নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rajib Samir (রাজিব সামির)

mdrajibsamir

আমার ভেতর আরেক আমি... যাকে আমি চিনি না......। রাজিব সামির

mdrajibsamir › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারখানা শ্রমিক থেকে পাক ক্রিকেট দলে

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৭





সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকায় ফাস্ট বোলার পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফান। পাঞ্জাবের ছোট শহর গাগু মন্দি থেকে উঠে এসেছেন ৭ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ইরফান। এ শহর থেকেই উঠে আসা লম্বা আরেক ফাস্ট বোলার ছিলেন মোহাম্মদ জাহিদ। ইরফান আবিষ্কৃত হওয়ার আগে সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত ছিলেন ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটার অ্যান্টনি আলম, পল ডানকেলস এবং উইল জেফারসন। এদের তিনজনের উচ্চতাই ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। একটি পিভিসি ফ্যাক্টরির একজন সামান্য শ্রমিক থেকে কিভাবে পাকিস্তান দলে_ সে সম্পর্কেই বিস্তারিত জোহানেসবার্গে ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে জানান দলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত মোহাম্মদ ইরফান।

অতীতে আপনি একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতেন বলে আমরা জেনেছি।

ইরফান : অত্যন্ত গরিব একটি পরিবারে আমার জন্ম। নিম্ন শ্রেণীর পরিবারগুলোতে আমরা সাধারণত অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে শুরুতেই লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে অতি তাড়াতাড়ি কাজে নেমে পড়ি। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে_ আমি মাধ্যমিক স্তর শেষ করতে পেরেছি। কারণ, আমার আরও পাঁচ ভাই ছিল। যারা ইতিপূর্বেই অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিক পাসের পর আমিও একটি ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেই। একটি শ্রমিক শ্রেণীর পরিবার থেকে আমরা উঠে এসেছি। আমার পিতা এবং তার পিতা অর্থাৎ আমার দাদাও শ্রমিক ছিলেন। আমার দুই বোন এবং পাঁচ ভাই রয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে আমার এক ভাই মারা যান। এখন আমিই বয়সে সবার ছোট। কিন্তু লম্বায় সবার বড়। আমার মেন্টর নাদিম ইকবালের সহায়তা না পেলে আমাকে হয়তো বা এখনও কারখানায়ই কাজ করতে হতো এবং অন্যভাবে জীবনযাপন করতে হতো।

া আপনার জীবন কতটা কঠিন ছিল?

ইরফান : সত্যি বলতে গেলে পিভিসি ফ্যাক্টরিতে আমি আমার জীবনধারা মানিয়ে নিতে শুরু করেছিলাম। আমাকে একজন ফোরম্যানের কাজ দেয়া হয়েছিল। তবে যে সত্যিটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো_ আমি জানতাম আমার মধ্যে ক্রিকেট আছে। তবে তা কেবল উপভোগ করার জন্য। নিজের এবং পরিবারের জন্য আমি মোটামুটি ভালো অর্থই আয় করতাম। আমি একটি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে চেয়েছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল জাতীয় পর্যায়ে খেলা। যে স্বপ্নটা প্রতিটি সৌখিন ক্রিকেটারেরই থাকে।

আপনি কিভাবে ক্রিকেট এলেন এবং আপনি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার এটাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

ইরফান : আমার উচ্চতাকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগাতে প্রায় ১০ বছর কেটে গেছে। আমি যদি ক্রিকেট খেলি তাহলেই এটাকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে_ আমি সেটা বুঝতে পারিনি। তবে আমি খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি এবং আমার নতুন জীবনের জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করছি। প্রতিটি শিশুরই স্বপ্ন থাকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু খুব কম ব্যক্তিই তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। আমি তাদেরই একজন। জাতীয় পর্যায়ে খেলাটা কেবল অর্থের বিষয় নয়। এটা সম্মানের ব্যাপার। টেনিস বল দিয়ে আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি এবং সব সময়ই আমি কঠিন বলের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। আমার নিজ গ্রামের একটি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেই আমি। সালোয়ার কামিজ ও স্কুলের জুতা পরে খেলতাম আমি। কেননা, আমার কোন ক্রিকেট সু, ট্রাউজার বা জার্সি ছিল না। সত্যিকার অর্থে আমি কখনোই এগুলো ব্যবহার করতে পারিনি। বন্ধু-বান্ধবদের সহায়তা নিয়ে আমি এক জোড়া ক্রিকেট সু কিনেছিলাম।

আপনি ক্রিকেটে কিভাবে উন্নতি করতে শুরু করলেন?

