| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজীব নুর
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আমি কিছুদিন একটা বায়িং হাউজে চাকরি করেছিলাম।
সেখানে পরিচয় হয় তারেক নামে একটা ছেলের সাথে। তারেকের সাথে পরিচয় হওয়ার প্রধান কারন তার হাতের লেখা। এবং তার সততা। সৎ মানুষদের আমি সম্মান করি। তারেকের হাতের লেখা এবং সততা দেখে আমি মুগ্ধ! এত সুন্দর করে মানুষ লিখতে পারে! লেখা দেখলে মনে হয়- কম্পিউটার কোম্পজ। আমার আব্বার হাতের লেখা সুন্দর ছিলো। দেখলেই মনে হবে- এই লেখা কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করা। আমার হাতের লেখা পরের দিন আমি নিজেই বুঝি না। যাইহোক, তারেককে বললাম, ভাই আপনার হাতের লেখা অনেক সুন্দর। দশে দশ। তারেক এই অফিসে ছোট একটা পদে চাকরি করে, সেলারি বিশ হাজার টাকারও কম। তারেক পরিশ্রমী ছেলে। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অনার্স করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে।
একসময় তারেক আমার ভক্ত হয়ে গেলো।
আমি যা বলি তাই শোনে। কোনো সমস্যা হলেই আমার সাথে আলোচনা করে। অফিসে আমাকে খাবার গরম করে দেয়। আমাকে চা এনে দেয়। আমার পানির বোতল ভরে দেয়। তারেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছেলে। শুচিবাই আছে। ধুলোবালি দেখলেই মোছামোছি শুরু করে। মুছতেই থাকে। কার ডেক্স সেটা কোনো বিষয় নয়। ময়লা দেখলেই পরিস্কার করতে থাকে। তারেকের কারণে আমাদের অফিস সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সামান্য চা দিতে গেলেও তারেক নিজ হাতে কাপ ধুয়ে নিবে। তারেককে আমার পছন্দ হলো। আমার কথা হচ্ছে- একটা লেখাপড়া জানা ছেলে এত কম বেতনে চাকরি করবে কেন? ভালো বেতনে চাকরি করার যোগ্যতা তারেকের আছে। এটা কি সে বুঝে না? তার কি নিজের সম্পর্কে ধারনা নেই?
তারেকের সমস্যা একটাই সে প্রচুর সিগারেট খায়।
এবং যতবার সিগারেট খায়, আমার জন্য একটা করে নিয়ে আসে। তারেকের কারণে আমার সিগারেট খাওয়ার পরিমান অনেক বেড়ে যায়। শুধু সিগারেট নয়, সাথে এক কাপ চা। অফিসের চা আমি খাই না। এজন্য তারেকও অফিসের চা খায় না। পাশে রেস্টুরেন্ট থেকে চা নিয়ে আসে। কাপ ধুয়ে আমাকে চা দেয়। যেন আমি বড় পীর। তারেক আমার মুরিদ। আমি তারেককে কঠিন করে বলেছি, একটু পর আমার জন্য সিগারেট নিয়ে আসার কোনো দরকার নাই। আমি এত সিগারেট খাই না। সারাদিনে বড়জোর ৬/৭ টা। তারেক আমার কথা শুনে না। চা আর সিগারেট খেতে খেতে আমি বিরক্ত। মানা করলেও শোনে না। তারেক তো তার সেলারির সব টাকা চা আর সিগারেটে উড়িয়ে দিচ্ছে! এক কাপ চা ত্রিশ টাকা। একটা সিগারেট বিশ টাকা।
তারেকের ঘটনা এই রকমঃ
সে বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা মা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। দুজনেই কয়েক বছর আগে অবসরে গেছেন। তারেকের বাবা মায়ের আর্থিক অবস্থা ভালো। জমিজমা অনেক আছে। সংসারে তেল আর লবন ছাড়া কিছু কিনতে হয় না। সব নিজেদের জমি থেকেই আসে। তারেক বিয়ে করেছে। সে বউ আর ছেলে নিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তারেকের বাবা মা বলেছেন, তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে। তুমি আমাদের সাথে গ্রামে থাকো। আমাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। আমাদের বয়স হয়েছে, অথচ তোমরা ঢাকা থাকো। তারেক তবু গ্রামে যায় না। সে বউ বাচ্চা নিয়ে ঢাকা থাকে। তারেকের ইনকামে সংসার চলে না। ভাগ্যিস তার স্ত্রী ঝুমুর এনজিও'তে চাকরি করে। ঝুমুরের বাপের বাড়ির অবস্থা ভালো। তারেকের আত্মীয়স্বজনদের আর্থিক অবস্থা ভালো।
