নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দুনিয়ায় আপনি আমন্ত্রিত

রাজন আল মাসুদ

খুঁজে ফিরি স্বপ্নগুলো............

রাজন আল মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকার পথে পথে ৪

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:২৩

সকালে ঘুম থেকে উঠেই হুড়োহুড়ি| মশারা নাগাল পাবার আগেই তাঁবু গুটিয়ে ফেলে রওয়ানা হতে হবে| গতকালকের কামড়ের জায়গাগুলো ফুলে গোটা গোটা হয়ে আছে| একই সুযোগ আজ আর ওদের দেয়া যাবে না| কিন্তু বিধি বাম| সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও ওদের ফাঁকি দেয়া গেল না| হাত পা থাপড়াতে থাপড়াতেই সবাই রওয়ানা দিলাম| হাইকিং ট্রেইল পার হয়ে সকালের নাস্তার জন্য ঢুকে পরলাম “Bear Trap Inn” নামক ৬০ বছরের পুরোনো একটা স্থানীয় ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টে| রেস্টুরেন্টে ঢুকেই নামকরণের স্বার্থকতা বোঝা গেল| পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়ে স্টাফড বেয়ার, বিভার, হরিণসহ আরও নানান প্রাণী| দারুন জায়গা| ঝটপট খাবারের অর্ডার দিয়েই, পুরো এক সন্ধ্যা এক রাত পরে ওয়াই ফাই পেয়ে ইন্টারনেট জেনারেশন ঝাপিয়ে পড়ল ফেসবুকে নোটিফিকেশন, মেসেজ চেক করতে আর ছবি আপলোড করতে| কেউ বা ব্যস্ত হয়ে পড়লো ফোনে| এর মধ্যে অপু ভাই "ওয়াই ফাই হান্টার" উপাধি পেয়েছেন| কেন তা বুদ্ধিমানেরা বুদ্ধি করে বুঝে নিবেন| বোকারা বুদ্ধিমানদের থেকে বুঝে নিবেন| সব কি আমিই বলে দিবো নাকি !!!!!

আজ হাঁটতে হবে বেশ অনেক| তাই পেট পুরে নাস্তা করা হল আর সাথে ১ জগ কফি| আজ হাইকিংয়ে আমরা ফলো করব মসকুইটো রিভার ট্রেইল, পিকচার্ড রকস ক্লিফ, মাইনারস বীচ, চ্যাপেল রক ট্রেইল, তারপর চ্যাপেল বীচ| ১২ মাইলের পাহাড়, বন আর হ্রদ মিলিয়ে এক অর্ধ বৃত্তাকার ট্রেইল| পুরো শরীর ঢেকে ঢুকে আজ আমরা তৈরী| কারণ লিটল বিভার ট্রেইলে যে পরিমান মশা-মাছি ছিল আর আজ ট্রেইলের নামই মসকুইটো রিভার ট্রেইল| কিন্তু প্রকৃতি মুঁচকি হেসে মজা নিয়ে নিল| মশক নদীর পথে মশা নেই বললেই চলে| মশক নদী পার হবার পরে ট্রেইল উঁচু হয় শুরু করল| মনের দিক দিয়ে এখনো ১৮ বছরে আটকে থাকলেও, ভুঁড়ি সর্বস্ব শরীরটার বয়স তো প্রায় ৩০ হয়ে গেল| এছাড়া ১৬ বছর ধ্রুম্য শলাকার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ফুসফুস ঠিক রাজি হতে চায় না হাইকিংয়ে| তারপরও হাঁচড়ে পাঁচরে যখন ক্লিফের উপরে উঠলাম তখন সেই মোহময় দৃশ্য সেলফি তোলার কথাও ভুলিয়ে দিল| হলদে-লালচে ক্লিফের নিচে সাদা বালি, তার সামনে হালকা পান্না সবুজ পানি মিলে গেছে গাঢ় নীল পানির সাথে| মোহ কাটার পর ক্যামেরায় অনেক চেষ্টা করলাম সেই রূপ ধরার জন্য| কোন ভাবেই ধরা গেল না| কি জানি বাকি রয়েই গেল|

