নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৭৬

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৯



আমার নাম কামাল। কামাল চৌধুরী।
আমার সাহস আছে। কারন সৎ ও পরিশ্রমী মানুষের সাহস সব সময় বেশি থাকে। আমি অবহেলিত। ঘরে বাইরে সব জাগায় আমি অবহেলিত। গত তিন বছর ধরে আমার কোনো বন্ধুবান্ধব আমার খোজ খবর নেয়নি। আমি নিজ থেকে তাদের সাথে দেখা করতে গেলে তাঁরা আমার সাথে দেখা করে না। এক বন্ধুর অফিসে গিয়েছি। তার সাথে দেখা করবো। এক ঘন্টা রিসিপশনে বসে ছিলাম। কিন্তু বন্ধুটি দেখা করেনি। পিয়নের কাছে বলে পাঠালো- আজ দেখা হবে না। সে অনেক ব্যস্ত। আসলে বন্ধুর ধারনা আমি তার কাছে টাকা চাইতে গেছি। কারন আমি বেকার। সত্য কথা হলো আমি আমার জীবনে কারো কাছে হাত পাতিনি। বছেরের পর বছর ধরে প্রতিদিন অপমানিত ও অবহেলিত হতে হতে এখন আমার গায়ের চামড়া মোটা হয়ে গেছে। কেউ কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিলেও আমার খারাপ লাগে না। কেউ তুই তুকারি করলেও আমার গায়ে লাগে না।

এই রমজানে এক বন্ধুর অফিসে গিয়েছি।
ইফতারীর সময় হয়ে গেছে প্রায়। সেই বন্ধু আমাকে সময় দিলো না। তবে বলল, ইফতারী করে যেতে। ওদের অফিসে সেদিন ইফতার পার্টি ছিলো। আমি বসে আছি। আজান দিয়ে দিয়েছে। অনেকক্ষন পর আমার বন্ধু পিয়নকে দিয়ে এক গ্লাস পানি আর একটা পিয়াজু পাঠিয়ে দিলো। খুব অপমানিত বোধ করলাম। কষ্টে অপমানে চোখে পানি চলে এলো। আমার বড় ফুপু তার বাসায় সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করলো। শুধু আমাকে ছাড়া। কারন আমি গরীব বলে। এক বন্ধু গ্রামের বাড়ি যাবে। সে আমাকে বলল, আমি যেন তাকে কমলাপুর দিয়ে আসি। আসলে বন্ধুর অনেক মালাসামান ছিলো। সে একা এত মালসামান নিতে পারবে না। তাই আমাকে তার প্রয়োজন ছিলো। যাইহোক, আমি বন্ধুর জিনিসপত্র নিয়ে কমলাপুর গেলাম। বন্ধু ট্রেনের জানালা দিয়ে ম্যানিব্যাগ খুলে আমাকে দশটা টাকা দিলো। বলল, আমি যেন বাসে করে চলে যাই। আমার বলতে ইচ্ছা করলো- বন্ধু বাস ভাড়া তো বিশ টাকা। তুমি দশ টাকা দিচ্ছো কেন? আমার এই বন্ধু অসৎ ভাবে অনেক টাকা করেছে। সে নাম করা একটা ফার্নিচার কোম্পানীতে কাজ করে।

আমি এক অফিসে চাকরী করতাম।
সেই অফিসের বস একদিন বলল, আমার বাসার বাজার করে দাও। দিলাম বাজার করে। বসের বাসায় গিয়েছি। বসের স্ত্রী বলল, আমার কাজের মেয়েটার জ্বর এসেছে। ফার্মেসী থেকে ওষধু এনে দাও। বসের বাসার আশে পাশে কোনো ফার্মেসী নেই। পঁচিশ মিনিট হেঁটে যাবার পর একটা ফার্মেসী আছে। আরেকবার বসের বউ বলল, দুদিন ধরে ময়লার গাড়ি আসে না। তুমি নিচে অপেক্ষা করো। আমি কাজের মেয়েকে দিয়ে ময়লা পাঠাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই অপমান অবহেলা পেয়ে পেয়েই বড় হয়েছি। এজন্য ঠিক করেছি আমি কোনো দিন কাউকে অপমান অবহেলা করবো না। স্বর্ন যত পুড়ে তত খাটি হয়। ঠিক তেমনি মানুষ যত দুঃখ-কষ্ট পায় তত খাটি হয়। মানুষ আমাকে অপমান অবহেলা করে- করে আমাকে খাটি মানুষ করে তুলেছে। ছোট ছোট পোলাপান গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়। তারাও আমাকে সমীহ করে না। আসলে আমার চেহারার মধ্যে একটা বদল বদল ভাব আছে। এজন্য অনায়াসে যে কেউ আমাকে অপমান অবহেলা করে ফেলতে পারে।

