নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এফ আই রাজীব

এফ আই রাজীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১১

||১||
পেছন থেকে একটা কষে লাথি মারলাম প্রাণীটাকে। এমনিতেই বিশাল মাথাটার কারণে প্রানীটা ঠিকভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না, তার ওপর প্রচন্ড বল প্রয়োগ করা হয়েছে। তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল প্রাণীটা। আমি নাক দিয়ে ফোঁস করে একটা শব্দ করে অন্যদের দিকে তাকিয়ে বল্লাম,”তোমাদের গবেষণায় সুবিধা করে দিলাম। মানুষ রেগে গেলে কি করে সেটা দেখিয়ে দিলাম!” বলে গট মট করে হেঁটে গিয়ে ধাতব বিছানাটার ওপর বসলাম। লাথি খেয়ে পড়া প্রাণীটা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হাসি পেল। ইলাস্টিক শরীর, মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে বোঁচা নাকটা ডেবে গিয়ে সমতল পৃষ্ঠ হয়ে গেছে। পেটে হাত দিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলাম ধাতব বিছানায়।
হাসি থামিয়ে দেখলাম ঘরে কেউ নেই। হাসতে হাসতে খেয়াল করিনি কখন ওরা চলে গেছে। গলাটা শুকিয়ে গেছে। ঘরে বিছানা আছে, বাথরুম আছ, কিম্ভূতকিমাকার সব যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু ছোট্ট টুলের ওপর পানির জগ আর গ্লাস নেই। কান্না পেল হঠাৎ। হাঁক ছেড়ে কান্না শুরু করলাম। এরকম কন্নার মত দুঃখ আমি পাইনি, আসলে আমার ইচ্ছা প্রাণী গুলোর কান ঝালাপালা করে দেওয়া।
ঘন্টাখানেক পর আমার ঘরের দরজা খুলে গেল। সিলিন্ডারের মত দেখতে একটা বস্তু ঘরে প্রবেশ করলো। সে হাতল দিয়ে একটা ট্রে ধরে রেখেছে। বস্তুটা আমার কাছে এসে ট্রে টা বিছানায় রেখে চলে গেল। সেকেন্ড খানিক পরে একটা প্রাণী ঢুকলো। ডিমের মত চোখ, নাকের জায়গায় একটু উঁচু, মুখ নেই। শুকনো দেহের ওপর বিশাল মাথা। দেখলে মনে হয় ললিপপ। প্রাণীটা আমার কাছে এসে আমার কানে একটা হেডফোন পরিয়ে দিল। শুনতে পেলাম হেডফোন থেকে কেউ একজন খনখনে গলায় বলল “তোমাকে খাবার দেওয়া হয়েছে, খেয়ে নাও।” বিতৃষ্ণা নিয়ে আমি ট্রেতে রাখা হলুদ রঙের থকথকে পদার্থটার দিকে তাকালাম। যখন পৃথিবীতে ছিলাম, বাসায় সকালের নাস্তায় পাউরুটি আর কমলার জেলি খেতাম। জেলিটা খেতে দারুন ছিল এবং হলদে রঙের ছিল। এটা দেখে অবশ্য সেরকম কিছু মনে হল না। চামচ দিয়ে একটু তুলে মুখে দিলাম। স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করে বুঝতে পারলাম জিনিষটা আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা, তিতো সব্রকমের স্বাদ একসাথে মিশিয়ে জিনিষটা তৈরী করা হয়েছে। ‘ওয়াক’ করে একটা শন্দ করে মুখের টুকু ঢেলে দিলাম প্রাণীটার মাথায়। ওর চেহারার অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো, কিন্তু না হেসে রেগে যাবার ভান করে দাঁত কিড়মিড় করে চোখ পাকিয়ে হুংকার দিয়ে বললাম, “এগুলো কি খেতে দিয়েছ গর্দভ, নর্দমার কীট, মুখ পোড়া বাঁদর। গাধার ল্যাজ, খরগোশের কান, প্যাঁচ কাটা স্ক্রু, ভাংগা রেকর্ড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, গমের পোকা, ঘোড়ার দাঁত, উল্লুক, হাতি, জিরাফ, টিকটিকি, ললিপপ………”
গালাগালির মাঝখানে শুনতে পেলাম কানের হেডফোনটা আবার বলল, “তাহলে তুমি কি খেতে চাও?”
আমি গালাগালি বন্ধ করলাম। কিছুক্ষণ প্রাণীটার ডিমের মত কালো রঙের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর বললাম, “আমি যা চাই তা কি তোমরা দিতে পারবে?”
প্রাণীটাকে একটু বিভ্রান্ত দেখায়। সে বলল, “চেষ্টা করে দেখব।”
আমি বিছানায় শুয়ে উদাস গলায় বললাম, “আমার চাই সত্যিকারের তিতির পাখি এবং রূপচাঁদা মাছ ঝলসানো কাবাব, সত্যিকারের যবের রুটি, চাইনিজ চালের ভাত,আঙ্গুরের রস, তরমুজের ফালি, বুনো স্ট্রবেরির কাস্টার্ড, নিহীলা(!) মিশ্রিত উত্তেজক লেবুর শরবত।”
প্রাণীটা খানিক্ষণ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি আবার হাঁক ছেড়ে কাঁদতে আরম্ভ করলাম।

