![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
একটা ঘরে শাহেদ জামালকে বন্ধী করে রাখা হয়েছে!
ঘরের তিন পাশে দেয়াল। একপাশে বড় লোহার দরজা। কোনো জানালা নেই। ঘরে একটা ইদুর মরে পড়ে আছে। বিকট গন্ধ! ইদুরের গায়ে বেশ কয়েকটা মাছি। বন্ধ করে মাছি কিভাবে এলো? শাহেদ এই বন্ধী ঘরে কি করে এলো- সে জানে না। তার মনে আছে, গতকাল সে তার মেসে ঘুমিয়ে ছিলো। রাতে জসিম ভাই চিচিংগা দিয়ে ডিম সিদ্ধ রান্না করেছিলো। একদম বাজে স্বাদ। অখাদ্য। এর আগে কেউ চিচিংগা দিয়ে ডিম খেয়েছে কিনা শাহেদ জামালের জানা নেই। মেসের খাবার ভালো হয় না। শাহেদ একবার তার বন্ধু রাজীব নূরের বাসায় চিচিংগা খেয়েছিলো। সুরভি ভাবী চিচিঙ্গা ভাজি করেছিলেন। খেতে ভালো হয়েছিলো। আর এই জসিম শালা কি রান্না করেছে! এরে একটা থাপ্পড় দিতে পারলে ভালো লাগতো।
২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেছে- শাহেদ বন্ধী।
ঘর থেকে বের হবার জন্য যা যা করার প্রয়োজন। তার সবই শাহেদ করেছে। চিৎকার করেছে হেল্প হেল্প বলে। লোহার দরজায় ধাম ধাম করে লাথথি মেরেছে। কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। শাহেদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঘরে বাইরে থেকে কোনো আলো বাতাস আসতে পারছে না। অক্সিজেন কমে আসছে। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় কষ্ট মনে হয় ক্ষুধার কষ্ট। যে লোকের এক ঘন্টা পর ফাসি হবে। সে-ও ক্ষুধা পেলে খেয়ে নেয়। শাহেদ ভেবে পাচ্ছে না ঈশ্বর তাকে এই বিপদে ফেললো কেন? সেতো তেমন কোনো পাপ করেনি। অনেকদিন আগে ঠিক এরকম একটা মুভি দেখেছিলো শাহেদ। নায়ককে ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়। নায়ক জানে না কি অপরাধে তাকে ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়েছে। মুভিতে নায়ক ঘর থেকে বের হতে পেরেছিলো। শাহেদ কি পারবে ঘর থেকে বের হতে? পারবে?
এরকম বিপদে শাহেদ আগেও পড়েছে।
আল্লাহপাক তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। বন্ধু রাজীব তাকে শিখিয়ে দিয়েছে- বিপদে পড়লে কোন সূরা পড়তে হবে। স্বয়ং নবীজি বিপদে পড়লেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। নবীজি শিখিয়ে দিয়েছেন, বিপদে পড়লে এই দোয়া পড়িবে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়া ইয়ামুতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। শাহেদ জামালের দোয়ায় আস্থা কম। শাহেদ জানে দোয়ায় কাজ হয় না। দোয়ায় কাজ হলে সব ছেলেমেয়ে তাদের বাবা মায়ের দোয়ায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর পাইলট হয়ে যেতো। শাহেদ নিজের চোখে দেখেছে- একলোক এমপি নির্বাচন করবে। সে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য- একসাথে একশ মাদ্রাসার ছেলেদের দিয়ে দোয়া করিয়েছেন- যেন নির্বাচনে জয়ী হোন। কিন্তু আফসোস সে নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন নাই। মাদ্রাসার তালিমুল আলেমরা দোয়া পড়ে তাকে পাশ করাতে পারেন নাই। শুধু শুধু ত্রিশ লাখ টাকা খরচ হয়।
শাহেদ জামাল নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।