আমি যে মেসে থাকি, টাকা দিতে পারি না।
এজন্য মেস ম্যানেজার আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেয়। বাজার করে দেই। রান্নার কাজে বুয়াকে হেল্প করি। এমনকি আমি যে মেসে থাকি সেটা সাত তলা। ছাদের উপর আমাদের মেস। বাকি ফ্লাট গুলোর ভাড়াটিয়ারা আমাকে দিয়ে তাদের অনেক কাজ করিয়ে নেয়। আমিও তাদের কাজ করি। হাসিমুখেই করি। কারো কাজের মেয়েকে গ্রামে পৌঁছে দিয়ে আসি। আবার নিয়ে আসি। কারো বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসি। কারো গ্যাস বিল। কারো ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসি। কারো মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসি। কারো বাসার গ্যাসের চুলার সমস্যা হলে গ্যাস মিস্ত্রী খুঁজে নিয়ে আসি। কারো দোকান সদাই করে দেই। বিনিময়ে কেউ কেউ আমাকে ৫০ টাকা, ১০০ টাকা দেয়। কেউ একবেলা খাইয়ে দেয়। কেউ কিছুই দেয় না। শুধু কাজ করিয়ে নেয়। কমিটির লোকজন যখন মিটিং করে তাদের চা সিগারেট এনে দেই। মনে হয় আমার জন্মই হয়েছে অন্যের ফরমায়েশ করার জন্য। অথচ আমার দাদা ছিলেন জমিদার। কলকাতায় পর্যন্ত আমাদের একটা বাড়ি আছে। আমার আপন ভাইয়ের ৪২ লাখ দামের গাড়ি আছে। আমার অন্য ভাই বছরে দুবার পরিবার নিয়ে ইউরোপ যায় বেড়াতে। আমার এক ভাই তার ড্রাইভারের বেতন দেয় ২৫ হাজার টাকা।

দুনিয়াতে আমার সবাইই আছে মা ছাড়া।
ভাই বোন। আছে, বাবা আছে। আত্মীয়স্বজন আছে। কিন্তু কেউ আমার খোজ নেয় না। কারন আমি দরিদ্র। বেকার। দরিদ্ররা সব জাগায় অবহেলিত। আমি বিয়ে করেছিলাম। আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কারন অভাবের সংসার করা তার পক্ষে সম্ভব না। এবং আমার স্ত্রী বলে তুমি গরীব এটা সমস্যা না। সমস্যা হলো তোমার আত্মমর্যাদা নেই। আত্মমর্যাদা কিভাবে আয়ত্ত করতে হয়- আমি জানি না। স্ত্রী চলে গেছে সেজন্য আমার দুঃখ হয় না। শুধু আমার ছেলেটার কথা মনে পড়ে। দুই বছর বয়স। কতদিন বাচ্চাটাকে কোলে নিই না। দেখি না। কষ্ট হয় খুব। করোনাতে কত লোকের মৃত্যু হলো। কিন্তু আমার মৃত্যু হলো না। মরে গেলে এই অপমান আর অবহেলার জীবন থেকে বেঁচে যেতাম। আমার বিশ্বাস একদিন সব কিছু অন্যরকম হবে। সবাই আমাকে ভালোবাসবে। সম্মান করবে। আমার স্ত্রী ফিরে আসবে। আমার ভাইয়েরা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি রমনা পার্কে যাবো। ফেন্টাসি কিংডম যাবো। আমার নিজের একটা ফ্লাট হবে। হয়তো নিজের একটা গাড়ি হবে। আমার বন্ধুরা এসে আমার খোজ খবর নিবে।

