নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালা পোলা

আমি শুনে হাসি, আখিঁ জ্বলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে- তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ , আমি আজ চোর বটে।

রাজ্জাক রাজ

এম এ রাজ্জাক রাজ, সরকারী বাঙলা কলেজ

রাজ্জাক রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নাটকে সাম্প্রদায়িকতা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

সাম্প্রদায়িকতার নানা রূপ, নানা ঢঙ,

নানা রঙ দেখে আসছি বিগত ৬০ বছর ধরে।

১৯৫০ সালে সরাসরি সাম্প্রদায়িক

দাঙ্গা দেখেছি আমার শহরে। আমি তখন

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। মাসের নাম

মনে নেই। তবে সেদিন সোমবার

বা বৃহস্পতিবার ছিল। সবাই বলত হাটবার।

তখন বুঝিনি কেন দাঙ্গা হয়েছে। যতদূর

মনে পড়ছে, আমাদের স্কুল বন্ধ ছিল

বা ফাইনাল পরীক্ষা হবে হবে করছে।

আমার পাড়াটা ছিল হিন্দু পাড়া। নাম

উকিলপাড়া। ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক

রোডের দুই পাশে বসতি। ৯০ ভাগ

বাসিন্দাই ছিলেন হিন্দু উকিল আর

শিক্ষক। আমার দাদাজান এখানে বসত

করেছিলেন গ্রাম থেকে এসে। উকিল

বাবুদের বাড়িকে বাসা বলত আর

আমাদের বসতকে বাড়ি বলত।

হয়তো আমরা আদি বাসিন্দা বলে।

বিশাল বাড়ি। দাদাজান সম্ভবত ১৮৭০

সালে এ বাড়ি করেছেন। ১৯১১

সালে নাকি এর সম্প্রসারণ হয়েছে।

মানে আমার বাবা-চাচারা আরও কিছু

জমি কিনে বাড়িটা বড় করেন। তখন হিন্দু-

মুসলমান এক পুকুরে স্নান বা গোসল করত।

পুকুরে নেমে সূর্য

পূজা করতে আমি দেখেছি।

মৌলবাদ ও রাজনীতি নিয়ে আমার

প্রিয় মানুষ হায়দার আকবর খান

রনো ধারাবাহিক কলাম লিখছেন

বাংলাদেশ প্রতিদিনে। রনো খুবই

ভালো একজন মানুষ। ৫০ বছর

ধরে আমি তাকে চিনি। এক সময়

আমরা একই রাজনৈতিক চিন্তা ও দর্শনের

অনুসারী ছিলাম।

জানি না কী কারণে আমার পরিবর্তন

হয়ে গেছে। রনো ছিলেন চীনপন্থী। এখন

রনো রুশপন্থী সিপিবিতে যোগ

দিয়েছেন। অপরদিকে রনোর বহুদিনের

রাজনৈতিক সাথী মেনন

আওয়ামী ঘরানার রাজনীতি করছেন।

এমনকি এমপি হওয়ার জন্য নৌকা মার্কায়

নাম লিখিয়েছেন। বামপন্থীরা প্রায়

সবাই নৌকার ছইয়ের নিচে আশ্রয়

নিয়েছেন। কিন্তু কী কারণে যেন

সিপিবি যায়নি। মেননরা এক সময়

চীনপন্থী ছিলেন এবং শেখ সাহেবের

কঠোর সমালোচক ছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সব

মেরুকরণ হয়েছে যে কে কোন

দিকে যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন হিসাব

মেলানো কঠিন হয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক দল

করার উদ্যোগ নিলে মসিউর রহমান যাদু

মিয়া সাহেব নিজের পার্টির ব্যানার

ফেলে দিয়ে সবাই মিলে বিএনপি গঠন

করেন। এখনও বিএনপির প্রধান

শক্তি সাবেক ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের

নেতারা। বিএনপিকে অনেকে অধুনিক

মুসলিম লীগ বলে থাকেন।

নেতারা বলেন,

আমরা ইসলামী চেতনাবোধ সম্পন্ন

জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি।

বিএনপি বলে আমরা বাংলাদেশী। আর

আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরানার

লোকেরা বলেন, আমরা ধর্মমুক্ত

বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস

করি। আওয়ামী ঘরানার লোকেরা বলেন,

ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।

পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ ও ১৯৬৪

