নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিহারি ক্যাম্পের ঘটনা কোন মানদণ্ডে বিচার করব ?

১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫১

শবে-বরাত উপলক্ষে সারারাত ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটিয়ে ফজরের নামাজ আদায় শেষে গোটা দেশবাসী যখন ক্লান্তির নিদ্রায় নিমগ্ন তখন রাজধানীর মিরপুরস্থ কালশীর মোনাপাড়ার বিহারি ক্যাম্পে ঘটে গেল চরম অমানবিক, বর্বর, নৃশংস, পৈশাচিক ঘটনা । শবে বরাতের রাত্রে পটকা ফাটানোকে কেন্দ্র করে বিহারি-এলাকাবাসী-পুলিশ ত্রিমূখী সংঘর্ষে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । একপর্যায়ে স্থানীয় বিহারিদের একটি পরিবারের সদস্যদেরকে ঘরের ভিতরে তালাবদ্ধ করে বাহির থেকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হল দশটি তরতাজা প্রাণ । সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেছে, আগুন দেয়ার পূর্বে একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সে বাড়ির বড় কন্যার বিবাহের জন্য দুধ বিক্রেতা বাবার শত কষ্টে সংগৃহীত ৫০ হাজার টাকা এবং কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়েছে । যাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ বছরের শিশুও আছে । কোন ভাষায় বর্ননা করলে এ ঘটনাকে প্রকৃতভাব প্রকাশ করা যাবে তা বলা বাহুল্য । মানুষ কতটা হিংস্র হলে এ জাতীয় নিষ্ঠুর, বর্বোরেচিত কর্মকান্ড ঘটাতে পারে ? কোন মানদন্ডের বিচারেই-বা এ জাতীয় ঘটনার বিচার করা যায় ?



শবে-বরাতের রাতে শুধু বিহারি ক্যাম্পের এলাকায় পটকাবাজি হয়েছে তা নয় বরং বাংলাদেশের বহু স্থানে পটকাবাজির ঘটনা ঘটেছে । প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, পিতা-মাতার বারণ সত্ত্বেও উচ্ছল তরুনেরা আনন্দ উদযাপন থেকে পিছপা হয়নি । যদিও পটকাবাজির কারনে ইবাদাত-বন্দেগীতে নিমগ্ন মানুষের মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে এবং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় তবুও সকল মানুষের ধারনা এ দিনে সামান্য হলেও পটকাবাজী হবে । মিরপুরেও তাই হয়েছে । এটা এমন ধরনের মারাত্মক অপরাধ নয় যার কারনে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে হবে । প্রকাশিত খবরে যখন জানা গেছে, এ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও উপস্থিত ছিল কিন্তু তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে । এ খবর জানলে আশ্চার্য না হয়ে উপায় কি ? প্রশ্ন জাগে, যদি পটকাবাজীর কারনে দু’ই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁেধ তবে সেখানে মারামারি বা হাতাহাতি হতে পারে কিন্তু টাকা পয়সা লুট কিংবা মানুষকে পুড়িয়ে মারা হবে কেন ? কিংবা দু’পক্ষ থেকেই আহত কিংবা নিহত হবে । তবে শুধু বিহারিরা আহত অথবা নিহত হবে কেন ? এটা কি মনুষ্যত্ত্বের লক্ষণ । কয়েক বছর পূর্বে এমনি এক শবে-বরাতের রাত্রে সাভারের আমিন বাজারে ছয়জন ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী পিটিয়ে মেরেছিল । পরে তদন্তে জানা গেছে, ওরা ডাকাত ছিল না বরং নেশা করতে ঢাকা থেকে সাভারে গিয়েছিল । সে ঘটনাটিকে ছাপিয়ে গেল বিহারি পল্লীর নৃশংস ঘটনা । প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষকে বদ্ধ করে পুড়িয়ে মেরে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মর্যাদা, মানবতাবোধকে ক্ষুন্ন করলাম নাতো ? ভিডিওতে যখন মায়ানমারের অধিবাসী কর্তৃক রাখাইন মুসলমানদেরকে আগুনে নিক্ষেপের দৃশ্যগুলো দেখেছি তখন হৃদয়ের সর্বশক্তি দিয়ে ওদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতি ঘৃণা ব্যক্ত করেছি এবং ভাষার মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানিয়েছি । শেষ পর্যন্ত বিহারি পল্লীর মানুষগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে আমারা সে ঘৃণা নিজেদের দিকেই টেনে নিলাম ? বিশ্ববাসী এখন আমাদেরকে কোন চোখে দেখবে ?