তারেক বছরে দুইবার গ্রামে যায়।
বাবা মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে। তারেকের বাবা তারেকের উপর ভীষন রাগ করে আছেন। কারন সিগারেট। তারেকের বাবা নামাজি মানুষ। শিক্ষক মানুষ। সে সিগারেট একদম পছন্দ করেন না। সে সারা জীবন ছাত্রদের বলেছেন, ধূমপান না করতে। অথচ তার ছেলে সিগারেট খায়। আর এই সিগারেট খাওয়া তারেকের বাবা একদম সহ্য করতে পারে না। একদিন তারেকের বাবা ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন, তারেক তুমি আমার বড় আদরের সন্তান। আমি তোমার কাছে শুধু একটা জিনিস'ই চাই- তুমি ধূমপান করবে না। তারেকের বাবার চোখে পানি! তুমি আমার হাত ছুঁয়ে কথা দাও, সিগারেট খাবে না। প্লীজ। তারেক তার বাবার হাত ছুঁয়ে কথা দিলো সে আর সিগারেট খাবে না। টানা তিন দিন তারেক সত্যি সত্যি সিগারেট খায়নি। কিন্তু চারদিনের দিন লুকিয়ে বাড়ির পেছনে তারেক সিগারেট খায়। সেটা তারেকের বাবা টের পেয়ে যায়। এরপর থেকে বাবা আর তারেকের সাথে কথা বলেন না।
তারেক অল্প বেতনে চাকরি করে- এটা তার বাবা মায়ের পছন্দ না।
এজন্য তার বাবা মা তারেককে ব্যবসা করার জন্য টাকা দেয়। অনেক টাকা দেয়। কিন্তু তারেক ব্যবসায় লস খায়। এরপর সে আমাদের অফিসে জয়েন করে। তারেক না খেয়েই মরতো, তার বউ চাকরি করে। এই হচ্ছে তারেকের গল্প। সিগারেটের জন্য তার বাবা মায়ের সাথে দূরত্ব বেড়েছে। একদিন আমি তারেককে বললাম, আপনি মানুষ ভালো, মন মানসিকতা ভালো, আপনি পরিশ্রমী এবং আপনি একজন সৎ মানুষ। আপনার সবই ভালো। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি সিগারেট কম খান। তারেক বলল, ভাই আমি আপনাকে সম্মান করি। কিন্তু দয়া করে আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে কিচ্ছু বলবেন না। বিয়ের পরদিন আমার স্ত্রীকেও বলে দিয়েছি, দয়া করে আমার সিগারেট নিয়ে কোনো কথা বলবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি সিগারেট খেয়েই যাবো। একদিন তারেককে দেখেছি, অফিসের টয়লেটে সিগারেট খাচ্ছে। বললাম, টয়লেটে কেন? তারেক বলল, বস আমাকে বাইরে যেতে দেয়নি।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: আমি তো লাইনেই আছি।
ইসলাম আমার সারা অন্তর জুড়ে।
আল্লাহপাকের নাম নিয়ে দিন শুরু করি।
২|
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: লেখাটা পড়তে খুব ভালো লাগছিলো।
আমি চরম এবং ইডিয়ট চেইন স্মোকার ছিলাম। সেই আমি ১০০% ধুমপান মুক্ত।
প্রায় ছয় বছর লেগেছিলো শতভাগ ধুমপানমুক্ত হতে। ২০১৬ থেকে ধুমপান মুক্ত।
যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান, সিগারেট ছেড়ে দিন। এ্যালকহলিকদের প্রতিও একই অনুরোধ।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: কি বলিব আমি, নিজেই অপরাধী।
সিগারেট কিছুতেই বাদ দিতে পারছি না।
৩|
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪১
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
ওস্তাদ জ্বি কে দেশের এনজিও গুলোর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলুন। দেশে এনজিও না থাকলে কিভাবে তারেক বউ চাকরি করে সংসার চালাতো কি করে?
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি লাইনে আসুন । ইসলাম কে ভালোবাসুন ।