায়। তার একমাত্র সন্তান ক্লাশ নাইনে পরে। ছেলের সাথে তার প্রায় দেখাই হয় না। আজিজুলের স্ত্রী ঘর সংসার নিয়েই ব্যস্ত। তাছাড়া সে গ্রামের মেয়ে শহরের জটিলতা খুব একটা বুঝে না। আজিজুলের এখন তিনটা গাড়ি। গাড়ি গুলো ভাড়ায় খাটে। প্রতিমাসে বেশ ভালোই ইনকাম হচ্ছে। অবশ্য এঁর মধ্যে আজিজুল একবার একসিডেন্ট করে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। তবে টানা ছয় মাস তাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে। সাত লাখ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে। সারাটা জীবন আজিজুল পরিশ্রম করে গেলো। এদিকে আজিজুলের ছেলে রাজন নিজেকে একজন সন্ত্রাস হিসাবে আবির্ভূত করে। এলাকায় ত্রাস করে বেড়ায় রাজন।
আজিজুলের একমাত্র ছেলের নাম রাজন।
ক্লাশ নাইনে পড়ার সময় সে খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়ে। এমন কোনো নেশা নেই যা রাজন করে না। মাঝে মাঝে সে রাতে বাসায় ফিরে না। এমন কি সে আর স্কুলেও যায় না। সারাদিন গাঁজা, ফেনসিডিল আর ইয়াবা খায়। এমন কি এই বয়সেই সে পতিতাদের সাথে রাত কাটায়। একদিন আজিজুল ছেলেকে বলেন, তুমি দিন দিন এমন শুকিয়ে যাচ্ছো কেন? কি হয়েছে তোমার? মাঝে মাঝে রাতে বাসায় আসো না কেন? কোথায় থাকো? ছেলে স্পষ্ট বলল, বাবা আমি নেশা করি। প্রচুর নেশা করি। নেশা না করে থাকতে পারি না। স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। লেখাপড়া আমার ভালো লাগে না। লেখাপড়া ছাড়াই আমি অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবো। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখো একটা পিকআপ ভ্যান দেখা যাচ্ছে। সেটা আমার।
আজিজুল তার ছেলেকে মাদকাশক্ত কেন্দ্রে ভরতি করিয়ে দিলেন।
টানা একমাস চিকিৎসা চলল। এরপর একদিন রাজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেলে। তারপর তার আর কোনো খোঁজ নেই। নেশা করে রাস্তায় পরে থাকে। এমন কি নেশার টাকা যোগাড় করতে চুরী, ছিনতাইও করে। লজ্জায় শরমে আজিজুল প্রতিবেশীদের মুখ দেখাতে পারেন না। এরমধ্যে রাজন একুশ বার জেল খেটেছে। এমন কি রাজনের নামে সতের টা মামলা পর্যন্ত আছে বিভিন্ন থানায়। যাই হোক, এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। একদিন রাজন তার বাবাকে বলে, আমাকে বিয়ে করিয়ে দাও। আমি ভালো হয়ে যাবো। আজিজুল বললেন, তুমি নেশা করো। নেশাখোরকে কে বিয়ে করবে? রাজন বলল, সুমি আমাকে ভালোবাসে। সে আমাকে বিয়ে করবে। আজিজুল সাহেব সুমির বাপের সাথে কথা বললেন। সুমির বাপ বলল, আশা করি রাজন বিয়ের পর আর নেশা করবে না। রাজনকে ভালো হওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়ার দরকার আছে। তাছাড়া আমার মেয়ে সুমি রাজনকে খুব ভালোবাসে।
রাজনের বিয়ে হয়ে গেলো।
বিয়ের বয়স তিন বছর। দুটা সন্তানের জন্ম দিলো। কিন্তু রাজন নেশা করা ছাড়লো না। সংসারে অশান্তি। রাজনের স্ত্রী সারা দিনরাত কান্না করে। একদিন রাজন বলল, বাবা আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দাও। তাহলে আমি ভালো হয়ে যেতে পারবো। নেশা থেকে দূরে থাকতে পারবো। আজিজুল তার শেষ সম্বল গাড়ি বিক্রি করে ছেলেকে দুবাই পাঠালেন। রাজন তিন মাস দুবাই ভালোই থাকলো। হঠাত কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে রাজন দেশে চলে আসে এবং নেশা করতে থাকে। একদিন রাজনের বাবা আজিজুল জেনে যায় ছেলে দুবাই থেকে দেশে চলে এসেছে। এবং নেশা অব্যহত রেখেছে। এদিকে রাজনের স্ত্রী মনের দুঃখে স্বামীকে ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় ছেলেকে নিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটাকে দাদা দাদীর কাছে রেখে যায়। আজিজুল এবং তার স্ত্রী নিরবে কান্না করেন। সংসারের কোনো কিছুই রাজনকে স্পর্শ করে না। মা বাবা, স্ত্রী পুত্র কন্যা কারো উপর রাজনের মায়া হয় না।
আজিজুল গ্রামে একটা বাড়ি করেছিলেন।
সেই বাড়ি গোপনে রাজন বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে রাজন জেলে। এক চুরী ও ছিনতাইয়ের মামলায় তার তিন বছরের সাজা হয়েছে। রাজন জেলখানাতে বেশ ভালো আছে। বর্তমানে সে জেলখানার বাবুর্চির হেল্পার। খুব শ্রীঘ্রই সে পুরো বাবুর্চি হয়ে যাবে। এদিকে রাজনের বাবা আজিজুল সাহেব একেবারে নিঃস্ব। তার এখন কোনো গাড়ি নেই। কোনো ইনকাম নেই। জমানো কোনো টাকা নেই। রাজন সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এক রুমের বাসা নিয়ে কোনো রকমে থাকেন আজিজুল। ছোট্র একটা চায়ের দোকান চালান। এই চায়ের দোকানের ইনকাম থেকেই খেয়ে পরে বেঁচে আছেন এক নাতনী আর স্ত্রীকে নিয়ে। তার একমাত্র পুত্র রাজন তার বাপকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। খুব কষ্ট আজ আজিজুলের। তার স্ত্রী ছেলের কর্মকান্ডে পাথর হয়ে গেছেন। আজিজুল সাহেবের শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। শেষ দিন গুলো কিভাবে পার হবে আজিজুল জানে না।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি শুধু লিখে যেতে চাই। আমার লেখা এলোমেলো এবং অগোছালো। তাই কেউ না পড়লে কষ্ট লাগে না। তবে আমি লিখে আরাম পাই, আনন্দ পাই।
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৩৫
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার লেখা সামনের পাতায় আসছে না?
ব্লগার কাজী ফাতেমা আপনার বিপক্ষে পোষ্ট দিয়েছেন; রাগ, টাগ থাকলে, সেটা ভুলে গিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য করেন; আপনি সব সময় ভালো ব্লগার হিসেবে পরিচিত; এসব ছোটখাট ভুল হলে, স্যরি বলে দিবেন।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: দীর্ঘদিন ধরে জেনারেল হয়ে আছি।
মনে হয় কুশন এঁর জন্য আমাকে জেনারেল করা হয়েছে।
ওকে স্যরি বলে দিবো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৮
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সামুর এখন লেখকের অভাব নেই সেজন্য আপনাকে আপাতত সাইড বেঞ্চে রেখেছে। আমার অবস্থাও সেরকম। যাক মন্ব্য করেও সময় কাটাতে পারেন।