||২||
প্রাণী-১: তুমি বলেছিলে এটা একটা বুদ্ধিমান প্রাণী।
প্রাণী-২: আমার যন্ত্রপাতি তো তাই বলছে।
প্রাণী-১: নিশ্চয়ই কোনো ভুল হয়েছে। বুদ্ধিমান প্রাণী এরকম আচরণ করে না। কি রকম নির্বোধ! দেখলে না কেমন করে আমাকে লাথি মারলো! আরেকটু হলে আমার চোখ নষ্ট হয়ে যেত!
প্রাণী-২: শুধু তাই? কিরকম অসভ্যের মত আমার গায়ে বমি করে দিল! আশ্চর্য!
প্রাণী-১: এরকম একটা জানোয়ার কে আমরা বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম? কি ভয়ানক চরিত্র! এমন জোরে কাঁদে, কানের পর্দা ফেটে যাবার মত অবস্থা!
প্রাণী-২: এতো মূর্তিমান বিভীষিকা! সাক্ষাৎ যম!
প্রাণী-১: এই ভয়ঙ্কর প্রাণীটাকে নিয়ে গেলে আমরা চাকরিটা খোয়াবো। তার চেয়ে একে রেখে যাই, কি বল?
প্রাণী-২: কিন্তু বিজ্ঞান কাউন্সিকে কি বলবো?
প্রাণী-১: কি আর, বলবো যে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহে প্রাণের বিকাশ হয়েছে। একটা প্রাণী আছে যেটা দেখলে মনে হয় বুদ্ধিমান, কিন্তু আসলে তা নয়।
প্রাণী-২: তাহলে ছেড়ে দেই।
প্রাণী-১: হুম।

||৩||
একটা বন্য পাখিকে কিছুদিন খাঁচায় আটকে রেখে তারপর ছেড়ে দিলে পাখিটার জেরকম আনন্দ হয়, এখন আমার সেরকম আনন্দ হচ্ছে। মুক্ত বিহঙ্গের স্বাধীনতা আমি উপভোগ করছি। হালকা ফুরফুরে একটা আনন্দ। বুদ্ধিমান প্রাণীরাই তাদের বুদ্ধির জোরে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আমিও পেরেছি কারন আমি মানুষ। আর মানুষ নিঃসন্দেহে একটি বুদ্ধিমান প্রাণী।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লেগেছে| সাবলীল লেখা

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩

এফ আই রাজীব বলেছেন: ধন্যবাদ,আরণ্যক রাখাল।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪

কিরমানী লিটন বলেছেন: অনবদ্য ভালোলাগা রেখে গেলাম ...

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৬

এফ আই রাজীব বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই কিরমানী লিটন,ব্লগের সাথে থাকার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.