নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৮১

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩১

ছবিঃ আমার তোলা।

মেয়েটার নাম জুলেখা।
জুলেখার বাবা জমি কেনাবেচা করেন। আসলে তিনি জমির দালাল। কেউ জমি কিনতে চাইলে সে ভালো জমির সন্ধান দেন। বিনিময়ে কিছু পান। আর জুলেখার মা রাজনীতি করেন। তখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় নাই। জুলেখার মা রাস্তায় সাহসী নেত্রী। হরতাল আর মিছিল মিটিং করেন। পুলিশে টেনে হেচড়ে ধরে নিয়ে যায়। রাতে গিয়ে স্বামী তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে জুলেখা সারাদিন বাসায় থাকে। রান্না করে আর ছোট ভাই বোনের দেখাশোনা করে। সংসারের অবস্থা ভালো না। বাড়ি ভাড়া বাকি। মুদি দোকানে বাকি। বছরের পর বছর একই ঘটনা। ঠিক ভাবে ভাড়া না দেওয়ার কারনে জুলেখারা এক বাড়িতে বেশি দিন থাকতে পারতো না।

জুলেখার ছোট বোনটা দেখতে ভীষন সুন্দর।
এই বোনটা যখন সতের বছর। তখন সে ফাঁসি দিয়ে মারা যায়। বাবা মা সারাদিন বাসায় না থাকার কাররনে- বোনটা খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়েছিলো। নেশা করতো। এমনকি মেয়েটার কিছু ভিডিও নেটে ছড়িয়ে পড়েছিলো। নেশা করার জন্য টাকা যোগাড় করতে পারেনি। বাবা মা তাকে ঘরে বন্ধী করে রাখত। কয়েকবার মাদকাসক্ত হাসপাতালে ভরতিও করেছিলো। কাজ হয়নি। আসলে সারাদিন বাবা মা থাকতো বাইরে বাইরে, ছেলেমেয়ে কে কি করছে সেই খোঁজ তাদের ছিলো না। মেয়েটার আত্মহত্যার জন্য মূলত দায়ী তার বাবার দালালি আর মায়ের রাজনীতি। একদিন জুলেখা তার বাবা মাকে বলেছিলো- বোনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উত্তরে বাবা মা বলেছিলো- তুই দেখতে কালো, তাই বোনের নামে বানিয়ে বানিয়ে বলিস।

জুলেখা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে।
একটা ছেলের সাথে জুলেখার সম্পর্ক হয়। ছেলেটা মাত্র ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে বের হয়েছে এবং একটা ভালো চাকরি করছে। তাদের বিয়ে হলো। প্রেম থেকে বিয়ে। বাবা মায়ের সংসার ছেড়ে জুলেখা নতুন সংসার পেলো। জুলেখা নিজের সংসার নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিলো। তার স্বামী তাকে ইডেন কলেজে ভরতি করিয়ে দিলো। জুলেখা অনার্স করলো, মাস্টার্স করলো। মাস্টার্স করতে তার ভীষন কষ্ট হলো। কারন তত দিনে তার এক ছেলে হয়েছে। সেই ছেলেকে নিয়ে পড়াশোনা, ক্লাশ, সংসার দেখা, বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মায়ের সংসার থেকে এসে জুলেখা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আসলে ওটা কোনো সংসারই ছিলো না। বাবার মাসিক কোনো ইনকাম ছিলো না। আর মা রাজনীতি করে থানায় যেতো। অভাবের সংসার।

এদিকে জুলেখার ভাই বড় হয়েছে।
সে পালিয়ে বিয়ে করেছে। এজন্য বাবা মা রাগ করে ছেলেকে এবং নতুন বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বেচারা নতুন বউ নিয়ে ভয়াবহ বিপদে পড়েছে। প্রেমের বিয়ে। তাঁরা তাঁদের এক বন্ধুর বাসায় উঠলো। কিন্তু তাদের ভাগ্য ভালো। তাঁরা দুজনেই ভালো চাকরি পেয়ে যায়। তাদের অবস্থা বদলে যায়। তাঁরা বেশ ভালো আছে। সুখে আসে। কিন্তু ভালো নেই বাবা মা। এখন তাদের ঢাকা শহরে থাকার জায়গা নেই। এমন কি এখন তাঁদের কেউ বাড়ি ভাড়াও দেয়ে না। দালালি ব্যবসা করে কিছুই আয় হচ্ছে না। এদিকে রাজনীতি থেকে খালি হাতে ফিরেছে মা। এখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়। কিন্তু মা কোনো পদ পায় নাই। সারা জীবন দল দল করেও শেষ সময়ে সে কিছু পায়নি। বরং দল তাকে দল থেকে বের করে দিয়েছে। অবস্থা বেশ করুণ।