সে ঘরের এক কোনায় প্রায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে। মরা ইদুরে গায়ে পোকা ধরেছে। গন্ধ আরো বিকট হয়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রনায় শাহেদের ইচ্ছা করছে ইঁদুরটা খেয়ে নিতে। শাহেদ একটা মুভি দেখেছিলো- একলোক তার পরিবার নিয়ে নৌকা ভ্রমনে বের হয়েছে। হঠাত প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। সমুদ্র খুব ভয়ংকর। যাইহোক, পরিবারটি কোনো রকমে বেঁচে যায়। কিন্তু তাদের নৌকা ভাসতে ভাসতে অজানা কোথাও চলে যায়। টানা এক মাস তারা ছট নৌকায় আটকা পরে যায়। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে কাচা মাছ খেয়েছে। একদিন লোকটা তার স্ত্রীকে বলে আমি আর কাচা মাছ খাবো না। আমার অন্য কিছু লাগবে। এখন আমি মাংস খাবো। স্ত্রী বলে এখানে সমুদ্রে মাংস কোথায় পাবে? লোকটা বলে আমি আমার ছেলেকে খাবো। আসলে লোকটা সমুদ্র থেকে অসহায় হয়ে পড়েছিলো। দীর্ঘদিন যারা সমুদ্রে থাকে তাদের অনেক অদ্ভুত সমস্যা দেখা দেয়। যাইহোক, আজকে না হয় ইঁদুর খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করলো শাহেদ। আগামীকাল কি খাবে? শাহেদ জামালের হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে- তার মা তাকে খেতে ডাকছে। শাহেদ টেবিলে বসে দেখে মা অনেক রকমের খাবার রান্না করেছেন। ইলিশ মাছের ডিম ভাজাও আছে। মা বলল, ভাত খাওয়া শেষে আম দুধ দিয়ে ভাত খাবি। শাহেদ বলছে, আম দুধ ভাত আমার ভালো লাগে না। আমাকে শুধু আম দিও।
মৃত্যুর আগে হ্যালুসিনেশন বাস্তবকেও হার মানায়।
শাহেদ জামালের হ্যালুসিনেশন ক্ষনে ক্ষনে বদলে যাচ্ছে। অতীতে যা ঘটেছে তা-ই কি ফিরে আসছে? আসে? এই মুহুর্তে শাহেদ আর নীলা যাচ্ছে কক্সবাজার। কুমিল্লাতে তাদের বাস থেমেছে। হোটেল তাজমহল। তাজমহলের খাবার ভালো। কুড়ি মিনিটের বিরতি। রাত একটা। নীলা-শাহেদ দুজনেরই ক্ষুধা পেয়েছে। তারা রাতে খায়নি। ইলিশ মাছ দিয়ে দুজনে ভাত খেলো। শেষে দই মিষ্টি খেলো। খাওয়া শেষে মিষতি খাওয়া সুন্নত। আমাদের নবীজি খাওয়া শেষ করে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতেন। একবার নবীজি খাওয়ার পর দেখেন ঘরে মিষ্টি নাই। তখন নবীজি বলেছেন, আমায় খেজুর দাও। শাহেদ জামালের বেশ আনন্দ হচ্ছে। নীলা তার আশেপাশে থাকলেই তার আনন্দ লাগে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে- লাইফ ইজ বিউটিফুল। বাস হর্ন দিয়েছে। সবাই দৌড়ে বাসে উঠলো। নীলা শাহেদের কাধে মাথা রাখলো। শাহেদের বলতে ইচ্ছা করলো- সবাই আমার দিকে চেয়ে দেখুন। এর নাম নীলা। আমার প্রেমিকা। আমি একজন সুখী মানুষ। আমি মিশরের সম্রাট।
২১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার অশেষ দয়া।
২| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১৩
কামাল১৮ বলেছেন: আপনি হলেন ব্লগের সব্যসাচী
২২ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাদের ভালোবাসার ফল।
৩| ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮
সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: পড়লাম
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম।