![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
গল্পটা শুনেছিলাম আমার দাদার কাছ থেকে।
আমার জন্মের আগের গল্প। আমাদের গ্রাম বিক্রমপুর। শ্রীনগর। বিক্রমপুরের আড়িয়াল বিল তো সারা বাংলাদেশের মানুষই চিনেন। এই বিলের মাছ দারুন সুস্বাদু। একসময় এই বিল থেকেই আমাদের গ্রামের বাড়িতে মাছ যেতো। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে এই আড়িয়াল বিল। বিরাট বিল। বর্ষাকালে এই বিল দেখলে মনে হবে বিল নয় যেন নদী। যাইহোক, স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আব্বার সাথে গ্রামে গিয়েছি। বিকেলে পদ্মা নদীর পাড়ে দাদার সাথে হাঁটতে বের হই। পদ্মার নদীর পাড়ে আমরা বসি। ভাগ্যকুল থেকে মিষ্টি আসে। সত্য কথা বলি- মিষ্টির লোভে দাদার সাথে হাঁটতে বের হই। দারুন মিষ্টি। সেও স্বাদ। মিষ্টি খেয়ে হাত, জামা কাপড়ে মাখামাখি অবস্থা। দাদাকে নদীর পাড়ে দেখে অনেকেই আসেন। দাদার মুখে গল্প শুনেন। কিন্তু দাদা অন্ধ। কাউকে চোখে দেখতে পান না। যেহেতু দাদা গ্রামের পুরোনো লোক। দাদা গল্প বলতে জানতেন। মুগ্ধ হয়ে লোকজন দাদার গল্প শুনেন। গল্প বলতে বলতে দাদা হঠাত থেমে যান। কখনো নড়েচড়ে বসেন। কখনো দর্শকদের মাঝে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। কখনও দাদার গলা উঠা নামা করে। কখনো দাদা বিষন্ন হয়ে যান। শুধু দাদা গল্প বলেন না, সেই সাথে দাদার চোখ, মুখ ও হাতও যেন গল্প বলে।
সেদিন দাদা গল্প বলছেন এক চোর ও পুলিশের গল্প।
যে পুলিশ সে-ই চোর, যে চোর সে-ই পুলিশ। ঘটনা খুলে বলি, বড়ই মজার ঘটনা। শ্রীনগরে মোট গ্রামের সংখ্যা ১৪৭টি। দাদা যে গ্রামের গল্প বলেছিলেন, সেই গ্রামের নাম তন্তর। সুন্দর গ্রাম। এই গ্রামে কোনো দরিদ্র মানুষ ছিলো না। সবারই জমিজমা ছিলো। নিজস্ব পুকুর ছিলো। গ্রামের মানুষ গুলো সহজ সরল ছিলো। ছিলো মানবিক। এই গ্রামের এক ছেলে হঠাত একদিন পুলিশ হয়ে যায়। এমনকি তার পোষ্টিং হয়ে নিজ গ্রামে। ছেলেটার নাম গিরিষ। হিন্দু নাম হলেও ছেলেটা মুসলমান। বয়স ২৫ বছর। শ্রীনগর এলাকাটা বেশ জমজমাট। থানাটাও বেশ জমজমাট। এই গ্রামের সবাই মাওয়া ঘাট থেকে মাছ কিনতে যায়। সপ্তাহে দুই দিন বাজারে গরু জবো হয়। এই গ্রামে কোনো সেলুন নেই। একজন নাপিত আছে হরিপদ। সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলের চুল দাড়ি কেটে দেয়। বিনিময়ে টাকা পায় না। চাল ডাল নুন পায়। যাইহোক, তন্তর গ্রামের গিরিষ পুলিশ হয়েছে, অথচ গ্রামের কেউ তাকে দাম দেয় না। বরং তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। গিরিষ ভেবে পায় না তাদের সাহস কত একজন পুলিশকে নিয়ে হাসাহাসি!! এত বড় সাহস। তার ইচ্ছা করে চাবকে পিঠের ছাল তুলে ফেলতে। আহ সে যদি এদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারতো!
