![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
গ্রামের নাম কলসিন্দুর।
অতি দরিদ্র গ্রাম। ইহা ময়মনসিংহে। এই গ্রামে পাহাড় আছে। নদীও আছে। স্যরি নদী না, নদ হবে। নেতাই নদ। সঠিক উচ্চারণ হবে নিতাই নদ। কিন্তু গ্রামের লোকজন বলে নেতাই। এই নদ ভারতের গাঁ ঘেষে গিয়েছে। প্রতি বছর এই নদের পানি বেড়ে যায়। গ্রাম ডুবে যায়। গরু, হাস, মূরগী মারা যায়। প্রতি বছর একই ঘটনা। কোনো সরকারই নেতাই নদে বাঁধ দেয়নি। কলসিন্দুর গ্রামের মানুষজন এই নদের নাম দিয়েছে- কষ্টের নদী। নেতাই নদে মাঝে মাঝে লাকড়ি ভেসে আছে। অনেক ছেলেমেয়ে এই লাকড়ি সংগ্রহ করে। লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিবছর দুই একজন মারা যায়। কলসিন্দুর গ্রামের মানুষ উন্নয়ন কি সেটাই জানে না। এই গ্রামের মানুষ অতি নিরীহ। সহজ সরল তাদের জীবনযাপন। একটা প্রাইমারী স্কুল আছে। একটা মসজিদ আছে। অতি দরিদ্র মসজিদ।
অনেক বছর আগের গল্প।
তখন আমি চ্যাংড়া ছিলাম। বন্ধুর সাথে তার গ্রামের বাড়ি কলসিন্দুর গিয়েছি। এখনকার মতো আধুনিক গ্রাম নয়। একদম অজপাড়া গাঁ। সেই গ্রামে যেতে আমাকে ভীষন কষ্ট করতে হয়েছে। খাল-বিল, নদী পার হতে হয়েছে। হাঁটতে হয়েছে অনেক পথ। সেই চলার পথ মোটেও মসৃন ছিলো না। গজব অবস্থা। প্রচুর কাঁদা। জুতো আটকে যায় মাটির মধ্যে। শেষে জুতো খুলে হাতে নিয়ে হাটতে হয়েছে। বেশ কয়েকটা বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়েছে। অবাক ব্যাপার এই গ্রামে একটাও পাকা পথ নেই। আরো অবাক ব্যাপার মহিষের গাড়ি আছে। বিশাল দুই মহিষ হেলেদুলে এগিয়ে যায় কাঁদামাটির পথ দিয়ে। এই গ্রামে সবচেয়ে দুঃখজনক দুটা। এক, বিদ্যুৎ নেই। এবং দুই, পাকা টয়লেট নেই। সন্ধ্যার পর কুপি এবং হারিকেন একমাত্র ভরসা। গ্রামের মানুষ এসব মেনে নিয়েছে। যেন এটাই স্বাভাবিক। অনেক বাড়িতে চাপকল পর্যন্ত নেই। খাবার পানি আনতে হয়, যে বাড়িতে চাপকল আছে, সে বাড়ি থেকে।
১৯৯৭ সালের কথা।
বন্ধু হরিপ্রসাদ আমাকে প্রায় জোর করে তাদের গ্রামে নিয়ে গেলো। হরিপ্রসাদরা যে এত দরিদ্র সেটা আমি বুঝতে পারিনি। মাটির ঘর। হরির বাবা একজন কৃষক। নিজেদের জমি নেই। হরিদের বাড়িতে কোথাও খালি জায়গা নেই। হরির বাবা সব জায়গায় নানান রকম গাছটাছ লাগিয়ে রেখেছেন। এই গ্রামে আমি আসার পর থেকেই ভয়ে ভয়ে আছি। কলসিন্দুর গ্রামে প্রচুর সাপ। আমি সাপ ভয় পাই। এই গ্রামে এসে আমার শুধু কান্না পাচ্ছে। হরিদের বাড়িতে ভালো টয়লেট নেই। চার দিকে বাঁশ এবং ছালা দিয়ে প্যাচানো টয়লেট। চাপকল নেই। একটা ছোট ময়লা পুকুর আছে, সেখান বদনা ভরে পানি নিয়ে যেতে হয় টয়লেটে। ভয়াবহ অবস্থা। সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। ব্যাঙ্গের ডাক। মাঝে মাঝে শিয়াল ডাকে, এমনকি পেঁচাও ডাকে- সব মিলিয়ে ভৌতিক অবস্থা।
আমি জমিদারের ছেলে না হলেও দারিদ্রতা আমার পছন্দ নয়।
জন্মের পর থেকে দারিদ্রতা আমাকে পায়নি। ভালো খেয়েছি, ভালো পরেছি, ভালো থেকেছি। চাওয়ার আগেই সব কিছু পেয়ে গেছি। কলসিন্দুর গ্রামে এসে দারিদ্রতা দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। কোনো রকমে একটা দিন পার করলাম। হরিপ্রসাদকে বললাম, চলো ঢাকা ফিরি। হরি বলল, কমপক্ষে সাত দিন থাকিতে হবে। আমার ইচ্ছা করলো হরির মুখে একটা ঘুসি মারি। হরিকে মিথ্যা করে বুঝালাম- আমার জরুরী কাজ আছে। তাছাড়া আমার ছোট চাচার বিয়ে। হরি বলল, ঠিক আছে। আগামীকাল আমরা ঢাকা যাবো। হরির মুখে এই কথা শুনে আমি খুবই খুশি হলাম। হরির বাবা এবং মায়ের মন খারাপ। আমি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবো বলে। ভালো মন্দ কিছুই খাওয়াতে পারলেন না। কিন্তু আজ আমাকে ভালোমন্দ খাওয়াবে। কচু দিয়ে রুই মাছ।
