নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কন্যা আমার- ৫৯

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:২৯



প্রিয় কন্যা আমার-
তোমাদের কবে নানা বাড়ি বেড়ানো শেষ হবে? ইটালি থেকে আসা তোমার কাজিনদের পেয়ে আমাকে ভুলেই গেছো! আমি ফোন দিলে ঠিক করে আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলো না। গত ২৫ দিনে তোমার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি। হয়তো এই পরিবর্তনটার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তুমি রাস্তায় বের হলে একা একা হাঁটতে চাও। বাবা মায়ের হাত ধরতে চাও না। ঢাকা শহরে গজব অবস্থা। চারিদিকে গাড়ি, রিকশা, বাইক এছাড়া রাস্তা ভাঙ্গা, ফুটপাত নষ্ট। অথচ তুমি একা হাঁটতে চাও। এদিকে তোমার নানা বাড়ির অবস্থা ভালো না। বাসার বেশির ভাগ লোক অসুস্থ। ডেঙ্গু। হাসপাতালে ভরতি। তোমার মা তাদের সেবা করতে করতে ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। রান্না, হাসপাতাল, বাসা, বাসাতে চারটা ছোট বাচ্চা। সবদিক সামলানো চারটেখানি কথা নয়। তোমার মা আবার অসুস্থ হয়ে যায় কিনা! আমি তোমাদের চিন্তায় অস্থির।

প্রিয় ফারাজা,
তোমার বয়স এখন দুই বছর সাত মাস। একদিন তুমি হয়তো আমার এই লেখা গুলো পড়বে। তখন হয়তো আমি থাকবো না। তোমাকে আমার অনেক কথা বলার আছে। যদি সময় বেশি না পাই, তাই কিছু কিছু কথা বলে রাখতে চাই। যাইহোক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজন লেখক আছে। দারুন লেখক। তার সমস্ত লেখা গুলো তুমি পড়বে। মন দিয়ে পড়বে। এই লেখকের একটা জনপ্রিয় বই হচ্ছে 'পথের পাঁচালী'। কিন্তু পথের পাঁচালী থেকেও আমার বেশি ভালো লেগেছে 'তালনবমী' গল্পটা। এই গল্পটা নিয়ে একটা সিনেমাও হয়েছে। এই লেখকের 'আরণ্যক' নামে একটা উপন্যাস আছে। সেটাও অবশ্যই পড়বে। চমৎকার উপন্যাস। যে কোনো লেখককের লেখা পড়ার আগে তার জীবনীটা আগে পড়ে নিবে। তাহলে লেখকের বই গুলো পড়ে বেশি আনন্দ পাবে। পড়তে হবে, প্রচুর পড়তে হবে। প্রতিদিন পড়তে হবে। পড়লেই জানতে পারবে। বুঝতে পারবে। পড়া এবং জানাতে অনেক আনন্দ আছে।

ফারাজা তাবাসসসুম,
পৃথিবীর কেউই সম্পূর্ন ধর্মমুক্ত নয়, যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তার এই বিশ্বাসও একটা ধর্ম। ফিজিক্স অনুযায়ী প্রতিটা মৌলের যেমন বিশেষ ধর্ম আছে, তেমনি প্রতিটা মানুষেরই ধর্ম আছে। ধর্মহীন মানুষদেরও একটা ধর্ম আছে। সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে প্রতিটা মানুষের মধ্যেই একটা বিশ্বাস অবশ্যই থাকে। ধর্ম নিয়ে তুমি কারো সাথে তর্কে যাবে না। কোনো প্রকার আলোচনা করবে না। যে যার ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে থাকুক। তুমি শুধু ন্যায়ের পথে থাকবে, সত্যের পথে থাকবে। যা ভালো ও সুন্দর তাই করবে। সব সময় নিজের বিবেকটাকে জাগ্রত রাখতে পারলে আর কোনো কিচ্ছুর প্রয়োজন নেই। কেউ সারাক্ষণ ধর্মকর্ম করলেই যে সে ভালো মানুষ তা কিন্তু নয়, আবার কেউ ধর্মকর্ম না করলেই যে খারাপ মানুষ তাও কিন্তু নয়। মূলত অতি ধার্মিকদের সমস্যা বেশি, তাদের মধ্যে ঘাপলা বেশি। ধর্ম নিয়ে যুগে যুগে কম ক্যাচাল হয় নাই। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাই ধর্ম বিষয়ে সর্তক থাকবে।

