নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘জন্মিলে মরিতে হইবে’ নীতিতে এগুচ্ছে বাংলাদেশ । ভূল ক্রমেও একবার জন্ম গ্রহন করিয়া বসিলে অবশ্যই তাকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিতে হইবে । কেউ যদি ইচ্ছা করিয়া দু’চার দিন বেশি বাঁচিতে চায় তবে তাকে স্মরণ করাইয়া দিতে হইবে ক্ষণজন্মা কবি সুকান্তের অমর কবিতা থেকে দু’ছত্র । যেখানে কবি বলিয়াছেন ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান, জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত্যু আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের’ । সুকান্ত তার এ কবিতার চরণ যে প্রেক্ষাপটে লিখুক না কেন বাঙালীদের একাংশ কবিতার বাহ্যিক আদেশানুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করিয়া চলিছে । কেউ মরতে একটু দেরী করিলে তাকে জোড় করিয়া মারাই যেন তাহাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে । মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট একটি ভূখন্ডে ১৬ কোটির অধিক লোক বাস করিবে তাহা তারা কিছুতেই মানিতে নারাজ । এত লোকের মধ্যে কিভাবে নতুন শিশু আসিয়া তার বাসস্থান পাইবে ? এই ভাবনায় দেশের এক শ্রেণীর লোককে কেবল ভাবাইয়া তোলে নাই বরং তাদেরকে একেবারে বিচলিত করিয়া ফেলিয়াছে যে কারনে তাহারা যত্র-তত্র লোকদিগকে খুন করিয়া চলিছে । গুম কিংবা অপহরণ করিয়া বিভিন্ন নৃশংস উপায়ে মানুষদেরকে হত্যা করিতেছে । প্রয়োজনে হাতে পায়ে ডজন ডজন ইট জুলাইয়া দিয়া মানুষের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় বিশেষ করে মৃত্যুকালীন সময়ে যে বস্তু পানাহার না করাইলেই না সেই পানির মধ্যে একেবারে ঢুবাইয়া দেয়া হইতেছে । যেন মুত্যু ব্যক্তি না বলিতে পারে, ওহে ধরাবাসী ! যাইবার কালে আমাকে এক ফোঁটা পানিও খাইতে দিলি না । তোরা এত কৃপণ ইইলি কেন ? এই অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একেবারে সলিল সমাধি দেওয়া হইতেছে । দেশের অবশিষ্ট মানুষের মধ্য থেকে যাহাদের রাষ্ট্র থেকে নামে মাত্র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাহার তাদের দায়িত্ব ফলাইবার জন্য আরামের যায়গা থেকে অধিক পানি খাইয়া মরা লাশগুলি উদ্ধার করিয়া দুনিয়ায় একটি বাড়তি ফ্যাসদা বাঁধাইতেছে । কেনরে ? কি দরকার ? মুত্যু মানুষগুলিকে টানিয়া আনিয়া শান্তির দেশে অশান্তি সৃষ্টি করিবার !
