নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

দার্শনিক ভিত্তির উদাস কিছু কথা

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০১

দার্শনিক ভিত্তির উদাস কিছু কথা





পৃথিবীর সৃষ্ট লগ্ন থেকে সত্য এবং মিথ্যার দ্বন্দ্ব চলে আসছে । এ দ্বন্দ্ব পৃথিবীর ধ্বংস হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত চলবে । সত্য এবং মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকালের চিরন্তন । বিধাতা সত্যকে সৃষ্টি করার সাথে মিথ্যাকেও বোধ হয় তার সাথে গেঁথে দিয়েছেন । তার এ সৃষ্টির মধ্যে এক অসীম রহস্য বিদ্যমান । যা ভেদ করা কোন সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয় । পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে চলতে থাকা সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বে কখনও সত্য আবার কখনও মিথ্যা জয়ী হয়েছে । পৃথিবীর কোন ইতিহাসে সত্য বিজয়ী হয়ে বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায় নি । যুগে যুগে মিথ্যার দম্ভ সত্যকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে । সত্য কখনো স্তিমিত হয়ে যায়নি । সত্য গোপন হয়েছে ঠিক তবে সময়মত সত্য তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে । মানুষ এবং মানবতার বিজয় নিশ্চিত করেছে । কালক্রমে এমনভাবেই সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্বের মস্ত মস্ত সভ্যতা । কোন কোন সভ্যতা সত্যকে ভিত্তি আঁকড়ে গড়ে ওঠেছে আবার অনেক সভ্যতা মিথ্যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে । সত্য প্রকৃত সূখ দেয় এরকম কথা প্রচলিত আছে । একথা আসলেও সত্য তবে সত্যের সে সূখ বড়ই করুণ । অনেক শোধনের পর সত্য যে সূখ দেয় সে সূখকে তখন অমৃত মনে হলেও সত্যের সূখকে আলিঙ্গন করার পূর্বে মিথ্যা এমনভাবে মাথা উঁচিয়ে থাকে যেন মিথ্যার কাছে সত্যের কোন মূল্য নাই । কথায় বলে সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, সত্য কথা তিক্ত হয়, সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে । শুধু বিশ্বাস নয় এ চিরন্তন বানীগুলো সবাই অন্তরে ধারণ করে । এবং সত্য কেন্দ্রিক জীবন গঠনে সকলেই কম বেশি চেষ্টা করে ।