কচু আমি কোনো দিন খাইনি।
মাকে কোনোদিন কচু রান্না করতে দেখি নাই। আমাকে নিয়েই হরি ও হরির বাবা পাশের বাড়ি গেলো। সেই বাড়ির পেছনে জংলা মতো জায়গায় বিশাল সাইজের কচু হয়ে আছে। সেই কচু কেটে কাঁধে করে নিয়ে আসা হলো। কমপক্ষে ২৫ কেজি তো হবেই। হরির বাবা আমাকে কচুর গুনাগুন বর্ণনা করলেন। হরিদের রান্না ঘরের অবস্থা করুন। মাথার উপরে ছাদ নেই। মাটির চুলা। লাকড়ি দিয়ে রান্না হয়। হরির দরিদ্র বাবা একটা দেশী রুম মাছ এনেছেন। মাছটার ওজন দেড় কেজি। হরির বাবা ধূতি পরেই নিজ হাতে মাছ কাটলেন। আমরা সবাই বসে তার মাছ কাটা দেখলাম। বড় মাছ দেখে হরির ছোট বোন খুব খুশি। সে খুশিতে নাচছে। হরির মা কচু গুলো কাটলেন। শুরু হলো রান্না। তরকারিতে পাঁচফোড়ন দেওয়া হলো, আস্তো জিরা দেওয়া হলো। এরকম রান্না আমার মোটেও পছন্দ নয়। এই কথা তো আর মুখের উপর বলা যায় না।
আমাদের দেশের মানুষ গুলো এতো দরিদ্র কেন?
দুপুরে উঠানে খেতে বসলাম। উঠানে দুটা কুকুর ঘুরঘুর করছে। বিড়াল আছে তিন চারটা। এক পাতিল ঝোল দিয়ে কচু দিয়ে রুই মাছ রান্না করা হয়েছে। তরকারির চেহারা দেখে আমার ইচ্ছা করছে দৌড়ে পালিয়ে যাই। আসলে অনেক খাবার আমি খাই না। এই কথাটা আমি হরির বাবা মাকে বুঝাতে পারবো না। আমাকে একগাদা ভাত দেওয়া হলো। মোটা মোটা চালের ভাত। ভাতের উপর একগাদা তরকারি। আমি ছাড়া সবার চোখ মুখ খুশিতে ঝকমক করছে। আমি ছাড়া সবাই আঙ্গুল চেটেপুটে গেলো। কলসিন্দুর গ্রামের গল্প এখানেই শেষ। এখন আমি জানি না এই গ্রাম কতটা সুন্দর হয়েছে। কাচা রাস্তা গুলো পাকা হয়েছে? বিদ্যুৎ এসেছে? ইন্টারনেট আছে? দারিদ্রতা কমেছে? হরির সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। শুনেছি সে এখন নেপাল থাকে। আমার ইচ্ছা কলসিন্দুর গ্রামে আমি আরেকবার যাবো। হরির পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে কচু দিয়ে রুই মাছ খাবো।
২৬ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: জানি না বর্তমান অবস্থা কি।
এখন নিশ্চয়ই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
২| ২৬ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯
ফেনিক্স বলেছেন:
পুর্ব পাকিস্তানের সময় শতকরা ৮০ ভাগ গ্রামের অবস্হা এই রকমই ছিলো
২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: এখন গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
৩| ২৬ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: দারূন অভিজ্ঞতা লিখেছেন।
২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: গরীবের অভিজ্ঞতার কোনো দাম নেই।
৪| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১২
কামাল১৮ বলেছেন: ছবিটা খুব সুন্দর।ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো।এমনই একটা নৌকা নিয়ে ঠিক এমনি ধান খেতের পাশে চাউ পাততে যেতাম মুন্সিগঞ্জের কোন এক গ্রামে।তখন প্রতি বছর বিক্রমপুর বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যেতো।
২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রীনগর গিয়েছেন? ভাগ্যকুল, তিন দোকান, বালাসুর, কামার গাও??
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪
আহলান বলেছেন: চরম বাস্তবতা .. উন্নয়নের জোয়ারে কি ভাসেনি কলসুন্দর গ্রাম .. ? বলেন কি?