প্রিয় কন্যা আমার,
তুমি দেশকে ভালোবাসবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। ভালোবাসা মানে ভালো করা। ভালো কিছু করতে হবে। শুধু মাত্র একজন মানুষকে ভালোবেসে জীবন পার করে দিও না। তোমাকে ভাবতে হবে পুরো বিশ্বের কথা। মাটি, নদী, প্রকৃতি, ভোরের আকাশ, জোছনা, গাছপালা এগুলো গভীর ভাবে দেখবে, অনুধাবন করবে। মহাকাশ ও সমুদ্রের গভীরে যে রহস্য আছে, সেই রহস্যের অনুসন্ধান করো। ভাবো, ভাবো, চিন্তা করো। সময় অপচয় করো না। সময় খুব মূল্যবান। সব কিছু জানতে ও বুঝতে হলে তোমাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জ্ঞান মানুষকে মহৎ করে, সুন্দর করে, মানবিক করে তোলে। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর তো আর কিছু নেই। কাজ করো, পরিশ্রম করো। টাকা আয় করো। টাকা খরচ করো। সব কিছুর আগে নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলো। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো, নিজের অবস্থান শক্ত করো। নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করো। যা করার তোমাকেই করতে হবে। কারো আশায় বসে থেকো না। সবাই তোমাকে সাহায্যের ভান করবে, সেই আসল সাহায্যটা করবে না। কাজেই কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাও।

প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম (ফাইহা),
আমার প্রিয় একটা বইয়ের কথা বলে আজকের লেখা শেষ করবো। বিভূতিভূষণের 'অশনি সংকেত'। এই বইয়ে একটা চরিত্র আছে নাম মতি। বইয়ের কাহিনী এই রকমঃ ১৯৪৩-৪৪ সালের গ্রামীণ ভারতবর্ষ। শুরু হলো ভয়াবহ খাদ্যসংকট। একমুঠো চালের সন্ধানে মানুষজনের হাহাকার। ভাতের অভাবে মতির মৃত্যু হয়। অনাহারের আগুনে ছাই হয়ে উড়ে যাওয়ার লক্ষ মানুষের জন্য বিনাশের অশনি সংকেত। ক্ষুধা মানুষকে দিয়ে কি করাতে পারে? কোথায় নামাতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর কোনো দার্শনিক বা ধনীরা দিতে পারবে না। জানতে হলে প্রশ্নটা কতে হবে কোন ক্ষুধার্তকে কিংবা অশনি সংকেত উপন্যাসটি পড়লে আমরা সেই নিষ্ঠুর সত্যটা মানসপটে চাক্ষুস দেখতে পাবো। শুধু দুটো গরম ভাতের জন্য কাপালীদের ছোট বউ যখন নিজের শরীর অন্য পুরুষের কাছে বিলিয়ে আসে তখন জানা যায় ক্ষুধার প্রকৃত সংজ্ঞা। তুমি সুযোগ পেলেই ক্ষুধার্থ মানুষকে খাওয়াবে। কাউকে খাওয়াতে কৃপণতা করবে না কখনও। একজন ক্ষুধার্থ মানুষ পেট ভর আরাম করে খাচ্ছে, এটা খুবই সুন্দর একটা দৃশ্য।