ইরফান : খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে (কেআরএল) যোগ দেয়ার পরই কেবলমাত্র আমি উন্নতি শুরু হয়। আমি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আসার পরই কেবলমাত্র জনগণ আমাকে নিয়ে সত্যিকার অর্থে আলোচনা শুরু করে। এর আগে আমি ছিলাম একদম আনকোরা ক্রিকেটার। আমার উচ্চতা অবশ্যই আমার জন্য একটি বড় সুবিধা ছিল। কিন্তু আমি তা ব্যবহার করতে জানতাম না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমি আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলাম। ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে অনেক তারকা ক্রিকেটারের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে এবং তারপরই আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি ব্যতিক্রমধর্মী কিছু ছিলাম। আকিব জাভেদ (সাবেক ফাস্ট বোলার ও সে সময়ে একাডেমির বোলিং কোচ) আমাকে একটি পরিকল্পনা এঁটে দিলেন এবং আমাকে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে আমি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রবেশ করি। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে পিআইএ'র বিরুদ্ধে আমার প্রথম ম্যাচে আমি কোন উইকেট পাইনি। কিন্তু আমার দ্বিতীয় ম্যাচে হাবিব ব্যাংকের বিরুদ্ধে আমি ৯ উইকেট পেলাম। এটা আমার আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়েছিল। ওই মৌসুমে গড়ে ২৯ করে আমি প্রায় ৩৫০ ওভার বোলিং করলাম। এরপরই আমি অনুধাবন করতে পারলাম যে, আমার পেসা, সুয়িং এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিটনেসের জন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

কিভাবে বোলিং করতে হয় এ শিক্ষাটা আপনাকে কে দিয়েছেন?

ইরফান : কেউই আমাকে এটা শিখায়নি। তবে উন্নতি করার জন্য অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছেন। আকিব, নাদিম ও ওয়াসিম আকরামের কাছ থেকে আমি টিপস পেয়েছি। আমার উন্নতিতে তাদের সবার অবদান আছে। আমার নিজস্ব একটি বোলিং ধরন আছে, যা খুবই সাধারণ এবং এতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। মূলত কেউই এতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেননি।

মেধাবী হলে সাধারণত কেউই আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না। ২৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আপনার অভিষেক হয়েছে_ এটা না হলে কি করতেন?

ইরফান : ক্রিকেট জীবনযাপনের ঝুঁকি নিতে আমি কিছুটা ভীত ছিলাম। কেননা, তখনো আমার সঙ্গে কোন চুক্তি ছিল না। আমি মনে করতাম কারণ ক্রিকেটের জন্য আমি যদি আমার চাকরিটা হারাতাম। আমার পরিবারকে দুর্ভোগে পড়তে হতো। লাহোর থেকে (পিসিবি কর্র্তৃক) ডাক পেতে আমার প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে। আমার ছোট শহরের প্রতি মূলত কেউই নজর দেয় না। এ শহরে অনেক মেধাবী ক্রিকেটার আছে যারা শীর্ষে ওঠার সুযোগ পায় না। অবশ্যই তারা একদম আনকোরা। কিন্তু যথাযথ সুযোগ পেলে অবশ্যই তারা নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে পারবে। ছোট ছোট গ্রামের ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী, অনেক বেশি নিবেদিত এবং খাঁটি মনে তারা দেশের হয়ে খেলতে চায়।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য আপনাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল?

ইরফান : হ্যাঁ। ওয়াসিম আকরাম আমার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। ট্রায়ালের জন্য আমি শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলাম এবং সেখানে আমি খুব ভালো বোলিং করেছিলাম। সেখানে চার ওভারের স্পেলে আমি ১১ রানের বেশি দেইনি এবং আমি যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি তার প্রতিটি ম্যাচেই আমি কম করে তিনটি করে উইকেট পেয়েছি। ডেভ হোয়াটমোর (তৎকালীন সময়ে নাইট রাইডার্সের কোচ) সে সময় সেখানে ছিলেন। তিনি আমার বোলিং পছন্দ করেছিলেন এবং দলে নিয়েছিলেন। তবে দুর্ভাগ্য যে, ওই লীগে পাকিস্তান খেলোয়াড়দের নেয়া হয় না। তারপর আমি পাকিস্তান 'এ' দলে নির্বাচিত হই এবং এরপর জাতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করি।

ইংল্যান্ড সফরে ওয়ানডে অভিষেকটা আপনার মোটেই ভালো হয়নি। প্রথম ওভারে আপনি ১৫ রান দিয়েছেন। সেখানে সমস্যাটা কি ছিল। 'এ' দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে আপনি ভালো করেছেন। আপনি কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপে ছিলেন?

