নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ আমার তোলা।
আজকের দিনটা সুন্দর।
চারিদিকে স্বচ্ছ ঝরঝরে রোদ। আজ শুক্রবার। আমি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছি। সকালে হোটেলে নাস্তা করেছি। রুটি আর কলিজা ভূনা। রান্না ভালো ছিলো। সবার শেষে এক কাপ চা। পেট ভরা থাকলে আমার মেজাজ ভালো থাকে। আমি মিরপুর চলে এলাম। উদ্দ্যেশ্য এখানে জুম্মার নামাজ পড়বো। যে মসজিদে নামাজ পড়বো সেই মসজিদে খুতবা/বয়ান করেন- জনাব ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী। জিহাদী সাহেবের বেশ নাম ডাক শুনেছি। গত সপ্তাহে এখানে নামাজ পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু জিহাদী সাহেবকে পাইনি। সম্ভবত উনি ক্ষেপে গিয়েছিলেন। হয়তো কোথাও উনার মাহফিল ছিলো। এজন্য এ সপ্তাহে আবার এসেছি। আজ তার বয়ান শুনেই যাবো। উনার ঘটনা কি? উনি কি বলতে চান? কেন বলতে চান? অবশ্যই আমাকে জানতে হবে। খুৎবা বা বয়ান শোনার জন্য আমি প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে ঘুর ঘুর করি। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। একটা বিষয় আমার ভালো লাগে, বেশির ভাগ মসজিদ চলমান সমস্যা গুলো নিয়ে খুৎবায় আলোচনা করেন। যদিও সেই আলোচনায় হুজুরদের কোনো লজিক থাকে না। হুজুররা ভুলভাল বকেন।
বারোটার দিকে আমি মিরপুর দশ নম্বর বেনারসি পল্লীর দিকে ছিলাম।
রাব্বানী হোটেলে থেকে চা খাচ্ছিলাম। দাম বেশি হলেও ওদের চা ভালো। চা শেষ করেই আমি নামাজে যাবো। নইলে জিহাদী হুজুরের বয়ান মিস হয়ে যাবে। রাব্বানী হোটেলে দেখা হয়ে গেলো মীরা আপুর সাথে। মীরা আপু আগে আমাদের এলাকায় থাকতেন। আমার সাথে তার খুবই সুসম্পর্ক। বহুদিন পর দেখা আজ। মীরা আপুর সাথে গল্প করতে করতে আমার দেরী হয়ে গেলো। দৌড়ে গেলাম মসজিদে। তখন ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুরের বয়ান শেষের দিকে। হুজুর গলা ফাটাচ্ছেন। মসজিদে প্রচণ্ড ভিড়। আমি ঠেলেঠুলে একদম হুজুরের সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। পাঁচজন ইউটিবার জিহাদী হুজুরের খুৎবা ভিডিও করছেন। জিহাদী হুজুর আজ প্রচুর ক্ষেপে গেছেন। উনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। নামাজিরা জিহাদী হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছেন। নামাজিদের চোখে মুখে বিস্ময়। রাগ, কষ্ট। তারা পারলে এখনই ইজরাইলকে তছনছ করে দিতো।
শেষের পাচ মিনিট আমি হুজুরের বয়ান শুনতে পেলাম।
ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী বললেন, ইহুদিরা বেজন্মা। বদমাশ। কুলাঙ্গার। আমাদের নবীজি ইহুদীদের পছন্দ করতেন না। আল্লাহ ইহুদীদের পছন্দ করেন না। ইহুদীরা পৃথিবীটাকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জিহাদী হুজুর ফিলিস্তিন বলে একটাব লম্বা টান দিলেন। হুজুর কান্না করছেন। পর মুহুর্তেই কান্না মুছে গেলো হুজুরের। হুজুর ইজরাইলের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দিলেন। শেষে একটা স্পেশাল দোয়া করা হলো ফিলিস্তিন মা, বাবা, ভাইবোনদের জন্য। দোয়ায় হুজুর অনেক কান্না করলেন। আল্লাহকে বললেন ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে এবং ইজরাইলকে ধ্বংস করে দিতে। ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুর কাঁদতে কাঁদতে লম্বা টান দিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব আহাজারি করলেন। অনেক নামাজি জিহাদী হুজুরের সাথে কান্না করলেন।
জুম্মার নামাজ শুরু হবার পাচ মিনিট আগে হুজুর বললেন-
ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে। ওদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য আপনাদের দান করতে হবে। প্রচুর দান করতে হবে। নবীজি দান করতে বলেছেন। আল্লাহপাক দান করতে বলেছেন। এই মসজিদের জন্য দান করলে সেই দানের দোয়া ফিলিস্তিনি ভাই বোনেরা পেয়ে যাবে। আপনার নিয়তটাই আসল। আজ সবার অনেক দান করতে হবে। হুজুর চিৎকার দিয়ে বললেন, দান করুন আজ ফিলিস্তিনি ভাইবোদের জন্য। জিহাদী হুজুর কান্না করছেন। বলছেন, কত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আহত হচ্ছে। নিহত হচ্ছে।
বলেই হুজুর কাদতে কাদতে একটা লম্বা টান দিলেন 'আল্লাহ গো' বলে। পর মুহুর্তেই হুজুর কান্না থামিয়ে বললেন, কে দিবেন পাচ হাজার টাকা? কে? হাত তুলুন। এদিকে নামাজিরা অনেকেই ফিলিস্তিনিদের জন্য কান্না করছেন। দুইজন হাত তুললেন। তারা পাচ হাজার টাকা দিবে। এরপর হুজুর বললেন, কে কে দিবেন দুই হাজার টাকা। কেউই হাত তুলছে না। তখন ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুর কান্না করতে করতে বললেন, ছোট ছোট নিঃষ্পাপ শিশুরা মারা যাচ্ছে গো মাবুদ...। তখন ৫/৭ জন নামাজি হাত তুললেন। তারা দুই হাজার করে দিবে। জিহাদী হুজুর চিৎকার করে বললেন, আল্লাহ এই দানের উছিলায় তাদের তুমি জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিও গো মাবুদ।
ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী টাকা তোলা শেষে বললেন,
আমার মাদ্রাসার অবস্থা ভালো না। আমি আর একা কত চালাবো? বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে আমার মাদ্রাসা চালাচ্ছি। এখন আপনাদের সাহায্য দরকার। কৃপণতা করবেন না। মন খুলে আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। প্রচুর দান উঠছে। ব্যবসা জমে উঠেছে। এরপর উক্ত মসজিদের ইমাম বললেন, এক ভাই হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে। তাকে আপনারা সাহায্য করবেন। ইমাম বললেন, গতকাল একজন মারা গেছেন। আমি খবর পেয়ে তাকে বিকাশে তিন হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম। অথচ যিনি মারা গেছেন তার ছেলেমেয়েরা লন্ডন আমেরিকা থাকে। দেখুন আমি কত ভাগ্যবান।
মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখি একলোক বলছে- আমিই সেই লোক যে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি। হুজুর আমার কথাই মাইকে বলেছেন। আমার পরিবারের চারজন একসাথে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি। আমাকে দান করুন। সমস্ত নামাজিরা আগ্রহ নিয়ে দান করছেন। হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ায়- নামাজিরা খুব খুশি। সদ্য মুসলমান হওয়া ভাইটির ইনকাম চমৎকার। তার টাকার ব্যাগ ভরে গেছে। উপচে পড়ছে। বিভিন্ন মসজিদে এই ব্যবসা করলে ভাইটি অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ী বাড়ী করে ফেলতে পারবে।
আমি মসজিদ থেকে বের হলাম।
জুতা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কোথায় যে জুতো রেখেছিলাম ভুলে গিয়েছিলাম। যাইহোক, অনেক খোজাখুজির পর জুতো পেয়েছি। মসজিদের বাইরে এসে দেখি জমজমাট অবস্থা। মনে হয় গলির মধ্যে থাকা সমস্ত ভ্যানগাড়ীর সবজি বিক্রেতারা সব এসে মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছে। নামাজ শেষে লোকজন পাগলের মতো সবজি কিনছে। কেউ শশা কিনছে, কেউ আলু, কেউ গাজর। কেউ আপেল-আঙ্গুর। আমি অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে লোকজনের কেনাকটা দেখলাম। হুজুরের বয়ানের চেয়ে মসজিদের কেনাকাটা দেখে বেশি আনন্দ পেলাম। আমার লেখা শেষ। এখন আমি মিরপুর এক নম্বরে যাবো। আমার দাওয়াত আছে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: সমাজে মন্দ মানুষের সংখ্যাই বেশি।
২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৭
সোনাগাজী বলেছেন:
মাদ্রাসা জাতিকে ডোডো উপহার দিয়ে চলেছে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:০২
রাজীব নুর বলেছেন: মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক করলেই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভালো হয়।
৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:২৮
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: অনেক কথা, পড়ে ভালো লাগলো।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ জ্যাক।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:০২
কামাল১৮ বলেছেন: ঢাকার অবস্থা লিখে জানান।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ লিখব।
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৩
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: মিরপুর এক নম্বরে আমি দীর্ঘদিন থেকেছি, ওখানকার কোন এলাকায় দাওয়ার ছিলো বললে বুঝতে পারতাম। ধন্যবাদ।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: শাহ আলী মার্কেট নিশ্চয়ই চিনেন?
ঈদগা মসজিদ নিইশ্চ্যই চিনেন?
এর মাঝে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩১
বাউন্ডেলে বলেছেন: শয়তান বেশির ভাগ মসজিদ দখল করে ফেলেছে।