নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দুনিয়ায় আপনি আমন্ত্রিত

রাজন আল মাসুদ

খুঁজে ফিরি স্বপ্নগুলো............

রাজন আল মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকার পথে পথে ১১

২১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:০৯

মন্টানা থেকে আইডাহো স্টেটের এক কোনা দিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম ওয়াশিংটন স্টেটে। দিনের আলো শেষ হয়ে তখন রাত নেমেছে। সারাদিনের ড্রাইভিং এ ক্লান্ত আমি। রেজওয়ানের শরীরটাও ভাল না। রাত্রের মত থামলাম ড্যাভেনপোর্ট শহরে। নাম না জানা এক মোটেলের বিছানায় পিঠ লাগাতেই দু চোখে নেমে এলো রাজ্যের ঘুম।

সকালে উঠে সেই রোজকার রুটিন। আমার আর অপু ভাইয়ের রান্না করা। রেজওয়ান অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। নিজের পংখীরাজের দায়িত্ব আবার বুঝে নিল ও। ওয়াশিংটন স্টেট নিয়ে আসার আগে আমি তেমন কোন খোঁজ খবর নেই নি। আমার প্রথম রুট প্ল্যানে এটা ছিলও না। কিন্তু আসার পর বুঝতে পারলাম এখানে না আসলে এই ট্যুরটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। বুনো পশ্চিমের বুনো ছায়া এখানে আছে ষোল আনাই। দিগন্ত বিস্তৃত তৃণভূমি মিশে গেছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ে, চঞ্চলা নদী মিশেছে নীলাভ হ্রদে, আর আছে বন। অনেক মাইল পর পর দেখা যায় একটা র‍্যাঞ্চ। ঘোড়ার পালেরও দেখা মিলল তবে বুনো নাকি পোষা ঠিক বুঝতে পারলাম না। পোষা হবার সম্ভবনাই বেশি। ছোট ছোট শহরে বারগুলোর উপরে পুরোনো দিনের মত "স্যালুন" লেখা আর তার দরজাও কাঠের। সামনে রাখা ওয়াগন। পুরোনো ব্যাপারগুলো ধরে রাখার এই চেষ্টাটা খুব ভাল লাগলো আমার।

মধ্য দুপুরে যখন নর্থ ক্যাসকেড ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছালাম তখন পেটের ভিতর ছুঁচো নাচছে। রেজওয়ান সাজেশান দিল একবারে লেক ডিয়াবলোর রেস্ট এরিয়াতে যেয়ে খাবার। তাতে রথ দেখা আর কলা বেচা দুই হবে। বলাই বাহুল্য খাবার বলতে সেই পুরোনো ডাল-চালের খিচুড়ি আর সাথে ওয়ালমার্টের রোস্টেড চিকেন। পার্কিং এরিয়া একটু নিচে রেস্ট এরিয়া থেকে। খাবার-দাবার নিয়ে যখন ওখানে পৌঁছালাম তখন আর ক্ষুদার কথা মনে থাকলো না। রেস্ট এরিয়া আর লেক ভিউ এরিয়া একই সাথে। সেখানে দাঁড়ালে নিচে একটা অপার্থিব দৃশ্য দেখা যায়। সবুজ পাহাড়ের মাঝে অন্য কোন গ্রহের টারকোয়েজ রঙের এক লেক যেন কেউ এখানে এনে রেখে দিয়েছে। এই লেক এই পৃথিবীর না। সূর্যের আলোয় সেই লেকের পানি ঝক ঝক করছে। গ্লেসিয়ারের গলে যাওয়া পানি বিশেষ ধরনের মাটি বা সেডিমেন্ট লেকে বয়ে নিয়ে আসে বলেই পানির রং এমন। আমার দেখা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর লেক এটা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে এই বিস্ময় দেখতে দেখতে কখন যেন পার হয়ে গেল প্রায় দুই ঘন্টা। এখানে থাকা যায় এক জীবন। হাজার বছর আগে কোন এক ন্যাটিভ আমেরিকান যোদ্ধা অথবা স্কাউট যখন পাহাড়ের ফাঁক থেকে বেরিয়ে প্রথম এই লেক আবিষ্কার করে, ওর কেমন লেগেছিল এই অপার্থিব সৌন্দর্য? সেই বন্য প্রকৃতিতে ডিয়াবলো লেক কোন অপ্সরার রূপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল তার সামনে? আমার আর রেজওয়ানের খুব ইচ্ছা হল এই লেকে কায়াকিং করার কিন্তু অণু আর অপু, দুই ভাইয়ের বাগড়া দেবার কারণে ইচ্ছা আর বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব হল না।

কয়েক মাইল সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম লেক রসের সামনে। লেক ডিয়াবলো আর লেক রস কানেক্টেড হলেও "রস" এর পানি গাঢ় নীল। কি অদ্ভুত ব্যাপার। সৌন্দর্যে এও কম না কিন্তু ডিয়াবলোর সামনে সব লেকই নগন্য। আমার মনটা হটাৎ একটু খারাপ হয়ে গেল। আব্বু-আম্মুকে কি এগুলো দেখানোর সুযোগ হবে আমার কোনদিন? বয়স তো তাদের কম হল না। ভিসাগত জটিলতায় কবে আসতে পারবে তারা তাও নিশ্চিত না। আজকে এই যে এত জায়গা ঘুরে বেড়াচ্ছি, এর পিছনে অবদান তো তাদেরই।

নর্থ ক্যাসকেড থেকে পরিকল্পনা ছিল সিয়াটলের দিকে যাওয়ার। কিন্তু অণু ভাই শেষ মুহূর্তে এক পার্ক রেঞ্জারের সাথে কথা বলে ডিসিশান নিলেন যেহেতু আমরা পরে অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কে যেতে চাই, সেটা ঐ পথে গেলে অনেক বেশী ঘোরা হয়ে যাবে, তার চেয়ে আমেরিকা-কানাডার জলসীমানা গড়ে দিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের যে প্রণালী সেখান দিয়ে একটা ফেরি ধরে এগোলে কিছুটা সময় বাঁচে। সময় বাঁচানোর চেয়ে সিয়াটল দেখাটা যে মুখ্য উদ্দেশ্য সেই কথা তাকে আর বোঝানো গেল না এই যাত্রা।

শেষ বিকেলের আলোয় কুপারভিলের কীস্টোন ফেরিঘাটে এসে পৌছালাম। দিনের আলো থাকতে থাকতে যতদূর যাওয়া যাবে ভেবেছিলাম ততদূর আসলে আসতে পারিনি। আসার পর ফেরির জন্য যে গাড়ির লাইন দেখলাম তাতে আত্মা শুকিয়ে গেল। কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে পারব। ফেরি পারাপারে আরও লাগবে ৪৫ মিনিট। জি.পি.এসে রি-রাউটে দেখলাম তারচেয়েও বেশি সময় লাগবে। অগত্যা মহাযাত্রার লাইনে শামিল হয়ে গেলাম। তখন ফেরি মাত্র ছেড়ে যাচ্ছে। আশেপাশের সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক ইতস্তত ভাবে হাঁটাহাঁটি করছে। আমরাও নামলাম। আমেরিকানরা নিজেদের স্বভাবমতো প্রকৃতি উপভোগের সমস্ত ব্যবস্থা এখানেও রেখেছে। পানির থেকে নিরাপদ দুরুত্বে আছে বসার জন্য কাঠের বেঞ্চ। এক বেঞ্চের টেবিলে ঝিনুক আর পাথর পরম মমতায় সাজিয়ে রেখে গিয়েছে কেউ। হয়তো কোনো প্রিয় মানুষের হাত ধরে। হাঁটু সমান ঘাসের মাঝে চিকন হাঁটা পথ। বেশ অনেকটা দূর হেঁটে যাওয়া যায় ফেরিঘাটের আশেপাশে। পাখিরা উড়ছে, হাঁটছে হাতের নাগালে। ফেরিটা চোখের আড়াল হওয়ার পর পরই অদ্ভুত এক শান্ত নিস্তব্ধতা চারপাশে। গ্রামের বাড়ি যাবার সময় লঞ্চ যদি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেত ভোর রাতের আগেই, মফস্বলের সেই ছোট্ট লঞ্চ ঘাটে কর্মব্যস্ত দিন শুরু হবার আগে নদীর পানির সাথে জেঠির বাড়ি লাগার ছলাৎ ছলাৎ শব্দের মাঝে মিশে থাকত এমন শান্ত নিস্তব্ধতা। এ এক জাদুকরী অনুভূতি। এমন সময় মন হালকা হয়ে যায়। প্রকৃতির বিশালতার কাছে জীবনের প্রতিদিনের ছুটে চলা মনে হয় অতি তুচ্ছ। এমন পরিবেশই বৈরাগ্যের টান আনে মনে। নদীর ঠান্ডা বাতাস যতটা না কাঁপন ধরে শরীরে তার চেয়ে বেশি কাঁপন ধরায় হৃদয়ে।

ভেন্ডিং মেশিন থেকে পেপসি নিতে গিয়ে পরিচয় হল ব্র্যাডের সাথে। সদালাপী মানুষ। ভিয়েতনামের এক মেয়েকে বিয়ে করে বেশ সুখেই আছে। কোন এক ইউনিভার্সিটির যেন প্রফেসর। আনমনা আমি ওর অনেক কথাতেই কেবল হু হা করে গেছি। কাঠের বেড়ার উপর ভর দিয়ে ব্র্যাডের সাথে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিতে দিতেই আমাদের ফেরি চলে এলো। ফেরি যখন মাঝপথে তখন পৃথিবী জোড়া লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য ডুবে গেলো প্রশান্ত মহাসাগরের সেই প্রণালীতে।

টাউনসেন্ড নামের শহরের জেঠিতে যখন ফেরি থামল তখন চারিদিকে অন্ধকার। রোমান্টিসিজমের তাড়নায় এতক্ষন ক্লান্তি, ক্ষুদা কিছুই লাগেনি। অন্ধকারের প্রেরণায় তারা এবার শরীরের উপর জাকিয়ে বসল। আশেপাশের লোকাল রেস্টুরেন্টগুলো দেখলাম বেশ এক্সপেন্সিভ। তাই আমেরিকার গরিবের একমাত্র ভরসা ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে সস্তায় পেট পুজো করে রাত্রের কাইত হবার ব্যবস্থা খোঁজা শুরু করলাম সবাই। আশেপাশের কোথাও কোন হোটেল-মোটেল ক্যাম্পসাইট খালি নেই। কি একটা অবস্থা। এমন ঝামেলায় এতদিনে কোথাও পড়িনি। হয়তো হোটেলের রুমরেট বেশি ছিল কিন্তু রুম অন্তত ছিল। রেজওয়ান ১ ঘন্টা দূরের এক মোটেলে দেখল রুম খালি আছে। পড়িমরি করে রওয়ানা দিলাম। কিন্তু হায়রে কপাল, কপালের নাম গোপাল। আমরা মোটেলে ঢোকার সময় আমাদের ঠিক আগেই একটা গাড়ি ছিল। দুইটা মেয়ে নেমে আমাদের আগেই রুম নিয়ে নিল আর ওটাই ছিল ওই মোটেলের শেষ রুম। মেয়েদের দিকে ক্রুর শীতল খুনী দৃষ্টি দিয়ে আবার মোটেলের তল্লাশি। আরো ৩০ মিনিট দূরে এক চাইনিজ নন ব্র্যান্ডেড মোটেলে তিন বেডের এক রুম পাওয়া গেল চড়া দামে। টাকা গেলে টাকা আসবে কিন্তু এই রাত গেলে আর শক্তি আসবে না ভেবে সেটাই নিয়ে নিলাম। প্রাইভেট মোটেল হলেও রুমটা বেশ ভাল। কিচেন ও আছে সাথে। রুমে ঢোকার ৫ মিনিটের মধ্যে জামা কাপড় পাল্টে হাতে মুখে পানি দিয়ে সবাই ঘুমে তলিয়ে গেল।


*****অনেকেই ছবি দেখতে চেয়েছেন। সামুতে ছবি আপলোড দেয়া এক বিশাল ঝামেলা লাগে। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে যেয়ে ছবিগুলো দেখতে পারেন (যদি ধৈর্য্যে কুলায়, হাজার দুয়েক ছবি আছে :p)। এলবাম পাবলিক করা।
https://www.facebook.com/rajon.al.masud/media_set?set=a.2057339444310714&type=3

Diablo Lake:

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:১৫

আমি মুক্তা বলেছেন: দুুর্দান্ত বর্ণনায় আবারও ফিরে গেলাম পুরোনো পশ্চিমে। ভালো লাগলো আপনার সুন্দর উপস্থাপনা।

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমার খুব ইচ্ছে আমেরিকা যাওয়ার।
ইশ!কবে যে আমিও বড় লোক হবো।

৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমার খুব ইচ্ছে আমেরিকা যাওয়ার।
ইশ!কবে যে আমিও বড় লোক হবো।


আপনি আমেরিকা কেন যাবেন? আপনি যাবেন সৌদি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.