এমনিতেই পার্শ্ববর্তী বন্ধু দেশ ভারত লইয়া আমরা বহুত শান্তিতে আছি ! তাহারা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে তিস্তার পানি না দিয়া দেশের উত্তারঞ্চলকে আরব ভূমির ন্যায় আকর্ষিত মরুভূমিতে পরিণত করিবার ইচ্ছা করিয়াছে । দেশের গরীবদেরকে ছাগল, ভেড়া কিংবা উট চড়াইবার জন্য ভিটে মাটিটুকু বিক্রি করিয়া লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করিয়া পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ করিয়া দীর্ঘ কয়েক বছরের জন্য বিদেশের মরুভূমিতে পাড়ি জমাইতে হইবে না । মাত্র কয়েক’শ টাকা খরচ করিয়াই উট, বকরী ও ভেড়া চড়াইবার স্বাদ পূরণ করা যাইবে । এহেন একটি কাজ বন্ধুপ্রতীম ভারত রাষ্ট্র করিয়া দিতেছে আর আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করিয়া তাদের বিরুদ্ধে লংমার্চ নামক একটি কর্মসূচী পালন করিতেছি গাড়ীতে চড়িয়া । আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ ! ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গ মাইলের ভারতের হঠাৎ করিয়া মনে হইল বৃটিশরা চলিয়া যাইবার সময় তাহাদেরকে ঠকাইয়া গিয়েছে । ১৯৪৭ সালে যখন ভারত পাকিস্তান ভাগ করিয়া দিয়েছে তখন ভারতের ভাগে নেহায়েত কম ভূমি রাখিয়াছে । তাহা না হইলে পাকিস্তানকে ৯,৪৩,৬৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি কেন দেয়া হইল ? যদিও ভারতের বেধোদয় হইত একটু সময় লাগিয়াছে তা না হইলে ১৯৪৭-১৯৭১ সালের মধ্যে তাদের দাবী উত্থাপণ করিয়া এবং সে দাবী পূরণ করিয়া ছাড়িত ! তাদের প্রাপ্যাংশ এতদিন ভূলিয়া থাকিলেও ১৯৭১ সালে সৃষ্টি বাংলাদেশকে ধাতস্থ হইতে কিছুটা সময় দিয়া ২০১৪ সালে প্রথমে গুন্ডে ছবির মাধ্যমে পরবর্তীতৈ বিজেপীর এক শীর্ষ নেতার মাধ্যমে তাদের দাবী উপস্থাপন করা হইলো । ভাবটা যেন এরকম, হয় আমাদের দাবী পূরণ করিয়া দাও নইলে আমরাই আমাদের অধিকার আদায় করিয়া ছাড়িব । হায়রে ! ভারতের মত আমিও বোকামী করিতে শুরু করিলাম । তারাও যেমন তাদের দাবী উত্থাপণ করিতে দীর্ঘ সময় লাগাইয়াছে আমিও তাদের দাবীখানাকে প্রকাশ করিতে ভূলিয়া আছি । আমি আর দেরী করিতে পারিতেছি না। এবার তাদের ন্যায্য দাবীখানা প্রকাশ করিয়াই ছাড়িব । ভারতের রাজনৈতিক সংঘঠন (বিজেপী) যাদেরকে পরবর্তী ভারত সরকার গঠন করিয়া থাকিবে বলিয়া ভাবা হয় সেই দলের একজন বড় নেতা যাহার নাম সুব্রানিয়াম স্বামী, তিনি বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ জমি ভারতের প্রাপ্য বলিয়া দাবি করিয়াছেন । তাদের দাবী অনুযায়ী খুলনা এবং সিলেট অংশ তাহাদের ন্যায্য পাওনা ! বৃটিশ সরকার ভূল করিয়া এ অংশকে পাকিস্তানকে তুলিয়া দিয়াছিল । পাকিস্তানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ করিয়া বাংলাদেশও এ অঞ্চল তাদের করিয়া লইয়া ছিল । কিন্তু ভারত এখন তাহার অংশ ফেরত চাচ্ছে ! মালিক জমি বর্গা দিয়ে যেমন বর্গাচাষীর কাছ থেকে জমি ফেরত নেয় ঠিক তেমন করিয়া । বাঙালীরাও হয়ত অন্যায় ভাবে কিছু গ্রহন করিত নারাজ ! যদি তাহাই না হইত তাহলে মাত্র ৮-১০ জন রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে দেশের সুশীল সমাজ গণজাগরণ মঞ্চ গঠন করিয়া বিরানী-কোপ্তা খাইয়া শরীর স্বাস্থ্য মোটাতাজা করিয়া হইলেও রাত দিন চিৎকার করিয়া তাদের দাবী আদায় করিয়া ছাড়িল । শরীর সুস্থ রাখিবার প্রয়োজনেই সুষম খাদ্য প্রয়োজন । তাই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা একটু পুষ্টিকর খাবার খাইয়াছে তাহাতে তাদেরকে ধন্যবাদ না দিয়া উপায় কোথায় ? মাঝে মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকারসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা দুই-পাঁচ কোটি টাকা পকেটে লইয়াছে তাহাতেই বা দোষ কী ? দেশকে তারা না হয় অতিমাত্রায় ভালোবাসে, কিন্তু তাহাদের আত্মীয় স্বজন এবং পরবর্তী প্রজন্মের কথাও তো একটু ফোঁটা ভাবিতে হইবে । তারা দায়িত্বশীলদের মত কর্তব্য পালন করিয়াছে আর সমালোচকরা তাদের সমালোচনা করিয়া তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়া ছাড়িয়াছে । কী দুর্নাম ! কী দুর্নাম ! বোধ হয় এজন্যই সুশীল সমাজ গোস্বা করিয়া তাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসিবার পরেও কোন ধরণের মঞ্চ গঠন না করিয়া ছাড়িয়াছে । তারা প্রকাশ না করিলেও তাদের ভাবখানা যেন, দেশের জন্য কাজ করিব আর তোমরা পশ্চাতে বসিয়া দুর্নাম রটাইবে এ সুযোগ আর তোমাদের দিচ্ছি নে । দেশের আরেক শ্রেণী ভাবিতেছে “দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইব ঋণ’ । তাইতো তারাও চুপ । আমার মত গন্ড-মূর্খ দু’চারজন যারা আছে তারা কয়েক দিন বক বক করিয়া এক সময় ইট লইয়া পানিতে তলাইয়া গিয়া মাছে আর পানির পোকা মাকড়ের সাথে বসবাস করিয়া বড়ই শান্তিতে বাস করিবে ! হয়ত ডজন ডজন পোড়া মাটিসহ আমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও উদ্ধার করিয়া কোন একজায়গায় মাটি চাপা দিয়া আমার শেষ সম্বল ইটগুলো দিয়া একখানা ফলক নির্মান করিয়া তাতে খোদাই করিয়া লিখিয়া দেওয়া হইবে ‘‘ অসম্ভব বকবকানী করার কারনে এ লোক চলিয়া গিয়েছে, পরিচয় সনাক্ত করা যায় নি তবে ভবিষ্যতে আর যদি কেউ অনর্থক বকবক করিয়া থাকে তাহাদেরও এরুপ দশা হইবে সুতরাং সাবধান’ । এ কথা শুনিয়া আমরা বঙ্গবাসীরা ভারত মাতার দাবীর সাথে আমাদের প্রস্তাব মিলাইয়া এক-তৃতীয়াংশের স্থলে সকল যায়গাটুকু তাদেরকে তুলিয়া দিয়া বিশ্বের সর্ব বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক পরিচয়ে পরিচিতি পাইয়া স্বর্গবাস করিব । ভারতের সংস্কৃতি এবং তাদের শয়তানী আর টাকা দিয়া কিনিতে হইবে না । মাগনা যাহা পাওয়া যায় তাহা টাকা দিয়া কিনিবার মত বোকা আমরা পূর্বে থাকিলেও ভবিষ্যত আর সে ভূল করিব না ।
