নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
শব্দ! শব্দ! চারিদিকে শব্দ।
শব্দ ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। যদি আপনাকে শব্দহীন কোথাও রাখা হয় তাহলে আপনি বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারবেন না। শব্দের প্রয়োজন আছে। মানুষ শব্দ পছন্দ করে। আবার মানুষ শব্দ ভয় পায়। ধরুন, আপনি আপনার ঘরে ঘুমাচ্ছেন। তখনও আপনি নানান রকম শব্দ পাবেন। ফ্যানের পাখা ঘুরার শব্দ। ওয়াশরুমে কল থেকে পানি পড়ার শব্দ। বাইরে বাতাসের শব্দ। এমন কি আপনি আপনার নিঃশ্বাসের শব্দও পাবেন। রাত যত গভীর হয় শব্দ তত প্রখর হয়। খেয়াল করুণ। যে শব্দ আপনার চোখের সামনে হচ্ছে না আপনি চাইলে সেই শব্দও শুনতে পাবেন। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ। অথবা নদীর কল কল শব্দ। আকাশের যুদ্ধ বিমানের গর্জন। কত রকম যে শব্দ আছে দুনিয়ায়। কোনো কোনো শব্দ আমাদের আনন্দ দেয়। কোনো কোনো শব্দ আমাদের বিরক্ত করে।
শাহেদ জামালের ঘুম ভাঙ্গলো।
এখন সকাল আট টা। আজকের দিনটা অন্যরকম হবে। কারন শাহেদ জামাল হয়তো রাতে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে ফেলেছে। বহু দিন পর সে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে। সুন্দর স্বপ্ন দেখলে মনটা খুশিতে ভরে যায়। শাহেদ জামাল স্বপ্নে দেখেছে- অজানা অচেনা একটা গ্রাম। পুরো গ্রামটা সবুজ। এর আগে শাহেদ জামাল কোনো গ্রামে এত এত গাছ দেখে নাই। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে লম্বা একটা খাল। খালের পানি স্বচ্ছ। খাল পার হওয়ার জন্য একটা লম্বা বাঁশের সাঁকো আছে। সাঁকো দেখে শাহেদের খুব ভালো লাগলো। ছোটবেলা সে গ্রামে গেলে সাঁকো দেখলে ভয় পেতো। কারন শাহেদ জামাল সাঁকো পার হতে পারে না। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। আর বারবার সাঁকো থেকে পড়ে গেছে। সে জানে না সাঁতার। বিশাল দিকদারি অবস্থা। অথচ সাঁকো খুবই সুন্দর একটা বিষয়। এই খালটা বিশাল এক নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে।
শাহেদ জামাল সাঁকো দেখে দৌড়ে গেলো।
খুব সুন্দর আর মজবুত সাঁকো। এখন সে সাঁকো ভয় পায় না। এখন সে অনেক বড় হয়েছে। শাহেদ সাকোর মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। সাকোটা অনেক উচুতে। নিচে পানির ধারা কলকল শব্দ করতে করতে বয়ে যাচ্ছে। খালের পানি স্বচ্ছ। কত রকমের মাছ দেখা যাচ্ছে। জাল ফেললেই খুব সহজেই অনেক মাছ পাওয়া যাবে। শাহেদ জামাল মুগ্ধ! তার চোখে মুখে আনন্দ খেলা করছে। এমন সময় একটা মেয়েকে দেখা গেলো। মেয়েটা একটা নৌকায় করে আসছে। বেশ বড় নৌকা। তবে নৌকাতে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা সাকোর কাছাকাছি আসতেই শাহেদ জামালকে দেখলো। শাহেদ জামাল আরেকবার মুগ্ধ হলো- মেয়েটাকে দেখে। সহজ সরল সুন্দর একটি মুখ। ভীষন মায়া ভরা চেহারাতে। মেয়েটা বলল, চলে আসো নৌকাতে। শাহেদ বলল, আমি নৌকা ভয় পাই। যদি নৌকা উলটে যায়। জানি না সাঁতার। মেয়েটা শাহেদ জামালের কথা শুনে হাসলো। খুব সুন্দর হাসি। দেখতে ভালো লাগে। শাহেদ জামাল ভেবে পায় না কিছু কিছু মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কেনে! আবার কিছু মানুষের হাসি অতি কুৎসিত।
শাহেদ জামাল নৌকায় উঠলো।
বলল, এই নৌকা কোথায় গিয়ে থাকবে? মেয়েটা বলল- এই নৌকা কোনোদিন কোথাও গিয়ে থামবে না। শাহেদ বলল- আমার মা কোথায়? মেয়েটা বলল, ডান দিকে তাকিয়ে দেখো। শাহেদ তাকালো। দেখলে তার মা রান্না করছেন। মা বললেন, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই রান্না শেষ হয়ে যাবে। তোর পছন্দের খাবার রান্না করছি রে। নদী থেকে বড় একটা ইলিশ মাছ ধরেছি। ডিম হয়েছে। ডিম দিয়ে গরম গরম ভাত খাবি। শাহেদ জামাল খুশি হলো। শাহেদ বলল, মা বাবা কোথায়? বাবাকে তো দেখছি না। শাহেদের মা মন খারাপ করে বললেন, দূর বোকা তোর বাবা তো বেঁচে নেই। শাহেদ জামালের মনে পড়লো দুই বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। মেয়েটা বলল, বাবার জন্য মন খারাপ করো না। তোমার বাবা যেখানে আছেন, ভালো আছেন। আমি চেষ্টা করবো তোমার বাবার সাথে তোমার একবার দেখা করিয়ে দিতে। মেয়েটার কথা শুনে শাহেদ খুশি হলো। সে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে। যদিও শাহেদ তার বাবার কোনো স্বপ্ন পূরন করতে পারেনি। শাহেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
নৌকা চলছে। বিশাল এক নদী।
কোনো পাড় দেখা যাচ্ছে না। শাহেদ বলল, কিন্তু নীলা কোথায়? নীলাকে ছাড়া কিচ্ছু আমার ভালো লাগে না। আমার সব কিছুতেই আমি নীলাকে চাই। মেয়েটা হাসলো। বলল, আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো। আমিই নীলা। আমিই তোমার নীলা। শাহেদ জামাল প্রচন্ড অবাক হলো। হ্যাঁ এই মেয়েটাই তো নীলা। আরেহ! মা সামনে না থাকলে শাহেদ এখন সত্যি সত্যি নীলাকে জড়িয়ে ধরতো। নীলা বলল, শাহেদ তোমার কি আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে? শাহেদ বলল হ্যাঁ। মেয়েটা বলল, ধরো। সমস্যা নেই। মা আমাদের দেখতে পাবেন না। এই নদী, এই নৌকা, আমি তুমি সবাই আমরা আলাদা একটা জগতে আছি। এই জগতে দুঃখ, কষ্ট নেই। ভয় নেই। এই জগত হলো আনন্দের জগত। আসো, কাছে আসো। হাত ধরো। শাহেদ নীলার হাত ধরলো। ঠান্ডা হাত। এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে নীলা শাহেদ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
©somewhere in net ltd.