সালে দাঙ্গা হয়েছে। দুটি দাঙ্গাই

হয়েছে ভারতের দাঙ্গার

প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ’৬৪ সালের

ঢাকার দাঙ্গা আমি দেখেছি।

আমি বুদ্ধি হওয়ার পর

থেকে দাঙ্গাবিরোধী মানুষ।

এটা একটা মর্মান্তিক বিষয়। দাঙ্গায়

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব ও

মধ্যবিত্তরা। ধনী এবং প্রভাবশালী হিন্দু-

মুসলমান তো ভাই ভাই।

দাঙ্গা লাগে কেন এবং কারা লাগায়

তা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। পূর্ব

পাকিস্তান আমলে বেশ

কয়েকটি মিলে বাঙালি-

বিহারি দাঙ্গা হয়েছে। আবার কোথাও

নোয়াখালী বনাম অন্যদের

দাঙ্গা হয়েছে।

দাঙ্গার একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক

দিক আছে। রাজনীতিকরা রাজনৈতিক

সুবিধা পান আর ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক

সুবিধা পান। যেমন আমাদের ফেনীর

উকিল পাড়ায় এখন কোনো হিন্দু উকিল

শিক্ষক বা ব্যবসায়ী নেই। সব বাড়িঘরের

মালিক হয়ে গেছেন মুসলমানরা। কেউ

অল্প দামে কিনে নিয়েছেন বা জোর

করে দখল করেছেন। ঢাকার নবাবপুরের

দিকে তাকান। ’৪৭ সালের আগে বেশির

ভাগ দোকানের মালিক ছিলেন হিন্দুরা,

পরে বাঙালি মুসলমান

বা বিহারি মুসলমানরা মালিক হয়েছেন।

যে ক’জন হিন্দু ব্যবসায়ী ছিলেন তারাও

চলে গেছেন ’৫০ বা ’৬৪ সালের দাঙ্গার

পর। ’৭১-এর শুরুতে মানে ১ মার্চ

থেকে বাঙালিরা অবাঙালিদের

দোকানপাট লুট করেছে বা দখল করেছে।

ওই সময়েই অবাঙালিরা পাকিস্তান

চলে যেতে থাকে। আবার ২৫ মার্চের পর

অবাঙালিরা প্রতিশোধ নিতে শুরু করে।

এভাবে শুধু মার্চ মাসেই দেশে দাঙ্গায়

কয়েকশ’ মানুষ মারা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়

সারা দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে লাখ

লাখ হিন্দু দেশ ত্যাগ করে চলে যায় সর্বস্ব

ফেলে দিয়ে। ওদের চলে যাওয়ার পরপরই

গ্রামের অসত্ মুসলমানরা তাদের

ফেলে যাওয়া সম্পদ লুট করে। উল্লেখ্য যে,

’৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও

বহু হিন্দু দেশ ত্যাগ করে চলে যায়।

সে সময়েও

বাঙালি মুসলমানরা বাঙালি হিন্দুদের

সম্পত্তি দখল করে। এর সবকিছুই

তো রাজনীতি।

১৯৪৭ সালে যেসব বাঙালি মুসলমান

পশ্চিম বাংলা ছেড়ে চলে এসেছেন

তাদের ভেতর যারা শিক্ষিত ছিলেন

তারা সবাই উচ্চ মর্যাদায় আসীন

হয়েছেন। অনেকেই বাড়িঘর বিনিময়

করে দেশ ত্যাগ করেছেন। সেসব

মুসলমানের ছেলেরা এখন সেক্যুলার

(ধর্মহীন) হয়ে মুসলমানদের শুধুই

বাঙালি বানানোর আন্দোলন শুরু

করেছেন। এদের কথা হলো, মুসলমানিত্ব

বা ইসলামকে ঘরের ভেতর রাখ। শুধু

বাঙালি হলো অসাম্প্রদায়িক শব্দ।

এরা হিন্দুদের সব ধর্মীয়

আচারকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত

করে। এরা কোরবানি বন্ধ করার জন্য যৌথ

বিবৃতি দেয়। এরা জ্ঞানপাপী।

এরা বলে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার

পর আর মুসলমানিত্বের প্রয়োজন নেই

রাষ্ট্রের। ধর্ম বিষয়টা ব্যক্তিগত

হয়ে গেছে। ’৭১ সালে আমরা এ ধরনের

কোনো কথা শুনিনি, বাংলাদেশ

প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলামের আর

কোনো প্রয়োজন থাকবে না।

বাংলাদেশ স্বাধীন

হলে দ্বিজাতি তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হবে।

পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ

করেছি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির

জন্য। এ দুটি বিষয়ই ছিল দ্বন্দ্বের প্রধান

কারণ। সে সময়ের জাতীয় পরিষদের

প্রসিডিংস

পড়লে জানা যাবে কি নিয়ে বিরোধ

চরমে উঠেছিল। প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা,

পার্লামেন্টারিয়ান ও সাংবাদিক

মাহবুবুল হক জাতীয় পরিষদেই বলেছিলেন,

সব ক্ষেত্রে চলমান বৈষম্য অব্যাহত

থাকলে পাকিস্তান টিকবে না (মাহবুবুল

হকের আমার জীবন ও সময়)। শেখ মুজিবের ৬

দফাও ছিল অর্থনৈতিক প্রস্তাব। ওই

প্রস্তাব গৃহীত হলে পাকিস্তান

কনফেডারেশন হয়েও টিকতে পারত।

কিন্তু পাকিস্তানের সে সময়ের

সেনাবাহিনী ছিল কাণ্ডজ্ঞানহীন।

আমার আজকের বিষয় হচ্ছে দাঙ্গা। শুরুতেই

বলেছি, দাঙ্গা রাজনৈতিক ও

অর্থনেতিক কারণে হয়ে থাকে। এবং এর

সঙ্গে সরকারি দল অথবা সরকার জড়িত

থাকে। তবে আনন্দের খবর হচ্ছে,

বাংলাদেশ হওয়ার পর সাম্প্রদায়িক

মনোভাব একেবারে নেই বললেই চলে।

তবে ভারতীয় কিছু

মিডিয়া বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক

দাঙ্গা বাধিয়ে ফায়দা লোটার জন্য

নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বেশ কিছু হিন্দু

সাংবাদিক আছেন,

গোপনে বা ভারতীয়

কাগজে ভুয়া দাঙ্গার খবর প্রচার

করে থাকেন। এমনকি ঢাকাস্থ ভারতীয়

হাইকমিশন ওই ভুয়া খবরের

পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।

বাংলাদেশে বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও

সংগঠন আছে যারা প্রায়ই সাম্প্রদায়িক

দাঙ্গার উসকানি দিয়ে নানা ধরনের

সুযোগ নিতে চায়। আরও সুখবর হচ্ছে,

বাংলাদেশের

তরুণরা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস

করে না। ভারতে দাঙ্গা লাগলে এখন

এখানে কেউ

দাঙ্গা বাধাতে পারে না।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সাহিত্য-

সংস্কৃতির অবসান হয়েছে।

সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে দাঙ্গা বিষয়ক

নাটক মঞ্চস্থ হওয়ায় আমি অবাক ও বিস্মিত

হয়েছি। ওই নাটকগুলোতে দাঙ্গার জন্য

মুসলমানদেরই বেশি দায়ী করা হয়েছে।

মুসলমানদের টুপি-

দাড়িওয়ালা জঙ্গি দেখিয়ে অপমান

করা হয়েছে। শুনেছি কলকাতা থেকেও

নাট্যদল এসেছিল। এই তো কিছুদিন

আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন

নাটকে ও ধরনের চরিত্র না দেখানোর

জন্যে যা কোনোভাবেই বাস্তব নয়।

আমি মনে করি, এসব

নাট্যকর্মী মনোজগতে সাম্প্রদায়িক।

এরা মনে করেন হিন্দুদের পক্ষে থাকলেই

প্রগতিশীল বা আধুনিক হওয়া যায়

বা ভারত থেকে নিয়মিত দাওয়াত

পাওয়া যাবে।

গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে তেমন

কোনো দাঙ্গা হয়নি। রামু বা দেশের

অন্যান্য জায়গায়

দাঙ্গা নামে যা হয়েছে তা রাজনৈতিক

উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য

স্বার্থান্বেষী মহল করেছে। সরকার

বা বিরোধী দলের বাক্য বিবাদ থেকেই

তা বোঝা যায়। ভারতে এখনও প্রতিদিন

কোথাও না কোথাও

দাঙ্গা লেগে আছে। কোথাও মুসলমানের

বিরুদ্ধে দাঙ্গা, আবার কোথাও অচ্ছুত

বা হরিজনদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা।

ধর্মীয়ভাবেই ভারতের ৩০ কোটি অচ্ছুত

অর্ধমানব। তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারার

রীতি আছে। আধুনিক ভারত বা তার

সংবিধান অচ্ছুতদের

কোনো স্বীকৃতি দিতে পারেনি।

ভারতের সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ড.