গিরিষের মন মেজাজ খারাপ।
তার ভাগ্য এমনই খারাপ যে থানার লোকজনও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। সেদিন থানায় সে বসে আছে। দুপুরের খাওয়া মাত্র শেষ করেছেন। একটু তন্দ্রা এসেছে, এমন সময় বড় স্যার এসে তাকে ধমক দিলো। বললো- গিরিষ সারারাত কি চুরী করো? বাসায় ঘুমানোর সময় পাও না? বড় স্যারের কথা শুনে পাশে থাকা কনস্টেবল ফাতিমা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। গিরিষ মনে মনে ফাতিমাকে মাগী বলে একটা গালি দিলো। তার গ্রামের একমাত্র পুলিশ সে, তবু সে সম্মান পায় না গ্রামের মানুষের কাছে! বেজায় কষ্ট গিরিষের। গিরিষ মন খারাপ করে ঘরের উঠানে বসে থাকে। তার বাবা নেই, মা নেই। আছে শুধু দাদী। দাদী বলে মন খারাপ করিস না। দুঃখ করিস না। একদিন এই গ্রামের মানুষজন তোকে মাথায় নিয়ে নাচবে। এই আমি বিলকিস ভানু বলে রাখলাম। একদিন তন্তর গ্রামের এক ছেলে আটপাড়া গ্রামের এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে আছে। মেয়ের বাবা থানায় গিয়ে নালিশ করে। গ্রামে পুলিশ আসে। গিরিষ তখন দারোগা সাহেবকে বলল, স্যার এটা আমার গ্রাম। এই সমস্যা আমিই মিটিয়ে দেবো। শুধু শুধু আপনি এলেন। দারোগা বলে, চুপ থাক হারামজাদ। তুই কি করবি? যা করার আমি করবো। গ্রামের মানুষ দারোগার কথা শুনে হা হা করে হাসে। গিরিষ প্রচন্ড লজ্জা পেলো। সে অবশ্যই প্রতিশোধ নেবে।
রাতে গিরিষ মাওয়া গেলো।
আজ সে মদ খাবে। তার অনেক কষ্ট। মাওয়া বাজারে বাংলা মদ পাওয়া যায়। মদ খেতে গিয়ে এক বুড়োর সাথে গিরিষের দেখা হয়। বুড়ো গিরিষকে বলে, আমার কাছে টাকা নেই। তুমি কি আমাকে মদ খাওয়াবে? গিরিষ বুড়োকে মদ খাওয়ায়। গিরিষ তার দুঃখের কথা বুড়োকে বলে। বুড়ো সব শুনে বলল, তুমি প্রতিশোধ নাও। গিরিষ বলল, কিভাবে প্রতিশোধ নিবো? বুড়ো বলল তুমি চুরী করো। যারা তোমাকে নিয়ে হাসে তাদের প্রত্যেকের বাসায় তুমি চুরী করো। তাহলে জীবনে তোমার পরিবর্তন আসবে। চুরী করা মানে মারাত্মক টেনশন। প্রতিটা চুরীকে তুমি এডভেঞ্চার হিসেবে দেখবে। কিভাবে চুরী করতে হবে- বুড়ো শিখিয়ে দিলো। বুড়োর কথা গিরিষের মনে ধরলো। গিরিষ রাতের বেলা গ্রামের চেয়ারাম্যানের বাসায় চুরী করতে গেলো। এবং সফল ভাবে সে চুরী করতে পারলো। চেয়ারম্যান সকালবেলা হইচই শুরু করলো! আমার বাড়িতে চুরী? কার এত বড় সাহস! আমাদের গ্রামে তো কখনো চুরী হয় না। আজিব ব্যাপার! পরের দিন গিরিষ চুরী করলো- চৌধুরীদের বাড়িতে। আলমারি খুলে এক লাখ টাকা চুরী করলো। চৌধুরী সাহেব থানায় গেলেন। গ্রামে পুলিশ এলো। কিন্তু পুলিশ চোর ধরতে পারলো না।
গিরিষ একের পর এক চুরী করতে থাকলো।
যারা গিরিষকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে চুরী করা হয়েছে। গ্রামের লোকজন থানায় গিয়ে চিল্লাচিল্লি করেছে। পুলিশ থানায় চেকপোষ্ট বসিয়েছে। তবু চোর ধরা পড়ে না। গ্রামের সব বাড়িতে চুরী করা শেষ। এখন গিরিষ চুরী করবে দারোগা সাহেবের বাড়িতে। এই দারোগা তাকে অপমান করেছে। প্রতিশোধ নেবে, ক্ষমা নাই। রাতে গিরিষ বের হলো- দারোগা সাহেবের বাড়ি গেলো। একজন পুলিশ জানে চোর কিভাবে চুরী করে, কিভাবে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে, কিভাবে আলমারি খুলে। গিরিষ দারোগা সাহেবের বাড়ি গিয়ে অনেক গহনা ও নগদ টাকা চুরী করলো। কিন্তু গিরিষ ধরা খেয়ে গেলো। দারোগা সাহেব ভীষন অবাক হলো! গিরিষ চোর! এতদিন সে-ই গ্রামে চুরী করেছে! দারোগা সাহেব গিরিষকে কঠিন এক থাপ্পড় দিলো। গিরিষ ছিটকে পড়লো। দারোগা রেগে গেলো। বলল, তোমার চাকরি তো যাবেই, এমনকি তোমার জেল হবে। আমি চেষ্টা করলো যেন তুমি ১০ বছরের আগে জেল থেকে বের হতে না পারো। গিরিষ দারোগার পা ধরে মাফ চাইলো। দারোগা বলল, কোনো মাফ নাই।
গিরিষ কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসে।