বাজে কথা বলিতে বলিতে মূল কথা থেকে হারাইয়া গিয়েছিলাম । দেশে অপহরণ, গুম ও খুন যে পরিমান বাড়িয়াছে তাহাতে উদ্ধিগ্ন না হইয়া উপায় কি ? দেশের তাবৎ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ অন্যান্য পেশাজীবিরা যেমন গুমাতাঙ্কে আছে তেমনি আমার মত খরকুটো শ্রেণীর লোকও কম উদ্ধিগ্ন নয় । আমাদের গুম বা অপহরণ করিয়া বিশেষ কোন লাভ না হইলেও যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আমাদেরকে গুম করিয়া বড় মাপের মানুষের খেদমত করানো হইবে তখন আমাদের কিইবা করার থাকিবে ? আমাদের জন্য টাকায় কেনা ইট খরচ করিলে সে টাকাটাই বৃথা যাবে এ কথা যারা গুম কিংবা অপহরণ করেন তারা সকলেই কোন যুক্তি-তর্ক ছাড়াই বিশ্বাস করিবেন তবুও আমাদের ব্যাপারে যদি ভূল সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়া ফেলা হয় ! আবারও ‘ধান ভানতে রামের গীত’ গাইতে শুরু করিলাম । সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে অপহরণ হওয়া প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুলসহ পাঁচ জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে । গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, নদীতে ফালানোর আগে তাদেরকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে । তাদের প্রত্যেকের পায়ে সিমেন্টর বস্তার মধ্যে ২৪ খানা করে ইট ঢুকিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছিল । মুখে এবং গলায় শক্ত করে পলিথিন ব্যাগ বাঁধা ছিল । এমনকি লাশ যাতে ইটসহ ভেসে না উঠতে পারে সে জন্য সোজা ভাবে সকলেরই পেট কেটে দেয়া হয়েছিল । বিভিন্ন সময়ে নদীতে এরকম লাশ পাওয়ার পরে ফেসবুকে দেখলাম একজন কবিতা লিখেছে, ‘যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা বহমান/ততদিন পাবে লাশের সাঁড়ি ভয় পেয়োনা জনগণ’ । যাদের লাশ পাওয়া গেছে তাদের আত্মীয় স্বজনরা সতিকারার্থেই ভাগ্যবান । অন্তত বছরের কোন এক দিন গিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দু’এক ফোঁটা চোখের জল বিসর্জন দিয়ে দু’একটি কথা বলতে পারবে । কিন্তু ইলিয়াস আলীসহ যাদের লাশ দীর্ঘ দু’ই বছর পরেও পাওয়া যায় নি তাদের আত্মীয় স্বজনরা কোনখানে দাঁড়িয়ে চোখের পানি জলাঞ্জলি দিবে ?
ও বঙ্গমাতা ! তোমার আর কত লাশ চাই ? পাকিস্তানী হানাদারদের থেকে তোমাকে মুক্ত করতে ৩০ লাখ তরতাজা জীবন উৎসর্গ করতে হল । স্বাধীনতা পরবর্তী ৫ বছরে লক্ষাধিক মানুষ গুপ্ত হত্যার শিকার হল । ১৯৭৫-২০১৪ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ রাজনৈতিক হত্যার শিকার হল । তবুও তোমার আর কত লাশ চাই ? এত লাশ নিয়েও কি তোমার স্বাদ মিটিল না । তোমার কি একটুও কষ্ট হয় না ? তুমি কেমনে সহ্য কর ? আমরা কত কোটি টাকা খরচ করে তোমার নামকে বিশ্ব দরবারে জানান দেয়ার জন্য গাই “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ । তার বিনিময়ে এই কি তোমার ভালবাসার নমুনা ? তোমার বুকে হেটে যে সন্তানেরা তোমার অপর সন্তানদেরকে অপহরণ, গুম ও হত্যা করছে তাদেরকে বোঝাও এ কাজ ভালো নয় । তারা এখন যে কাজ করছে অনুরূপ কাজে তাদেরকেও হারিয়ে যেতে হতে পারে । তারা যদিও সুকান্তের কবিতানুযায়ীও কাজ করে থাকে তবে তারা কবিতার প্রথম দু’ছত্র পড়ে বাকী ছত্রগুলো পড়ে নাই । কেননা কবি তার কবিতার পরের অংশে বলেছেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ । বিশ্বকে বাস যোগ্য করার এই কি নমুনা ? ও বঙ্গমাতা ! একটু সদয় হও, কৃপা কর ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.