এদিকে জুলেখার অবস্থা খুব ভালো।
তার স্বামী গাড়ি, বাড়ি করছে। বিশাল অবস্থা। বছরে দুবার যায় ইউরোপে বেড়াতে। জুলেখা আর জুলেখার ভাই ভালো আছে। কিন্তু বাপ মা খুব করুণ অবস্থা। তাঁরা এখন খেয়ে না খেয়ে আছে। জুলেখা দুই হাতে টাকা উড়ায়। ইচ্ছা মতো শপিং করে। তার স্বামী তাকে কিছু বলে না। কারন, জুলেখা বাবা মায়ের সংসারে অভাবে অভাবে বড় হয়েছে। তাই এখন সে ইচ্ছা মতো বিলাসিতা করছে। কালো একটা চশমা পড়ে, গাড়ীতে করে জুলেখা ঘরে বেড়ায়। রাস্তায় দরিদ্র মানুষকে তেল, চাল, মাংস কিনে দেয়। কাউকে কাউকে দেয় নগদ টাকা। বিপদে পড়ে কেউ তার কাছে গেলে সে খালি হাতে ফেরায় না। এক মহিলা জুলেখাকে এক পীর মহিলার কাছে নিয়ে যায়। জুলেখা এই পীর মহিলার ভক্ত হয়ে যায়। পীর মা যা বলেন, জুলেখা এখন তাই করে। পীর মার কথা মতো, জুলেখা এখন বোরকা পড়ে। ধর্মীয় বই টই পড়ে। পীর মা যদি জুলেখা বলে- প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাক, জুলেখা তাই করবে।

জুলেখার বাবা মা গেলো ছেলের কাছে।
ছেলে আর ছেলের বউ বাবা মাকে জায়গা দেয়নি। তাঁরা বলেছে আমাদের বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলে। তখন আমাদের কোনো থাকার জায়গা ছিলো না। খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো না। আজ আমরা আপনাদের আমাদের বাসায় জায়গা দিবো না। আপনারা দুজনেই মহা বদমাশ। ছেলের বউ বলল, সেদিন আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আমি কোনো দিন ভুলব না সেকথা। শেষে উপায় না দেখে তাঁরা মেয়ের কাছে যায়। মেয়ে তাদের থাকতে দেয়। এখন বুড়ো বাবা মা মেয়ের বাসায় আছে। এই বাবা মা আবার এক পীরের মুরিদ। পীর যা বলে তাঁরা তাই করে। মেয়ের কাছে থাকার বুদ্ধি তাদের পীর বাবা দিয়েছেন। গত বিশ বছর ধরে তাঁরা পীরের কথা মতো চলছে। পীর বলেছিলো, তোর বড় মেয়ের ভাল জায়গায় বিয়ে হবে, হয়েছে। পীর বলেছিলো তোর বড় মেয়ের অনেক টাকা পয়সা হবে, হয়েছে।

মেয়ের বাড়িতে থাকতে এসে বৃদ্ধ বাবা মা বদলে গেলেন।
এখন তাঁরা কাজের মেয়েকে ধমক দেয়। ড্রাইভারকে বকাঝকা করে। চায়ের সাথে ঘি মিশিয়ে খান। কাজের মেয়েকে বলেন পা টিপে দিতে। মেয়েকে বলেন, তোর এখানে থাকতে আমাদের কষ্ট হয়। তোর স্বামীকে বল খোলামেলা জায়গায় বড় বাসা নিতে। এদিকে তাঁরা মেয়েকে বলেছেন, তাদের দামী ফোন লাগবে। মেয়ে জামাই তাদের দামী ফোন কিনে দিয়েছে। এখন তাঁরা সারাদিন পীর বাবার ভিডিও দেখেও ইউটিউবে। এখন তাঁরা মেয়েকে বলছে, তোর শ্বশুর- শ্বাশুরিকে আর কত দিন পালবি। তাদের তো অন্য ছেলে আছে, তাদের সাথে যেয়ে থাকুক। তার ঘরে আমাদের থাকা উচিৎ। ঐ ঘরে তো এসি আছে। যা গরম পড়েছে। এসিতে না থাকলে শান্তি নাই। মেয়েও বাবা মায়ের কথায় নাচছে। শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলেছে, আপনারা চলে যান।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

আমি সাজিদ বলেছেন: কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

১৪ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব জীবন বড় কঠিন।
মানুষের জীবনের গল্প গুলো জেনে আমার ভীষন মন খারাপ হয়।

২| ১৪ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:১৩

কামাল১৮ বলেছেন: বাস্তব জীবনই সহিত্যের মূল বিষয় না।সাহিত্যের একটা উদ্দেশ্য থাকে।এই গল্পের উদ্দশ্য বুঝতে পারলাম না।স্বাভাবিক বলেও মনে হলো না।

১৫ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি সাহিত্য রচনা করিনি।
এই সমাজের একটি পরিবারের কথা বলতে চেষ্টা করেছি।

৩| ১৫ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:২৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন বাস্তবচিত্র তুলেধরেছেন রাজীব দা ভাল থাকবেন

১৫ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:০২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: কথায় বলে ফকিন্নির ঠাটবাট বেশি।

১৫ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ খারাপ।

৫| ১৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১২:১২

কামাল১৮ বলেছেন: বাস্তব জীবনের পজেটিভ দিকগুলো তুলে ধরাই প্রগতিশীল সাহিত্যে।বাকি সব আবর্জনা।একটা হলো সাহিত্যের জন্য সাহিত্য।অন্যটা হলো মানুষের জন্য সাহিত্য।সমাজকে এগিয়ে নিবার জন্য সাহিত্য।সাহিত্য সংগ্রামের হাতিয়ার।
জাগো বাহে, কোনঠে সবাই।সৈয়দ শামসুল হক

১৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: সাহিত্যে পজেটিভ নেগেটিভ সব দিকের কথাই বলতে হবে।
সাহিত্যে একটা সময়ের কথা বলতে হয়। সেই সময়ের মানুষের সুখ দুঃখ, পাওয়া না পাওয়া, হাহাকার, রাজনীতি, পরকীয়া, অমানবিকতা সব কিছুর কথাই বলতে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.