এরপরের ট্রেইল ক্লিফের পাশ দিয়ে| আক্ষরিক ভাবেই ভয়ংকর সুন্দর| ট্রেইলের পাশে খাড়া ক্লিফ নেমে গেছে কয়েকশ ফুট নিচে| কিন্তু ভয়ের চেয়ে রোমাঞ্চই লাগল বেশি| অণু ভাইয়ের হিমালয় হাঁটা পায়ের সাথে দূর্বল ফুসফুস আর ভুঁড়ি ওয়ালা পেট নিয়ে ঠিক পেরে উঠছিলাম না| ওনার সাথে তাল মিলাতে প্রায় দৌড়াতে হচ্ছিলো আমাকে| কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম এভাবে সম্ভব না আমাকে দিয়ে তাই যা আছে কপালে ভেবে নিজের চিরচারিত দুলকি চালে হাঁটায় ফেরত গেলাম এবং কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেললাম| ১ ঘন্টা বেহুদা চেষ্টার পরেও যখন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন একটু ভয় ভয় লাগা শুরু হল| এর মধ্যে সাথে আনা পানি শেষ| প্রচন্ড রৌদ্রে পা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ| এক ক্লিফের পাশে পা ঝুলিয়ে গাছে হেলান দিয়ে বসে প্রায় আধা ঘন্টা রেস্ট নিয়ে যখন একটু ধাতস্ত্ব হলাম তখন আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম গাছপালার ফাঁকে বীচ দেখা যাচ্ছে| নিচের দিকে নামার চেষ্টা শুরু করলাম| অনেকটা নামার পর দেখলাম এক জায়গায় ক্লিফ মাত্র ১০ ফুট উঁচু বীচ থেকে| ঝিরি-ঝিরি পানি পরছে| নিজেকে মোগলী মনে করে ক্যামেরাটা শক্ত করে ধরে ছেঁচড়ে নেমে গেলাম নিচে| হাঁটু পানির মধ্যে পড়লাম| বীচে উঠে তাকিয়ে দেখি দূরে চ্যাপেল রক দেখা যায়| শান্তি লাগলো অনেক যা একটু পরেই উবে গেল বালির মধ্যে হাঁটতে গিয়ে| মিনিট বিশেক হাঁটার পর পৌঁছালাম চ্যাপেল রকে| অনেক বোটে করে সরাসরি এই বীচে এসেছে আরাম করে| তাদের অনেকেই সান বাথ নিচ্ছে, কেউ বিয়ার খাচ্ছে বোটে বসে| এনার্জি লেভেল তখন এতো নিচে যে ভাবছিলাম এদের কাউকে বলবো নাকি সামনের গন্তব্য পর্যন্ত লিফট দিতে| লজ্জার মাথা খেয়ে শেষ পর্যন্ত আর বলা গেল না| চ্যাপেল রকের পাশের ঝর্ণা থেকে বালি মিশ্রিত পানিই খেয়ে ফেললাম কিছুটা| চ্যাপেল রক বিখ্যাত এর উপর বাড়তে থাকা শতবর্ষী পাইন গাছটার জন্য| এর নিজের বয়সও প্রায় পাঁচ কোটি বছর !!!!! এই বিখ্যাত ল্যান্ডমার্কটির প্রতিচ্ছবি আছে আমেরিকা কোয়ার্টার ডলারের কয়েনে| একটু পরে দেখি অণু ভাইরা অপেক্ষা করছেন আমার জন্য| তাদের থেকে পথের হদিশ নিয়ে বললাম আপনারা এগিয়ে যান আপনি জিরিয়ে আসছি| এরপরের ট্রেইলে তেমন দেখার কিছুই নেই| শুধু গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা| বেশ খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে আরো ঘন্টা দুই হাঁটার পরে যখন গাড়ির কাছে পৌঁছালাম তখন আমি জীবিত কি মৃত ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না| তিন বোতল পানি ঢক ঢক করে খেয়ে গাড়ির সিটে পিঠ এলিয়ে দেয়ার পর মনে হল শরীরে জান ফিরে পেয়েছি| আঁকা-বাঁকা রাস্তায় রেজওয়ান যখন তীব্র গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল আর খোলা জানালা দিয়ে হু হু বাতাস সবার চুল এলোমেলো করে দিচ্ছিল তখন যা যা দেখেছি চিন্তা করেই ভালো লাগলো| তার উপর এত লম্বা ট্রেইলটা শেষ করতে পেরেছি|

পরের গন্তব্য ম্যাডিসন, উইসকনসিন|

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৭:৫১

ইমরান আশফাক বলেছেন: ছবিগুলো নেট থেকে নেয়া নাকি আপনার নিজের তোলা? আপনার নিজের তোলা হলে বলতেই হবে যে আপনি একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারের চেয়ে কম নন কোন অংশে।

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৪৭

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: ছবিগুলো আমার নিজের ফোনে তোলা| ফটোগ্রাফি শেখার চেষ্টায় আছি| ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম :)

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৩৩

রাকু হাসান বলেছেন: যাত্রা শুভ হোক

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩০

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩০

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১০

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: ছবিগুলো খুব সুন্দর। আপনার বর্ণনাও পড়তে ভালো লেগেছে। কিন্তু সাগরের বিশালতা কেমন একটা শূন্যতা, আদিম হাহাকার আর ভীতির জন্ম দেয় আমার ভেতরে।

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩১

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: সাগরে নেমে সাগরকে আপন করে নিলেই আর ভীতি থাকবে না :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.