প্রিয় কন্যা প্রতিমুহুর্তে দেশে কত কি ঘটে যাচ্ছে!
আমেরিকা চাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়। পোশাক শ্রমিকরা চাচ্ছে তাদের সর্বনিম্ম মুজুরী হোক ২৫ হাজার টাকা। দশ টাকার টিকিট কেটে আমাদের প্রধানমন্ত্রী চোখ পরীক্ষা করালেন। এবার ঈদের আগে ও পরে প্রায় তিনশ' মানুষ সড়ক দূর্ঘনায় মারা গেছে। ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তাঁরা আজকাল মানুষকে ছুরি দিয়ে আহত করছে। হজ্ব করে লোকজন দেশে ফিরতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষ হজ্ব করে দেশে ফিরে এসেছে। এবার হজ্বে ১০৪ জন বাঙ্গালী মারা গেছে। এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাহেব বলছেন, পুতিন হেরে গেছে। ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা পাঠিয়েছে আমেরিকা। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। শামীম ওসমান আমেরিকা গেছেন। সেখানে উনাকে বাঙ্গালীরা ভোট চোর বলেছেন। উনি গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথে ঝগড়া করেছেন। ছয় মাসে ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ২৮৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দেশের নদী গুলোতে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। চারিদিকে কতশত খবর!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: একেক জনের চাওয়া একেক রকম ।

সরকার যা চাচছে , বিরোধীদল চাচছে তার বিপরীত।
আমেরিকা যা চাচছে, চীন-রাশিয়া চাচছে তার বিপরীত।
ছিনতাইকারী যা চাচছে, ভূক্তভোগীরা চাচছে তার বিপরীত।

এদিকে রাজীভ নুর ভাই চাচছেন আদরের কন্যারা যেন ভাল মানুষ হয়। আমারও চাওয়া ভাইয়ের কন্যারা যেন ভাল মানুষ হয়।

এখন প্রশ্ন হলো কন্যারা কি চাচছে :P এই ব্যক্তি স্বাধীনতার যুগে।
কারন - ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল বিষয়ই হলো - বাবা মা হলেই/বলেই সন্তানদের উপর কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবেনা। জীবন তাদের ,চয়েজও তাদের।

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালোটা অবশ্যই চাপিয়ে দিবো। দেওয়াই উচিত।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৪

কামাল১৮ বলেছেন: আপনার মেয়ে বিভূতিভূষণ পড়বে কিনা জানি না,আমার ছোট মেয়ে তার নাম শুনেছে কিনা সন্দেহ।দুনিয়া অনেক পাল্টে গেছে।তারা বর্তমানে বাস করে।মানবিক হয় কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সৃষ্টিতত্ত্ব আবার কি জিনিস।পৃথিবীতে কোন বস্তুই সৃষ্টি হয় নাই।যা হয়েছে সেটা হলো পরিবর্তন।এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে পরিবর্তন।কেউ কোন বস্তু সৃষ্টি যেমন করতে পারেনা কোন বস্তু ধ্বংসও করতে পারে না।কেবল পারে পরিবর্তন করতে।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স কি বলে জানি না।সেই বিষয়ে ভালো জ্ঞান নাই।

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: বই পড়া জরুরী। খুব জরুরী।
আপনি বিজ্ঞানের ভাষায় কথা বললে হবে না। বিজ্ঞান অনেক কিছুই পারে নাই। কোনদিন পারবেও না। বিজ্ঞান মূলত অন্ধকারে লাঠি। কিন্তু আলো হতে পারে নাই।

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সুত্র অনুযায়ীই দুনিয়া চলছে।

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬

করুণাধারা বলেছেন: প্রিয় কন্যা ভালো থাকুক। সবসময়।

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনিও ভালো থাকুন।

৪| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:১৭

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনার কন্যাদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক অভিজ্ঞতা ভিত্তিক এই লেখাগুলো ব্লগের পাশাপাশি ডায়েরিতেও লিখে রাখুন।

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ডায়েরী নাই।
সামুতেই আছে। থাক। হারাবে না।

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:১৮

ঢাবিয়ান বলেছেন: বাহ বেশ হয়ে গেছে দেখছি আপনার কন্যা। শুভকামন রইল।

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:৪৩

একলব্য২১ বলেছেন: আমি আপনার লেখা আমি প্রায়শই অফলাইনে পড়ি। যদিও কমেন্ট করা হয়। আপনার লেখার স্টাইল আমার কাছে খুব ভাল লাগে। আর আপনার সন্তানের প্রতি আপনার এই প্রগাঢ় ভালবাসার প্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করে।

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

৭| ১৬ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮

শেরজা তপন বলেছেন: মেয়েরা এখনো আসে নাই!!!

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ২৫ তারিখে আসবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.