স্বাধীনতার পর বিহারিরা এদেশে আটকা পরার পরে তারা নানা ভাবে নির্যাতিত হয়েছে । তারা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু হওয়ার কারনে তাদেরকেও আমরা ঘৃণা করেছি । যদিও এ ঘৃণা করাটা ছিল অযৌক্তিক কেননা স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে বিহারিরা যুবক ছিল তাদের অধিকাংশই এখন বেঁচে নেই । বিহারি পল্লীতে যারা বাস করে তাদের অধিংকাশ স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনি । তাদের জন্মও স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক পরে । তবুও তাদের পূর্বসুরীদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ তাদের উপর দিয়েই প্রকাশ পাচ্ছে । তবে দেশের নাগরিক অর্থাৎ ভোটারের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে কিংবা নির্বাচনের সময়ে তাদের ভোট পাওয়ার জন্য উর্দুতে পোষ্টার, ব্যানার তৈরি করে তাদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করতে আমাদের খারাপ লাগে না ! সভ্যতার এ যুগে ইতিহাসের অন্ধকার নিয়ে কেবল আমরাই পরে আছি অথচ বিশ্বের অন্য সকল জাতি জাতীয়তাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুব্ধ হয়ে নিজেদের উন্নয়ন সাধনে যখন ব্যস্ত সময় পার করছে তখন আমরা অতীতের শত্রুতা জিইয়ে রেখে নিজেদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করতে ব্যস্ত । আমাদের মনে রাখা উচিত, যে পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে তারা নিকৃষ্ট, ঘৃণিত মানুষ ছিল কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসকৃত আটকে পরা বিহারিরা পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশকেই বেশি ভালোবাসে এবং তারা বাংলাদেশের কল্যাণেই কাজ করে । যদি অতীতের দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের বহু ক্ষতি করেছে কিংবা ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করেছে কিন্তু বিহারিরা এ ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করেনি ।



দেশের অন্যান্য ঘটনার মত বিহারি পল্লীর এ ঘটনাকেও রাজনৈতিক নিক্তিতে বিচার করা হবে । প্রকৃত অপরাধীরা যদি ক্ষমতাশীন দলের সমর্থক হয়ে থাকে তবে পার পেয়ে যাবে আবার যদি বিরোধীদলের কর্মী-সমর্থক হয় তবে তাদের কঠোর শাস্তি হবে । অনেক ক্ষেত্রে এটাই দেশের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে । বিএনপির চেয়ারপারসন বিহারি পল্লীর ঘটনার পর বলেছে, ‘এ কাজ আওয়ীলীগের সন্ত্রাসীদের’ । হয়ত আওয়ামীলীগ থেকেও বলা হবে, এ কাজ জামাত শিবির কিংবা বিএনপির সমর্থকদের । এভাবে কথার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকবে । কথার বন্যায় অপরাধীরা দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পাবে কিংবা পার পেয়ে যাবে । এ ভাবে আর কতদিন ? নিজেদের স্বার্থেই এ পথ পরিহার করা উচিত । সত্যকে সত্য হিসেবে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে রুপায়ন করার সৎ সাহস এবং শক্তি অর্জন করতে হবে । অপরাধী সে যে দলের কিংবা যে মতের হোক তাকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে । দেশের স্বার্থে, অচিরেই উচ্চ পর্যায়ের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে কালশীর মোনাপাড়ার বিহারি ক্যাম্পে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রকৃত কারন এবং এর সাথে জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমূখি করা হোক । আভ্যন্তরীন কারনে না হোক অন্তত বিদেশের কাছে দেশের ভাবমূর্তি, আমাদের গ্রহনযোগ্যতা রক্ষার জন্য এ কাজটুকুর সরকার এবং প্রশাসনের অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত । সবাই মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার মানসিকতা তৈরি করি । যে আগুন ব্যবহার করে বিহারিদেরকে পুড়িয়ে মারা হল সে আগুনে যদি নিজেদেরকে পোড়ানো হত কিংবা নিকাটাত্মীয় স্বজনদের পোড়ানো হত তখন কেমন অনুভূতি সৃষ্টি হত ? নিশ্চয়ই সুখানুভূতি হত না । যে বিহারিদেরকে পুড়িয়ে মারা হল তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি কেননা একটি পরিবারের সকল সদস্যদেরকেই মেরে ফেলা হয়েছে সে কারনে তাদের জন্য অশ্রু জড়ানোর মানুষও অবশিষ্ট রইল না । মানবতার জয় দেখতে চাই এবং সেটা অচিরেই ।



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.