এক হাজার বা তারও আগের কথা টেনে এনে উপমা দেয়ার সৎ সাহস আমার নাই । আমি সত্যকে বিচার করব বর্তমান সময়ের অভিজ্ঞতায় । বর্তমানে সত্য কি মানুষকে মুক্তি দেয়, সত্য কথার তিক্ততার মাত্রা কেমন, সমাজের কতসংখ্যক লোক সত্যকে ভালবাসে ?? বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ জঙ্গলে গিয়ে বাস শুরু করতে পারবে না । জীবনের বাস্তবতাকে সকলের অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও আলিঙ্গন করতে হবে । আমরা প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেকের বিচার করি তবে দৈনন্দিন যে কথাগুলো বলি তার কত শতাংশ সত্য বলি কখনো কি হিসাব করে দেখেছি ? এই সমাজে যে সকল মানুষগুলো বিপদ গ্রস্থ তারা কি সত্য বলে না ? সত্য কথা বলতে গেলে কেন আপন মানুষের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে ? সমাজের সত্যবাদীরা কি মানুষের ভালবাসার পাত্র নাকি শত্রুতার আঁধার । আমাদের আশপাশের সমাজের বিচার করলে খুব সহজেই দেখতে পাব খুব কম সংখ্যক লোক সত্য কথা বলে । বিচারের স্বার্থে ধরে নিলা- আমি, আমার আত্মীয় স্বজন এবং আমার প্রতিবেশীরা সবাই সত্য কথা বলে । শুধু আমি এবং আমার পার্শ্ববর্তীরা সত্যবাদী নয় বরং পৃথিবী নামক গৃহের সকল মানুষকেও যদি সত্যবাদী মনে করি তাহলেও কোন ক্ষতি নাই । সবাই যদি সত্যবাদী হত তবে জগৎময় সূখে ভরে থাকত । কিন্তু জগতের সর্বত্র অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা । কাজেই আমাকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে জগতের সকলে সত্য বলে না । আমার পরিবারের মধ্যেও যেহেতু বিশৃঙ্খলা এবং অশান্তি বিরাজমান সুতরাং আমার পরিবারের সকলেও সত্য বলে না । শুধু বাকি থাকলাম আমি । আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি কখনো সত্য বিমূখ হই না । অন্যায়ের সাথে আপোষ করি না । আমি সত্যবাদী কিংবা মিথ্যাবাদী সেটা মাপার নির্দিষ্ট কোন মানদন্ড থাকলেও মোটামুটি সহজ একটি তত্ত্বের বিচারে সেটা দেখতে পারি । আচ্ছা নিজের মধ্যে কি কখনও কামনার দ্বন্দ্ব হয় । বলতে হবে অবশ্যই হয় । একই সময়ে আমার অনেক কিছু পেতে ইচ্ছা করে অথচ আমার সাধ্যের একটি সীমাবদ্ধতা আছে । আমি ইচ্ছা করলেই কাল্পনিক সুপার ম্যান হতে পারি না । অসীম স্্রষ্টার সসীম সৃষ্টি হিসেবে সর্বত্রই আমার সীমাবদ্ধত । দু’টো সত্য আমার সামনে উপস্থিত হলে একটি সত্যকে বর্জন করে অন্য সত্যটিকে গ্রহন করতে হয় । দু’টো সত্যকে গ্রহন করার ক্ষমতা আমার নাই । কাজেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি একটি সত্যের সামনে আত্মবিসর্জিত হই । এ বিসর্জন কি সত্যকে অস্বীকার করা নয় ।



সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে এ কথা আমি বিশ্বাস করি না । সত্যকে কেবল সত্যবাদীরাই ভালবাসতে পারে । যারা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত তারা কখনো সত্যবাদীকে ভালবাসতে পারে না । তাদের প্রধান শত্রুই সত্য । মিথ্যাবাদীরা পৃথিবীতে মিথ্যাকে জয়ী দেখতে চায় । মিথ্যাকে জয়ী করতে পারলে মিথ্যার সম্্রাজ্যের তারা রাজত্ব করতে পারবে । সত্যবাদীতা এবং মিথ্যাবাদীতার এক ছাদের নিচে দাঁড়াতে পারে না । সুতরাং সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে একথা বলা চরম মিথ্যাবাদীতা । সত্যকে কিছু মানুষে ভালবাসতে পারে তাই বলে সবাই নয় । সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় একথাটা এখন আর সত্য নাই বরং মিথ্যা মানুষকে মুক্তি দেয় । আগে শুনতে পেতাম একটি মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে দশটি মিথ্যা বলতে হয় কিন্তু এখন একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে দশটি মিথ্যা বলতে হয় । সমাজে সত্যবাদীর ভোগের কোন সীমা নাই । সত্যবাদীকে সমাজের সর্বদিক দিয়ে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় যেন সত্যের নিভূ নিভূ অবস্থা । পূর্বে মানুষ সত্য বলে ন্যায়ের পক্ষে থেকে আত্মতৃপ্তিতে ভূগতো কিন্তু সে দিন এখন আর নাই । এখন মিথ্যা বলে অপরাধ করে মানুষ আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, চরম সূখ পায় । তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে কার ক্ষমতা বেশি সত্যের নাকি মিথ্যার ? সকল তর্কের পরেও সবাই সত্ত্বের ক্ষমতার কথা বলবে । সত্যের ক্ষমতা যদি থেকেই থাকে তবে সত্যবাদীদের এমন দুরাবস্থা কেন ?



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.