কল্যানপুরে আমার আপন ফুপুর বাসা।
তার নিজের ছয় তলা বাড়ি। একবার কল্যানপুর গিয়েছি। ভাবলাম ফুপুর সাথে দেখা করি। ফুপু আমাকে দেখে খুশি হলো না। অথচ তিন বছর পর ফুপুর বাসায় এসেছি। ফুপু আমাকে দুটা পুরান জামা দিলো। এবং জোর করে ভাত তরকারী খেতে দিলো। বাসী তরকারী। ফ্রিজ থেকে বের করে দিয়েছে। ওভেনে গরম করেও দেয়নি। দুঃখে কষ্ট আর অপমানে চোখে পানি চলে এলো। আমার এক আপন চাচা ব্যবসা করেন। তার কাছে গেলাম কাজের আশায়। চাচা বললেন, অবশ্যই তোমাকে কাজ দিবো। কাজ দিলেন তার দোকানে। সারাটা দিন একের পর এক কাজ করতেই থাকলাম। এই ব্যাংকে যাচ্ছি। এই তার বাসায় বাজার দিয়ে আসছি। এই তার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি কিছু দিয়ে আসতে বা নিয়ে আসতে। তার ছেলেকে নিয়ে কোচিং এ যাচ্ছি। রাত দশটায়ও চাচা নানানা রকম কাজ দিয়ে এখানে সেখানে পাঠায়। কোনো ছুটি নাই। মাস শেষে চাচা আমাকে কোনো টাকা দেয় না। আপাতত কাজ শিখো। তারপর টাকা পাবে। একদিন চাচা আমাকে অপমান করলেন খুব। কারন সেদিন দোকানে যেতে আধা ঘন্টা দেরী করেছিলাম। চাচা আমাকে গলা ধাক্কা দিলেন।

ধার দেনা করে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সৌদি গিয়েছিলাম।
অতি দুর্গম এলাকা। চারিদিকে শুধু মরুভুমি। পানির বড় অভাব। আমার মালিক আমার পাসপোর্ট রেখে দিলো। এটাই নাকি সৌদির নিয়ম। রাতে আমার মালিকের পা টিতে হয়। তার বাতের ব্যথা আছে। তার গাড়ি ধুতে হয় প্রতিদিন। একবার বলল বাড়ির ছাদের টাংকি পরিস্কার করতে। করলাম পরিস্কার। মালিক আমাকে থাপ্পড় দিলো। খারাপ গালি দিলো। বলল, টাংকি নাকি পরিস্কার হয়নি। অথচ সৌদি এসেছিলাম হোটেলের ম্যানেজারের কাজ নিয়ে। আমার মালিক আমাকে কখনও নাম ধরে ডাকতো না। আমাকে ডাকতো মিসকিন বলে। সবচেয়ে বড় কথা আমাকে ভালো খাবার দিতো না। তাঁরা খাওয়ার পর যে খাবার নষ্ট হতো সে খাবার আমাকে খেতে দিতো। অন্যের নষ্ট করা খাবার আমার গলা দিয়ে নামতো না। একবার ভাবলাম পালিয়ে যাই। এই হলো আমার অপমান আর অবহেলার গল্প। মানুষের কাজ করে দিলে মানুষ মোটামোটি ভালো ব্যবহার করে। অপমান অবহেলা করে না। এজন্য আগ্রহ নিয়ে মানুষের কাজ করে দেই। তবে মানুষ অন্যকে বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে খুব পছন্দ করে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


মুক্তি মিলবে কবে?

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

কামাল১৮ বলেছেন: বদল কি বলদ হবে।গরিবের দুঃখের সত্যিকারের কাহিনী তুলে ধরেছেন লেখায়।গরিব তার কাহিনী জানে কিন্তু মুক্তির পথ জানে না।আমিও জানি না।কিন্তু অনেক গুলি বছর চেষ্টা করেছি।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:৫৭

কামাল১৮ বলেছেন: গরিবের মুক্তির জন্য।

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২২

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



সৌদিরা কাউকে বাসি নষ্ট খাবার দেন বলে আমার জানা নেই। হতে পারে - তবে না হবার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী। আরব মানুষদের আমি পছন্দ করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.