আম্বেদকার এ কারণে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ

করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

গুজরাটের দাঙ্গার হোতা ছিলেন

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুনতে পাচ্ছি, তিনি নাকি ভারতের

প্রধানমন্ত্রী হবেন। মহারাষ্ট্রীয়

নেতা বাল ঠাকরে তো মুম্বাই

থেকে ভিন প্রদেশের মানুষকে বেরই

করে দিতে চেয়েছিলেন।

তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন,

ভারতে থাকতে গেলে মুসলমানদের হিন্দু

হতে হবে। বাংলাদেশে এমন

অবস্থা কখনোই ছিল না, এমন অবস্থা হওয়ার

কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিহারে যখন বিরাট দাঙ্গা চলছিল তখন

প্রতিক্রিয়া হিসেবে নোয়াখালীতে কয়েকটি এলাকায়

দাঙ্গার অবস্থা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু

গান্ধীজী বিহারে না গিয়ে চলে গেলেন

নোয়াখালীতে মিডিয়াতে নোয়াখালীর

দাঙ্গাকে বড় করে দেখানোর জন্য। আজ

কেউ দাঙ্গার ইতিহাস

লিখতে গেলে বা কোনো রেফারেন্স

উল্লেখ করতে গেলেই নোয়াখালীর

দাঙ্গার কথা বলা হয়।

কাহিনীটা কলকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট

বা সিরাজুদ্দৌলার অন্ধকূপ

হত্যা কাহিনীর মতো। দাঙ্গাবাজ

সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও

ঐতিহাসিকরা জিন্নাহ

সাহেবকে সাম্প্রদায়িক

নেতা বানিয়ে ফেলেছেন।

সাম্প্রতিককালে ভারত থেকে বেশ কিছু

বই প্রকাশিত

হয়েছে যাতে বলা হচ্ছে জিন্নাহ

কখনোই সাম্প্রদায়িক ছিলেন না।

‘দাঙ্গার ইতিহাস’ নামে শৈলেশকুমার

বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটি পড়ার জন্য

সবাইকে অনুরোধ জানাব। শ্রী শৈলেশ

বলেছেন, ভারতে প্রতি বছর সর্বনিম্ন ১৫০

থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার দাঙ্গা হয়।

মুসলমান বিরোধী দাঙ্গা ছাড়াও

সেখানে হিন্দু-শিখ, হিন্দু-হরিজন ও

হিন্দু-খ্রিস্টান দাঙ্গা লেগেই থাকে।

আমাদের তরুণ সমাজ এখন বিভ্রান্ত। ইসলাম

বিরোধিতাকে তারা প্রগতিশীলতা মনে করে থাকে।

তাদের মনে তথাকথিত সেক্যুলারিজমের

নামে ধর্মহীনতা প্রচার করা হচ্ছে।

তারা মনে করে, ধর্মকর্ম করেও সেক্যুলার

হওয়া যায়। এই মানসিকতা থেকেই

সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নাটক

মঞ্চস্থ করতে গিয়ে মুসলমানদের

বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ

আনা হয়েছে। এই তরুণদের কেউই দাঙ্গার

কারণ ও ইতিহাস জানে না। কোনো এক

অদৃশ্য শক্তি বাংলাদেশের তরুণদের

ধর্মহীন বা ধর্মবিদ্বেষী করে তোলার

চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের লক্ষ্য

হচ্ছে বাংলাদেশের

আগামী প্রজন্মকে ধর্মমুক্ত করা। যদি এই

লক্ষ্য হাসিল করা যায় তাহলে এদেশের

সার্বভৌমত্বের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে।

তখন বাংলাদেশ একটি পতাকাসর্বস্ব দেশ

ও জাতিতে পরিণত হবে। আমাদের

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল

উপাদানগুলো এরই মধ্যে দুর্বল

হয়ে পড়েছে। জাতি হিসেবে এরই

মধ্যে আমরা মনোজগতে বিভক্ত

হয়ে পড়েছি।

আমরা জানি না আমরা কারা? আমাদের

পরিচয় কী?