ইরফান : সবকিছুই ঘটেছে অতি দ্রুত। শ্রীলঙ্কায় অনেক বেশি গরমের মধ্যে আমি খেলতে ছিলাম এবং ভালো করছিলাম। কিন্তু ইংল্যান্ডে কন্ডিশনের সঙ্গে আমি খাপ খাওয়াতে পারিনি। চাপের মধ্যে আমি নিজকে ঠিক রাখতে পারিনি। শরীর ও মনের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছিলাম না। এটা খুবই কঠিন ছিল এবং সত্যিই কোন কিছুর ওপর আমি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়েছিল এটা আমার জন্য কিছুটা অগ্রিম হয়ে গিয়েছিল। আমার তা-ই মনে হয়েছিল। অপরিপক্ব অভিষেক আমাকে শুরুর জায়গায় ঠেলে দিয়েছিল।

দুর্বল অভিষেক মানিয়ে নেয়াটা কতটা কঠিন ছিল?

ইরফান : অবশ্যই আমার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয়েছে আমি ঠিকমতো কিছু করতে পারিনি। সেখানে অনেকেই আমার চারপাশে ছিল এবং আমাকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। কিন্তু অভিষেকে ফ্লপ করায় আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। পুনরায় আমি দলে নির্বাচিত হতে পারব না বলে আমার মনে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিকে থাকার জন্য উচ্চতাই একমাত্র বিষয় নয়_ আমি সেটা বুঝতে পারলাম। দীর্ঘ সময় বোলিং করতে হলে জিমনেশিয়ামের চেয়ে আরও বেশি অনুশীলন ও বোলিং অনুশীলন করতে হবে বলে আমি বুঝতে সক্ষম হলাম। একইভাবে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আরও বেশি খেলতে শুরু করলাম ও অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উচ্চমানের ফিটনেস দরকার হয়। আমি এখনও সুপার ফিট নই। তবে ২০১০ সাল থেকে আমার উন্নতি হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে আমার দ্বিতীয় অভিষেকেই এর সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেছে।

ভারতে আপনি ব্যাটসম্যানদের চাপের মধ্যে রেখেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ উইকেট নিয়েছেন জুনায়েদ খান ও সাঈদ আজমল।

ইরফান : আমাকে সঠিক লাইন লেন্থে বল করতে বলা হয়েছিল এবং আমি সেটা ঠিকমতোই করেছি। আমার কোচ এবং অধিনায়ক চেয়েছিলেন আমি যেন বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি এবং ব্যাটসম্যানদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করি। উইকেট নেয়ার চেয়ে সঠিক জায়গায় আমার বোলিং করার ওপরই তারা জোর দিয়েছিলেন।

টেস্ট দলের হয়ে আপনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য কি আপনি প্রস্তুত?

ইরফান : টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারে আমি ইতিবাচক। আমার জন্য এটা হবে উত্তেজনাকর আরেকটি চ্যালেঞ্জ। সেখানকার পিচ ফাস্ট বোলিং সহায়ক না হওয়া সত্ত্বেও ভারতে আমি ভালো করেছি। টেস্ট ক্রিকেটে সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। দলে ভালো একটা সাপোর্টিং স্টাফ আমার সঙ্গে রয়েছেন। তারা আমার সীমাবদ্ধতা জানেন এবং সে অনুযায়ী আমাকে ব্যবহার করবেন। আমি প্রথম শ্রেণীর অনেক ক্রিকেট খেলেছি এবং অনেক দীর্ঘ স্পেলে বোলিং করেছি। সুতরাং টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করব বলে আমি বিশ্বাস করি।

পাকিস্তান ক্রিকেটে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখছেন?

ইরফান : বর্তমানে পাকিস্তানের তিন ফরমেটের সব ফরমেটের পরিকল্পনায় আমি আছি। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে যতদিন আমি পারফর্ম করতে পারব ততদিন আমি দলে থাকব। এই মুহূর্তে আমি নিজেকে নিয়ে কোন উচ্চাশা করছি না। আমার লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।

;);)

বাসস/ওয়েবসাইট।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.