আগামীকাল তাকে গ্রেফতার করা হবে। তার মান সম্মান সব যাবে। গ্রামের মানুষ তাকে থুথু দেবে। চুরী করা খুবই খারাপ কাজ। এই কাজ সে দিনের পর দিন করেছে। তার অভাব নেই। নিজের বাড়ি আছে। ভালো চাকরি আছে। একঘেয়েমি জীবন থেকে বাঁচার জন্য গিরিষ চুরী করেছে। সে কি এখন পালিয়ে যাবে? গিরিষ রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেলো। নদী পার হয়ে অনেক দূরের এক শহরে চলে গেলো। একটা আবাসিক হোটেলে উঠলো। সে ক্লান্ত। ঘুম দিলো। লম্বা ঘুম দিলো। ঘুম ভাঙল পরের দিন দুপুরে। এবং জানতে পারলো- শ্রীনগর থানার দারোগা ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গিরিষের একমাত্র সাক্ষী দারোগা। সে আত্মহত্যা করেছে! গিরিষ গ্রামে ফিরে আসে। সে মন খারাপের ভাব ধরে আছে। আসলে তার খুবই খুশি লাগছে। তার একমাত্র সাক্ষী মারা গেছে। তার জেল হবে না, তার চাকরি যাবে না। কিন্তু দারোগা আত্মহত্যা করলো কেন? আল্লাহ গিরিষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। নইলে দারোগা হারামজাদা তার মান সম্মান সব শেষ করে দিতো। তাকে কারাগারে পাঠাতো। কিছুদিন পর- দারোগার ময়নাতদন্তে করে জানা গেলো, দারোগা আত্মহত্যা করেনি। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গিরিষ নিজেই অবাক, কে দারোগাকে ফাঁসিতে ঝুলালো?
উপরে এতক্ষন গল্পের সূচনা বলা হলো।
এখন বলব মূল গল্প। কিন্তু আজ বাকি গল্পটুকু বলা সম্ভব নয়। আমার হাতে এখন সময় নাই। আবহাওয়া অফিস বলেছে, আজ সন্ধ্যায় আবার ঝড় তুফান হবে। এখন আকাশ মারাত্মক কালো হয়েছে। শ্রীনগর থানার তন্তর গ্রামের গিরিষের গল্প ও থানার দারোগার মৃত্যুর গল্প আগামীকাল বলব। আমার লেখা অগোছালো এবং এলোমেলো। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমার দাদাজান গল্পটা দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। উপস্থিত শ্রোতারা দাদার মুখে গল্প শুনে অবাক! সেই গল্প আমি অনেকের কাছে করেছি, কেউ মুগ্ধ হয়নি। বরং বিরক্ত হয়েছে। একই গল্প একেক জনের মুখে একেক রকম হয়ে যায়। গল্পের ডালপালা বিস্তার হয়। একসময় মৌলিক গল্প আর থাকে না। সত্য একটা ঘটনা কেমন বদলে যায়! অত্যন্ত দুঃঝজনক। যাইহোক, এই মুহুর্তে পুরো ঢাকা শহর অন্ধকার। আজ সব কিছু ভাসিয়ে নেবে। আজ বাসায় ফিরতে কষ্ট হবে। সব রাস্তায় পানি জমে যাবে। বিকট জ্যাম হবে সমস্ত রাস্তায়। আকাশে মেঘ ডাকছে।
২| ৩১ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:০৭
ফেনিক্স বলেছেন:
আড়িয়াল বিলে মাছ কি এখনো আছে? ওখানে চাষ হয় না?
৩| ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম।
৪| ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৫৮
কামাল১৮ বলেছেন: ৬৯ রে এক বর্ষায় শ্রীনগর গিয়েছিলাম।আমার এক বন্ধু ওখানে স্কুলে শিক্ষকতা করতো।লঞ্চঘাট থেকে নৌকা নিলাম।স্কুলঘর ডুবো ডুবে অবস্থা।ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে আসছে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে।
আমার ব্ন্ধুরা মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষমতা করতো স্বাধীনতার আগে।আমি করতাম কমিউনিস্ট পার্টি।তাদের অনেকেই এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।তিনজন আছে আমেরিকায়।কানাডায় একজনও নাই।
৫| ০১ লা জুন, ২০২৫ রাত ২:১০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আড়িয়ার বিলে বিমান বন্দর হবার কথা ছিল।
এলাকার নেতারা হতে দেয়নি।
হলে আজ দোহার-শ্রীনগরে বিমান উড়তো।
কিছু বেইমান মানুষের কারণে সেটা হলো না।
আফসোস।
৬| ০১ লা জুন, ২০২৫ রাত ২:১১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আর হ্যাঁ। বলতে ভুলে গেছি।
আপনার লেখা খুবই সুন্দর হয়েছে।
গেয়ো যোগী ভিক্ষা পায় না।
গিরিষও পায়নি।
আমিও পাই না!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
নাহল তরকারি বলেছেন: ভালো।