আমরা বাঙালি না বাংলাদেশী?

তারপর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ,

স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ। একদল চায় ধর্মমুক্ত

বাংলাদেশ গড়তে, আরেক দল চায় ধর্মসহ

বাংলাদেশ গড়তে। একদল হিন্দু ধর্মের

আচার-আচরণকে বাঙালির

সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়,

আরেক দল এর বিরোধিতা করে।

পরিস্থিতি এখন এমন এক

পর্যায়ে চলে গেছে যে, ইসলামের

কথা বললেই

মৌলবাদী জঙ্গি ইত্যাদি বলে গালাগাল

করা হয়। ধর্মীয় শিক্ষা ও

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করা হচ্ছে।

কিছুদিন আগেও হেফাজতের নেতাদের

সঙ্গে বৈঠক করার সময়

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,

টিভি নাটকে দাড়ি-টুপিওয়ালাদের

হেয় করা হয়। শুনেছি প্রখ্যাত নট হাসান

ইমাম (যিনি এবং যার পরিবার ’৪৭

সালে ভারত

থেকে পালিয়ে এসেছিলেন)

নাকি কোনো এক নির্বাচনের

আগে কুকুরের মাথায় টুপি ও

গালে দাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন।

নির্বাচনের পর

তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে বেশ

কয়েক বছর ছিলেন। আবার তার পক্ষ

নির্বাচিত হলে দেশে ফিরে আসেন।

আমাদের কবিতা, সাহিত্য, উপন্যাস, নাটক

সিনেমায় যদি অবিরাম

ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য পেশ করা হয়

তাহলে কি একদিন ইসলাম থাকবে?

আমি বলব ইসলাম থাকবে না, কিন্তু মুসলমান

থাকবে। কারণ, তারা কখনোই আরবি নাম

ত্যাগ করবে না। আমাদের তরুণ

সমাজকে বলব, বাপ-দাদার ইতিহাস

ভুলে যেও না। যদি নিজের বায়া দলিল

হারিয়ে ফেল হাজার বছর কাঁদলেও

সে দলিল ফিরে পাবে না।

স্পেনে গিয়ে দেখ, ওখানে অনেকের

নাম আরবি, শুনে মনে হবে তারা মুসলমান।

না ওরা খ্রিস্টান। খায়-দায় পোশাক

পরে মুসলমানের মতো। আলাপ

করে জানলাম, ওদের পূর্ব পুরুষ মুসলমান ছিল।

ক্রুসেডের দু’শ বছরে ওরা ওদের অস্তিত্ব

হারিয়ে ফেলেছে। দেখলেও

বোঝা যায়, এখানে এক সময় মুসলমানদের

আবাদ ছিল। শুরুতেই বলেছি,

বাংলাদেশের মানুষ দাঙ্গা চায় না।

রাজনীতিকরা চাইলে দাঙ্গা হয়। ১৯৬৪

সালে সাংবাদিকরাই দাঙ্গার

বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছিলেন।

যারা দাঙ্গা বিষয়ক নাটক মঞ্চস্থ

করেছেন তারা বিষয়টার

গভীরে যাননি। তরুণদের অবশ্যই

মনে রাখতে হবে, জগতে ধর্ম থাকবে,

ধার্মিক মানুষ থাকবে, ধর্মের আচার

অনুষ্ঠান থাকবে। ধর্মের অপব্যবহার

থাকবে স্বার্থান্বেষীদের কারণে।

একমাত্র জ্ঞানই, এবং সত্য জ্ঞানই

মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকার

থেকে বের করে আনতে পারে।

যারা ধর্ম চান না বা মানেন না, তাদের

ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

কিন্তু যারা ধর্ম মানেন, তাদের অবশ্যই

নিজ নিজ ধর্মের জ্ঞান থাকতে হবে।

বিশেষ করে তরুণদের বলব, নিজের

ধর্মকে ভালো করে জান। ইসলাম

জ্ঞানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব

দিয়েছে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শুধু

জ্ঞান লাভ করো। জ্ঞানহীন ব্যক্তির

মুসলমান হওয়াও কঠিন।

লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

এর শাদ ম জু ম দা র

http://www.humannewspaper.wordpress.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.