নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ ফেসবুক।
মেয়েদের চোখ তিনটা।
এঁর মধ্যে একটা চোখ অদৃশ্য। সেই অদৃশ্য চোখ দিয়ে মেয়েরা বুঝে ফেলে কেউ তার দিকে তাকালো। ভালো ছেলেরা প্রথমে চায় মুখের দিকে। আর দুষ্ট ছেলেরা প্রথমে চায় বুকের দিকে। নীলার কলেজের সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটা নীলাকে প্রতিদিন আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখে। নীলা সরাসরি ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে তা স্পষ্ট বুঝতে পারে। ইদানিং নীলা একা কলেজ থেকে বাসায় যেতে ভয় পায়। এক জোড়া চোখ তার দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকে। কাছে আসে না। মুখে কিছু বলে না। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে থাকে। এটা খুবই অস্বস্থিকর ব্যাপার। নীলা যে সাহস করে ছেলেটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন? এই কথাটা বলার সাহস নীলার নেই।
ছেলেটা চায় কি? কেন তাকিয়ে থাকে?
প্রেম করতে চায়? নীলা তো প্রেম করবে না। সে কলেজে আসে লেখাপড়া করতে। প্রেম নয়। তাছাড়া নীলা প্রেম ভালোবাসায় জড়াবে না। সে এই টাইপ মেয়েই নয়। নীলা একদিন বাধ্য হয়ে তার বান্ধবীকে ছেলেটার কথা বলে। শেষে চারপাচ জন মিলে একদিন ছেলেটা ধরে ফেলে। জিজ্ঞেস করে কেন সে নীলার দিকে রোজ তাকিয়ে থাকে? ছেলেটা বেশ ভয় পেয়ে যায়। এবং ক্ষমা চায়। ছেলেটা দেখতে শুনতে বেশ। লম্বা আছে। গায়ের রঙ ফর্সা। ভদ্র ঘরের ছেলে। ছেলেটা অসহায় ভাবে নীলার দিকে তাকিয়ে বলল, স্যরি। আপনাকে লুকিয়ে আর দেখব না। আমাকে ক্ষমা করবেন। নীলার সহপাঠিরা বেশ শাসিয়ে দিলো ছেলেটাকে। ছেলেটা মাথা নত করে চলে গেলো। একবারও আর পেছন ফিরে তাকালো না।
নীলা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
এখন কেউ তাকে আর ফলো করে না। বেশ সুন্দর ভাবে নীলা কলেজে যাচ্ছে, আসছে। গত একটা মাস ছেলেটা লুকিয়ে লুকিয়ে নীলাকে দেখতো। কিন্তু একদিন নীলা লক্ষ্য করে দেখলে ছেলেটা এখন তার বাসার সামনে শিমুল গাছের আড়ালে লুকিয়ে তার ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকে। শিমুল গাছটার সামনে থেকে তার ঘর, ব্যলকনি স্পষ্ট দেখা যায়। নীলার খুব রাগ হলো। ছেলেটা পাগল নাকি! দিনের পর দিন এক'ই যন্ত্রনা। প্রতিদিন বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত ছেলেটা শিমুল গাছের আড়ালে লুকিয়ে নীলাকে দেখে। নীলা এখন ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখে। ব্যলকনিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এই ব্যলকনিটা তার ভীষন প্রিয়। ব্যলকনিতে বসে নীলা রোজ এক মগ চা খায়। সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে।
নীলা বেশ শান্ত মেয়ে।
কিন্তু ছেলেটার কর্মকান্ড নীলার মেজাজ গরম করে দিচ্ছে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী নাকি? নীলা তার চাচাকে ছেলেটার কথা বলল। চাচা রেগে মেগে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে ছেলেটাকে খুব মারে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ঠোঁট কেটে যায়। ডান হাতের একটা আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। নীলা চায়নি ছেলেটা মার খাক। কিন্তু তার চাচার অত্যন্ত রাগী। নীলা বারবার বলেছে ছেলেটাকে মেরো না চাচা। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো। কিন্তু তার চাচা ছেলেটাকে কঠিন মার দেয়। নীলা ব্যলকনি থেকে দেখেছে, ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে চাচার পা ধরে বলছে, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর এখানে আসবো না। প্লীজ আমাকে মারবেন না। লজ্জায় বাবা মায়ের কাছে আমি মুখ দেখাতে পারবো না। আমার বাবা মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন।
ছেলেটার নাম সুমন।
সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা সরকারী চাকরী করে। সুমনরা ঢাকা এসেছে তিন মাস হলো। সুমন ঢাকা নটরডেম কলেজে ভরতি হয়েছে। লেখাপড়ায় সে খুবই ভালো। নীলার চাচার হাতে মার খেয়ে সুমনকে হাসপাতালে ভরতি হতে হয়েছে। সুমনকে দেখে বাবা মা দুজনই খুব কান্না করলো। এবং বলল, এই ঢাকা শহরে আমরা থাকব না। ঢাকা শহর ভালো না। ছেলেটাকে মার খেতে দেখে নীলার খুব কষ্ট হয়। সে নিজেকে অপরাধী মনে করে। একদিন নীলা সুমনকে দেখতে তার বাসায় আসে। সুমনের কাছে ক্ষমা চাইতে। সুমনের মা বলল, আগামীকাল আমরা এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। গ্রামের বাড়ি চলে যাবো। যে শহরের মানুষ আমার সহজ সরল ছেলেকে মারে। সেই শহরে আমরা থাকবও না। এই শহর ভালো না।
সুমন আর নীলা মুখোমুখি।
সুমনের কপালে এখনও ব্যান্ডিজ। ঠোটের কোনায় ক্ষত। নীলা বলল, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি চাইনি তুমি মার খাও। কিন্তু আমার চাচা আমার কথা রাখেন নি। প্লীজ আমাকে মাফ করে দাও। আমার অপরাধ ক্ষমা করো। নীলা কাঁদতে থাকে এবং বলে তুমি চাইলে আমি তোমাকে ভালোবাসতে রাজী আছি। সুমন বলে, তুমি দেখতে অনেক সুন্দর। তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখতাম। এটাই আমার শান্তি। এটাই আমার আনন্দ ছিলো। সহজ সরল নির্মল আনন্দ। নিশ্চয়ই এটা পাপ নয়। তোমার কাছে গিয়ে আমার ভালো লাগার কথা বলব, সেই সাহস আমার নেই। তাই শুধু দূর থেকে তোমাকে দেখি। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
©somewhere in net ltd.